#প্রেমের_বৈঠা_গেছে_খুলে (০৯)
#নূন_মাহবুব
-” সকাল দশটা। চৌধুরী মঞ্জিলের সবাই ব্রেকফাস্ট করছে এমন সময় ইমতিয়াজ চৌধুরী অঙ্কন কে বললো, হ্যাঁ রে বাবু কেস টা কতো দূর আগালো? বাচ্চাদের কোনো খোঁজ পেয়েছিস? অনেক দিন হয়ে গেলো এই কেসের ইনভেস্টিগেশন করছিস।”
-” হ্যাঁ ড্যাড । শুধু বাচ্চাদেরই খবর পাই নি।এর সাথে যারা যারা জরিত আছে সবার খোঁজ পেয়ে গিয়েছি। তবে আজ এইখানে , এই মুহূর্তে এই কেসের চ্যাপ্টার ক্লোজ হয়ে যাবে।”
-” অঙ্কনের কথা শুনে আঞ্জুম আরা চৌধুরী বললেন, কি বলছো দাদুভাই? তার মানে আসল অপরাধী এই চৌধুরী মঞ্জিলে রয়েছে? ”
-” হ্যাঁ সুইটহার্ট।ড্যাড দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছে। মানুষ গিরগিটির থেকে ও ভ’য়ং’ক’র। এরা যে পাতায় খায় সেই পাতায় ফুটা করে। মানুষ কে বিশ্বাস করার থেকে কু’কু’র কে বিশ্বাস করা ভালো।কারণ মানুষ বিশ্বাসঘাতকতা করলে ও কু’কু’র কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।”
-” অঙ্কনের কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে নাতাশা চৌধুরী বললেন, তুই ঠিক কি বলতে চায়ছিস বাবু? একটু ক্লিয়ার করে বল তো।মানছি তুই একজন সিআইডি অফিসার।তাই বলে তুই বাড়ির লোকদের সন্দেহ করছিস? আমাদের কে তোর অপরাধী মনে হয়?”
-” মম তুমি খুব ভালো করে আমি কখনো প্রমাণ ছাড়া কথা বলি না।আমি যখন বলেছি আসল অপরাধী এই বাড়িতে রয়েছে ,তার মানে নিশ্চয় প্রমাণ সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছি।”
-” তাহলে বলছিস না কেন কে করেছে এসব?কে বা কারা এর পিছনে রয়েছে?”
-“অজান্তা”
-” অজান্তার কথা শুনে আঞ্জুম আরা চৌধুরীর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।তিনি বললেন, আমার প্রথম থেকেই এই মেয়ের উপর সন্দেহ ছিলো। নিশ্চয় ও টাকার জন্য এইসব করেছে।লোভী মেয়ে একটা। দাদুভাই তুমি বরং ওকে নিয়ে জেলে ভরে দাও।কতো বড় সাহস সিআইডি অফিসারের বাড়িতে থেকেই বাচ্চা পাচার করছে।না জানি আরো কি কি অপরাধের সাথে জড়িত আছে এই মেয়ে?”
-” আর কতো ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকবে সুইটহার্ট? অনেক ভালো অভিনয় করতে পারো তুমি। অমানুষের আড়ালে দিব্বি ভালো মানুষের মুখোশ পরে রয়েছো। তোমার মুখোশ খোলার সময় এসে গিয়েছে তো।এখন ভালোই ভালোই তুমি নিজে মুখে সবটা স্বীকার করবে।নাকি আমি নিজেই…
-” অঙ্কনের বাকি কথা শেষ হওয়ার আগেই আঞ্জুম আরা চৌধুরী তোতলাতে তোতলাতে বললো,এসব তুমি কি বলছো দাদুভাই? আমি এসব করেছি মানে? এই ইমতিয়াজ কি বলছে এই ছেলে?মা কে অপমান করছে, আর তুমি চেয়ে চেয়ে দেখছো? কেমন ছেলে তুমি?”
