প্রেমের_পরশ
পার্ট_16
জামিয়া_পারভীন
• শুভ নিরুর গালে হাত দিয়ে আলতো ছোঁয়া দিয়ে বলে, “আচ্ছা নিরু আমরা যদি সারাজীবন এভাবেই ভ্রমণ করতে পারতাম তোমার কেমন লাগতো? ”
• নিরু একটু হেসে বললো, “ গাড়ির তেল ফুরিয়ে যেতো, তখন রাস্তায় বাটি নিয়ে বসে পড়তে। ”
• শুভ একটু রেগে বললো, “ তোমার রোমান্টিকতা বলে কিছুই নেই, মুড টাই নষ্ট করে দিলে। ”
• “ আহারে, আমার রোমান্টিক বর টার বউ টা কিনা এতো পাজি, একটুও রোমান্স বুঝে না। সো স্যাড। হি হি হি ”
• “ হাসো হাসো প্রাণ খুলে হাসো। যেদিন তোমার সতীন নিয়ে আসবো সেদিন বুঝবে আর হিংসায় জ্বলবে। ”
• “ সতীন নিয়ে আসলে আমার ভালোই হবে, আমার সব কাজ ওকে দিয়ে করিয়ে নিবো। হিহি ” হটাৎ নিজের মায়ের কথা মনে পড়তেই মন খারাপ হয়ে যায় নিরুর।
• “ হাসি অফ হয়ে গেলো যে, শুধু তো আমায় জ্বালাও।”
• “ আমার বাবার ও দুইটা বউ ছিলো বলেই আমি আজ অসহায়। আর তুমিও আমায় নিয়ে মজা করার টপিক্স পেলে না। আমি তোমায় হারাতে চাইনা শুভ। প্লিজ আমাকে ভুলে অন্য কাউকে ভেবোনা। আমি তোমার কাছে যে সুখ পেয়েছি তা হারাতে চাইনা। ”
• “ মন খারাপ করোনা তো, তোমার হাসিমাখা মুখ টাই আমার সব চেয়ে বেশি ভালো লাগে। ”
নিরু বেশ স্বাভাবিক হয়ে যায়, বিয়ের অনুষ্ঠান এর পর এই প্রথম শুভর সাথে কোথাও ঘুরতে যাচ্ছে। ওরা দুপুর হতে হতেই পৌঁছে যায়। ওখানে আগে থেকে রুম বুকিং দেয়া ছিলো, সরাসরি সেখানেই চলে যায়। জার্নি করে দুজনেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। নিরু বললো,
• “ খুব মাথা টা যন্ত্রণা হচ্ছে। ”
• “ কখনো জার্নি করোনি তাই, শাওয়ার নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। একসাথে লাঞ্চ করবো, দেখবে ভালো লাগবে। ”
নিরু আর কথা না বাড়িয়ে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে এসে বেডে শুয়ে পড়ে নিরু।
• “ তুমি তাড়াতাড়ি যাও, ফ্রেশ হয়ে আসো। ”
• “ হুমম যাবো তো! তুমি এতো ক্লান্ত হয়ে গেলে ঘুরবো কিভাবে?”
• “ যাও তো কুইক, আমার ক্ষুধা লেগেছে। ”
শুভ খাবার অর্ডার করে শাওয়ার নিতে ঢুকে যায়। বেরিয়ে আসতেই খাবার চলে আসে। খাবারে ছিলো গরম ভাত, লাক্ষা মাছ, কোরাল মাছ, কাকড়া, মিষ্টি। শুভ নিরুকে কাকড়া খোসা ছাড়িয়ে খাইয়ে দেয়। নিরু খেয়ে বলে,
• “ এতো সুন্দর খাবার আমি কখনো খায়নি, এতো টেস্টি বলার বাইরে। ”
• “ আরোও সারপ্রাইজ আছে সোনা। ”
• “ কি কি? ”
• “ সময় হলেই বুঝতে পারবে, কিছুক্ষণ রেস্ট করো। এরপর রেডি হয়ে নিও আমরা সুর্যাস্ত দেখতে যাবো। ”
• “ সুর্যাস্ত দেখার কি এমন মজা শুনি?”
• “ নিজ চোখে দেখলেই বুঝবে, নইলে বুঝবেনা। ”
ওরা রেডি হয়ে বিকেলে সমুদ্রের ধারে ঘুরতে যায়। তখন নিরু জিজ্ঞেস করে,
• “ আচ্ছা শুভ! এটাকে কুয়াকাটা কেনো বলা হয়? ”
• “ এর অনেক ইতিহাস আছে। কথিত আছে, আঠারো শতকে মুঘল সম্রাট দের কাছে তাড়া খেয়ে বার্মা থেকে অনেকে এখানে এসে বসতি গড়ে। সুপেয় পানির উদ্দেশ্যে অনেক গুলো কুয়া বা কূপ তৈরি করে ওরা, তখন থেকেই কুয়াকাটা নাম হয়েছে। ”
• “ খুব সুন্দর ইতিহাস তো , বেশ লাগলো শুনে। ”
সামনে ডাব ওয়ালা কে দেখতে পেয়ে শুভ নিরুকে বলে,
• “ ডাব খাবে? ”
• “ ইচ্ছে করছেনা এখন। ”
• “ খেলে বুঝবে!!! কেমন লাগে? ”
• “ ওকে এনে দাও। ”
দুজনে দুইটা ডাব নিয়ে কে আগে ডাবের পানি শেষ করতে পারে তার প্রতিযোগিতা লাগায়।
শেষ পর্যন্ত শুভই জিতে যায়।
• “ তুমি চিটিং করেছো আমার সাথে, এটা খেলা হয়নি। ”
• “ আর যদি তুমি জিততে তাহলে রেজাল্ট কি দিতে। ”
• “ যাই হোক না কেনো!!! আমাকে বড় ডাব দিয়েছো আর তুমি ছোট ডাব নিয়েছো। ”
• “ এহহহহ, এখন সব দোষ আমার তাইনা। ”
• “ দোষ বলো আর গুণ বলো সবই তো তোমার। অনেক মিষ্টি ছিলো পানি টা। ”
• “ তোমার ঠোঁট এর তুলনায় কম। ”
• “ যাহহ!!! ফাজিল ছেলে। ” বলে শুভকে মারতে থাকে নিরু।
দুজনে বেশ মজা করে পানিতে ছুটাছুটি করে, একে অপরকে পানি ছিটিয়ে দেয়, সুর্যাস্ত যাওয়া উপভোগ করে। সন্ধ্যার পর নিরুকে নিয়ে রেষ্টুরেন্ট এ যায় শুভ,
ভাতের সাথে রুপবান মাছ, কোরাল মাছ আর চিংড়ি অর্ডার করে। খাবার শেষ এ নিরু খুব খুশি হয় বলার বাইরে।
• “ কি বলবো তোমায় শুভ, সব খাবার ই এতো ভালো যে বলার বাইরে। ”
• “ তোমার ভালো লাগার জন্যই তো এতোকিছু। ”
• “ আমার এতো ভালো চান কেনো? যদি হারিয়ে যায় তাহলে? ”
• “ হারাতে দিবোনা। ”
• “ যদি মরে যায় মায়ের মতো। ”
• “ খবরদার কুলক্ষনে কথা বলবে না।”
ডিনার শেষ করে ওরা রুমে ফিরে আসে, ক্লান্ত হয়ে নিরু ঘুমিয়ে পড়ে। শুভ মন খারাপ করে মনে মনে বলে,
“ সারাদিন তোমায় এতো আনন্দ দিলাম, আর তুমি আমার আনন্দের কথা না ভেবেই ঘুমিয়ে গেলে। শুভ ও চুপচাপ নিরুর পাশে ঘুমিয়ে পড়ে। খুব ভোরে নিরুকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়,
• “ কি হয়েছে, এতো সকাল সকাল ডাকছো কেনো? ”
• “ নিরু উঠো, সুর্যদয় দেখতে যাবো। খুব ভালো লাগবে তোমার। ”
• “ পরে দেখবো, একটু ঘুমাই। ”
শুভর মনে মনে রাগ হচ্ছে, ওভাবেই নিরুকে কোলে নিয়ে সমুদ্রের ধারে চলে যায়। সব লোক ওদের কে হা হয়ে দেখতে থাকে। নিরু যতই বলে কোল থেকে নামাও, শুভ কিছুতেই নামাই না। একেবারে সমুদ্রের ধারে গিয়ে নামায়। সুর্যদয় দেখে নিরু শুভ কে জড়িয়ে ধরে বলে,
• “ এই মুহুর্ত গুলো সব চেয়ে বেষ্ট, কখনো ভুলবোনা। ”
• “ তাই বুঝি ”
• “ খুব খুব ভাল লাগলো জনাব।”
• “ উপহার চাই। ”
• “ কি উপহার শুনি। ”
• “ আজ আমার সাথে শাওয়ার নিতে হবে। ”
• “ অসভ্য, সব সময় বাজে কথা। ”
• “ কই বাযে কথা বললাম শুনি? ”
দুজনে ঝগড়া করতে করতে রুমে ফিরে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুভর অর্ডার করা কফি চলে আসে, কফিতে লাভ শেপ আঁকানো।
• “ ওয়াও!!! এতো সুন্দর সারপ্রাইজ। জাস্ট বলার বাইরে। ” নিরু শুভর গলা জড়িয়ে ধরে বলে।”
• “ আমার গিফট চাই কিন্তু!!!!! “
• “ বয়েই গেছে। ”
দুজনে কফি শেষ করে বেলকনিতে যায়, ওখানে একটা দোলনা ছিলো।
নিরুকে বসিয়ে শুভ দোল দিতে থাকে, দুজনের গল্প আর খিলখিলিয়ে হাসির রোল চলতে থাকে।
রিমি কলেজ বের হওয়ার সময় ওর মা ওকে বলে,
• “ আজ আর কলেজ যেতে হবেনা। ”
• “ কেনো আম্মু!!!! কি হয়েছে?”
• “ শুভ নিষেধ করে গিয়েছে। ”
রিমি মন খারাপ করে উপরে চলে যায়। “ নাহ আজও রাকিবের সাথে দেখা হলো না। ”
মনে মনে শুভর উপর খুব রাগ উঠে রিমির। “ বড় ভাই হয়েছে তো কি হয়েছে? মাথা কিনে নিয়েছে নাকি। নাহ এভাবে আর পারছিনা। কাল যাবোই যাবো রাকিবের সাথে দেখা করতে। ”
নিরু কিছুতেই শুভর সামনে শাওয়ার নিতে চাইনা, শুভ রাগ করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।
কিছুক্ষণ পর শুভ নিরুকে বলে,
• “ নিরু, একটু টাওয়েল টা দিবে?”
• “ জ্বী আনছি। ”
নিরু টাওয়েল দিতে গেলে নিরুর হাত ধরে টেনে নেয় ওয়াশরুমের ভিতর, কিছুক্ষণের মধ্যেই নিরু ভিজে গেছে। নিরু মাথ বেয়ে ঠোঁট বেয়ে পানি পড়ছে। শুভ নিরুকে ভেজা অবস্থায় দেখে আর কন্ট্রোল করতে পারেনা নিজেকে। নিরুর ঠোঁট টা নিজের দখলে নিয়ে নেয় ।
চলবে……….