প্রেমের মেলা পর্ব-০৬

0
662

#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ৬ ]
#বর্ষা

কয়েকদিন গ্যাপে ইনায়া ভার্সিটিতে এসেছে। জরুরী কাজে কয়েকদিনের জন্য ব্যস্ত ছিলো।বন্ধুমহল অজ্ঞ ইনায়ার ব্যস্ততার কারণ সম্পর্ক।অর্ধেক কথোপকথনের মাঝেই কথা যেন ফুরিয়ে যায় ইনায়ার।কার ড্রাইডিং করার সময় ফোন ব্যবহারে ইসরাক খানের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ইনায়া এখন ঠিকই সিগন্যালে আটকে ফোনে কথা বলছে পাপাইয়ের সাথে।

”কি গিফট চাও বলো বেটা আমি তা পাঠিয়ে দিবো”

আজ ইনায়ার জন্মদিন। পাপাইয়ের কাছে যেন এই দিনটা অনেক স্পেশাল।প্রতি বছরই খুব বড় করে আয়োজন না করলেও বাবা-মেয়ে মিলে দিনটা উৎযাপন করতো।তবে এবার আর হলো কই!ইসরাক খানের মনে এই বিষয় নিয়ে অনেকটাই দুঃখ।

সিগন্যাল ছুটতেই ইনায়া ওর পাপাইকে বলে কল রেখে দেয়।গাড়ি চালিয়ে ভার্সিটিতে পৌঁছায়।লাক কি জানতে চাও তবে শোনে! ইশান-ইনায়া জমজ হলেও দুজনের জন্মদিবস কিন্তু আলাদা।এমনটা সচরাচর দেখা যায় না।দশই জানুয়ারি আজ।আর নয়ই জানুয়ারি রাত এগারোটা বেজে সাতান্ন মিনিটে ইশানের জন্ম হলেও ইনায়া ভূমিষ্ঠ হয়েছে বারোটা বেজে একমিনিটে অর্থাৎ দশই জানুয়ারি।তাইতো জমজ হয়েও ভাই -বোনের জন্মতারিখ আলাদা।

ভার্সিটিতে পৌঁছাতেই হাতে রেপিং পেপারে মোড়ানো বক্সটা নিয়ে এগিয়ে যায় ইনায়া।ইশান, রুমানা,আশিক সবাই একত্রে বসে।রিনিও আশপাশে ঘুরঘুর করছে ওর সঙ্গীদের নিয়ে। ইশানের কড়া কথা রিনি যেন তার বন্ধুদের সাথে থাকাকালীন তাকে ডিস্ট্রাব না করে।তাইতো আশপাশে ঘুরঘুর করলেও ঘাড়ে উঠে বসে নেই। অবশ্য যেহেতু কমিটমেন্টে আছে সেহেতু অন্য কোনো মেয়েকে ইশানের পাশে যদি রিনি সহ্য করতো তবেই তা অস্বাভাবিক হতো কেননা মেয়েরা তার প্রিয় মানুষটিকে নিয়ে একটু নয় বরং অনেক বেশিই জেলাস ফিল করে।

ইনায়াকে দেখে ইশান মুখ ঘুরিয়ে নেয়। কেননা কালকে ইনায়া ম্যাসেজ জাস্ট উইশ করেই অফলাইন চলে গিয়েছিলো।মোবাইলও বন্ধ ছিলো তার। বন্ধুমহলকে শুধু বলেছিলো যে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তাই সে ভার্সিটিতে আসতে পারবে না এই যা।

ইনায়া ওদের সামনে গিফটের প্যাকেটটা ধরে বলে,

”কালকে হয়তো কারো জন্মদিন ছিল যে আমার সাথে রাগ করেছে।তার জন্য এই গিফটটা‌।রুমানা,আশিক এটা দিয়ে দিস তাকে”

ইশান অভিমান নিয়ে বলে ওঠে,

”গিফট দিলেই হয় না।গিফট তো জাস্ট ফর্মালিটি।প্রিয় মানুষদের সঙ্গই ভালো লাগে এই দিনে”

ইশান কিছুক্ষণ চুপ থেকে ব্লেজারের পকেট থেকে ছোট একটা প্যাকেট বের করে এগিয়ে দেয় ইনায়ার দিকে।বলে,

”শুভ জন্মদিন ইয়ু ”

ইনায়া তাকিয়ে থাকে তবে কিছু বলে না।আশিক,রুমানাও তাকে উইশ করে।ইনায়া নিজের জন্মদিন নিয়ে না ভেবে ইশানের রাগ ভাঙাতে ওর সাথে দুষ্টুমি করতে থাকে। ইশানের রাগ ভাঙলেও রিনি যে রেগে আগুন তা তার চোখ দেখলেই বোঝা যাবে।রিনিও তো ইশানের এমন আচরণ চায়।তবে ইশান যে তার সাথে সবসময় গম্ভীর হয়েই বসে থাকে।না বেশি হাসে,আর না কথা বলে!রিনি কান্না লুকাতে ওখান থেকে চলে যায়।শেষের ঘটনাটুকু নজরে আসে ইনায়ার। দূরত্ব রেখে বসে ইশানের থেকে।তবে ভাই কি আর তা বোঝে।সে তো ইনায়ার কাঁধে হাত রেখেই বসেছে।ভার্সিটির অধিকাংশই বলে ইনায়া-ইশানের মাঝে কিছু চলছে তবে একেকজনের মতবাদ একেক রকম।তবে যাইহোক ইনায়া কিন্তু সিনিয়র ভাই-বোনদের প্রিয়।সবকাজের কাজীকে কে না চিনবে!

”শুভ জন্মদিন ইনায়া”

ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র নুহাশ ভাই এগিয়ে এসে রেপিং পেপারে মোড়ানো একটা বক্স এগিয়ে দেয় ইনায়ার দিকে। সাথে উইশ তো আছেই।ইনায়া হাত বাড়িয়ে নিতেই হাঁটু গেড়ে বসে প্রপোজ করে নুহাশ ভাই।অত্যন্ত মাধুরী মিশিয়ে রাঙিয়ে তুলেছে সে নিজের মনের আজ অব্দি অব্যক্ত কথাগুলোকে।

”তোমাকে যেদিন প্রথম ভার্সিটি চত্বরে দেখি সেদিনই প্রেমে পড়েছিলাম তবে।আমি প্রেম নয় বরং ভালোবাসার সন্ধানী। তাইতো বিগত দুইবছর তোমার থেকে অনুভূতিগুলো ছিল চিরায়ত লুকায়িত।তবে তোমায় হারানোর ভয় জেঁকেছে হৃদয়ে। তাইতো অব্যক্ত কথাগুলো ব্যক্ত হলো আজ তোমার সরণে। তুমি কি আমার প্রিয়তমা হবে?”

ইশানের প্রচন্ড রাগ হলেও সে ইনায়ার প্রতিক্রিয়া দেখার অপেক্ষায়।ইনায়া মুচকি হেসে ভালো করেই শান্ত দৃষ্টিতে বললো,

”নুহাশ ভাই আমি দুঃখিত।আমার বিয়ে এক্সামের পরপরই। আপনাদেরও দাওয়াত দেবো ইনশাআল্লাহ ”

নুহাশ অবাক চোখে তাকিয়ে চলে যায়।কিই বা বলার আছে আর।যেখানে বিয়ে ঠিক,মেয়েও রাজি সেখানে তার একপাক্ষিক ভালোবাসার তো কোনো মূল্যই নেই। জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হচ্ছে -একপাক্ষিক ভালোবাসা।এই ভালোবাসা মানুষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।

আশিয়ান গাড়ি পার্ক করে এদিকেই আসছিলো। ইনায়ার কথা শুনে দ্রুত কাউকে ফোন দেয়। জিজ্ঞেস করে,

”তাকে কি তুমি বলেছিলে?”

অপর পাশের জবাব শোনা যায় না। আশিয়ানের চোখে অশ্রু টলমল করছে।ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সে ইনায়াকে।কোলে তুলে নিয়ে ঘুরতে থাকে।ইনায়া অবাক হয় আশিয়ানকে দেখে তবে ওর পাগলামি কর্মে হেসে দেয়।তবে ইশান রেগে যায়।কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই কল্যাণী (রিনির বন্ধু) এসে জানায় রিনি জ্ঞান হারিয়েছে।তাইতো ইশানকে সেদিকেই ছুটতে হলো।

আশিয়ান ইনায়াকে নামিয়ে বলে,

”আমি সত্যিই অবাক হয়েছি যে তুমি বিয়েতে রাজি ”

”আপনি যে আমার পাপাইয়ের বন্ধুর ছেলে তা তো বলেননি আগে”

”আংকেলের ফ্রেন্ডের ছেলে বলেই বিয়েতে রাজি হয়েছো?”

”একদমই না।আমি তো আমার পাপাইয়ের খুশির জন্য রাজি হয়েছি।আচ্ছা বলুন তো আজ কি?

ইনায়ার কথায় দুষ্টুমি ছিল।আশিয়ান অবাক হয় আজ এতদিন পর ওর খবর পেয়ে ও ছুটে এসেছে।আর আজই ইনায়ার মাঝে এতো পরিবর্তন।তবে আশিয়ানও কম না।সে উত্তর না দিয়ে ভাবতে থাকে কিছু কি ঘটেছে নাকি এই কয়েকদিনে!আর কোথাই বা গিয়েছিলো ইনায়া!

”জান একটা প্রশ্ন করবো…বলবা?”

”বলার মতো হলে বলবো”

”তুমি এই কয়দিন কোথায় ছিলে?”

ইনায়া আশিয়ানের দিকে মুখমন্ডল এগিয়ে এনে আশিয়ানের কানের কানে মুখ নিয়ে ধীর কন্ঠে বলে,

”সিক্রেট”

ইনায়ার নিঃশ্বাসের উষ্ণতা আশিয়ানের মাঝে ঝড় তোলে।আশিয়ান পিছিয়ে গিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস নেয়।ইনায়া আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ হেসে বলে ওঠে,

”এখন বুঝেছেন কেমন লাগে হঠাৎ হঠাৎ কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে কাছে আসলে?”

ইনায়া কথার মাঝেই লক্ষ্য করে ইশান রিনিকে কোলে নিয়ে পার্কিং এর দিকে ছুটেছে। ইনায়াও সেদিকে ছুটে যায়।তবে ইশান ওকে পাত্তা না দিয়েই রিনিকে নিয়ে চলে যায়।এতে কিছু মৌনখুন্ন হলেও ইনায়া স্বাভাবিক ভাবে নেওয়ার চেষ্টা করে কেননা প্রেয়সী হোক বা না হোক মেয়েটা তো ওর দায়িত্বের কাতারেই পড়ে।

ইশান ড্রাইভিং করে দ্রুত হসপিটালের দিকে যাচ্ছে।ফোনে রিনির মম,ডেডকে রিনি অবস্থা সম্পর্কে জানাতে বলেছে কল্যাণীকে।রিনির মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে কল্যাণী।মেয়েটা স্ট্রেস নিয়েছে অনেক।তাইতো এই অঘটনটা ঘটলো।মনে মনে ইনায়াকে বেশ করে বকলো কল্যাণী!

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে