প্রেমের মেলা পর্ব-১৬+১৭

0
628

#প্রেমের_মেলা
পর্ব:[১৬]
#বর্ষা

ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছেন ইসরাক খান।অনেক খোঁজাখুঁজি এবং বিভিন্ন মানুষের মাধ্যমে মেয়ের সন্ধান পেয়েছেন। তাইতো ছুটে আসা এদিকটায়।ইনায়া অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে নেয়।ইসরাক খান মেয়ের হাত ধরে ছলছল নয়নে বলেন,

”পাপাইয়ের ওপর অভিমান করে নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছো বেটা?”

ইনায়া অভিমানী কন্ঠে বলে,”আমার মতো মেয়ে থাকার চেয়ে মেয়ে না থাকাই তো উত্তম কে যেন বলেছিলো”

”তুমি আমার বেঁচে থাকার শেষ সম্বল।আর সেই তোমার ভয়ানক অবস্থার কথা শুনে কি করে টিকে থাকতে পারি! তুমি যেদিন মা হবে সেদিন বুঝবে সন্তানের অসুস্থতার কথা শুনলে পিতা-মাতার ওপর দিয়ে কি বয়ে যায়। সেদিন আমার বলা ছোট্ট কথাটায় তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো তা আমি জানি।তাহলে বলো তোমার এতো বড় মিথ্যে কথায় আমি কতটা কষ্ট পেতে পারি!”

ইনায়া কেঁদে দেয়। ইসরাক খান ধমক দেন।ইনায়া চোখ তুলে তাকায়।ইসরাক খান বলেন,

”আমার বেটা দূর্বল না যে সে কাঁদবে।আমার বেটা নিজের অনুভূতি লুকানো কি ভুলে যাচ্ছে!যাইহোক,আমাকে কি সে জড়িয়ে ধরবে না?”

ইনায়া ছুটে গিয়ে ইসরাক খানকে জড়িয়ে ধরে।গুলি চলায় রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়েছিলো।তা থেমে গেছে।অনেকে আবার তাদের দিকে দেখছে। মানুষের কাজই বা কি!ইনায়া চারপাশের মানুষদের এভাবে তাদের পর্যবেক্ষণ করতে দেখে পাপাইকে বলে,

”পাপাই চলো তুমি আমায় ড্রপ করে দিবে”

ইনায়া গাড়িতে উঠতে যাবে ঠিক তখনই অগোছালো আশিয়ানকে চোখে পড়ে তার।আশিয়ান ছুটে আসছে তারই দিকে।বুকটা ধক করে ওঠে।কি অগোছালো লাগছে গোছালো ছেলেটাকে। ভালোবাসা যেমন মানুষকে গোছালো করে,ঠিক তেমনি আগের চেয়েও অনেকাংশ অগোছালোও করে!ভালোবাসা যেমন বাঁচতে শেখায়,ঠিক তেমনি জীবন্ত লাশও বানায়!

আশিয়ান এসে জড়িয়ে ধরে ইনায়াকে।ইসরাক খান আশিয়ানকে দেখে আর বেরিয়ে আসেন না।তিনি জানেন ছেলেটা তার মেয়েকে বড্ড ভালোবাসে।তবে সব ভালোবাসার স্থায়িত্ব থাকে না। অধিকাংশ পুরুষ মানুষ ভালোবাসার মানুষটিকে স্ত্রী হিসেবে পেলে সম্মান করতে ভুলে যান।ভুলে যান ভালোবাসতে।যা অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের দিকে বর্তিত হয়।তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়েরা প্রেমিকের সাথে বিয়ে করলে আরো বেশি সন্দিহান হয়ে ওঠে,বেড়ে যায় ভালোবাসা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা অনেক গুণ।তখন তাদের এই ক্ষুদ্র তবে সম্পর্কের বিশালতা সৃষ্টিকারী অংশগুলো তারা না পেলেই ভাবে পুরুষ হয়তো অন্য নারীতে আসক্ত,তাকে আর তার পুরুষের চাই না!যেমনটা ফাবিহা সারওয়ারও একসময় ভেবেছিলেন। তবে ভুল বোঝাবুঝিগুলো এখন পানসে হয়েছে।

আশিয়ান ইনায়া জড়িয়ে থাকা অবস্থায় ভাবুক ইসরাক খানকে গাড়িতে দেখেন।ইনায়াকে ছেড়ে দ্রুত গাড়ির কাছে গিয়ে ইসরাক খানকে অনুরোধ করে,

”বাবাই আমি চাই না আমার জানকে হারাতে।প্লিজ বাবাই আমাদের বিয়ের তারিখ এখনই ফালাও।আজই কোর্ট ম্যারেজ করবো আমরা।প্লিজ বাবাই,প্লিজ”

ইসরাক খান কি বলবেন বুঝতে পারলেন না।তিনি ইনায়ার দিকে তাকিয়ে।ইনায়াও ইসরাক খানের দিকে তাকিয়ে।ইসরাক খান রাজি হলেন আশিয়ানের কথায়।আশিয়ান ঠোঁট কামড়ে ইসরাক খানের হাত দুটো ধরে মাথা ঝুঁকিয়ে দিলো।ইসরাক খান উপলব্ধি করলেন ফোঁটায় ফোঁটায় জল পড়ছে তার হাতে।তিনি অত্যন্ত খুশি হলেন।মেয়ের জন্য এরূপ ভালোবাসায় আবৃত মেয়ে জামাই পেয়ে।

ইনায়া ওনাদের এরূপ কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করতে করতেই চারপাশে নজর বুলায়।চোখ আটকে যায় অদ্ভুত দেখতে এক লোকের ওপর।রোগা পাতলা হলেও কি অদ্ভুত ভাবে চোরাদৃষ্টিতে বারবার ইনায়াদের দিকে তাকাচ্ছে। ইনায়া যখনই সেদিকে যেতে নিবে লোকটা ছুটে চলে গেল।ইনায়ার যা বোঝার সে বুঝে ফেলেছে।আগেই দেখেছিলো ওইদিকটায় সিসিটিভি ক্যামেরা আছে একবাসায়।সে সূত্রে লোকটার ছবি পাওয়া কষ্ট সাধ্য হবে না একদমই।

কাজী অফিসে বসে আছে আশিয়ান,ইনায়া এবং ইসরাক খান। অপেক্ষা করছেন ইশান আর ফাবিহা সারওয়ারের।মেয়ে করে বড় নাই বা করুক তারই তো মেয়ে ইনায়া। ফাবিহা সারওয়ার অতি দ্রুত এসে পৌঁছান।ইনায়াকে সামনে দেখে জড়িয়ে ধরেন।সেদিন ইনায়ার ওপর রাগ করে তাকে না সামলানোটা তার ভুল ছিল।তার তো বোঝা উচিত ছিল যে মেয়ে পাপাইয়ের স্নেহে,ভালোবাসায় বেড়ে উঠেছে, তার ওপর তার পাপাইয়ের কর্কষ ব্যবহার কি ইফেক্ট ফেলতে পারে!

”মাম্মামের সাথে এতো অভিমান যে কথাই বলবে না?”

ইনায়া মুচকি হেসে বলে,”ইনায়া সেহরিশ খান কারো সাথে অভিমান করে না”

ফাবিহা সারওয়ার বুঝতে পারেন মেয়ের বেশ অভিমান হয়েছে। তিনি আর কিছু বলার পূর্বেই ঝড়ের গতিতে ইশান এসে টর্নেডোর গতিতে ইনায়াকে জড়িয়ে ধরে চারপাশে ঘুরতে থাকে।তারপর দুজনেই পরে যেতে নিলে আশিয়ান ধরে ফেলে ওদের।তিনজন হেসে দেয়।ইশান ইনায়ার মাথায় গাট্টা মেরে দুষ্টামি করে বলে,

”চলে যখন গিয়েছিলি আমার ফিরে আসলি কেন?”

”আমি ফিরে আসায় বুঝি তোর কষ্ট হচ্ছে?”

ইনায়া ইশানকে আলতো হাতে মারে।ইশান ইনায়ার মাথায় চুমু খেয়ে বলে,

”প্লিজ ইয়ু আর হারিয়ে যাস না।চল এখন বাসায় যাই”

ইনায়া থেমে যায়।ইসরাক খানের দিকে ইনায়া তাকাতে ইশানও তার দিকে তাকায়।ইসরাক খান চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,

”আজ ইনায়া আর আশিয়ানের বিয়ে।আর কিছুদিন পরেই আমার বেটা সিঙ্গাপুর আশিয়ানের কাছে ব্যাক করবে আমার সাথে ”

ইনায়া অবাক হয়ে তাকায়।ইনায়া ইসরাক খানকে টেনে আরেকপাশে নিয়ে বলেন,

”পাপাই কি বলছো তুমি। তোমার সাথে মানে?ইশান আর মাম্মা ওরা কোথায় থাকবে?”

ভাবলেশহীন ইসরাক খান বলেন,”এতোদিন যেখানে ছিল সেখানেই ”

”পাপাই তুমি ভুল করছো!আরেকবার তো দিয়েছিলে তোমাদের সম্পর্ককে সুযোগ,তাহলে আবার কি হলো?”

ইসরাক খান ছোট থেকেই ইনায়ার সাথে বেষ্ট ফ্রেন্ডের ন্যায় আচরণ করেছেন।ইনায়ার ছোট বড় বহু বিষয় সম্পর্কেই তিনি অবগত।এই যে তিনি এটাও জানেন তার মেয়ে কারো প্রেমে পড়েছিলো,তবে কে সে তা এখনো অব্দি জানেন না।ইসরাক খানও মেয়েকে নিজের মনের অধিকাংশ কথাই নির্দ্বিধায় বলেন।তাইতো অশ্রুশিক্ত নয়নে ইনায়ার হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে তিনি বলেন,

”আমি যে ভালোবাসার জন্য আর ক্ষত-বিক্ষত হতে পারবো না।বেটা আমি তোমার একটি সুখী পরিবারের ইচ্ছে পূর্তিতেই শুধুমাত্র এখানে ওদের সাথে ছিলাম।বেটা যে নারী অন্যের মিথ্যে প্রমাণের কারণে আমাকে ভুল বুঝেছিলো,সে তো আবারও আমাকে অবিশ্বাস করতে পারে।যেই নারীর কারণে ইশানের সাথে আমার সম্পর্ক বাপ-ছেলের মতো নয়,ঠিক সেই নারীকেই কিভাবে আমি আবারো আপন করবো বল?আমার যে বড্ড ভয় হয় তোমাদের হারিয়ে ফেলার!আমার জীবনে এসে যদিওবা তারা হারিয়ে যায় আমি ততটা ক্ষত-বিক্ষত হবো না,যদিনা তারা আমার জীবন থেকে তোমায় কেড়ে না নেয়”

”পাপাই,আই প্রমিস ইউ ইনায়া সেহরিশ খান কখনো তার পাপাইকে ছেড়ে যাবে না।মরে গেলেও তোমার স্মৃতিতে বাসা বাঁধবে!পাপাই প্লিজ মাম্মামকে লাস্ট চান্স দেওনা।এতে ইশান পাপাই পাবে আর আমি মাম্মাম..প্লিজ পাপাই”

ইসরাক খান কি বলবেন বুঝতে পারলেন না।তার মেয়েটা যে খুব অল্প সময়ই তার কাছে আবদার করেছে।মায়ের মতো শাসন করেছে বটে তবে আবদার করেছে খুব কম। তবে দু’জনে মিলে বহু দেশ ঘুরে বেরিয়েছে।ইনায়ার ওপর তিনি কিছুই কখনো চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা অবশ্য করেননি।তবে এখন তিনি কিভাবে মনের ভয়কে জয় করবেন তাই ভেবে পাচ্ছেন না!

চলবে,

#প্রেমের_মেলা
পর্ব:[১৭]
#বর্ষা

আহত দৃষ্টিতে ইনায়া সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। হাঁটু গেড়ে মাথা নত করে তার সামনেই অশ্রু বিসর্জন করছে এক পুরুষ। চুলগুলো বেশ বড় বড়।হাত থেকেও রক্ত ঝরছে তার।ইনায়াও আহত তবে তার শুধু হাতেই গুলিবিদ্ধ।তবে হাঁটু গেড়ে থাকা লোকটার শরীর যে বেশ ক্ষত-বিক্ষত তা বেশ বোঝা যাচ্ছে তার শরীর রক্তাক্ত দেখে।

রক্তাক্ত পুরুষটি কাতর কন্ঠে ইনায়ার দিকে চোখ তুলে বলে,

”আমাকে মেরে ফেলো..না আমি সক্ষম হলাম আমার বোনের হত্যাকারীদের হত্যা করতে..আর না আমি সক্ষম হলাম তোমার কাছে বিজয়ী হতে”

ইনায়া ঠোঁট কামড়ে মুচকি হেসে একপায়ে ভর করে বসলো।ইনায়া বন্দুকটা কোমড়ে গুঁজে রক্তাক্ত পুরুষের দিকে তাকিয়ে বললো,

”ইশা তোমার দোষ এটা নয় যে তুমি খুনি..তোমার দোষ কি তা তুমি জানো?”

ইশা চমকায়। চকিত চাহনি স্থাপন করে।ইনায়া আবারো স্মিত হেসে বলে,

”তোমার দোষ একটাই তুমি প্রশাসনের কোনো সদস্য নও। প্রশাসনের সদস্য হলে ই.কে এর মতো তোমায়ও কেউ ধরতে পারতো না।আমি তোমায় অ্যাপ্রেসিয়েট করি তোমার নজির সৃষ্টিকারী কাজের মতো।তবে ওইযে আগেই বললাম তোমার দোষ কোথায়”

ইশা বুঝতে পারে না।এ কেমন পুলিশ যে কিনা তার অপরাধকে নয় বরং আফসোস করছে তার প্রশাসনের সদস্য না হওয়ায়। ইশা আশ্চর্যচকিত কেননা এ মেয়ে তাকে তার কাজের জন্য তাচ্ছিল্য,ঘৃণা না করে অ্যাপ্রেশিয়েট করছে।

ইনায়া হাতের ব্যথা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে আবারো বলে ওঠে,”ভাবছেন তো আমি কেন এতো অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলছি!”

”হুম”

ইনায়া মুচকি হেসে বলে,”ই.কে কি কাজ করে তা সম্পর্কে তো নিশ্চয়ই অবগত আপনি”

”হুম,ই.কে কয়েকশত রেপিস্টকে হত্যা করেছে। অবশ্য তাদের প্রাপ্য দিয়েছে।আই প্রাইড অফ হিম”

”সে কিন্তু মেয়েও হতে পারে ইশা”

বলে না বুদ্ধিমানের জন্য ইশারাই যথেষ্ট, ঠিক তেমনি ইশাকে ইনায়ার আর কিছুই বোঝাতে হলো না।ইশার প্রাণপাখি কিছুক্ষণের মাঝেই হয়তো উড়ে যাবে।ইশা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,

”আমি জানি আপনার জন্য আমাকে খুঁজে পাওয়া বড় বিষয় নয়।তবুও জিজ্ঞেস করবো কিভাবে খুঁজে পেলেন আমায়?”

পরিত্যক্ত গোডাউনে দৃষ্টি ঘুরিয়ে ইনায়া দাঁড়ালো বহু কষ্টে। এবং বললো,

”আপনি যেমন আমার পেছনে ছিলেন, ঠিক তেমনি আপনার পেছনে আমার ছায়া ছিলো ”

”মানে?”

”সিক্রেট‌”

”আ..

আর কিছু বলার পূর্বেই জ্ঞানহীন হয়ে পরে থাকে ইশা।ইনায়া বুঝে যায় ইশা আর বেঁচে নেয়। কেননা প্রচন্ড রক্তক্ষরণ হয়েছে ইশার। অবশ্য ইনায়া চাইলেও যে বাঁচাতে পারতো না ইশাকে।সে যে ভুলবশত হোক আর অন্যের প্ররোচনায় হোক না কেন কয়েক নির্দোষ ব্যক্তির প্রাণ কেড়েছে।আর যারা নির্দোষদের ওপর জুলুম করে তাদের নিকট কখনোই ইনায়া সহানুভূতিশীল নয়।

প্রেস-মিডিয়া একটি সংবাদই বারবার আঘাত করছে।কুখ্যাত ক্রিমিনাল ইশা প্রাণ হারিয়েছে। বাংলাদেশই ছিলো এই ক্রিমিনালের মাতৃভূমি।তবে কেন,কিভাবে কোথায় ছিলো এতদিন সে তা রহস্য। পুলিশদের জয়জয়কারে মিডিয়ার লোকেরা কোনো কসর ছাড়ছে না।

ইনায়া টিভিতে এই নিউজই দেখছিলো।তখনই ফোন আসে মোস্তফা জালালের।তিনি ওপাশ থেকে কোনো কথাই বলেন না।ইনায়াও কথা বলে না। কেননা সে মোস্তফা জালালের সাথে রাগ করে আছে তাই। অবশ্য মোস্তফা স্যার ওর ভালো এবং সেফটির জন্যই ওকে একা যেতে নিষেধ করেছিলেন।

”সরি মামনি,কংগ্রেচুলেশন।আর একটি সুখবর হলো-তোমার প্রমোশনের কথা আমি আলোচনা করেছি সিনিয়রদের সাথে।”

ইনায়া প্রমোশনের কথা শুনেও কোনো রিয়াক্ট না করে কথা ঘুরিয়ে ফেলে।বলে,

”বাবাই জানো আমার হাতটা কি যে ব্যথা করছে।আমি না দুই সপ্তাহের ছুটি নিলাম। একসপ্তাহ অবশ্য আমাকে দেওয়া হয়েছে।আর একসপ্তাহ নিলাম ভার্সিটিতে গিয়ে নোট কালেক্ট করতে হবে।ইশান দ্যা পড়াকুতে নিজের সুবিধা মতো একটু একটু লিখেছে।আমার ওতে হবে না”

”আচ্ছা মামনি,তুমি লিভ এ্যাপ্লিগেশন ইমেইল করো।আমি অ্যাপ্রুভ করে নিবোনি ”

ইনায়া কল রাখতেই কলিংবেল বেজে ওঠে।দরজা খুলতেই অবাক হয় কেননা আশিয়ান দাঁড়িয়ে আছে রক্তচক্ষু নিয়ে।ইনায়া কিছু জিজ্ঞেস করবে তার পূর্বেই গটগট করে রুমে চলে যায় সে।ইনায়া ফ্রিজ থেকে জুস বের করে আশিয়ানকে দেওয়ার জন্য রুমে যায়।দেখে আশিয়ান ফ্রেশ না হয়ে মাথা চেপে ধরে বসে আছে।

”আশিয়ান আর ইউ ওকে?”

আশিয়ান মাথা তুলে তাকায়।চোখ দু’টো প্রচন্ড লাল তার।জ্বালা করছে।আশিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

”ইনায়া আমার একটু একাকী সময় চাই প্লিজ ”

ইনায়া বুঝে যায় আশিয়ানের কিছু একটা হয়েছে। কেননা আশিয়ান ইনায়াকে সহজে ইনায়া বলে ডাকে না।জান,কলিজা এই শব্দগুলোই ব্যবহার করে। ইনায়া জুসের গ্লাসটা রেখে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।ইনায়া বেরিয়ে যেতেই দরজা আটকে দেয় আশিয়ান।মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে বলে,

”কেন জান কেন?কেন আমার কোনো গুরুত্ব নেই তোমার কাছে!আমার স্টাফ শুভ্রত্বের বিয়ে হয়েছে একবছর তারা এখনো একজন আরেকজনকে চোখে হারায়।আর তুমি আমার খোঁজটাও নেও না সারাদিনে।আদৌ তুমি আমায় ভালোবাসো তো!”

হায় রে বোকা!সে হয়তো জানেই না এই মেয়েটার নিকট সে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। উপরি ভালোবাসাই কি সব!কিছু ভালোবাসা তো গোপনীয় হয়।প্রকৃত ভালোবাসা তো প্রকাশ করা যায় না।আবার অনেকে প্রকাশ করতেই তো চায় না।যেমন ইনায়া। আশিয়ানের পেছনে তার সুরক্ষার জন্য কয়েকজন লোক লাগানো। অবশ্য এটা কিন্তু রহস্য ইনায়া সামান্য স্পেশাল ফোর্সের সদস্য হয়ে এতো টাকা কোথায় পাচ্ছে লোকজন হায়ার করার!

ইসরাক খান সোফায় বসে চা খাচ্ছেন। নতুনত্বের স্বাদ নিতে ইচ্ছে হওয়ায় কফি রেখে আজ চা খাওয়া। ফাবিহা সারওয়ার তারই পাশে বসে গল্প করছেন। সারাদিন দু’জন দু’জনের কর্মস্থলে কি কি করলো।ইশান অবশ্য ওখানে নেই কেননা সে তার বাবা-মায়ের কোয়ালিটি টাইম নষ্ট করতে একদমই আগ্রহী নয়।ইশান ঘরে এসেই বোনকে কল দেয়।বিয়ের পর জামাই নিয়ে আলাদা উঠেছে ইনায়া। অবশ্য এটা বড় বিষয় না বড় বিষয় হলো ইনায়া আহত আর যা ওর বাবা-মা কেউই জানে না। অবশ্য জানানো হয়নি।

—ইয়ু কেমন আছিস বনু

ইনায়া ভিডিও কলে অস্বস্তি বোধ করলেও ভাইয়ের কল তো আর কাটতে পারে না।রিসিভ করে। ইশানের প্রশ্নের উত্তরে বলে,

—আলহামদুলিল্লাহ, তুই

—ইয়ু আমি তোর বড় কিন্তু..তাই আমাকে ভাই বলে ডাকবি

—আসছে আমার বড় ভাই!

ইনায়া ভেংচি কেটে কথাটা বলে।ইশান খুনসুটিময় রাগ দেখায়। বেশ অনেকক্ষণ খুনসুটি করে দু’ভাইবোন। ভাই-বোনের সম্পর্কটা যে মধুময়।বড়/ছোট/জমজ ভাই-বোন থাকা ভাগ্যের বিষয়।তবে এই সম্পর্কের মানে বুঝতে হলে অবশ্যই কিছুটা দূরত্বের প্রয়োজন হয় কেননা সহজে পাওয়া জিনিসের মূল্যায়ন মানুষ করতে পারে না।তেমনি ইশান ইনায়াকে খোঁজেনি তাই তো হঠাৎ করেই ইশান বদলে গিয়েছিলো।তবে ইনায়া ইশানকে খুঁজে বের করেছিলো বিশাল জনসংখ্যার ক্ষুদ্র দেশে।তাইতো গোপনে হলেও ভাইকে সে ভালোবেসেই গিয়েছে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে