#প্রেমের_মেলা
পর্ব: [ ৫ ]
#বর্ষা
উত্তরা লেক পার্কের কাছেই রাস্তার পাশে বসে আছে।ফুলের দোকানটার কাছাকাছিতে।ঝুড়িগুলো তার বেশ লেগেছে। এদিকটায় নাকি লেক আছে তা দেখতেই এসেছিলো সে।তবে ভুলে গিয়েছিলো শীতকালের শুষ্ক পরিবেশে নদ-নদী শুকিয়ে যায়।আর এ তো সামান্য লেক। অবশ্য দেখতে মাঠের মতোই লাগছে এখন।ইনায়া নার্সারি বা ফুলের দোকান যাই বলি সেখান থেকে একটা ঝুড়ি কিনলো।আর কিছুটা দূরে বালতিতে করে গোলাপ নিয়ে বসা থাকা পিচ্চির থেকে সবকটা ফুল কিনে নিলো।পুচকির হাসিটা যেন নিউ ইয়ারের বেষ্ট গিফট ওর কাছে!
দুইটা ফুল পুচকির হাতে ফেরত দিয়ে ইনায়া বললো,
”এই যে সোনা বলতো আজ কি?”
”হ্যাপি নিউ ইয়ার ”
”সেই উপলক্ষেই আমি তোমায় এই দুটো ফুল দিলাম।বুঝলে?”
”হুম। ধন্যবাদ ”
ইনায়া অবাক হয় এতোটুকু বাচ্চা কি সুন্দর ফর্মালিটি ম্যান্টেন করে কথা বলছে।অনেক বড় ঘরের বাচ্চারাও এতোটা ফর্মালিটি দেখে পড়াতে না। অবশ্য ওদের সবার মন থেকে ফর্মালিটি করাটা আসে না।তবে পরিস্থিতি মানুষকে সহায়তা করে নিজেকে গড়তে।
পিচ্চিটা চলে যায়।ইনায়া ঝুড়িতে ফুলগুলো রেখে গাড়ির কাছে যেতে নিলেই হঠাৎ একটা বাইক অতিক্রম করে তাকে।ঘৃণায় শরীর রি রি করে ওঠে ইনায়ার। ইনায়া বাইকের নাম্বারটা নোট করে।ছেলে তিনটার মাঝে একটা পেছনে ফিরে বিশ্রি হাসি দেয়।ইনায়ার ইচ্ছে হয় ওই ছেলেটাকে খুন করে ফেলার।
ইনায়া কাউকে ফোন দেয়।বলে,
”ইমিডিয়েটলি আমি এই বাইকের লোকেশন চাই।এট এনি কস্ট।”
কল কেটেই কারে উঠে চোখ বন্ধ করতেই নোংরা ওই দৃশ্যটা ভেসে ওঠে। বাইকের ছেলেটা ইনায়ার গালে স্পর্শ করেছে নোংরা ভাবে।আমার মুখভঙ্গিতেও ছিল খারাপ লক্ষণ যা ইনায়ার মাঝে ঝড় তুলেছে।
মিনিট দশের মাঝেই ইনায়া আটকে ফেলে ওই বাইকটাকে। রাস্তা ব্লক করায় আর এগিয়ে যেতে পারে না। পেছনের দিকে যাওয়ার পূর্বেই ইনায়া গাড়ি থেকে নেমে ইচ্ছে মতো থাপ্পর,লাথি মারতে থাকে শেষের ছেলেটাকে।এই ছেলেটাই স্পর্শ করেছিলো তাকে।বাকি দুজন পালাতে পারেনি।ইনায়া ওদেরকেও মারছে। কেননা ওরা যদি তৎক্ষণাৎ বাইক থামাতো তাহলে ইনায়াকে এতো দূর ছুটে আসতে হতো না।
ইনায়াকে রাস্তার মাঝে তিনটে ছেলেকে নাস্তানাবুদ করতে দেখে রাস্তার লোকেরা তাকে সাহায্য করার পরিবর্তে ভিডিও তৈরি করতে শুরু করেছে।ইনায়া রাগে বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে।একটা লোকের ফোন নিয়ে জোরে আছার মারতে নিয়েও মারে না।ফেরত দিয়ে দেয়।পাশ থেকেই একলোক কাউকে ফোন দিয়ে বলে,
”স্যার ম্যাম তো প্রচন্ড রেগে আছেন।আজ সবাইকে শেষ করে দিবেন মনে হচ্ছে।আপনি দ্রুত আসুন”
ইনায়া ক্ষেপে ওই লোকটার দিকে গিয়ে বলে,
”কাকে আসতে বলছেন আপনি?এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাই তামাশা দেখেছেন আর এখন পরিচিত লোকেরা এই হারামীগুলোর পরিবারকে ডাকছেন!ডাকুন আমি দেখতেই চাই এদের পরিবারকে”
লোকটা বার বার দুইদিকে মাথা ঝাঁকিয়ে কিছু একটা বলার ট্রাই করছে।তবে ইনায়া নিজের মতো সবাইকে বলেই চলেছে।এতোক্ষণ মজা দেখেছে আর এখন সব ঢং করতে শুরু করেছে। তখনই কয়েকটা পুলিশের গাড়ি এসে থামে। বেরিয়ে আসে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।সব ঘটনা জেনে ছেলেগুলো নিজে যায়। আর ইনায়া থানায় এসে কেস করতে বলে যদি সে জরুরি মনে করে তবেই।ইনায়া এককথায় রাজি হয়ে যায়।
ইনায়া চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরপরই আশিয়ান এসে পৌঁছায়।ইনফর্ম করা লোকটাকে ইনায়ার কথা জিজ্ঞেস করতেই বলে চলে গেছে সে।আশিয়ান রেগে যায় তবে লোকটা পরের কথাটা শুনে শান্ত থেকে জিজ্ঞেস করে থানাটা কোথায়!থানার ঠিকানা পেতেই সেখানের উদ্দেশ্যে যায়।
ইনায়া থানায় জিডি করে বেরতেই আশিয়ানকে দেখতে পায়।তবে সেদিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকে না। কেননা তার মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা শুরু হয়েছে।চোখ বন্ধ করে সেখানেই এক বেঞ্চে বসে।
”জান আর ইউ ওকে?”
”হুম”
”কে তোমার সাথে মিসবিহেভ করেছিলো জান তার নাম বলো শুধু জীবন বের করে নিবো”
ইনায়া এবার চোখ মেলে তাকায়।স্পষ্ট রাগ তার চোখে। চেঁচাতে পারলে হয়তো রাগ কমবে।তবে এখানে চেঁচামেচি করাটা শোভা পায় না। ইনায়া খুব শান্ত গলায় বললো,
”আমার সাথে কে কি করলো আপনার তা সম্পর্কে না জানলেও হবে?ইনায়া সেহরিশ খান নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারে।আপনি আপনার ফিয়োন্সের দায়িত্ব নিন”
”আর ইউ জেলাস ”
”আমি আর জেলাস…হাউ ফানি!”
”হৃদয়হীন হচ্ছো কেন এতো জান ”
”বিয়ে করবেন আমায়?প্রেম করবেন, ভালোবাসা শেখাবেন…তারপর ঠিক ফিয়োন্সের সাথেই বিয়ে করবেন। তাই বলছি আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।ইনায়া সব সহ্য করে তবে প্রতারণা সহ্য করে না।”
”চলো আজই বিয়ে করবো। এখনই বিয়ে করবো ”
”আমি এখন করতে পারবো না।আর না আমি আপনাকে ভালোবাসি।আর নাই বা আমার পাপাই আপনাকে আমার হাজব্যান্ড হিসেবে দেখতে চায়! যেহেতু সবগুলোর উত্তরও না তাই বলছি আমার থেকে দূরে থাকুন!”
”অনেক তোমার পেছনে ঘুরেছি।এবার বুঝতে পেরেছে কার পেছনে ঘুরলে আমি তোমাকে পাবো!আজ থেকে তোমার পিছনে নয়,আমার শশুরের পেছনে ঘুরবো।চলি”
আশিয়ান চোখে সানগ্লাস পড়ে গাড়ি নিয়ে চলে আসে। ইনায়া এখনো অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে। কি বললো এই ছেলে শশুর!এর আবার বিয়ে হলো কবে!আর বিয়ে না হলে শশুর আসলো কোথা থেকে।একটু গভীর ভাবে ভাবতেই সব বুঝে ফেললো ইনায়া।অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো যতদূর অব্দি আশিয়ানের গাড়ি দেখা যায় ততদূর অব্দি।
ইনায়ার ফোনটা বেজে ওঠে। ইসরাক খানের ফোন।ইনায়া এখানে হওয়া ঘটনাগুলো আর তাকে জানায় না। গাড়িতে গিয়ে ভিডিও কলে কথা বলে নেয়।একটা ওটি থেকে বেরিয়েই তিনি ইনায়াকে কল করেছেন। কেননা তারপর আরও একটা ওটি আছে যা অত্যন্ত সিরিয়াস এবং সময়সাপেক্ষ।
”পাপাই আই মিস ইউ লট”
”আই মিস ইউ মাই ঠু এঞ্জেল”
”পাপাই এক্সামিনেশন কমপ্লিট হলেই আমি কয়েকদিনের জন্য সিঙ্গাপুর ব্যাক করবো”
”দ্যাটস অ্যা গুড নিউজ ”
”মেবি”
”নো বেটা ইটস রিয়েলি অ্যা গুড নিউজ ”
”পাপাই তুমি একটু বিশ্রাম নেও। নয়তো পরের ওটি করতে গেলে খারাপ লাগবে তোমার ”
”দায়িত্ব কখনো খারাপ লাগে না।তবে তোমার কথাটা ঠিক।আমার একটু রেস্ট করা সত্যিই প্রয়োজন।লাভ ইউ,টেক কেয়ার এন্ড আল্লাহ হাফেজ বেটা!”
”লাভ ইউ ঠু ডেড,টেক কেয়ার, আল্লাহ হাফেজ ”
ইনায়া ফোন রাখতে ইশান ফোন দেয়।দেখতে পায় ভিডিও কলে ওপাশের এক লোককে দেখাচ্ছে ইশান। আস্তে করে বলছে,
”ইয়ু আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। তুই নিষেধ করায় তোর কথাটাও মমকে বলতে পারলাম না।আর এখন মম বলছে ইনি নাকি আমার ডেড।ইজ ইট ট্রু?”
”ইশান আমাকে একটু মমকে দেখাবি..আমি কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি বারবার ”
ইনায়ার কথায় ইশান ওর মমকে দেখায়।না,কোনো ভুল নিউজ তো ছিল না।অ্যালবামে তো এই নারীরই ছবি ছিল।তাহলে তো ইনিই ওদের মা।তাহলে মিথ্যে বলছেন কেন তিনি। ইনায়ার ভাবনার মাঝেই ইনায়া অস্পষ্ট কথা শুনতে পায় ওদের মায়ের সাথে একটা লোকের।লোকটাকে ও কোথাও দেখেছে।তবে কোথায় তা ওর স্মরণে আসছে না এখনই।তবে স্মরণে আসলেও ইশান কল কেটে দেয়। কেননা ফাবিহা সারওয়ার ইশানকে ডাকছে।আর বাঘিনীর সামনে শিকার হয়ে যাওয়ার মানে হয় না। তাই তো তার জন্য শিকার হতে হতে পারে তাকে বিচ্ছিন্ন করলো!
চলবে?