প্রেমের মেলা পর্ব-০১

0
1298

#প্রেমের_মেলা
পর্ব:[ ১ ]
#বর্ষা

”জান তুমি যেখানেই থাকো,তোমাকে যে এই আশিয়ান মির্জার নিকটে ফিরতে হবে।তোমার শুরুতে আমি,তোমার মৃত্যুতে আমি,তোমার সৃষ্টিতে আমি,তোমার ধ্বংসে আমি,তোমার সুখে আমি,তোমার দুঃখে আমি। সবখানেই তুমি আমাকে খুঁজে পাবে।আমার থেকে পালিয়ে যাবে কোথায় তুমি!”

সুউচ্চ বিল্ডিং এর দশতলার কেবিনের থাই গ্লাসে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত ঠেকিয়ে বাঁকা হেঁসে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আশিয়ান মির্জা।মির্জা গ্রুপ অফ ইন্ড্রাসট্রিজের একমাত্র উত্তরসূরী।

দরজায় খটখট শব্দে আশিয়ান ফিরে তাকায়।ছ্যাচড়া এলিকে দেখেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। কামুক ভঙ্গিতে হেঁটে এসে আশিয়ানের পাশে দাঁড়ায় এলি।আপন দেশ থেকে বহুদূরে সিঙ্গাপুরে বসবাস আশিয়ান মির্জার। অবশ্য ব্যবসার খাতিরে এখানে থাকা নয়, বরং জন্মস্থান বলেই এখানে থাকা এবং বেড়ে ওঠা।ছোট্ট বয়সেই পিতা-মাতার ছায়া হারিয়েছে সে।একটা দূর্ঘটনা তার থেকে নিজের প্রতিদ্বন্দীকে কেড়ে নিয়েছে,কেড়ে নিয়েছে প্রাণপ্রিয় মাকে।তারপর থেকেই তো হাস্যোজ্জল ছেলেটা কেমন একরোখা,জেদি হয়ে উঠলো।পিতার বিশাল ব্যবস্থা সামলাতে শুরু করলো সেই ছোট্ট বয়সেই।কত কত লোসের পর গিয়ে শুরু করলো লাভ করতে।তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি এখনো অব্দি।উত্থাল-পাত্থাল সামলে নিজের অবস্থান উন্নতির দিকেই রেখেছে সে।

”আশিয়ান বেবি চলো না পার্টিতে একসাথে যাই।”

”এলি দূরে সরে কথা বলে।এতো কাছাকাছি আসা আমার অপছন্দের!”

”তুমি এমন কেন আশিয়ান বেভ। তুমি জানো কতশত ছেলেরা আমার কাছে আসতে চায়!আমি তাদের পাত্তা দেই না।আর তুমি আমায় পাত্তা দিচ্ছো না”

”এলি আমি তোমার দেখা কতশত ছেলের মতো ক্যারেক্টারলেস নই‌। তুমি তোমার আশেপাশে ঘুরঘুর করা ক্যারেক্টারলেস ছেলেগুলোর সাথে পার্টি ইঞ্জয় করো গিয়ে!”

”তুমি আমায় এভাবে বলতে পারলে…”

”হুম বলেছি”

”আশি..”

”জাস্ট গেট আউট ফর্ম মাই অফিস”

এলি রাগ দেখিয়ে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে থাকে আশিয়ান।পি.এ. রুমান কেবিনের বাইরেই ছিলো।এলিকে শুভ সকাল উইশ করতেই ঠাঁটিয়ে এক চড় খেতে হয় তাকে। আশ্চর্য হয়ে সে তাকিয়েই থাকে।কোনো কথা আর সে বলতে পারে না।

জ্যাক পেছন থেকে ঘাড়ে হাত রাখতেই রুমান লাফিয়ে ওঠে।বুকে থুতু দেয়।জ্যাক দাঁত বের করে হেসে বলে,

”আরে ব্রো তোমাকে মেয়েটা মারলো আর তুমি এমন করে তাকিয়ে ছিলে যেন মনে হচ্ছিলো তোমার বউ তোমাকে আদুরে কথা বলছে।হা হা হা”

”জ্যাক ব্রো”

”ওকে সরি ব্রো।আচ্ছা ব্রো মেয়েটাকে তো প্রায়ই দেখি অফিসে আসে।মেয়েটা কে?”

”বড়লোকদের বড়লোকি দেখাদেখি।এলি ম্যাম তো প্রথম দিন নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন স্যারের ফিয়োন্সে হিসেবে।তবে স্যারের আচরণে এমন মনে হয় না। যাইহোক তাদের বিষয়ে গবেষণা করে আমাদের লাভ নেই।অনেক কাজ পরে আছে।যাই কাজগুলো ঠিকঠাক করে স্যারকে দেখিয়ে নেই ”

”আমিও চলি রুমান।আমার তো আজ অফ ডে।তবুও এসেছিলাম অসম্পূর্ণ কয়েকটা কাজ সম্পন্ন করতে।এখন রিলাক্সে পরিবারকে সময় দিতে পারবো। চলি ”

রুমান বরাবরের মতোই অবাক। বাংলাদেশে বছর এক চাকরি করেই বিদেশগামী হয়েছিলো সে। বাংলাদেশে সে দেখেছিলো না অফিস থেকে ছুটি পাওয়া যেতো এতো সহজে আর না অফিসকর্মীরা ছুটিতে কাজ করতে চাইতো।বসেরা ফোন দিতে দিতে পাগল করে ফেললে পরে দেখা যেতো কয়েকটা কাজ করেছে তাও বিরক্ত নিয়ে।আর এদেশে তা পুরোই উল্টো।ছুটে চাইলে খুব সহজেই পাওয়া যায় জব হিস্ট্রি দেখিয়ে।আবার ছুটির দিনেও নিজ ইচ্ছায় অধিকাংশ বিদেশী বহুকাজ অগ্রিম সমাপ্ত করতে চলে আসে।তারপর রিলাক্সে ছুটে কাটায়।আবার বসদেরও ফোন দিয়ে পাগল করতে হয় না। কর্মীরাই নিজ দায়িত্বে ঠিক সময়ে বসের নিকট সব কাজ সম্পন্ন করে পেশ করে। দায়িত্ববান কর্মীতে ভরপুর যেন এখানকার প্রতিটা অফিস।

স্যারের রুমে আসতেই রুমান অবাক হয়।আশিয়ান থাই গ্লাসে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেন নেশা করেছে সে মাত্রই।দৌড়ে ধরতে গেলে অবাক হয় রুমান।না,স্যার নেশা করেনি। বরং সে এভাবে কারো কাজ দেখছিলো।রুমানকে পার্মিশন ছাড়া আসতে দেখে রেগে গেলেও তা প্রকাশ করে না আশিয়ান।

”রুমান বাংলাদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা কর।”

”আচ্ছা স্যার”

”দুইটা সিট বুক করবা।একটা আমার জন্য আর একটা তোমার জন্য। তুমিও যাচ্ছো আমার সাথে।মাইন্ড ইট।বি প্রিপিয়ার!”

ভার্সিটির মাঠে রিলাক্সে মোবাইল টিপছে ইনায়া।দুইটা ক্লাস ফাঁকি দিয়েছে বলা যায়।একটা ক্লাসে দেরি করে আসায় তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।আর একটা ক্লাস ওর অপছন্দের তাই নিজ থেকেই যায়নি।ইনায়ার পাশে ধুপ করে বসে পড়ে ইশান।ইনায়ার লড়াকু জমজ ভাই বলা যায় একে। সারাদিন দুজন একে অপরের সাথে লড়তে পারবে।তবে একে অপরকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না।আবার চেহারাতেও দু’জনের একদমই মিল নেই। সারাদিন খুনসুটি চলতেই থাকে এদের।

ইশান ইনায়ার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,

”আজকে লেট কেন? তুই না আমার আগে বাসা থেকে বেরিয়েছিস! কোথায় গিয়েছিলি?”

”একে তো গাট্টা মেরেছিস তারওপর শখানেক প্রশ্ন করলে কোনটা রেখে কোনটার উত্তর দেবো আমি?”

”আমি বড় না তুই বড়।আমাকে ভাই বলে ডাক ইয়ু!”

”আমাকে ভাই বলে ডাক ইয়ু”

ইশানের ব্যঙ্গ করতে ইশান ইয়ানাকে মারতে নিলেই ইয়ানা উঠে দৌড় লাগায়।আর কার সাধ্য আছে এই মেয়েকে এখন ধরার।ছোট বেলা থেকেই যেই মেয়ে দুষ্টামি, দৌড়াদৌড়িতে চ্যাম্পিয়ন তাকে কি ধরা সহজ নাকি!

ভার্সিটিতে আজ ক্লাস না করেই বাড়ি ফেরার ফন্দি করেছিলো ইনায়া তবে তার শয়তান পড়াকু ভাইটার জন্য আর তা সম্ভব হয়নি।শেষ ক্লাসটা জোর জবরদস্তি করে করতে নিয়েই গেছে।ক্লাসে আসতেই ইনায়া ভাইয়ের থেকে সরে বন্ধুদের পাশে গিয়ে বসেছে লাস্ট বেঞ্চে।প্যাচালরানী কি আর চুপচাপ থাকতে পারে!

”দোস্ত স্যার কি পড়া দিছে রে?”

রুমানার কথায় ইনায়া ওর মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,

”তোর কি মনে হয় আমি গত ক্লাসে হাজির ছিলাম?আমার এইসব ক্লাস করার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে বুঝছিস!”

”এহহ আসছে গুরুত্বপূর্ণ কাজওয়ালী।তা কি কাজ করিস তা তো আজ পর্যন্ত বললি না।গত দুই’বছর যাবৎ বলেই গেলি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কিন্তু তা কি আদৌ আমাদের তা জানালি না।”

ওদের কথোপকথনের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ছিলো।স্যার করম ছুঁড়ে মারতেই তা গিয়ে লাগে ইনায়ার মুখে‌।ত্বক শুষ্ক এবং পাতলা হওয়ায় তৎক্ষণাৎ কেটে যায়। রক্ত ঝড়ে না তবে লাল বর্ণ ধারণ করে।স্যার বিষয়টা খেয়াল না করেই ওদের দাড় করিয়ে ইচ্ছে মতো বকতে থাকে ক্লাসে শব্দ করায়।ইনায়াকে একটু নয় বরং অনেক বেশিই বকে।সব স্যারদেরই ধারণা এই মেয়েটা চোরামী করে সব পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে। কেননা যে মেয়ে একটা ক্লাসও ঠিকঠাক এটেন্ড করে না সে কি করে ভালো মার্কস আনতে পারে তাই তারা ভেবে পায় না!

স্যার রাগ দেখিয়ে ক্লাস থেকে ওদের বের করে দেয়।ইনায়া কয়েক মুহুর্তবাদেই বিশাল এক শ্বাস ছেড়ে বলে,

”ওই ইশান যদি আজ আমায় ক্লাসে না নিতো তাহলে এতো ঝামেলাই হতো না।”

”আরে এটা বড় কিছুই না বাদ দে। এমনিতেই ক্লাস করতে বোর হচ্ছিলাম আমরা।তাই না আশিক?”

আশিক ফিচলে হেসে বললো,”হ্যা,হ্যা রুমানা ঠিক বলেছে!চল আজ আমরা ফুচকা খাই!”

ইনায়া মুখ ভেংচিয়ে বলে,”চল আমরা ফুচকা খাই!এই আশিক তুই আদৌ ছেলে তো!আমি আজ পর্যন্ত এতো মজা করে ছেলেদের ফুচকা খেতে দেখিনি।সত্যিই মাইরি!”

”আর আমিও আজ অব্দি কোনো মেয়েকে এমন ল্যাঙ্গুইজে কথা বলতে দেখেনি ইয়ু ”

ইশানের কন্ঠে ঘাবড়ে যায় ইনায়া।ইনায়া কাল বিলম্ব না করেই সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

”আজ চলি।পাপাই চিন্তা করবে নয়তো!”

”আমি এগিয়ে দেই ইয়ু।”

ইশানের কথায় ইনায়া বলে,”প্রয়োজন হবে না। তুই বাসায় নয়তো তোর ফ্যামিলি চিন্তা করবে!”

কি ভাবছেন তো একটু আগেই বললাম ইশান,ইনায়া জমজ ভাইবোন।তবে ওরা আলাদাই থাকে কেন আর কেনই বা পরিবার আলাদা!ওদের বাবা-মায়ের কোনো এক কারণে ডিভোর্স হয়ে গেছে ওদের জন্মের মাসখানেক পরই।বাকি তথ্য ধীরে ধীরে জানতে পারবেন গল্পে থাকুন‌।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে