প্রেমের_পরশ
পার্ট_12
#জামিয়া_পারভীন
নিরু এই প্রথম সাহস করে শুভর দিকে এগিয়ে যায়, চোখ থেকে কাজল হাত দিয়ে ঘষে তুলে শুভর গলার পিছনে লাগিয়ে দেয়। শুভ শিহরিত হয়ে ওঠে। তখন নিরু শুভ কে বলে,
__ “ আমি ছাড়া আর কারোও নজর লাগবেনা আপনার উপর। ”
__ “ কি ব্যপার, আজ মেঘ না চাইতেই জল, যে বউ কাছে আসে না, আজ তার তার আগমন, একি আমার সৌভাগ্য নাকি দুর্ভাগ্য।”
__ “ এমন করে বলছেন, মনে হচ্ছে আমি খারাপ বউ। ”
__ “ হতেও তো পারো? ”
__ “ কিহহহহহহ? ”
__ “ নাহ, কিছুই না।” বলে নিরুকে বাহুডোরে আঁকড়ে ধরে শুভ। নিরু ও শুভ কে শক্ত করে ধরে, তখন শুভ একটা গান কে কবিতার মতো করে বলে শোনায় নিরু কে,
তোমার চোখের কাজলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে,
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার স্মৃতির আঁচলে আমার প্রেমের প্রদীপখানি জানি ঢাকবে।
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার চোখের কাজলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে,
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
জীবনের একদিকে ভাঙন আবার আর একদিকে সৃষ্টি।
পাহাড়ের একদিকে রোদ্দুর আবার আর একদিকে বৃষ্টি।
এই বৃষ্টি রোদে ভিজে তুমি আমায় পিছু ডাকবে।
ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার চোখের কাজলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে,
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার স্মৃতির আঁচলে আমার প্রেমের প্রদীপখানি জানি ঢাকবে।
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার চোখের কাজলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে,
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
প্রেমেরই একটি নাম হাসি, আবার আর একটি নাম দুঃখ।
চলারই পথ কোথাও সহজ আবার কোথাও বা সে রুক্ষ।
সেই কান্না হাসির আলো ছায়ায় আমার ছবি আঁকবে।
ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার চোখের কাজলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে,
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার স্মৃতির আঁচলে আমার প্রেমের প্রদীপখানি জানি ঢাকবে।
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
তোমার চোখের কাজলে আমার ভালবাসার কথা লেখা থাকবে,
আমায় ভালবাসবে আর মনে রাখবে।
__ “ জানেন, কেউ কখনো এমন করে কবিতা শুনায় নি, এতো ভালো লাগলো আমি মুখে প্রকাশ করতে পারবোনা। ”
__ “ এখন তো ছাড়ো, পরে আদর করে পুষিয়ে দিবো, এখন কতো কাজ আছে জানো? দুপুর হয়ে এসেছে, বাসায় থাকলে জানোই তো ঠিক টাইম মতো ডাইনিং টেবিলে যেতে হয়। ”
__ “ দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন বুঝি তো সব।”
__ “ আরে পাগলী, এতে রাগ করার কি আছে? ”
__ “ মোটেও রাগ করিনি, হুহহহহ। ”
শুভকে ছেড়ে দিয়ে পিছনের দিকে পা বাড়াতে যাচ্ছিলো, নিরু খেয়াল করেনি ওর ভেজা চুল থেকে পানি পড়েছে মেঝেতে, সেই পানিতে পা স্লিপ করে পড়ার সময় শুভকে ধরতে গিয়ে শুভর টাওয়েল এর উপর হাত পড়ে, টাওয়েল তো খুলে যায় , শুভ নিরুকে ধরতে গিয়ে শুভ নিরুর উপর পড়ে যায়।
__ দুজন কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে থেকে নিরু বলে, “ উঠুন, আর ড্যাবড্যাব করে তাকাতে হবেনা, আমাকে নজর লেগে যাবে। ”
__ “ লাগেনি তোমার? ”
__ “ না লাগেনি, এখন লাগছে, আপনার হাতির মতো শরীরের ভার নিতে পারছিনা, আমি একটা বাচ্চা মেয়ে, আপনার মতো হাতির ভর সহ্য করতে পারি বলুন?”
__ “ কি বললে তুমি? আমি হাতি? ”
__ “ হুমম, এখন আমাকে উদ্ধার করুন প্লিজ। ”
শুভ নিরুকে ছেড়ে দিয়ে উঠে যায় , নিজের দিকে আর খেয়াল করেনি, নিরু চোখের সামনে শুভকে ওমন অবস্থায় দেখে,
__ “ আ আ আ আ আ আ আ আ ” বলে চিল্লিয়ে কোন রকম উঠে দৌড় দেয় নিরু।
শুভ মনে মনে বলে “ এতো পুরো ই পাগলী ” বলে নিচের দিকে খেয়াল হয়, শুভ এবার নিজেই লজ্জায় পড়ে যায়।
….
__ “ কিরে কি হয়েছে? ওমন করে চিৎকার দিয়ে নিচে নেমে এলি যে? ”
__ “ আম্মা আ আ, ও ও ও মানে ধেড়ে ইঁদুর। ”
__ “ এই বাড়িতে ইঁদুর আসলো কোথেকে? তাও এতো তোতলাচ্ছিস কেনো? ”
__ “ না মানে আম্মা আ আ আ, বলছিলাম কি দুপুর দুইটা বাজে, এখন তো লাঞ্চ টাইম তাইনা?”
_ “ এইই কথা ঘোরাচ্ছিস কেনো রে? থাম শুভকে জিজ্ঞেস করে আসি?”
__ “ না আ আ আ, আম্মা খুব খিদে পেয়েছে। ”
ক্ষুদা পেয়েছে শুনে শাশুড়ি আম্মা তাড়াতাড়ি সবাইকে খেতে ডাকলেন । রিমি আর রুবি কে রুমে খাবার পাঠিয়ে দেন বুয়ার মাধ্যমে। শুভ ডাইনিং এ আসলে নিরু লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে নেয়। তখন খেয়াল করে শুভর বাবা আসছে।
নিরু উঠে গিয়ে চেয়ার টেনে দিয়ে বসতে দেয়,
__ “ আহহ বৌমা, তুমি কেনো এসব করছো? ”
__ “ ভালো আছেন আব্বু? ”
__ “ হ্যাঁ রে মা ভালো ই আছি। আজকাল নিজের ছেলেরাও খোঁজ খবর নেয় না , তোর খোঁজ নিয়ে কি হবে? ”
__ “ কি বলেন আব্বু, আমরা আপনার খোঁজ খবর নিই না, এটা তো অপবাদ হয়ে যাচ্ছে। ” শুভ বলে ফেলে
__ “ আর নেকা সাজতে হবেনা বাবা, একটা বার কি ঘরে গিয়ে দেখেছো আমি বুড়ো মানুষ সারাদিন কি করি। ” শুভর বাবা বলেন।
__ “ আচ্ছা আব্বু এইযে আমরা সবাই মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া করি, খেতে বসে কথা বলি। এইগুলি তো আমার ই বানানো নিয়ম তাইনা বলো? যেন আমরা ফুল ফ্যামিলি একসাথে থাকতে পারি। ”
__ “ হ্যাঁ রে বাবা, তুই আমার খুব্বি ভালো ছেলে, একটু অভিমান ও করতে পারবোনা, বউ পেয়ে আমায় ভুলে গেলে তাই। ”
__ “ এসব কি বলেন আব্বু, বউ পেয়ে ভুলে গেছি মানে? ” নিরুও লজ্জায় পড়ে যায়, আর শুভর বাবা মা ছেলে আর ছেলের বউয়ের সাথে মজা করছে, তাই উনারা দুইজন মুখ টিপে হাসছিলেন।
__ “ ছোট বেলায় আমার কোলে করে গোটা বাড়ি ঘুরেছিস, আজ আমায় একটু কোলে নিবি তা না। বউ কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস। ”
__ “ হয়েছে হয়েছে থামো, ছেলে মেয়ে দুটো কে আর লজ্জা দিও না। ”
শুভর মা বলে।
__ “ কি যা তা বলছো আব্বু, নিরুকে কোলে নিলাম কখন আজ?”
__ “ ওই যে বাসর রাতে কোলে নিয়ে ঘরে ঢুকলে, ভুলে গেছো বাছা। ”
নিরু এবার লজ্জা পেয়ে পালিয়ে যায়।
__ “ দেখেছো আম্মা, আব্বু দিন দিন বাচ্চা হচ্ছে। একটু আব্বুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেও তো পারো। ”
__ “ উফফফ থামবে এবার, চুপচাপ সবাই খেয়ে নাও। ” শুভর মা রেগে গিয়ে বলে।
সবাই লাঞ্চ শেষ করে যে যার মতো ঘরে যায়, শুভ নিজের ঘরে গিয়ে দেখে নিরু নেই। এদিকে নিরু রিমির রুমে এসে রিমির পাশে শুয়ে আছে কম্বলের নিচে। বিকালের দিকে রিমির রুমে রুবি আসে, নিরু কম্বলের নিচে থাকায় খেয়াল করেনি।
__ “ কেমন আছো রিমি? ”
__ “ তুমি জেনে কি করবে ভাবী? ”
__ “ মাফ করে কি দেয়া যায়না রিমি তোমার এই ভাবী টাকে? ”
__ “ যদি আমি মরে যেতাম কার কাছে ক্ষমা চাইতে? ” নেহাত ভাইয়া তোমায় ভালোবাসে, নইলে? ”
__ “ আমি জানি রিমি, নিরুর এতো ক্ষতি করতে গিয়ে তোমার ক্ষতি হয়ে গেলো। আর নিরুই কিনা আমায় বাঁচানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো। যাকে কখনো বোন বলে মর্যাদা দিইনি। সেইই আমার জন্য কতো কিছু করছে? ”
__ “ তুমি এতো ই অকৃতজ্ঞ যে বোনের কাছে ক্ষমা ও চাওনি। আসলে সব তোমার ইগো।”
__ “ ছাদে যাবে একটু, খোলা বাতাসে অনেকদিন যায়নি। ”
__ “ আমি এখন যেতে পারবোনা, ভাবী পাশে ঘুমিয়ে আছে। ”
রুবি তখন খেয়াল করে রিমির পাশে কেউ শুয়ে আছে।
__ “ ওহহ, সরিই, এখন আসি তাহলে।”
নিরু কম্বলের ভিতর থেকে মাথা বের করে বলে,
__ “ যাও রিমি, ঘুরে আসো। ”
__ “ কি ব্যপার, তুমি ঘুমাওনি? ”রিমি জিজ্ঞেস করে।
__ “ আরে না, শীত করছে, তাই ভিতরে ঢুকে আছি। ”
__ “ তুই ও চল না নিরু, বোনের সাথে। ” রুবি নিরুকে বলে।
__ “ ইমোশনাল ব্লাকমেইল করছো নাকি মন থেকে বলছো আপু। ”
__ “ আমি জানি তুই আমায় বিশ্বাস করতে পারছিস না, মন থেকে চাচ্ছি ভালো হয়ে যেতে। দুজনে ক্ষমা করে দাও না। ” বলে হাত জোড় করে ধরে রুবি।
__ “ আরে আরে, করছো কি? চলো ছাদে যাই, রিমি চলো তো। ”
আজ অনেকদিন পর রুবির কাছে জীবন টা মুক্ত পাখির মতো লাগছে। মিষ্টি ছোট বোন, ননদের সাথে মন খুলে গল্প করে রুবি। অনেক হাসাহাসি করে সন্ধ্যার আগে আগে নেমে আসে তিনজন ই।
নিচে এসে নিরু নাস্তা বানায় সবার জন্য, সন্ধ্যায় সবাইকে নাস্তা দিয়ে শুভর রুমে যায় নিরু।
__ “ কি ব্যাপার ম্যাম? সেই যে গেলেন, একেবারে নিখোঁজ হয়ে আছেন আপনি যে।”
__ “ আপনার নাস্তা, খেয়ে নিন আগে, কফি আনছি একটুপর। ”
উত্তরের অপেক্ষা না করে নিরু বেরিয়ে আসে। জানেই তো পাশে থাকলে লজ্জা দিবে।
কিছুক্ষণ পর নিরু আবার আসে কফি নিয়ে,
__ “ এই মেয়ে তুমি খেয়েছো তো? ”
__ “ জ্বী খাচ্ছি। ”
__ “ বসো আমার পাশে।”
__ “ কেনো? ”
শুভ নিরুর হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়।
চলবে……………