প্রেমের মেলা পর্ব-০৭

0
756

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ৭ ]
#বর্ষা

ইশান রাগান্বিত দৃষ্টিতে ইনায়ার সামনে বসে আছে।এতো ‘কেন’ এর জবাব ওর চাই।কেন ইশান চাইলেও ওর মা’কে জানাতে পারছে না যে ও ওর বোনকে ফিরে পেয়েছে।কেন ওকে অচেনা এক ব্যক্তিকে ডেড বলতে হবে।কেন ইনায়া ভার্সিটিতেও কাউকে জানাচ্ছে না যে ইশান ওর ভাই।তবে যদি এতো কেন এত উত্তর ইনায়া না দেয় তবে সে কেন ইশানের জীবনে এসেছিলো!কেন সে ইশানকে বিশ্বাস করাতে দুজনের ডিএনএ টেস্ট করিয়েছিলো!এতো ‘কেন’ কেন শুধুই শব্দে আঁটকে থাকবে। ইশানের আজ জবাব চাই যে কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা ইনায়া চাইলেও কাউকে জানাতে পারে না।কি এমন ক্ষতি হবে তা জানালে।আজ সব কেন এর উত্তর চায় ইশান।

ভার্সিটির পেছন দিকে ইনায়া বসেছিলো।এদিকটা অনেক নিরিবিলি।ইশানই অবশ্য ডেকেছে।ইনায়া আসার মিনিট দুয়েক পরই ইশান আসে। ইনায়ার পাশে বসে বলে,

”আজ আমার উত্তর চাই ইনায়া ”

ইনায়া ইশানের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,

”সঠিক সময় হলে আমি নিজ থেকেই সব প্রশ্নের উত্তর দিবো।”

ইশান রেগে যায়।রাগ দেখিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে,

”কবে আসবে তোর সঠিক সময়?আমার আজই সব প্রশ্নের উত্তর চাই”

ইনায়া উঠে চলে যেতে নিলেই ইশান টান মারে।ইনায়া হাতে প্রচন্ড ব্যথা পায়।আজ অব্দি ইনায়ার কাছের মানুষেরা তার সাথে এমন অপ্রতিভ আচরণ করেনি কখনো।হৃদয়ে প্রচন্ড আঘাত পায় সে।না হয় রক্তক্ষরত,না হয়তো কার্ডিও অ্যাটাক।এ কষ্টে অনুভূতিগুলো অভিমানের সৃষ্টি করে।সেরোটোনিন হরমোন হয়তো অধিক মাত্রায় নিঃসৃত হচ্ছে তাইতো অনুভূতিগুলো পাথরের ন্যায় শক্ত হচ্ছে।

ইশান রাগের বসে কি করেছে তা মনে হতেই ইনায়ার হাতটা ছেড়ে দেয়।ইনায়া বসা থেকে উঠে দ্রুত ওখান থেকে চলে আসে।ইশান নিজের চুলগুলো টেনে ধরে বসে আছে। হসপিটাল থেকে ফোন আসে।রিনিকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে।কল্যাণীই ওকে বাসায় ছেড়ে দিবে।

ইশানের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।কলটা কেটে ভাবতে থাকে কি এমন কারণ থাকতে পারে যে ইনায়া তাকে কিছু জানাচ্ছে না।গত বছর দুয়েক আগে ঘটমান অতীতের প্রশ্নগুলো যেন আজ হঠাৎ করেই সব উদয়ন করছে ইশানের জীবনে।

দুই বছর আগে:

ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে ইশান নতুন নতুন। কয়েকদিন ক্লাস করেও কারো সাথে তেমন বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারেনি।ওই যে ছোট্ট থেকেই মায়ের বিধি-নিষেধের মাঝে ঘেরা ছিলো সে!ক্লাসে বইয়ের মাঝে মুখ গুঁজে বসে ছিলো সে সেদিনও। হঠাৎ একটা মেয়ে এসে থাপ করে পাশে বসলো।হাত বাড়িয়ে বললো,

”হাই,আমি ইনায়া সেহরিশ খান।”

ইশানের ভালো লাগেনি মেয়েটাকে।কেমন চঞ্চলমনা! অচেনা ছেলের পাশে বসে আবার পরিচয় দিচ্ছে!তবুও ভদ্রতার খাতিরে ইশান ইনায়ার সাথে হ্যান্ডশেক করে।পরিচিত হয়।রিনি যে সেদিন তার ভার্সিটি থেকে ট্রান্সফার নিয়ে এই ভার্সিটিতে এসেছিলো।এসেই ঠাসিয়ে এক চড় লাগিয়েছিলো ইনায়াকে।কেন সে ইশানের নিকটে বসেছে তাই।জেলাসিতে সেদিন রিনি পুড়েছিলো।

দেখতে দেখতে বন্ধুত্ব হয়ে যায় ইশান ইনায়ার।বেশ গভীর বন্ধুত্ব। বন্ধু হিসেবে যুক্ত হয় রুমানা,আশিক।তবে রিনির সাথে আর সখ্যতা গড়ে উঠেনি ইনায়ার। হঠাৎ একদিন এসে ইশানকে সাইডে ডেকে নিয়ে ইনায়া বলে,

”ইশান তুই আমার জমজ ভাই”

”ফাজলামো করছিস। এগুলো ফাজলামোর কোনো বিষয় হলো পাগলি ”

”আমি সত্যি বলছি।আমি সিরিয়াস ইশান”

”তোর মাথা খারাপ হয়েছে ইনায়া!আর ইউ মেড?”

ইশানকে রেগে যেতে দেখে ইনায়া যুক্তি দিতে শুরু করে।বলে,

”দেখ ইশান আমি জানি মাম্মামের সাথে তুই একাই থাকিস।কখনো তোর মনে হয়নি তোর পাপাই কোথায়?তোর ফ্যামিলি কোথায়?আমি পাপাইয়ের কাছে ছিলাম।পিপিই আমায় তোর আর মাম্মামের কথা গল্প শুনিয়েছে। দাদুভাইয়ের থেকেই আমি মাম্মামের চলে আসার কথা শুনেছিলাম।আর..”

”এনাফ ইজ এনাফ ইনায়া..আমি তোর উল্টা পাল্টা কথা আর শুনতে চাই না”

”আচ্ছা তুই ডিএনএ টেস্ট এ বিলিভ করিস?”

”হুম”

”চল ডিএনএ টেস্ট করবো।এর রেজাল্টই প্রমাণ করবে যে আমি তোর বোন নাকি না!”

সেদিন ইশানের নিয়ে যাওয়া হসপিটালেই গিয়েছিলো ইনায়াও।ডিএনএ টেস্ট করতে দিয়ে চলে এসেছিলো। রেজাল্ট দেখে ইশান বাধ্য হয়েছিলো ইনায়াকে বোন মানতে।সে ইনায়াকে জড়িয়ে কেঁদে ছিলো। পাপাইয়ের কাছে যেতে চেয়েছিলো।তবে ইনায়া নেয়নি।ছবি দেখিয়েছিলো মাত্র।এমনকি ইশান ইনায়ার কথা ওর মমকে জানাতে চাইলেও ইনায়া নিষেধ করেছিলো।কারণ বলেনি তবে ওয়াদা নিয়েছিলো ইশানের।যার কারণে সবশেষে বাধ্য হয়েছিলো ইশান তার মমকে ইনায়ার কথা না জানাতে। ভার্সিটিতে কেউ জানলে বাসায় পৌঁছাতে খবর পৌঁছাতে দেরি হবে না কেননা রিনি তার গোয়েন্দা বললেই চলে।তাই ইনায়া ইশানকে ভার্সিটিতে জানাতে নিষেধ করেছে বলেই ধরে নিয়েছে ইশান।তারপর ওদের সম্পর্ক বন্ধুত্বে আর সীমাবদ্ধ থাকেনি বরং ভাই-বোনের খুনসুটিতে মেতে ছিলো দুইজন।

ভার্সিটির বাইরে আসতেই ইনায়ার দেখা হয় আশিয়ানের সাথে।আশিয়ানের আজ রাতে ফ্লাইট।যা সকালেই জানিয়েছে সে।এখন দুপুর চলছে।ইনায়া আশিয়ানের সাথে চলে যায়।ছেলেটা কি করে যে ওর পাপাইকে মানিয়েছে তা শুনে প্রচন্ড হেসেছিল ইনায়া।ওর পাপাই সেম এক্সপ্রেশনে এক্সপ্লেন করেছিলো ঘটনাটা।

আশিয়ান পার্শে থাকলে যেন ইনায়া সব দুঃখই ভুলে বসে। হয়তো ভালোবাসার শক্তি এটা।ইনায়া আশিয়ানের ঘটনাগুলো মনে করে মিটিমিটি হাসতে থাকে।গাড়ি ড্রাইভিং এর মাঝেই ইনায়ার দিকে আরচোখে তাকায় আশিয়ান।

”জান তুমি মিটিমিটি হাসছো কেন?”