-” হ্যাঁ তুমি করছো সুইটহার্ট। কিভাবে পারলে এমন টা করতে? কিসে কম ছিলো তোমার? আমি প্রথমে ভেবেছিলাম এ সব কিছু অজান্তা করেছে। কিন্তু যখন ছাদ থেকে নেমে আসি,তখন দেখি অজান্তা কিচেনে রয়েছে।তখনই আমার মনে সন্দেহ জাগে।আমি তোমার রুমে গিয়ে দেখি তুমি নেই। বিছানায় বালিশের গাঁয়ে কাঁথা দেওয়া রয়েছে।যাতে কেউ দেখলে মনে করে , তুমি এখানে শুয়ে রয়েছো।আর তুমি যেহেতু আগে থেকেই অসুস্থ হওয়ার নাটক করেছো ,তাই সবাই ভাববে হয়তো তুমি অসুস্থতার জন্য ভুলে গিয়েছো দরজা লক করতে। তুমি নিজেকে অনেক চালাক মনে করো তাই না সুইটহার্ট ওরফে শিশু পাচারকারী দলের লিডার।”
-” অঙ্কনের কথা শুনে ইমতিয়াজ চৌধুরী তেড়ে এসে অঙ্কন কে থা’প্প’ড় দিয়ে বললো,হাউ ডেয়ার ইউ?একটা বাইরের ছেলে হয়ে তোমার সাহস হলো কি করে আমার মাকে অপমান করার?”
-” বাইরের ছেলে কথা টা শুনে অঙ্কনের পা থমকে যায়। পুরুষ মানুষের নাকি কান্না করতে নেই। কিন্তু অঙ্কন হাজার চেষ্টা করেও চোখের পানি আটকাতে পারে নি। অঙ্কন নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, হ্যাঁ স্যার , আপনি ঠিকই বলেছেন আমি একটা বাইরের ছেলে।যা আমি আগে থেকেই জানি।তবে আপনি এটা ও ভুলে যাবেন না , আমি একজন সিআইডি অফিসার।আর একজন সিআইডি অফিসারের কাজ সম্পর্কে আপনার নিশ্চয় ধারণা আছে। আমি যে মিথ্যা বলছি না তার প্রমাণ এখনই পেয়ে যাবেন মিস্টার ইমতিয়াজ চৌধুরী। অঙ্কন একটু দূরে গিয়ে ইশান কে কল করে বললো,ইশান বাচ্চাদের নিয়ে এসো।”
-” জ্বি স্যার।”
-” পাঁচ মিনিট পরে ইশান বাচ্চাদের নিয়ে এলো। বাচ্চাদের দেখে সবাই যতটা না অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে বাচ্চাদের এই চৌধুরী মঞ্জিল থেকে বের হতে দেখে। ইমতিয়াজ চৌধুরী এসে আঞ্জুম আরা চৌধুরী কে বললেন,তার মানে সব সত্যি? তুমি এসব করেছো মা? আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে তুমি আমার মা।আমি একজন অপরাধীর সন্তান।”
-“হা হা হা।সবটা যখন জেনে গেছিয়ো তাহলে এটাও জেনে রাখো আমি তোর মা না।”
-” মানে কি বলছো তুমি?”
-” তোমার বাবা ইসহাকের ড্রাইভার ছিলো আমার স্বামী আতিকুর।একটা এক্সিডেন্টের সময় তোমার বাবা কে বাঁচাতে গিয়ে আমার স্বামী ঘটনাস্থলে মা’রা যায়। আতিকুরের মৃত্যুতে আমি আর আমার দশ বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ দিশেহারা হয়ে পড়ি। ইসহাক ছিলো অনেক দয়ালু।সে আমাকে আর আব্দুল্লাহ কে এই চৌধুরী মঞ্জিলে নিয়ে আসে। এইখানে এসে আমার রাজরানী হওয়ার সাধ জাগে। তোমার মা কে দুচোখের বিষ মনে হতো আমার। আমি একদিন সুযোগ বুঝে তোমার মায়ের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেই।আর তোমার মা ঘুমিয়ে পড়লে তাকে বালিশ চাপা দিয়ে মে’রে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দিয়ে আ’ত্ম’হ’ত্যা নামে চালিয়ে দেই।আর বুদ্ধি করে তোমার মায়ের হাতের লেখা নকল করে একটা সু’ই’সা’ই’ড নোট লিখে রাখি যে, আমার মৃ’ত্যু’র জন্য কেউ দায়ী নয়। আমার স্বামীর কাছে আমার একটা অনুরোধ আমার যেন পোস্টমর্টেম করা না হয়।ব্যাস বোকা ইসহাক তার প্রিয়তমা স্ত্রীর কথা রাখতে গিয়ে জানতে ও চায় নি তার স্ত্রীর মৃ’ত্যু কিভাবে হয়েছে। প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়ে ইসহাক অনেক ভেঙ্গে পড়ে।