#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ৯ ]
#বর্ষা
ইনায়া গাড়িতে বসে ভাবছে সে ইশানদের বাড়ি যাবে নাকি যাবে না!মন বলছে যা ইনায়া মায়ের সাথে গল্প করার সুযোগ হাতছাড়া করিস না।অন্যদিকে মস্তিষ্ক বলছে কিসের মা সে যে মা সন্তানকে ফেলে চলে আসতে পারে তার সাথে কথা বলার চেয়ে নিশ্চুপ থাকা সুন্দর!
ইনায়ার মতো আমাদের মন-মস্তিষ্ক ভিন্ন কথা বলে।কেউ ইগনোর করলে দু-একদিন তাকে মানানোর জন্য কতই না সময় ব্যয় করি।তবে তৃতীয় দিন থেকে নিজেদের ইগোর কাছে আর মস্তিষ্কের কাছে মন অনেকটাই দূর্বল হয়ে পড়ে।তবে এই দূর্বলতা কাটিয়ে সেই ব্যক্তিটা কিঞ্চিত সময়ের জন্য ফিরে এসে বিশাল এক ধাক্কা দিয়ে আবারো কয়েকদিনের জন্য হারিয়ে যায়।কোন বিষয়ে বলছি হয়তো বুঝেছেন!
ইনায়া বহু কষ্টে নিজের মনের কথা শুনবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।গাড়ি ঘুরিয়ে আধাঘণ্টার মাঝে পৌঁছায় ইশানদের কলোনিতে।তবে বাসা না চেনায় ইশানকে কল দেয়।তবে ইশান আর কল রিসিভ করে না।বার কয়েক কেটে দেয়।তারপর যখন রিসিভ করে তখন ধমক দিয়ে কথা বলে,
”এতো ডিস্ট্রাব করছিস কেন?দেখছিস না আমি বারবার কল কেটে দিচ্ছি!স্টুপিড ”
ইনায়া কষ্ট পায়।কল কেটে দেয়। ইশানদের বাসায় যাওয়ার ইচ্ছেটা ওর মরে যায়।গাড়িতে বসেই ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।প্রচলিত আছে,”যে মেয়ে বাইরে যতটা স্ট্রং,সেই মেয়ের ভেতরটা ততটা ফাঁপা ”
ইনায়ার ফোনে ইসরাক খানের কল আসে।ইনায়া চোখ মুছে নিজেকে শান্ত করে। তারপর হাসি মুখে পাপাইয়ের ভিডিও কল রিসিভ করে।ইসরাক খান মেয়ের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জিজ্ঞেস করেন,
”বেটা কি হয়েছে তুমি কাঁদছিলে কেন?”
ইনায়া একদমই অবাক হয় না। পৃথিবীর সব বাবারা মেয়েদের মনের অবস্থা বুঝতে পারে কিনা তা ইনায়া জানে না।তবে তার পাপাই তার মুখ দেখে,কন্ঠ শুনে বলে দিতে পারে মেয়ের মন খারাপ।
”তেমন কিছুই না পাপাই। একটু আগে ফুটপাতে হাঁটছিলাম।চোখে কিছু একটা পড়েছিলো।তাই চুলকানোর কারণে চোখে পানি এসেছে”
”মাস্ক আর গ্লাস পড়োনি?”
”মনে ছিল না”
”বেটা তুমি তো জানো তোমার হাই লেভেলে এলার্জি।তাহলে কেন ফুটপাতে হাঁটছিলে মাস্ক আর গ্লাস ছাড়া”
”সরি পাপাই”
”দেখছো এই জন্যই আমি আসতে চাইনি। তুমি নিজের খেয়াল একটুও রাখো না বেটা। আচ্ছা এখন তো বাংলাদেশে লাঞ্চের সময়।খেয়েছো তুমি?”
”না,খাবো।”
”আচ্ছা,বেটা।তাহলে দ্রুত লাঞ্চ করতে যাও।রাখছি আমি। লাভ ইউ এন্ড টেক কেয়ার ”
”ইউ ঠু পাপাই”
ইনায়া কল কেটে ফোনের গ্লেলারিতে গিয়ে পাপাইয়ের সাথে তার হাস্যোজ্জল ছবিগুলো দেখতে থাকে। দৃষ্টি বাইরে গেলে দেখতে পায় ইশানের গাড়ি তার সামনে দিয়েই যাচ্ছে।কি মনে করে ইশানের পিছু নেয় ইনায়া।বিশাল আট তলা বাসায় ঢোকে ইশানের গাড়ি।ইনায়া মিনিট কয়েক অপেক্ষা করে বাসার কাছে যায়।দাড়োয়ান এসে জিজ্ঞেস করে,
”কোথায় যাবেন?”
”এখানে শিল্পপতি ফাবিহা সারওয়ার থাকেন?”
”হ্যা,তবে আপনি কে?”
”অনুগ্রহ করে তাকে ফোন করে বলবেন যে ইনায়া সেহরিশ খান এসেছে!”
”আপনি কে?”
”তাকে ফোন করলেই জানতে পারবেন ”
ইনায়ার কথায় দাড়োয়ান আংকেল ভেতরে চলে যান। মিনিট কয়েক পর ফাবিহা সারওয়ার নিজেই আসেন ইনায়াকে নিতে।ইনায়া গাড়ির বাইরে ঢেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কোলাহল নেই এপাশটায় বেশি।গাড়ি চললেও হর্ণের শব্দ স্বল্প। ফাবিহা সারওয়ার ছুটে এসে ইনায়ার গালে হাত দিয়ে বলেন,
”ইশ, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম তাই না!চলো ওপরে যাবে।ইশান,রিনিও এসেছে”
”ওহ”
তিনতলার বা’পাশের ফ্লাটে ঢুকলো ফাবিহা সারওয়ার।সঙ্গ নিলো ইনায়া।ড্রয়িংরুমে বসেই ইশান আর রিনি খোশগল্প করছে।ইনায়ার হিংসে হয় তবে খুশিও হয় অনেক কেননা ভাই-ভাবির মিলন তাকে আনন্দ দিয়েছে।এটাই তো চাইতো।
ফাবিহা সারওয়ার বাসায় প্রবেশ করেই ইশান আর রিনির উদ্দেশ্যে বলে,
”দেখো কে এসেছে আমাদের বাসায়?”
ইশান,রিনি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। অবশ্য রিনি দাঁড়িয়ে গেছে। ইশানের মুখশ্রীতে ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। রেগে তেড়ে এসে ইনায়ার হাত মুচড়ে ধরে ইশান। রাগান্বিত স্বরে বলে,
”ইনায়া মমের সাথে তর্ক করে বাসা অব্দি চলে এসেছিস।বের হ এখনি আমাদের বাসা থেকে।”
ইনায়া ইশানকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে ফাবিহা সারওয়ারকে উদ্দেশ্য করে বলে,
”ছেলের দ্বারা অপমান করতে ডেকেছেন মিসেস ফাবিহা সারওয়ার?”
ফাবিহা সারওয়ার ইনায়াকে ডেকেছেন শুনে ইশান অবাক হয়। কয়েক পা পিছিয়ে যায়। ফাবিহা সারওয়ার অগ্নিদৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকানোয় ইশান ক্ষমা চায় ইনায়ার কাছে।আবারো আগের জায়গায় গিয়ে বসে।রিনি এখনো স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে।কান্না পাচ্ছে তার এখন।ইনায়া কেন এসেছে এখানে এই তার প্রশ্ন।
ইনায়াকে নিজের রুমে নিয়ে যান ফাবিহা সারওয়ার।ইনায়া ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখতে থাকে। ফাবিহা সারওয়ার কিছুক্ষণ পর ইনায়ার জন্য খাবার নিয়ে আর ওনার জন্য কফি নিয়ে ঘরে আসেন।ইনায়া প্রথমে ইতস্তত করলেও খেয়ে নেয়।পাপাই চলে যাওয়ার পর প্রথম পোলাও,কোরমা, গোশত খেল সে। অবশ্য এগুলো রাঁধার ঝামেলা সে কখনোই করবে না।ইনায়া এই প্রথম মায়ের হাতের রান্না খেলো।চোখ তার ছলছল করছে।
ফাবিহা সারওয়ার ইনায়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
”আমি খাইয়ে দিবো?”
ইনায়া নিঃশব্দে একাকী খেয়ে নেয়।একবার সাধে ফাবিহা সারওয়ারকে খেতে।তবে তিনি খান না।আর ইনায়াও মায়া বাড়াতে চায় না।তাইতো নিজ হাতেই খেলো। খাওয়া শেষে হাত-মুখ ধুয়ে আসতেই ফাবিহা সারওয়ার একটা অ্যালবাম বের করে সামনে রাখেন ইনায়ার।পরিচয় করান কে ইনায়ার কি হয় তার বাবার বাড়ির!ইনায়া অবাক হয়, প্রচন্ড অবাক হয় যখন সে জানতে পারে ইশানের ভিডিও কলে দেখা ডেড আর কেউ নয় বরং ফাবিহা সারওয়ারের বড় ভাই।আর মামা-চাচা দের আমরা বাঙালিরা বড় আব্বু,বাবা বলে ডেকেই থাকি। সেক্ষেত্রে নিজের বাবাকে পাপাই ডাকলে, মামা-চাচাদের ডেড বলা অন্যায় কিছুই না।
★
আশিয়ান নিজ কেবিনে বসে ফাইল চেক করছে।কয়েকটা ফাইল আটকে ছিল তার সাইন বিহীন।তাইতো এখন ঝামেলার মাঝে ইনায়াকে কল দেওয়া হয়ে উঠছে না।যখন আশিয়ানের কাজ শেষ হয় তখন হয়তো বাংলাদেশে মাঝরাত নয়তো ইনায়া ব্যস্ত।তাইতো ম্যাসেজেই দু প্রেমিক-প্রেমিকার কথপোকথন হয়।ব্যস্ততা কমলেই ম্যাসেজ দিয়ে রাখা কিংবা সিন করা।এর মাঝেও আলাদা এক অনুভূতি আছে।
আশিয়ান কাজের মাঝে ফোন হাতে নিয়ে দেখে ইনায়ার ম্যাসেজ।মুচকি হাসে।
”এই শোনো আমি মিসেস ফাবিহা সারওয়ারের বাসায় যাচ্ছি!”
”জানো আজ সকালে মিসেস ফাবিহার অফিসে গিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলেছি”
”জানো আজ না ইশান আমার সাথে মিসবিহেভ করেছে।কি করবো বলো?ভাই তো তাই কল দিয়েছিলাম বাসার এড্রেস জানতে”
ইনায়ার তিনটা ম্যাসেজই আশিয়ান পড়ে।তবে ইশান ওর সাথে আবারো মিসবিহেভ করেছে শুনে রেগে যায়।তবে ওর যে কিছু করার নেই এখানে কেননা ইশান যেমনই আচরণ করুক সে তো ইনায়ারই ভাই হয়।আশিয়ান চায় না ইনায়া ভাই হারা হোক।
আশিয়ান ম্যাসেজ দেয়,
”জান যে তোমার সাথে যেমনই করুক।সবসময় একটা কথা মনে রাখবে সবাই সবার মূল্য জানে না,তাই অভ্রতা করে।তবে আমি তোমাকে একটুও ভালোবাসি না কিন্তু….তবে তোমাতে আমি আসক্ত ”
ম্যাসেজ সেন্ট করার সাথে সাথেই ইনায়া ম্যাসেজ দেয়,
”আমিও তোমাকে ভালোবাসি না।জাস্ট তোমাকে স্বামী স্বরূপ দেখতে চাই।এই যা আর কিছু না”
আশিয়ান হাসে। কিছুক্ষণ দুজনে ম্যাসেজ করে।তবে একটু পর ইনায়ার রিপ্লাই না পেয়ে বোঝে হয়তো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ইনায়া।তাই আশিয়ান আবারো কাজে মনোযোগ দেয় কেননা এই ফাইলগুলো আজকের মাঝেই কমপ্লিট করতে হবে।
কেবিনে কেউ নক করায় সেদিকে তাকায় আশিয়ান।এলি এবং তার বাবা এসেছে।এলি বাঁকা হাসে।এলির বাবা এসে আশিয়ানের সামনে একটি কাগজ ধরে। আশিয়ানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।সে কবে সাইন করলো তাই তো তার স্মরণে নেই।এলির বাবা আশিয়ানকে হুমকি দিয়ে বলে,
”তুমি নিজে স্বাক্ষর করেছো যে তুমি আমার মেয়েকে বিয়ে করবে।এখন যদি তুমি অস্বীকার কর তবে আমি তোমার নামে মামলা করবো”
চলবে?