#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ১২ ]
#বর্ষা
ইনায়া প্রশস্ত হেসে তাকিয়ে আছে রান্নার ঘরের দিকে।ইসরাক খান এবং মিসেস ফাবিহা সারওয়ার খুনসুটি করতে করতেই রান্না করছেন। অবশ্য ইসরাক খান সাহায্য করছেন তার স্ত্রীকে।আজ সপ্তাহ পেরতে চললো একসাথে আছেন ইসরাক খান, ফাবিহা সারওয়ার,ইশান আর ইনায়া।ইসরাক খান আর ফাবিহা সারওয়ারের ভুলবোঝাবুঝিও বাতাসে মিলিয়ে গেছে।ইনায়ার আফসোস ইশ,এই সপ্তাহটা যদি আগে আসতো।তাহলে বুঝি তারা আরো আগেই খুশি/একত্রিত পরিবার হতো।ইনায়া, ইশানের জন্য আবারো রেজিষ্ট্রি ম্যারেজ করেছেন ওনারা।ইনায়া যে নাছোড়বান্দা বিয়ে করো নয়তো আমি তোমাদের কারো সাথে কথা বলবো না এরকম কথা বলে দিয়েছে। তাইতো বিয়ে করতে হলো।
ইনায়া হাসছে।ইশান মোবাইলে গেম খেলছিলো। হঠাৎ ইনায়ার দিকে দৃষ্টি ফেলে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে জিজ্ঞেস করে,
”আচ্ছা,ইয়ু তুই জানলি কিভাবে আমি,মম কোথায় আছি?আর তুই এটাই জানলি কিভাবে যে আমি কোন ভার্সিটিতে?”
ইনায়া রহস্যময়ী হাসে। ইশানের মনে হয় এই মেয়ে যেন অদৃশ্য দেয়ালে ঘেরা রহস্যময়ী এক নারী।ইনায়া সোফা থেকে উঠে নিজ রুমে ফিরে আসে। চারপাশে এই সাতদিনই অজস্র স্মৃতিরা বাসা বেঁধেছে।ইনায়া ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে।নীল রঙা ডাইরিটা হাতে নেয়। কতগুলো কথা বিশ্লেষিত। প্রথম পৃষ্ঠায়,,,,
”আমি ভালো নেই, অবশ্য আমার ভালো থাকতে নেই।আমি অপরাধী,আমি খুনি”
দ্বিতীয় পৃষ্ঠায়,,,
”আমি ঘৃণা করি আমার জন্মদাত্রীকে,আমি ঘৃণা করি নিজেকে কেননা আমি সেই প্রতারকের সন্তান ”
এমনি করে অজস্র অভিযোগ লেখা প্রতিটা পৃষ্ঠায়।তবে অভিযোগের মাঝে কনফেস করা হয়েছে অজস্র অপরাধের কথা।যেন এক অপ্রকাশিত বই এটা।পঞ্চাশ পৃষ্ঠায় লেখা ভয়ংকর এক ঘটনা,,,
”আমি তাকে খুন করতে চাইনি।আমার করা প্রথম খুন।লোকটা আমায় বিশ্রীভাবে ছুঁতে চেষ্টা করেছে।আমাকে অপবিত্র করার চেষ্টা করেছে।নোভাকে সেই লোকটা মেরে ফেলেছে। নিজের মেয়েকে যেই লোক হত্যা করতে পারে এবং মেয়ের বয়সী এক মেয়েকে অপবিত্র করার চেষ্টা করতে পারে তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।কোনো অধিকার নেই।আমি তার অস্তিত্ব ধ্বংস করেছি।তার হাত আর জিহ্বা কেটে ফেলেছি।সে যেখানেই থাকুক না কেন যেই জিহ্বা দিয়ে খারাপ,নোংরা কথা বলেছে তা দিয়ে আর সে কথা বলতে পারবে না।আর না পারবে সেই নোংরা হাত দিয়ে কাউকে স্পর্শ করতে!”
সাতাশি পৃষ্ঠায়,,,,
”আজ তৃতীয় খুন করেছি আমি।এ খুনগুলো বেঁচে থাকা না থাকা প্রশ্ন সৃষ্টিময় খুন।আমি কাউকেই একদম মেরে ফেলেনি। বাঁচিয়ে রেখেছি তাদের অনৈতিকতার,মানবিকহীনতার শাস্তি দিতে।নারী ধর্ষণ! এদেশে নাকি ধর্ষণ হয়না!এদেশেও হয় তবে তা টাকার বিনিময়ে প্রাপ্যতা বলে।তবে এবারের ধর্ষণ ছিল মেয়েটার অনিচ্ছায়। জোরজবরদস্তির।মেয়েটা আমার নিকট ভিক্ষা চাইছিলো তাকে সাহায্য করতে আমি পারিনি।আমাকে বাঁচাতে পারলেও পুলিশ অফিসাররা ওই মেয়েটাকে বাঁচাতে পারিনি।আমার স্টেটমেন্ট গ্রায্য হয়নি কেননা আমার শরীরে হ্যালুসলিউশনের ড্রাগ ইনজেক্ট করার রিপোর্ট দেখিয়ে আদালতে প্রমাণ করা হয়েছিলো ওই জানো***** নির্দোষ।আমি ছাড়িনি।আমি মেরে ফেলেছি!ভালো করেনি?”
ইনায়ার কি এ সত্যিই কোনো রুঢ় অতীত নাকি সে কোনো সাহিত্যিক রচনায় ব্যস্ত। তাছাড়া কেউ কি ডাইরিতে নিজের ঘটনাগুলো ব্যাখ্যা করলে পৃষ্ঠা নাম্বার দেয় নাকি!হয়তো সাহিত্যিক রচনা নয়তো…!
ইনায়া ডাইরিটা নিজের রুমের মাঝেকার সবচেয়ে সুরক্ষিত জায়গায় রেখে দেয়।তারপর বিছানায় এসে শুতে নিবে তখনই দরজায় করাঘাত হয়।দরজা খুলে ইনায়া কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিতে দেখে মুচকি হাসে।আশিয়ান দাঁড়িয়ে। ইনায়া খবরীর কাছ থেকে আগেই জেনেছে আশিয়ান বাংলাদেশে আসছে। তাইতো আর আশ্চর্য হয়নি ইনায়া।
আশিয়ান মুড অফ করে ঘরে এসে বসে।ইনায়া দিকে তাকিয়ে আফসোসের সুরে বলে,
”তোমাকে এই আল্লাহর বান্দা হয়তো সারপ্রাইজ দিতে পারবে না আদৌ কখনো! আচ্ছা তুমি পুচকি মেয়ে তোমার খবরী আসে কোথা থেকে?”
সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় আশিয়ান।ইনায়া হঠাৎ শীতল কন্ঠে বলে,
”মিষ্টার আশিয়ান মির্জা শুনো সঠিক সময় আসলে সব জানতে পারবে।আর মাত্র কয়েকদিন অপেক্ষা করো।তারপর অবশ্য তোমার ভালোবাসার একটা পরীক্ষাও যে তোমায় দিতে হবে ”
”মানে?”
”মানে টানে পরে শুনো।আমি এখনো লাঞ্চ করিনি।ফ্রেশ হয়ে খেতে চলো দ্রুত ”
ইনায়া কিঞ্চিত সময়ের ব্যবধানে কথা ঘোরাতে উস্তাদ।আর একবার যদি সে কথা ঘোরায় তবে আর আগের প্রশ্নের উত্তর এখন পাওয়া যাবেনা তা বেশ প্রকাশিত।আশিয়ান ইনায়ার কানের লতিতে চুমু খেয়ে নেশালো কন্ঠে বলে,
”তুমি একটা সাইকো তা কি তুমি জানো?”
ইনায়ার শীতল দৃষ্টির এখনো পরিবর্তন হয়নি।আশিয়ান ইনায়ার কোমড় ধরে টান মেরে নিজের কাছে এনে দাঁড় করায়।তারপর ধীম কন্ঠে বলে,
”তুমি আমাকে বারবার যেমন করে তোমার প্রেমে, আসক্তিতে,মায়াতে,কথাতে আহত করে তা কি সাইকোগিরি নয়!”
আশিয়ানকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠায় ইনায়া।একটু পর মিসেস ফাবিহা সারওয়ার খেতে ডেকে যান ওদের।দুপুরে খাওয়ার সময় ইনায়ার খাবার তালুতে ওঠে। আশিয়ানসহ উপস্থিত সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইসরাক খান সবচেয়ে বেশি উদগ্রীব হয়ে ওঠেন মেয়ের জন্য। তাইতো নিজ হাতে ইনায়াকে খাইয়ে দেন।ইশান ছলছল চোখে তার ডেডের দিকে তাকিয়ে।ইনায়া লক্ষ্য করে।তাইতো পাপাইয়ের কানে কানে সকলের অগোচরে বলে,
”পাপাই ইটস্ নট ফেয়ার। তুমি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছো একবারও ভেবেছো ইশান এতে কষ্ট পেতে পারে।ওকে তো তুমি কখনো খাইয়ে দেও নাই!”
ইনায়ার কথায় জিহ্বায় কামড় দেয় ইসরাক খান।ছেলের মুখের সামনেও খাবার ধরেন।তারপর একে একে স্ত্রী,সন্তান,হবু জামাই সবাইকেই খাইয়ে দেন।
আশিয়ান যেন এতোদিন বাদে এক পরিবার পেয়েছে। পরিবারের অভাবটা সে সারাজীবনই উপলব্ধি করেছে।তবে ইনায়ার কারণে তার ভাগ্যে একটা পরিবারও জুটেছে। খাওয়া দাওয়া শেষে কিছুক্ষণ গল্পগুজব হৈ হুল্লোড় চলে। রিনিও যোগ দিবে বিকালে ওদের সাথে।কোথাও একটা ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করা হয়েছে।ইনায়া অনবগত।
★
”স্যার,মাফিয়া ইশাকে কি আদৌ খুঁজে পাওয়া যাবে?আমরা তো গোপন সূত্রে এতোটুকুই জেনেছি যে ইশা বাংলাদেশে।আর কিছুই না।প্রবাসী তো কতশত আছেন যারা বাংলাদেশে আসছেন,যাচ্ছেন।কিভাবে বুঝবো কে ইশা?”
গাজীপুর জেলার এসপি কৌতুহল এবং চিন্তিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করেন।স্পেশাল ফোর্স গঠন করা হয়েছে ওদের। উদ্দেশ্য ইশাকে ধরা।তবে এমনও তো হতে পারে যে ওদের এই স্পেশাল ফোর্সের স্পেশাল পার্সনই ইশা!তবে এখানের অধিকাংশের ধারণা ইশা কোনো মেয়ে নয় বরং ছেলে। কেননা বিংশ শতাব্দীর অধিকাংশ বাবা-মা তাদের সন্তানদের নাম নবি-রাসুলদের নামে রাখে।সেক্ষেত্রে ইশা যে কোনো ছেলে তা ধরাই যায়।
স্পেশাল ফোর্সের টিম লিডার ঢাকা সিটির এসপি মোস্তফা জালাল। মাঝবয়সী হয়েও বুদ্ধিমত্তার প্রদর্শন সে করেই চলেছে। বিয়ে সাদীতে নিজেকে আর জড়াইনি।আর বলার কারণ এক রমনীকে হৃদয়ে স্থান দিয়েছিলেন তিনি তরুণ বয়সে।তাকে যে আর বের করতে পারেননি।তাইতো রমনীর অন্য স্থানে বিয়ের পরও তাকেই হৃদয়ে নিয়ে আছেন।হায়রে প্রেম, ভালোবাসা!কেউ পায় পূর্ণতা আর কেউ সারাজীবন অপূর্ণতা নিয়েই কাটায়!
মোস্তফা জালাল নিজের সবচেয়ে প্রিয় অফিসারকে ফোন দেন। অবশ্য সে একজন মেয়ে।যাকে তিনি পিতৃস্নেহ প্রদানে একদমই পিছু পা হন না। কেননা প্রত্যেক পুরুষেরই স্বপ্ন থাকে পিতৃত্ব উপভোগের। তাইতো সন্তান না হলেও সন্তানের মতোই স্নেহ করেন।ফোন দেন ”বাচ্চা” দিয়ে সেভ করা নাম্বারটায়! বাঙালিরাই আবেগ প্রবণ। তাইতো অধিকাংশের মাঝে কিছুসংখ্যক রক্তের সম্পর্কের বাইরে এতো গভীর সম্পর্ক স্থাপন করে যা বলার বাইরে।
”আসসালামু আলাইকুম,স্যার।আমি কালকে জয়েন করছি”
”ওয়ালাইকুমুস সালাম।আমি কি প্রফেশনাল কথা বলতে ফোন দিয়েছি নাকি।আমি তো আমার মেয়েকে ফোন দিয়েছি।তাই নো স্যার ফ্যার জাস্ট বাবাই। ওকে?”
”ইয়েস বাবাই”
”তা আমার মামনির মাস্টার প্ল্যানের কি খবর?”
”ফলাফল পজেটিভ। আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহর রহমতে ইনশাআল্লাহ খুব দ্রুত সশরীরে সকলের সামনে থেকেই কার্য চালিয়ে যাবো মিশন ইশার ”
চলবে?
#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ১৩ ]
#বর্ষা
ইসরাক খান রাতদুপুরে মেয়ের সাথে এই শীতের মাঝে রাত্রিবিলাস করছেন ছাদে বসে।ইসরাক খানের বুকে মাথা এলিয়ে শুয়ে আছে ইনায়া।ইসরাক খান আলতো হাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। ইনায়া মুখ তুলে পিতার দিকে একবার তাকায়।আজকে যখন ইনায়া বাসা থেকে হঠাৎ উধাও হলো কি দুশ্চিন্তায় না তিনি পড়লেন।আরেকটু হলেই হয়তো হার্ট অ্যাটাক করে বসতেন।ইনায়ার আম্মু একটু বকাঝকা করলেও ইসরাক খান জড়িয়ে ধরেন মেয়েকে। চোখের মণি হারালে যে দুনিয়া অন্ধকার!
ইনায়া ইসরাক খানের কপোলে আলতো করে চুম্বন করে বলে,
”পাপাই তুমি আমাকে বেশি প্রায়োরিটি দিচ্ছো..ইশান এতে কষ্ট পাবে”
ইসরাক খান ইনায়ার কথা মুচকি হাসেন।খকখক করে বার কয়েক কেশে গলা পরিষ্কার করেন। তারপর মধ্যম আওয়াজে বলেন,
”আচ্ছা বেটা তোমার মাম্মা যখন খাবার টেবিলে তোমার আগে ইশানের দিকটা দেখে তখন তোমার কেমন লাগে?আমি জানি কষ্ট হয়।তাহলে এখন যদি আমিও তোমার মাম্মামের মতো ইশানকেই তোমার মতো স্নেহ করি,তবে যে তোমার কষ্টটা দ্বিগুণ হবে।হ্যা আমি জানি আমার বেটা অত্যন্ত বুদ্ধিমতী।সে নিজেকে বোঝাতে সক্ষম।তবে আমি চাইনি আমার বেটার মনে তার পাপাইকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠুক।আমি তো এতটুকুই চাই আমার রাজ্যের রাজকন্যা হেসেখেলে আমার পাশে থাকুক সারাজীবন”
ইসরাক খান শেষের কথা সমাপ্তি করতেই তার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রুকণা।ইনায়া বুঝে ফেলে এর কারণ কি।ব্রেন টিউমারের ঘটনাই এর কারণ।ইনায়া ভুলেই গিয়েছিলো সত্য প্রকাশের কথা।তাইতো এখন তার মাথায় চাপটা একটু গভীর হয়ে পড়লো।
ইনায়া কিছু একটা ভেবে অনুরোধের স্বরে বললো,
”পাপাই আমাকে কখনো অবিশ্বাস করো না প্লিজ ”
ইসরাক খান চমকান।তবে ওতোটা না।মেয়ের অনুরোধে তিনি মেয়েকে চিল পাখি বানিয়েছেন।যেই পাখি বৃষ্টির প্রবল ঝড়ের মাঝেও আকাশে মেঘদের পেরিয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়ায়।তিনি ইনায়া চিল বানিয়েছেন যেই পাখি মেঘের কাছে হার মেনে বাড়ির উদ্দেশ্যে না গিয়ে লম্বা উড়াল দেয় মেঘদের উপর দিয়ে। ইসরাক খান ভরসার হাত রাখেন মেয়ের মাথায়।তারপর ঘড়ি দেখে বলেন,
”বেটা এখন ঘরে যাও।ঘুমোও গিয়ে।রাত একটা পঁয়তাল্লিশ।গুড নাইট।লাভ ইউ ”
”গুড নাইট এন্ড লাভ ইউ টু পাপাই”
ইনায়া নিচে চলে আসে।আশিয়ান দুইদিন থেকেই আবারো সিঙ্গাপুর ব্যাক করেছে।ছেলেটা শান্তিতে একসপ্তাহ কাটাতেও পারেনি। কেননা ইনায়ার সাথে একটা বিষয়ে ঝগড়া হয়েছে তার।আশিয়ান দুষ্টামি করে বলেছিলো যে সে ইনায়াকে বিয়ে করতে পারবে না কেননা সে ইনায়াকে বিয়ে করলে তার ব্যবসার ক্ষতি হবে।ইনায়া তাচ্ছিল্য হেসে বলেছিলো,
”কারো জীবনে এসো না যদি না সেই ব্যক্তির শেষ অব্দি থাকতে পারো।কারো জীবনে এসো না সময় অতিক্রম করতে কেননা সে ব্যক্তি তোমার সাথে কাটানো সময়েই বন্দি হয়ে যেতে পারে।কারো জীবনে এসো না যদি নিজের বাহ্যিক ক্ষতির চিন্তায় সামনের ব্যক্তির অন্তরালে রক্ত ক্ষরণ করতে হয়।”
তারপর আশিয়ান ইনায়ার এতো সিরিয়াসপনা এবং অন্যান্য মেয়েদের মতো ন্যাকামো করতে না দেখে তেতে ওঠে।রাগে এবং ক্ষোভের বশে নিজের অজান্তেই দাগ লাগিয়ে দেয় ইনায়ার হৃদয়ে। বলে ওঠে,
”তোমার জায়গায় অন্য যেকোনো মেয়ে হলে কেঁদে কেটে একাকার করতো।আর তুমি সেখানে আমায় জ্ঞান দিচ্ছো! আচ্ছা তুমি কি সত্যিই মেয়ে নাকি…!”
আশিয়ান পুরো কথা সম্পূর্ণ করতে পারেনি।ইনায়ার চড়টা সইসই লেগেছে তার গালে। আশিয়ানের গাল যেন পচে গেছে এমন অনুভব করে সে।লাগে ক্ষোভে ব্লেজার হাতে বেরিয়ে যায়।তবে আবারো ফিরে এসে লাগেজ নিয়ে যায়। ইনায়া দরজা আটকে মেঝেতে বসে পড়ে।
মেয়েদের হৃদয় অত্যন্ত কোমল।যতদিন পুরুষ তুমি আগলে রাখবে তাকে,ততদিন তার কোমলতাই পড়বে চোখে তোমার।যখন দেখবে সে কঠোর হতে শুরু করেছে।তখন বুঝে নেবে তোমার ভালোবাসায় গাফিলতি আর অপমানের পরিমাণ কয়েকশগুণ বেড়েছে। অধিকাংশ মেয়েরা ভালোবাসা, সম্মান আর আমার সময় চায়।যদিওবা অধিকাংশ পুরুষ এগুলোকে ন্যাকামো ভেবে উড়িয়ে দেয়। তবে কিছু সংখ্যক দুষ্টামির বশে বলা কথা থেকে কখন ঝগড়া লাগিয়ে দেয় তখন আর তা বোঝা হয়ে ওঠে না।নারী সব সহ্য করতে পারে।তবে আত্মসম্মানে আঘাত ঘটলে এখনকার যুগে অধিকাংশ নারীই সম্মানহীনা বাঁচতে চায় না।এমনকি প্রিয় মানুষ আত্ম-সম্মানে আঘাত করলে তাকে ছেড়ে দিতেও বিন্দু মাত্র সঙ্কোচ নারী জাতির মাঝে নেই। ইনায়ার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আশিয়ান চলে যাওয়ার পর সারারাত ঢুকরে কেঁদেছে।তবে পরদিন সকাল থেকে আজ তৃতীয় তম তারিখে সে চোখের জল বিসর্জন করেনি আর। কার জন্য করবে যে দুঃখিত না বলে আরো অপমান করেছে তার জন্য!
★
বারে বসে ড্রিংকস করছে আশিয়ান। সিঙ্গাপুরের রয়েল বার এটা।ক্যাসিনোও আছে এর বিপরীত পার্শে তবে তা আড়ালে।উপরি ব্যবসা বারের।বার টেন্ডাররা বিভিন্ন ধরনের প্রদর্শনী দেখাচ্ছে।কেউ বিয়ারের বোতলে আগুন লাগিয়ে তিনটা আগুনাক্ত বোতল নিয়ে প্রদর্শনী করছে।আবার কেউ মুখে নিকটে আগুন জ্বালিয়ে প্রদর্শনী দেখাচ্ছে।কি ভয়ংকর ব্যাপার স্যাপার। এদের কি প্রাণের ভয় নেই!সবারই আছে। পেটের দায়েই এই বিপজ্জনক কাজকে আপন করা।
আশিয়ানের দৃষ্টি ঘোলা।একটু অতিরিক্ত চড়ে গেছে।ভদকার মতো ড্রিংকস যার ষাট শতাংশই অ্যালকোহল।তা খেলে বুঝি চড়বে না!আশিয়ান উঠে দাঁড়াতে চায় তবে ঘোলাটে দৃষ্টির কারণে বুঝে উঠতে পারে না আদৌ পা ফেলেছে আর কোথায় পা ফেলেছে তা।তাইতো ঠাস করে মেঝেতে পড়ে যায়। একজন সার্ভেন্ট উঠাতে আসলে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। কেননা এক নয় যেন চার।হুবুহু এক। আশিয়ান নিজেই নিজেকে প্রশ্নোক্ত করে এবং বলে,
”আশিয়ান বেবি তুই এতো খেলি যে এক থেকে চার,না মানে একজনকে চারজন দেখাচ্ছে!ওয়াহ ”
আশিয়ান চারপাশে তাকালো।আশাহত হলো।সে ভেবেছিল আজও ইনায়ার ধরাবাঁধা সে লোকটা আসবে।আশিয়ানকে ধরে বাসা অব্দি পৌঁছে দিবে। কিন্তু আসেনি সে লোকটা।হয়তো ইনায়ার আদেশ নেই।আশিয়ান হয়তো ভুলে বসেছে,মেয়েরা সব ভুলতে পারলেও আত্মসম্মানে আঘাত করলে তা কখনো ভুলতে পারে না।
আশিয়ান আপ্রান চেষ্টায় উঠে দাঁড়ালো।ক্যাশ কাউন্টারে গিয়ে আজকে রাতের জন্য রুম নিয়ে ওয়েটারের সহযোগিতায় রুমে গিয়ে ভালো করে লক করে সুয়ে পড়লো। আশিয়ান জুতা অব্দি খোলেনি।ঘুমে তলিয়ে গেলো।
ভোরবেলা ঘুম ভাঙতেই মাথা প্রচন্ড ধরে আসে তার। শরীরটা ম্যাচম্যাচ করছে।পাশে তাকিয়ে অবাক হয়। পাশপাশি আশ্চর্য হয়। একজন ছেলে সুয়ে আছে ওর পাশে। কিন্তু কিভাবে।ও তো দরজাটা লাগিয়েই শুয়েছিলো।তবে ছেলেটার চেহারা দেখে আঁতকে ওঠে সে। বিছানায় তো সে নিজেই শুয়ে আছে।তবে..!
আশিয়ান এদিক সেদিক দৌড়াদৌড়ি করে,কাঁদে। কোনো প্রয়াস চালিয়ে লাভ হচ্ছে।দরজার হাতল সে স্পর্শ করতে পারছে।দরজার এপাড় ওপার খুব সহজেই যেতে পারছে।তবে এ অলৌকিক ক্ষমতা যে তার চাইনি।সে তো নিজ শরীরটা চায়।তার তো এরকম ভৌতিক কোনো ঘটনায় জড়ানোর ইচ্ছে নেই।
আশিয়ান ছুটে বেরিয়ে আসে বারের ওই প্লেস থেকে।রাস্তায় অগোছালো ভাবে হাঁটতে থাকে। হঠাৎ দেখতে পায় ইনায়া রাস্তার মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে।আর তার দিকে ধেয়ে আসছে বিশাল এক ট্রাক।আশিয়ান ইনায়াকে বাঁচাতে সর্বশক্তি ব্যয়ে ছুটে যায়।তবে স্পর্শ না করতে পারায় ইনায়ার এক্সিডেন্ট হয়।ছিটকে রাস্তায় পড়ে ইনায়া।
আশিয়ান ‘না’ বলে চিৎকার করে জেগে ওঠে বিছানায়।ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা তার।দ্রুত ওই রুম ত্যাগ করে বিল পে করে বেরিয়ে আসে সে।গাড়ি নিয়ে স্বপ্নে দেখা রাস্তায় পৌঁছায়।তবে ইনায়াকে দেখতে না পেলেও ওইরকম দেখতে ট্রাক সে দেখতে পায়।ব্যাকুল হয়ে চারপাশে খুঁজতে থাকে ইনায়াকে সে।
আশিয়ান একটু পর নিজেকে বোঝায় তা কোনো ভবিষ্যৎ এর সচেতনতা নয় বরং একটা সামান্য স্বপ্ন ছিলো। হঠাৎ আশিয়ানের মনে হয় যে ইনায়া তো বাংলাদেশে।সেখানে যদি ওর কোনো বিপদ হয় তখন!আর আশিয়ান তো সুদূর সিঙ্গাপুর এখান থেকে কিভাবেই বাঁচাবে সে তার প্রিয় নারীকে!আশিয়ান আঁতকে ওঠে।সব ঝগড়া ভুলে ফোন দেয়। সিঙ্গাপুরের নিউইয়র্ক শহরে এখন সাতটা বেজে তিপ্পান্ন মিনিট। অর্থাৎ বাংলাদেশে একঘন্টা কম। সেক্ষেত্রে ইনায়া জাগ্রতই হবে হয়তো!
চলবে?