ইনায়া কিছুই বলে না।আশিয়ান কার পার্ক করে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। সুন্দর জায়গাটা। পছন্দ হয়েছে ইনায়ার। রেস্টুরেন্টে ঢুকে অবাক হয় সে।পুরো রেস্টুরেন্টে সজ্জিত।তবে ফাঁকা।আশিয়ান পেছন থেকে চোখ ধরে ইনায়াকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারা বসায়।চোখ ছাড়ে।

”হ্যাপি বার্থডে টু ইউ জান।হ্যাপি বার্থডে টু ইউ”

ইনায়া অবাক হয়।তবে অনেক বেশিই খুশি হয়।পাপাইকে দেওয়া ওয়াদার পাশাপাশি পছন্দের মানুষটিকে জীবনে পেলে কার না খুশি লাগে।বছর তিনেক আগে ইনায়া যখন ইন্টারের শিক্ষার্থী।তখন তার একজনকে বেশ লেগেছিলো।সেই একজনটা অন্য কেউ নয় বরং আশিয়ান।তবে বাবাকে প্রমিজ করেছিল সে যে বিয়ে করলে পাপাইয়ের পছন্দেই করবে।তাইতো আশিয়ানের এতো এতো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ দেখেও সবসময় যৌক্তিকতা দেখিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে।চলে এসেছিলো বাংলাদেশে।তবে হয়তো সে ভুলে গিয়েছিলো ”ভালোবাসায় যৌক্তিকতা খাটে না”

কেক কেটে সেলিব্রিট করে দু’জনে।আশিয়ান প্রেয়সীর হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।তাকে যে ফিরে যেতে হবে কেননা খুব গুরুত্বপূর্ণ এক কাজ পড়েছে।ব্যবসাটাকে তো আর ছেড়ে দিতে পারে না।তবে অনলাইনে সারতে চেয়েছিলো ঝামেলা।তবে ইনায়ার কথা,”আপনি উপস্থিত থেকে যতটা ভালো মতো করতে পারবেন, দূরে থেকে ততটা ভালো প্রেজেন্টেশন নাও হতে পারে।তাই বলছি সেখানে গিয়েই কাজটা সম্পন্ন করুন।”তাইতো আজ রাতেই যাওয়া লাগবে আশিয়ানের।

ইনায়া কেকের এক বাইট আশিয়ানের দিকে এগিয়ে দেয়।আশিয়ান নিজে আগে না খেয়ে ইনায়াকে খাইয়ে দেয়।তবে গালে লাগায় না। কেননা সে আগের থেকেই খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছে ইনায়ার বেশ এলার্জি প্রবলেম আছে।যা প্রায়ই ইনায়াকে ভোগান্তিতে ফেলে।

”আচ্ছা আপনি তো আমার জন্মদিন জানতেন তাহলে আগে উইশ করলেন না কেন?”

”আমি তোমার শুরু হইতো ছিলাম না,আজও নিজেকে তোমার শুরু হিসেবে দাবি করতে চাই না।তবে তোমার শেষ যেন আমিতেই থাকে তা আমি সর্বক্ষণ দেখবো বুঝলে জান”

ইনায়া প্রসঙ্গ বদলাতে বলে,”ফ্লাইট কয়টায় আপনার?”

আশিয়ান আফসোসের সুরে বলে,”তোমার সাথে আমি প্রেম করার চেষ্টা করছি আর তুমি প্রসঙ্গ বদলাচ্ছো! আমাকে যে তাহলে সবকিছুই তোমাকে শেখাতে হবে”

ইনায়া লজ্জা পায় আশিয়ানের কথায়।তবে আশিয়ান থেমে যায় কেননা রুমান কল দিয়েছে।আশিয়ান কপট রাগ দেখায় তবে কাজের কথা হওয়ায় বেশি কিছু বলে না।ইনায়াকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে আশিয়ান।

সন্ধ্যার দিকে ইনায়া আশিয়ানকে ড্রপ করতে এয়ারপোর্টে আসে।আশিয়ান গভীর আলিঙ্গন করে।রুমান পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও চোখ নিচের দিকে দিয়ে রাখে। কেননা আজ হঠাৎ চলে যাওয়াই ওর বোন আর মা বেশ রাগ করেছে ওর সাথে।আর গালফ্রেন্ড সে তো পারলে জুতা মারে।তবে এগোতে সে আসতে চেয়েছিলো আশিয়ানের ভয়েই সে তাকে আসতে নিষেধ করেছে।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে