প্রেমের_পরশ
পার্ট_13
শুভ নিরুকে সোফায় বসিয়ে নিজ হাতে তুলে খাওয়ায়। দুজনে এই প্রথম বারান্দায় পাশাপাশি বসে কফি পান করে। কফি শেষ করে শুভ নিরুর সাথে দুষ্টুমি করতে গেলে নিরু লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেলে।
__ “ কি ব্যপারে এভয়েড করছো নিরু? ”
__ “ আসলে কিছুনা। ” বলে শুভর বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে থাকে নিরু।
__ “ তুমি বললেই তো নয়, মুখ দেখে বুঝতে পারছি কিছু একটা হয়েছে।”
__ নিরু তাও মাথা নীচু করে আছে। সন্ধ্যা হয়েছে কিছুক্ষণ আগে, বেলকনিতে রাখা সোফায় বসে আছে নিরু আর শুভ। নিরুর মুখে চাঁদের আলো পড়ে নিরুর সৌন্দর্য আরোও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। শুভ অপলক তাকিয়ে থেকে নিরুর ডান হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শুভর বাম হাত দিয়ে, আর ডান হাত নিরুর গলায় দেয়। শুভর স্পর্শে নিরু শিহরিত হচ্ছে, আজ পালিয়ে যাচ্ছেনা। শুভর নিঃশ্বাস নিরুর বুকে পড়ছে, নিরুর হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। শুভ নিরুর গলায় অসংখ্য আদরের ছোঁয়া দিতে থাকে। নিরু বাম হাত দিয়ে শুভর গলা চেপে ধরে। অস্থিরতা বাড়ছে নিরুর ভিতরে, শুভর হাত নিরুর বুক পর্যন্ত নেমে গেছে। নিরু ছুটে পালাতে গিয়ে শুভ আটকে ফেলে। আরোও বেশি ঠোঁটের স্পর্শ দিতে থাকে। হটাৎ করে শুভ নিরুকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে এসে বেডে ফেলে দিয়ে নিজেও সমস্ত ভর নিরুর উপর দিয়ে দেয়। শাড়ির আঁচল সরিয়ে দিয়ে পেটে চুমু দিতে থাকে। হটাৎ করে শুভ খেয়াল করে নিরু কাঁদছে।
__ “ আমি কি অন্যায় কিছু করে ফেলেছি? ”
__ নিরু চুপ করে থাকে আর ফুঁপিয়ে কান্না করতে থাকে।
__ “ কি ব্যপার এখনো চুপ থাকবে?”
__ “ ভ ভ ভ ভ ভ ভয়ে ”
__ “ আমি কি বাঘ না ভাল্লুক, যে ভয় পাচ্ছো বারবার? ”
__ “ আপনি আমায় ছেড়ে চলে যাবেন না তো? ”
__ “ কি আশ্চর্য, ছেড়ে যাবো কেনো? খুব ভালোবাসি তোমায় নিরু। ”
__ “ তবুও ভয় করে যদি আপনিও আমায় ছেড়ে দেন, আমি থাকতে পারবো না কিছুতেই। ”
__ “ না কখনো ছেড়ে যাবো না, তোমার বাবার মতো না যে ছেড়ে যাওয়া শিখবো। বরং আপন করে নিবো, যতটা কাছে আসলে ছেড়ে যাবার প্রশ্নই আসবেনা। ”
নিরু শক্ত করে শুভকে জড়িয়ে ধরে, যেন শুভর কাছে ভরসা পাচ্ছে। ওরা দুজনে হারিয়ে যায় ওদের ভালোবাসার সমুদ্রে। নিরু খুব কষ্ট পেয়ে কান্না করে উঠে, শুভকে খামচিয়ে ধরে। শুভ খেয়াল করে নিরুর ব্লিডিং হচ্ছে, সরে আসে নিরুর কাছ থেকে। নিরুর পোশাক ঠিক করে দেয় শুভ।
শুভর নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে, “ কিভাবে পারলাম এটা করতে? কি করবো এখন আমি? ” চিন্তিত হয়ে যাচ্ছে শুভ। কিছু একটা পড়িয়ে দেয় নিরুকে, এরপর শুভ নিজ হাতে ভালো শাড়ি গয়না পড়িয়ে নিরুকে কোলে করে সিড়ি পর্যন্ত নামায়, ডায়নিং এ কেউ নাই দেখে দরজা খুলে নিরুকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।
__ “ এভাবে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ”
__ “ সরি পাখি টা, তোমাকে খুব কষ্ট দিয়ে ফেললাম। ”
__ নিরু শুভর বুকে মাথা রাখে কষ্টে।
শুভ নিরুকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভ করে হসপিটাল এ নিয়ে যায় গাইনোকোলজিস্ট এর কাছে। ট্রিটমেন্ট নিয়ে বাসায় ফিরতে রাত ১২ টা বেজে যায়। বাসায় সবাই টেনশন শুরু করে দিয়েছিলো ওরা কোথায় গেছে সেটার জন্য। ফোন টাও শুভ ঘরে ফেলে গিয়েছিলো।
ঘরে ঢুকতেই শুভর মা জিজ্ঞেস করে,
__ “ কিরে হুট করে কাউকে কিছু না বলে কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলি। ”
__ এর উত্তর শুভ দিতে পারবেনা তাই নিরু বলে, “ আম্মা, আজ দুপুরে বেশি স্নান করেছি, তাই খুব জ্বর চলে এসেছিলো, তাই উনি কাউকে কিছু না বলে ডাক্তার এএ কাছে নিয়ে গিয়েছিল। ”
__ শুভ মনে মনে উত্তর খুঁজে পাচ্ছিলো না, তখন নিরুর এমন উত্তর শুনে ভাবে “ মেয়েটা ছোট হলে কি হবে চালাক আছে অনেক। ”
শুভর মা আর কথা বাড়ায় না, শুভরা ঘরে গেলে ওদের ঘরে খাবার পাঠিয়ে দেয়। রাতে ডিনার শেষ এ নিরু ঔষধ খেয়ে আগে আগে শুয়ে পড়ে। খুব ক্লান্ত আর ব্যথায় অস্থির আছে নিরু। শুভ সব গুছিয়ে রেখে নিরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়,
__ “ কি হলো? ঘুমাবেন না? ”
__ “ তোমায় কষ্ট দিতে চাইনি পাখি, বাধ্য হয়ে তোমার সাথে আজ এমন করেছি, মাফ করে দাওনা প্লিজ। ”
__ “ আপনি আমার স্বামী, আপনি আপনার অধিকার থেকে যা খুশি করতে পারেন, আমি আপনার ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য। ”
__ “ আমি কখনো চাইনি আমার বাচ্চা বউটার উপর এমন স্বামীর অধিকার ফলাতে। ”
__ “ আমি তো কখনোই আপনাকে বাধা দিতাম না।”
__ “ আমায় বিশ্বাস করু নিরু পাখি, তোমার সাথে এমন করতে চাইনি, শুধুমাত্র তোমাকে বাঁচাতে এমন করেছি। তোমার মায়ের খুনের প্রতিশোধ ও নিতে হবে। ”
__ “ কি বলছেন? আমার মা খুন হয়েছিলো? ”
__ “ তুমি জন্মের সময় মারা যায়নি তোমার মা, তাকে হত্যা করা হয়েছিলো। আর এখন তোমাকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে খুনীরা। আর তুমি রুবি ভাবীর সাথে বেশি মিশবে না। আমি বাসায় না থাকলে একা থাকবেনা। ”
__ “ কে আমায় মারতে চাই, মা কে কেনো মেরেছে? বলুন না প্লিজ। ” নিরুর চোখে পানি চলে আসে।
__ “ সময় হলে সব বলবো। এখন ঘুমাও, আগে সুস্থ হয়ে উঠো এরপর সব জানতে পারবে। ”
__ “ কি ক্ষতি করেছি আমি বলুন তো? ”
__ “ তুমি ক্ষতি করোনি, তুমি নিষ্পাপ, পাপী তো তারা যারা তোমার মা কে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়ে সুবিধা ভোগ করছে, আর খুনী তার সব প্রমাণ লুকিয়ে দিয়েছে। আমি এবার আসল খুনী কে ধরবো যেভাবেই হোক। তারজন্য তোমাকে প্রেগন্যান্ট হওয়া লাগবে। আসল খুনী ধরা তখনি সম্ভব, যখন তুমি প্রসব বেদনায় ছটফট করবে। ”
__ “ এসব কি বলছেন আপনি, আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। ”
__ “ পরে বুঝিয়ে বলবো, এখন ঘুমাও। ”
__ “ একটা প্রব্লেম হয়েছে। ”
__ “ রিমি খুব বড় ভুল করতে যাচ্ছে। ”
__ “ তুমি তার ভাবী, তাকে বুঝিয়ে বলবে, তাহলে দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
__ “ সিরিয়াসলি নেন বিষয় টা কে, প্লিজ হেয়ালি করেন না। ”
__ “ কি হয়েছে বলো, রাগ করছো কেনো এতো? ”
__ “ রিমি একজনের সাথে রিলেশন এ জড়িয়ে পড়েছে, প্লিজ ডু সামথিং।
__ “ কি বলছো তুমি, ও এসব করেনা। ”
__ “ কার প্রেমের জালে ফেঁসেছে রিমি সেটা জানেন? ”
__ “ কে?”
__ “ রাকিব ”
__ “ এটাই হবার ছিলো, তোমার ফুপির চাল সব বুঝেছি। ” রাগ করে পাশের টি টেবিলে আঘাত করে বসে শুভ। এতে নিরু একটু ভয় পেয়ে যায়।
__ “ আজ রাকিবের ছবি দেখিয়েছে রিমি, ওকে বুঝিয়ে বলার পর ও বলেছে রাকিব কে ছাড়া মরে যাবে রিমি, এখন আমরা কি করতে পারি সেটা বলুন প্লিজ। আমি চাইনা ওর মতো বাজে ছেলের ফাঁদে পড়ে রিমির জীবন টা নষ্ট হোক। ”
__ “ ওদের ট্রাপ রিমি না, তুমি ”
__ “ মানে? ”
__ “ ভাবতে দাও, পরে বুঝিয়ে বলবো। এখন মাথা ঠান্ডা করে ঘুমাও। ”
শুভ পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে, নিরু কিছুক্ষণ জেগে থেকে সেও ঘুমিয়ে পড়ে।
সকাল সকাল সাগর জরুরী কাজ আছে বলে বেরিয়ে যায় অফিসে, তখন রুবির ফোনে কল আসে লুতফা বেগমের, সাগর রুমে থাকে তাই মায়ের ফোন রিসিভ করেনা। সাগর নেই বলে ফোন টা রিসিভ করে নেয়, ওপাশ থেকে বলে,
__ “ কেমন আছিস রুবি মামনি?”
__ “ তা জেনে তুমি কি করবে আম্মু। আর আমাকে ফোন না দিলে খুশি হবো। ”
__ “ কি বলছিস তুই মা, যার জন্য এতো দিন যাবত এতো কিছু করলাম, আর আজ সেই মেয়ে আমাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। ”
__ “ হ্যাঁ দিচ্ছে, আমার জন্য তুমি সৎ পথে কিছুই আর্ন করোনি, যা করেছো সব অসৎ পথে। কিভাবে তোমার অসৎ পথের অর্জন আমি নিবো বলো। তোমার না হয় পরকালের ভয় নেই আমার আছে। যে বোন কে হত্যা করতে বলেছিলে, সেই বোন আমাকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপন চেষ্টা করেছে, আমার ভালোবাসা আমাকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলতে চেয়েছিলো, আমার স্বামী কেও ফিরিয়ে দিয়েছে। আর তুমি সেই বোন কে খুন করতে বলছো? আমি পারবোনা আম্মু, নো তুমি আমার আম্মু না, একজন খুনী কখনো মা হয় না। ”
__ “ এভাবে বলতে পারলি রুবি? আমি তোকে ৯ মাস ১০ দিন পেটে ধরেছি, তোর জন্মের পর থেকে কতো কিছু সহ্য করেছি। আর তুই কিনা সেইই মা’কে অস্বীকার করছিস । ”
__ “ তোমার মতো মহিলার সাথে কথা বাড়াতে চাইনা। ” বলে রুবি ফোন কেটে দেয়।
নিরুর ঘুম ভাঙেনি দেখে শুভ আর না ডেকে নিজে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে অফিসে চলে যায়। তখন রুবি নিরুর ঘরে ঢুকে নিরুর পাশে গিয়ে বসে।
চলবে….