আমি সেই সুযোগ টা কাজে লাগিয়ে দিলাম।আমি তাকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম,সে যেন সব ভুলে নতুন জীবন শুরু করে। তুমি তখন খুব ছোট। ইসহাক কে বললাম তোমার জন্য একটা মা প্রয়োজন।না হলে তুমি মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে না।এতে ইসহাক রাজি হয় না। ইসহাক বলে দ্বিতীয় কোনো নারী কে তার জীবনে গ্ৰহণ করবে না।সে একাই তোমাকে বাবা মায়ের স্নেহ ভালবাসা দিয়ে বড়ো করবে।পরে আমি তোমাকে ব্যবহার করি। নানাভাবে তোমাকে নিজে আঘাত করে নিজেই সারিয়ে তুলি। তোমার বাবার সামনে প্রমাণ করি আমি তোমার মা হওয়ার যোগ্য। ইসহাক কে অনেক বোঝানোর পর তোমার কথা ভেবে তোমার বাবা আমাকে বিয়ে করে। তারপর সুযোগ বুঝে তোমার বাবা কে ও মে’রে দেই আমি।
-” ছিঃ ছিঃ ছিঃ।এতো নিচু তুমি।মনে হচ্ছে তোমার মুখে থুথু ছুড়ে মারি। কিভাবে পারলে এতো গুলো মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলতে? শুধু মাত্র তোমার জন্য আমার ছেলে টাকে আমি ভুল বুঝেছি।তাকে বাইরের ছেলে উপাধি দিয়েছি। এমনকি তাকে থা’প্প’ড় দিতে ও আমার হাত কাঁপে নি।এই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছে তোমাকে ফাঁ’সি’র দড়িতে ঝুলিয়ে দিতে পারলে আমার মনে শান্তি লাগতো।”
-” অঙ্কন বললো, আপনি চিন্তা করবেন না স্যার।সে একজন খু’নী ও পাচারকারীদের লিডার । ফাঁ’সি’র দড়ি তার জন্য বরাদ্দ রয়েছে। ওহ্ সুইটহার্ট একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। তুমি একা ফাঁ’সি’র দড়িতে ঝুলবে না। তোমার আদরের ছলে আব্দুল্লাহ যার জন্য এতো কিছু করেছো তুমি।সেই আব্দুল্লাহ ও তোমার সাথে ফাঁ’সি’র দড়িতে ঝুলবে।”
-” আমি আমার দোষ স্বীকার করে নিয়েছি। প্লিজ আমার ছেলে টাকে ছেড়ে দাও।ও তো কোনো খু’ন করে নি। ও শুধু মাত্র আমার সঙ্গ দিয়েছে।ওকে প্লিজ ছেড়ে দাও।”
-” কেউ ছাড়া পাবে না। তুমি না মা? কেমন মা তুমি? মায়েরা সন্তানদের সঠিক শিক্ষা দেয়।আর তুমি নিজে হাতে অপরাধী তৈরি করছো। অপরাধ করার আগে তোমার ভাবা উচিৎ ছিলো এর ফল কেমন হবে।এখন যাও চৌদ্দ শিকের মধ্যে গিয়ে মা ছেলে মিলে কোটি কোটি টাকার হিসাব করো।চলো সুইটহার্ট ।”
-” এক মিনিট দাদুভাই। জীবনে কখনো ভালো কাজ করি নি আমি।পাপের সাগরে ডুবে থেকেছি।আর তার ফলস্বরূপ ফাঁ’সি’র দড়ি আমার অপেক্ষা করছে। জীবনের এই অন্তিম সময়ে এসে অন্তত একটা ভালো কাজ করে যেতে চাই।”
-” নাটক না করে যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।”
-” আঞ্জুম আরা চৌধুরী নাতাশার কাছে এসে পা জড়িয়ে ধরে বললো,আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও।আমি তোমার জীবন থেকে সমস্ত সুখ কেড়ে নিয়েছি।”
-” নাতাশা চৌধুরী পা ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন,নাটক বন্ধ করুন প্লিজ।বাবু এই মহিলা কে নিয়ে যা। আমার সহ্য হচ্ছে না এই মহিলা কে।”
-” চলে তো আমি যাবোই বউমা।তবে যাওয়ার আগে একটা কথা বলতে চাই।”
-” হ্যাঁ বলুন আর কি কি চমক দেওয়ার বাকি আছে? এমনিতেই অনেক চমকপ্রদ কথা শুনিয়েছেন।আর কিছু শোনার ইচ্ছা হচ্ছে না। তবু ও শেষ ইচ্ছা বলে কথা। বলুন কি বলতে চান?”
-” অজান্তাই তোমার হারিয়ে যাওয়া মেয়ে বউমা।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।