প্রেমের মেলা পর্ব-১৪+১৫

0
613

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ১৪ ]
#বর্ষা

ইনায়া মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আজ প্রথমবার পাপাইয়ের হাতে চড় খেয়েছে সে। চোখের অশ্রুগুলো আজ বাঁধ মানতে নারাজ। বাঁধাকে অগ্রাহ্য করে কপোল শুকানোর পূর্বেই তা আবারো ভিজে উঠছে।ইসরাক খান মেয়ের সাথে রাগ দেখিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছেন। ফাবিহা সারওয়ার ইনায়ার সাথে কোনো কথা না বলেই নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়েছেন। ইনায়া ঠাঁয় দাঁড়িয়ে।বারবার ভাবছে পাপাইয়ের বলা কথাটা।

”তোমার মতো প্রতারক মেয়ে থাকার চেয়ে মেয়ে না থাকাই ভালো।”

ইশান বোনকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করতে আসলে হাত উঁচিয়ে থামিয়ে দেয় ইনায়া তাকে।ইসরাক খান যখন ইনায়াকে থাপ্পর মেরেছিলো,বকেছিলো তখন ইশান সেখানে উপস্থিত ছিলো। বোনের হয়ে একটা কথাও সে বলেনি।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। ইনায়ার অনেক কষ্ট লেগেছে ব্যাপারটায়।তাইতো আর একমিনিটও না,সে দ্রুত নিজের ঘরে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নেয়।সেই নীল কভারের ডাইরিটা নিতেও ভুল হয়না ওর। কাউকে ফোন করে বলে,

”সেহরিশ ইজ কামিং ”

হাতমুখ ধুয়ে পোশাক পরিবর্তন করে ব্যাগ/ট্রলি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।সারা শরীর কাঁপছে ওর।তবুও স্থির আর থাকে না সে।প্রথমে গাড়ির কাছে গেলেও তা আর নেয় না কেন নেবে?এটা কি তার গাড়ি নাকি!এটা তো ইসরাক খানের গাড়ি যে কিনা ইনায়াকে মেয়ে হিসেবে/সন্তান হিসেবে চায় না।তাইতো বাড়ির সামনে থেকে রিকশায় উঠে পড়ে।ইশান বারান্দায় ছিলো তখন।রিনির সাথে কথা বলছিলো।ইশান ইনায়াকে ট্রলি হাতে যেতে দেখে দ্রুত ফ্লাট থেকে বেরিয়ে লিফটের গ্রাউন্ড ফ্লোরে আসে।তবে ততক্ষণে বাইরে এসে ইনায়ার আর হদিস সে পায়না।

গাড়ি নিয়ে খুঁজতে বের হয় যেদিক সে ইনায়াকে যেতে দেখেছিলো সেদিক।তবে দিকবিদিক করেও আর খোঁজ মেলে না ইনায়ার। সকালবেলা ইনায়ার পেছনে বেরিয়ে ছিল ইশান।আর এখন বিকাল।না,এখনো অব্দি খোঁজ মেলেনি!সন্ধ্যার আঁধার ছড়িয়ে পড়ার পূর্ব মুহূর্তে নিজেদের ফ্লাটে আসে সে।ইশানকে একলা দেখে ইসরাক খান প্রশ্ন করেন,

”তুমি একা কেন?তোমার বোন কোথায়?”

ইশান কখনো বড়দের সাথে মুখেমুখে কথা না বললেও ইনায়ার জন্য আজ তার সেই রেকর্ড ভেঙে ফেললো।বললো,

”তুমি না বলেছিলে ইনায়ার মতো মেয়ে থাকার চেয়ে না থাকা ভালো,তাহলে আবার ওর খোঁজ করছো কেন?”

ফাবিহা সারওয়ার রান্না ঘর থেকেই ধমকে ওঠেন ইশানকে।ইশান নিশ্চুপ হয়না তবুও। ফাবিহা সারওয়ারের ধমকে অগ্রাহ্য করে আবারো বলে,

”তোমাদের মেয়ে হারিয়ে গেছে।ওফস সরি তোমাদের মেয়ে না,আমার বোন হারিয়ে গেছে।আমার বোনটার কি দোষ ছিল?দোষ ছিল তোমাদের দুজনকে এক করার জন্য মিথ্যে অভিনয় করাটা।ইনায়ার দোষ ছিলো আমাদের একটা খুশি পরিবার তৈরি করা।”

ফাবিহা সারওয়ার কিছুই আর বলেন না।ইসরাক খান নিস্তব্ধ চোখের জল বিসর্জন করছেন। তিনি যে তার আদুরিনীকে বেশ কষ্ট দিয়েছেন আজ। কি করে সেই অভিমান হ্রাস করবেন তিনি।ইশান নিজ ঘরে চলে যেতে নিবে ঠিক তখনই কলিংবেল বেজে ওঠে।ইশান ভাবে হয়তো ইনায়া ফিরে এসেছে তাই দ্রুত দরজা খোলে।আশিয়ানকে দেখে মাথা গরম হয়ে যায় ইশানের।এই ছেলের কি খেয়েদেয়ে কাজকর্ম নেই, তখন বাংলাদেশে এর কি কাজ!আর এই ছেলেটাও তো ওর বোনকে কষ্ট দিয়েছে।ইশান কিছু বলবে তার পূর্বে আশিয়ানের বিদ্ধস্ত অবস্থা দেখে করুণা হয় তার।তাইতো রাগ না দেখিয়ে শান্ত মস্তিষ্কে কথা বলার প্রয়াস করে।

”কি চাই”

”ইনায়াকে”

”ইনায়া বাড়িতে নেই।আপনি আসতে পারেন”

ইশান দরজা লাগিয়ে নিতে নিলে আশিয়ান দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে।ইশান খেপে যায়।আশিয়ান ফ্লাটে প্রবেশ করেই চেঁচিয়ে ডাকতে থাকে ইনায়াকে ”জান,জান”বলে। ইসরাক খান এগিয়ে এসে দাঁড়ান আশিয়ানের সামনে‌। নিজেকে যথাসম্ভব আয়ত্তে এনে আশিয়ানকে জিজ্ঞেস করেন,

”তুমি এখানে?”

”বাবাই,ইনায়া কোথায়?আমার ওর সাথে অনেক কথা আছে।বলো না বাবাই ইনায়া কোথায়?”

ইসরাক খান কেঁদে ওঠেন। আশিয়ান ভয় পায়। ভীতি কন্ঠে বলে,

”বাবাই আমার জান ঠিক আছে তো?আমি তো আমার জানের সাথে অন্যায় করেছি।বলোনা বাবাই আমার জান কোথায়?”

আশিয়ান কাঁদতে কাঁদতে ইসরাক খানের হাত জড়িয়ে নেয়।কত ভালোবাসলে পুরুষ মানুষ অন্যদের সামনে কাঁদতে পারে তা বোঝাই যাচ্ছে।মাঝে মাঝে মস্তিষ্কে ভুলভাল খেয়াল আসে, ভুলভাল প্রশ্ন আসে তার একটির উত্তর আমাদের মন মতো না এসে উল্টা পাল্টা উত্তর আসলেই পুরুষ আর নারী নেই সবাই আউট অফ মাইন্ড হয়ে যায়।কি বলতে কি বলেছে তা তারা নিজেরাও জানে না।যখন অনেক দেরি হয়ে যায় তখন বুঝতে পারে তার দোষটা আসলে কোথায়!আর যতই ভালোবাসা থাকুক না কেনো মানুষ আউট অফ মাইন্ড হলে মানুষ ভালোবাসার মানুষটিকেও ভুলভাল বলে ফেলে।

ইনায়া বসে আছে মোস্তফা জালালের কেবিনে। মোস্তফা জালাল এখনো তাকিয়ে আছে ইনায়ার মুখশ্রীর দিকে। চোখ দু’টো ফোলা ফোলা। মোস্তফা জালাল রাগী দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তারপর বলেন,

”এই মেয়ে তোমার এই অবস্থা কেন?আর ব্রিজের ওপরই বা কি করছিলে? তুমি জানো না ওই স্থানটা কতটা বিপদজ্জনক!”

ইনায়া চোখ তুলে তাকায়।ছুটে গিয়ে মোস্তফা জালালের হাত ধরে মেঝেতে বসে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,

”বাবাই জানো আজ পাপাই না আমাকে বলেছে যে আমার মতো মেয়ে থাকার চেয়ে মেয়ে না থাকাই ভালো”

ইনায়ার কথায় মোস্তফা জালাল দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।তারা যে হীরের কদর করেনি।যেখানে মোস্তফা জালালের আফসোস ইনায়ার মতো মেয়ে না পেয়ে সেখানে নাকি নাকি ইনায়ার পাপাইয়ের দুঃখ ইনায়াকে মেয়ে হিসেবে পেয়ে! মোস্তফা জালাল ইনায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,

”বাবাই কিন্তু প্রাউড ফিল করি এই পুচকি অফিসারের ওপর!”

ইনায়াকে পুচকি বলায় ইনায়া হেসে ফেলে। কেননা অনেকদিন পর এই পুচকি ডাকটা শোনা।ইনায়া যখন প্রথমবার অর্থাৎ একবছর আগে স্পেশাল রেকোমেডিশনে ইনায়াকে নেওয়া হয় এই স্পেশাল ফোর্সে।ইনায়ার অফিসার হিসেবে রেকর্ড মাত্র একবছরের ছিল তখন। অবশ্য একজন অফিসার হতে তাকে কতগুলো দিন যে প্যারা সহ্য করতে হয়েছে তা শুধু সেই জানে। অবশ্য সার্প সুটার হওয়ায় এবং নিজ বুদ্ধিমত্তায় অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেতেই মাত্র তিনমাসে দশটা ধর্ষণের কেস,তিনটা নারী পাচার চক্রের উত্থান হয়েছে।

মোস্তফা জালাল ইনায়াকে স্বাভাবিক হওয়ার কথা বলে বাইরে যান।ইনায়া কেবিন সংলগ্ন ওয়াসরুম থেকে হাতমুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে আসতেই মোস্তফা জালাল বলেন,,,,

”ইনায়া প্রস্তুত তো সবার সামনে প্রকাশ্যে আসার জন্য?এতে কিন্তু তোমার ওপর বিপদের ছায়া দৃষ্টি স্থাপন করবে!”

”বাবাই ইনায়া এক চরিত্র আর সেহরিশ এক চরিত্র।সেহরিশ আজ সকলের সামনে যাবে ইনায়া নয়।আর ইনায়া সেদিনই সামনে আসবে যেদিন সেহরিশ বিপদে পড়বে!”

ইনায়ার রহস্যঘেরা কথাগুলো মোস্তফা জালাল অল্প হলেও বুঝতে পারেন।এই মেয়ের জীবনটাই একটা রহস্য।যতটা সহজ-সরল জীবন সে অন্যদের দেখায় ঠিক ততটুকুই গোলকধাধায় ঘেরা তার জীবন।এই ধাঁধা কি আদৌ কেউ সমাধান করে ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে!

অত্যাধিক আলোতে চোখ খোলা অসম্ভব।যেন চোখের মণিই ঝলছে যাবে এ আলোতে।একটা লোককে বেঁধে রাখা হয়েছে চেয়ারে।লোকটা বারবার বাঁচার জন্য চিৎকার করছে।না পারছে চোখ খুলে রাখতে,আর না পারছে শান্তিতে একটু বসতে!

লোকটা যখন বাঁচার জন্য ক্ষমা চাচ্ছে তখন এক পুরুষনালী কন্ঠস্বর কানে বাজে,

”মেয়ে মানুষ দেখলে গতরে জ্বালা হয় তাই না!তুই যখন তোর মালিকের বছর সাতেকের মেয়ের সাথে নোংরা কাজ করছিলি তখন মনে হয় নাই তোর বাড়িতেও তো ওই বয়সের মেয়ে আছে। ওর সাথেই যদি এমন হয়!”

লোকটা আর্তনাদ করে কেঁদে ওঠে এবং বলে,

”আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমার ভুল হয়েছে ”

পুরুষনালী কন্ঠস্বর তীব্র থেকে তীব্রতর হয়,”তুই ভুল না অন্যায় করেছিস।আর অন্যায়ের শাস্তি তুই পাবি”

তারপর সব নিরবতায় ছেয়ে যায়।একটু পর ওই তীব্র আলোর রশ্মি নিক্ষেপনও থেমে যায়।লোকটা ভাবে হয়তো এ যাত্রায় সে বেঁচে যাবে!তবে না পূর্বের পুরুষনালী সেই লোকটা এগিয়ে আসে এবং বলে,

”কি ভেবেছিলি বেঁচে গিয়েছিস?কখনোই না।আমার পুচকির সাথে যা হয়েছিলো তা আমি রুখতে পারিনি তবে অন্যের বোনদের সাথে ঘটা ঘটনার প্রতিশোধ তো ইশা নিতেই পারে!তোমরা আসো”

কয়েকজন লোক এগিয়ে আসে।পাশাপাশি দাঁড়িয়ে রুক্ষ হাসে। বাঁধা অবস্থার লোকটা ঝাঁপসা চোখে তাকায়। উপস্থিত সকলে ইশার আদেশ পাওয়া মাত্রই লোকটার জৈনাঙ্গ কেটে ফেলে।গলা কাটা মুরগীর মতো ঝটপট করতে করতে জ্ঞান হারায় লোকটা।ইশা মুখের গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে,

”তোমরা জানো একে কি করতে হবে।যাও ”

চলবে?

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ১৫ ]
#বর্ষা
”সেহরিশ ম্যাম, আপনার বলা ফাইলগুলো ”

একজন লোক কয়েকটা ফাইল এগিয়ে দেয় ইনায়ার দিকে।ইনায়া প্রথমে উঠে দাঁড়ায় এবং তারপর ফাইলগুলো নিয়ে হাঁটা ধরে।তমাল নামক এই লোকটা অনেকটাই চিপকু টাইপের।যখন থেকে মোস্তফা স্যার ইনায়ার পরিচয় করিয়েছেন তখন থেকেই যেন কেমন করে তাকায়।নিজ থেকেই এটা ওটা জিজ্ঞেস করে, সাহায্য করতে আসে। যেখানে মায়ের কাছে না কাঁদা অব্দি সে তার দুধের শিশুর ক্ষুধা লেগেছে বুঝছে পারে না,সেখানে তমালের এই ঘন ঘন সাহায্যের হাত বাড়ানোর ইনায়ার নিকট সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।তবে সে যেহেতু স্পেশাল ফোর্সের অফিসার, সেহেতু ইনায়া যদি সন্দেহ না করতো তবেই তা অস্বাভাবিক হতো।

ইনায়া ক্রেডিট কার্ড ইউজ করা বন্ধ করেছে। পাশাপাশি সিমটাও বন্ধ করে রেখেছে।আর মোবাইল পুরোপুরি রিফ্রেশ করে নতুন সিম লাগিয়েছে। বাসস্টপে দাঁড়িয়ে আছে সে এখন। সাথের লাগেজটা অবশ্য এখন সাথে নেই। পাপাইয়ের গাড়িটাও একজন লোকের মাধ্যমে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে। অবশ্য লোকটা ইনায়ার কলিগ ছিল।

একটু পর বাস থামতেই সে নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য জিজ্ঞেস করে বাসে উঠে পড়ে।রাত দশটা।এতো রাতে মেয়ে হয়ে বাসে করে বাইরে ঘুরে বেড়ানো প্রচন্ড রিস্কি।বাসে হাতে গোনা দশ পনেরোজন।আজ এত কম যাত্রী কেন তা ইনায়ার মাথায় আসলো না।ইনায়া কিছুক্ষণ ভেবে বুঝতে পারলো কিছু না কিছু গড়বড় আছেই এখানে।ব্যাগ থেকে গোপনে বন্দুকটা বের করে রেডি হয়ে রইলো।নিজ সিট থেকে পেছনের দিকে তাকিয়ে সামনে ঘুরে বসলো।চোখ বন্ধ করে পেছনে বসা ব্যক্তিদের কে কেরম আচরণ করছিলো তা ভেবে দেখলো। সন্দেহের দৃষ্টি পড়লো ব্ল্যাক শার্ট আর হোয়াইট শার্টের দুইটা লোক এবং পারপেল কালারের টপস পড়া একজন রমনীর ওপর। তাদের আচরণ অনেকটাই অদ্ভুত।তারাও চারপাশ স্ক্যান করছে।ইনায়ার সন্দেহ দৃঢ় হয়।তার মনে হয় এরা হয়তো পুলিশের সদস্য নয়তো ক্রিমিনাল।

বাস থেকে একে একে সবাই নেমে যায়।ইনায়া লাস্ট স্টপেজের টিকেট কিনেছে। তাইতো এখনো সে টাইপিং এর মাধ্যমে টিমকে খবরাখবর পাঠাচ্ছে।ইনায়া তিনদিন হলো স্পেশাল ফোর্স জয়েন করেছে সশরীরে। তাইতো ইশার কেসের পাশাপাশি আরো কয়েকটা কেসের তদারকিও করছে সে।

বাসে মাত্র চারজন পেসেঞ্জার আছে।ইনায়া ঘুমিয়ে পড়েছে।সাথে বাসে থাকা আরেকটা মেয়েও ঘুমঘুম।ব্ল্যাক শার্টের লোকটা গেম খেলছে।আর হোয়াইট শার্টের লোকটা কনটেকটারের সাথে কি নিয়ে কথা বলছে।আর মিটিমিটি হাসছে। কনটেকটার সামনে গিয়ে বাস ড্রাইভারের সাথে কিছু কথা বলে। দুইজনে পৈশাচিক হাসে। কনটেকটার গিয়ে ব্ল্যাক শার্টের লোকটাকে বলে,

”ভাই কখনো টাচ করছেন?”

”হুম,ফোন তো প্রতিদিনই টাচ করি।এখনও তো তাই করছি”

”আরে ভাই অন্যের মা* টাচ করছেন?আজকে কিন্তু সুযোগ আছে।দুই দুইটা পরী আর আমরা চারজন পুরুষ।বুঝতে পারছেন নিশ্চিত?”

”ভাই কীসব বলছেন! এগুলো অন্যায়।আর ধরা পড়লে পুলিশ কেস আর মান-সম্মান ধূলিসাৎ।”

”আরে ভাই ধরা পড়বেন কিভাবে? এগুলোকে আমাদের গোডাউনে নিয়ে যাবো।তারপর নিজেদের কাজ করে সেল করে দিবো অর্গেন সেলারদের কাছে!হা হা হা”

ব্ল্যাক শার্টের লোকটা আর হোয়াইট শার্টের লোকটার সাথে কনটেকটার হাসতে থাকে।এ হাসিতে আছে কুৎসিত আকাঙ্ক্ষা।বাস রাস্তা বদলায়। জঙ্গলের রাস্তা ধরে পুরাতন এক কারখানা জাতীয় স্থানে পৌঁছায়।ইনায়া চোখটা নিভু নিভু চোখে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করে। কনটেকটার হাতের উল্টো দিকে কোনো কিছু নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে।তাই ইনায়া ঝটপট চোখ খুলতেই রুমাল দিয়ে মুখটা চেপে ধরে ওর।জ্ঞান হারায় ইনায়া।

বদ্ধ রুমে পোশাক খুলতে ব্যস্ত কনটেকটার আর ড্রাইভার।অবৈধ কর্ম সাধন করতেই এই কর্ম। কনটেকটার ইনায়ার দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই গোপনাঙ্গে প্রচন্ড জোরে লাথি মেরে উঠে দাঁড়ায় সে।একটু দূরে রাখা ব্যাগ থেকে দ্রুত বন্দুক আনতে চায়।তবে পারে না।তার পূর্বেই ওই ড্রাইভার ঝাঁপিয়ে পড়তে নেয় ইনায়ার ওপর।ইনায়া ড্রাইভারের চুলে ধরে সামনে পেছন করে ছুঁড়ে মারে দেয়ালে। এতক্ষণ চুপ করে থাকার একটাই কারণ ছিলো তা হলো প্রমাণ জোগাড়।এই শয়তানগুলো নিজ মুখে এতক্ষণে সব কথা গলগল করে বলছিলো।আর যা ইনায়ার ব্যাগে আর পোশাকে থাকা গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে।তাইতো এখন আত্মরক্ষা করছে সে।

ইনায়া দুইটাকে এতক্ষণ ইচ্ছে মতো পেটায়।পালিয়ে যেতে নিলেই একজনের পা ভেঙে ফেলে ইনায়া। আরেকজনের পায়ে গুলি করে ন্যাংড়া করে ফেলে। তখনই ব্ল্যাক শার্ট আর হোয়াইট শার্টের লোক দুটো ঢোকে।তবে তারা অবাক হয় ইনায়াকে জাগ্রত দেখে এবং লোক দুটোর এ অবস্থা দেখে।ইনায়া ওই লোক দুটোর দিকেও বন্দুক স্থাপন করে।

”একপাও নড়াচড়া করা চেষ্টা করবেন না। গুলি করতে কিন্তু আমার হাত একফোঁটাও কাঁপবে না”

ব্ল্যাক শার্টের লোকটা হাত উপরে রেখেই বলে,”মিস আমরা পুলিশের লোক।প্লিজ বন্দুক নামান।”

ইনায়া গম্ভীর কন্ঠে বলে,”প্রমাণ কি আপনারা পুলিশের লোক?”

হোয়াইট শার্টের লোকটা প্যান্টের পকেট থেকে একটা আই.কার্ড ইনায়ার দিকে গড়িয়ে দেয়।ইনায়া লক্ষ্য স্থির রেখেই আই.কার্ডটা দেখে নেয়।বন্দুক নামায়।তখনই প্রবেশ করে আরো তিন চারেক মানুষ। তাদের মাঝেই একজন বলে ওঠে,

”অফিসার আপনারা যেতে পারেন।এই দুটোর দায়িত্ব আমাদের ”

মোস্তফা জালালকে দেখে স্যালুট জানায় দুইজন।হোয়াইট শার্টের লোকটার নাম খোকন মিয়া।আর ব্ল্যাক শার্টের লোকটার নাম নোমান।আর জ্ঞানহীন মেয়েটার নাম শম্পা আক্তার।এরা পুলিশ কি করে হলো ইনায়া বুঝতে পারছে না। ক্রিমিনাল ধরতে এসে যদি পুলিশ অফিসাররাই জ্ঞান হারিয়ে ভিক্টিম হয়ে ওঠে তাহলে সাধারণ জনগণের কি হবে!

ইনায়া বেরিয়ে আসে তার সহকর্মীদের সাথে। মোস্তফা জালালের সাথে ইনায়া,খোকন মিয়া,নোমাক এবং শম্পা চলে যায়।আর তমাল,শাহেদ,রেজা ওনারা যান ওই ক্রিমিনালগুলোকে নিয়ে।

কিঞ্চিত সময়ের ব্যবধানেই জঙ্গলের মাঝে একটা গাড়ির লাইট জ্বলে ওঠে।গাড়ির ভেতর বসে থাকা লোকটা মুচকি হেসে বলে,

” প্রাউড অফ ইউ অফিসার সেহরিশ খান।প্রাউড অফ ইউ।তোমার সাথে খেলতে মজা হবে।তবে আসলে কি জানো? তোমার মতো অফিসার যদি আগে থাকতো তবে আমাকে ইশা হতে আর হতো না ”

পরদিন দুপুরে ইশান দাঁড়িয়ে আছে রিনির সামনে।রিনি গাল ফুলিয়ে বসে আছে।কারণ একটাই ইশান এতদিন ভার্সিটিতে আসেনি।এমনকি কারো সাথে যোগাযোগও‌ রাখেনি।রিনি গাল ফুলিয়ে বলে,

”ইশান তুমি একা কেন আমার ননদিনী কোথায়?”

”ইনায়া বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে”

রিনি অতি অবাক হয়ে চেঁচিয়ে উঠে বলে,”হোয়াট?”

”হুম”

”ইশান তুমি ওকে খোঁজার চেষ্টা করেছো?”

”না”

”কেন?”

”যে হারিয়ে গেছে তাকে খুঁজে আনা সম্ভব।তবে যে আত্মগোপন করে তাকে খোঁজা অসম্ভব ”

ইশান আর রিনির কথার মাঝেই আশিক আর রুমানা এসে হাজির হয়।আশিক এসে ইশানের কাঁধে হাত রাখে।রুমানা রিনির দিকে তাকিয়ে একটু হাসে।আশিক আর রুমানা একসাথেই জিজ্ঞেস করে ওঠে,

”দোস্ত ইনায়া কোথায়?”

”আত্মগোপন করেছে!”

রিনির কথার মানে দুজনের কেউ বোঝে না।ইশান চলে যাচ্ছে ওখান থেকে।নিশ্চুপ সে।আশিক আর রুমানা চেপে ধরে রিনিকে।রিনি ইশানের বলা কথাগুলোরই আবৃত্তি করে।আশিক আর রুমানার মস্তিষ্কে চিন্তারা বাসা বাঁধে।সিনিয়র ভাই তিতাস আজ তাদের কাছে ইনায়ার খবর জানতে চেয়েছে।তবে তারা দিতে ব্যর্থ ছিলো।

ইশান বাসায় আসতেই দেখতে পায় ইসরাক খানও মাত্রই বাড়ি ফিরেছেন।গায়ের থেকে ব্লেজার খুলে হাতে নিয়েই ফোনের ওপর ফোন করে চলেছেন তিনি।শেষবার কলটা হয়তো রিসিভ হয়।কিছু কথোপকথনও যে হয় ইশান তা বেশ বুঝতে পারে।ইসরাক খান নিজ ফ্লাটে না গিয়ে পার্কিং থেকেই আবারো গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আসেন।

ইসরাক খান আজিমপুরে একটা গলিতে গাড়ি পার্ক করে সামনে এগিয়ে যান।সামনে থেকে আসা কাঙ্ক্ষিত রমনীকে দেখে নিস্তব্ধ চোখের জল ফেলেন।ইসরাক খান এগিয়েও যান না আবার ফিরেও আসেন না।ঠিক তখনই কোথা থেকে ধেয়ে আসা একটা গুলি লাগে তার সামনে থাকা দোকানে। অবশ্য সেখানে তো সেই দাঁড়িয়ে ছিলো। তখনই ধ্যান ভাঙতে বুঝতে পারে কাঙ্ক্ষিত ওই রমনীটিই তাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে। বাঁচিয়ে দিয়েছে।

আশিয়ান পাগলের মতো এদিক সেদিক ঘুরছে গাড়ি নিয়ে।ইনায়াকে খুঁজছে।পত্রিকাতেও মিসিং সংবাদ দিয়ে পুরষ্কার ঘোষণা করেছে।ইনায়া খবরের কাগজে নিজেকে দেখে অবাক হওয়ার পাশাপাশি আশিয়ানের বাংলাদেশের নাম্বার দেওয়া দেখে আরো বেশি অবাক হয়।

আশিয়ানের কাছে কয়েকটা ফেক কল এখনো অব্দি এসেছে। আশিয়ানের রাগ লাগছে।অনেক বেশি রাগ লাগছে।মনে হচ্ছে সে সবকিছু পুড়িয়ে দিবে। আশিয়ান নিজ মনে বিড়বিড় করে আওড়ায়,

”জান তোমাকে যে আমার চাই।তুমিহীন জীবনটা মরণের মতোই লাগছে।জান,ও‌ জান পৃথিবীর মানুষগুলো কেন আমার অনুভূতি নিয়ে খেলছে?কেন আমাকে ফেক কল করছে!”

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে