প্রেমের বৈঠা গেছে খুলে পর্ব-০৮

0
721

#প্রেমের_বৈঠা_গেছে_খুলে (০৮)

#নূন_মাহবুব

-“তুলি এক হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে অন্য হাতে দরজা খুলে নাতাশা চৌধুরী কে দেখা মাত্রই চমকে উঠে।যার ফলে তার হাতে রাখা খাবারের প্লেট নিচে পড়ে যায়।”

-” নাতাশা চৌধুরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, একি মেয়ে কি হলো তোমার? আমাকে দেখে এইভাবে চমকে উঠলে কেন?চিনো আমাকে ?”

-“তুলি তৎক্ষণাৎ নাতাশা চৌধুরীর পা জড়িয়ে ধরে বললো,আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিন ম্যাম।আমি আপনার সাথে অনেক বড়ো অন্যায় করেছি। কিন্তু কথায় আছে না , পাপ কখনো বাপ কে ও ছাড়ে না। আমার ক্ষেত্রে ও সেইরকম হয়েছে।কখন যে আমার করা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অন্যায় গুলো ধীরে ধীরে পাহাড় সমতূল্য হয়ে গিয়েছিলো আমি টের ও পাই নি। আমার করা পাপের ফল আমার সন্তানের ভোগ করতে হয়েছে। এক মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে গিয়ে অন্য মায়ের মুখের হাসি কেড়ে নেয়ার জন্য সৃষ্টিকর্তা আমার নিজের মুখের হাসি কেড়ে নিয়েছে।জানি আমার অপরাধের কোনো ক্ষমা হবে না। তবু ও ম্যাম পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। এতো গুলো বছর আমি শান্তিতে ঘুমোতে পারিনি। আমার করা অন্যায় আমাকে ঘুমোতে দেয় নি। প্রতিনিয়ত আমাকে খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছিলো। অবশেষে আজ আপনার দেখা পেলাম। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করবেন ম্যাম।”

-” নাতাশা চৌধুরী পা ছাড়িয়ে বললেন,আরে আরে কি করছো কি তুমি?কি আবোল তাবোল বকছো? তাছাড়া আমি তোমাকে চিনি ও না। তোমার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। আমার জানা মতে তুমি আমার কোনো ক্ষতি করো নি। তুমি হয়তো অন্য কারো সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলছো।”

-“আমি সেই পাপী যে কি না একজন মায়ের থেকে তার সন্তান কেড়ে নিয়েছিলো। হ্যাঁ আমি আপনার মেয়ে কে আপনার থেকে কেড়ে নিয়েছিলাম।”

-” তার মানে আমি ঠিক ছিলাম।আমি সেদিন মৃ’ত সন্তানের জন্ম দেই নি।”

-” হ্যাঁ ম্যাম। পাঁচ বছর ধরে আমার কাজিন
নিঃসন্তান ছিলো। শুধু মাত্র একটা সন্তানের জন্য প্রতিনিয়ত শ্বশুর বাড়ির সবার কাছে নির্যাতনের শিকার হতো।এমনকি ওর স্বামী ওকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছিলো। একদিন হসপিটালে এসে ও আমার হাত জোড় করে বলে ওকে যেন আমি একটা বাচ্চা চুরি করে দেয়।এতে যদি কোনো ভাবে ওর সংসার টা টিকে যায়।আমি প্রথমে রাজি হয় নি‌।পরে ও আমাকে নানাভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে।এক পর্যায়ে আমি রাজি হয়। আমার টার্গেট ছিলো কোন বড়লোকের সন্তান চুরি করা। আমার কাজিন কে কথা দেওয়ার দুই দিন পরে আপনি হসপিটালে এডমিট হন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আপনারা অনেক বড়লোক। কিন্তু আপনি ও আট বছর নিঃসন্তান থাকার পরে একটা বাচ্চার মুখ দেখতে যাচ্ছেন।যখন এইটা জানতে পারলাম তখন আমার সিন্ধান্ত থেকে আমি সরে আসি। কিন্তু বিপত্তি ঘটে আপনার মেয়ে হ‌ওয়ার পর। ডক্টর যখন সমস্ত ফর্মালিটি পূরণ করে চলে যায় তখন আমি আর মীরা একজন নার্স থাকি এইখানে। কিছুক্ষণ পরে একজন ওয়ার্ড বয় এসে জানায় মীরা কে নাকি কেউ ডাকছে।মীরা যাওয়ার পর কোথা থেকে একজন মহিলা এসে আমাকে বলে,আমি যেন আপনার মেয়েকে সরিয়ে তার জায়গায় কোন মৃত সন্তান রাখি।ব্যাস এইটুকু কাজের জন্য সে আমাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দিতে চায়।টাকা দেখে আমার মধ্যে লোভ সত্তা জাগ্ৰত হয়। একদিকে কাজিনের মুখে হাসি অন্য দিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা।আমি কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে যায়। অবশ্য আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মেয়েটাকে সরিয়ে তার কি লাভ হবে? সে বলেছিলো আদার ব্যাপারি হয়ে আমি যেন জাহাজের খবর না রাখি।এটাও বলেছিলো আমি যদি কারো কাছে এই বাচ্চা চুরির ব্যাপারে কিছু বলি তাহলে আমাকে প্রাণে মে’রে দিবে।”

-” নাতাশা চৌধুরী চোখের পানি মুছে বললো, তারপর কি হলো? কোথায় আমার মেয়েটা? এখনো বেঁচে আছে কি?”

-” আমি আমার কাজিন কে বাচ্চা টা দিয়ে আসি। বাচ্চা পেয়ে অনেক খুশি হয়েছিলো মেয়েটা।ভেবেছিলো হয়তো তার সংসার টা টিকে থাকবে । কিন্তু ওর শ্বশুর বাড়ির কেউ বাচ্চা টা কে মেনে নিতে পারেনি। আমার কাজিন বাচ্চা কে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। তিন চার মাস অন্যত্র থাকার পর কিভাবে জানি ওর স্বামী ওদের খোঁজ পেয়ে যায়।আর বাচ্চা টা কে মে’রে ফেলতে চায়।পরে আমার কাজিন বাচ্চা টার জীবন বাঁচাতে কোনো এক বড়লোকের গাড়ির মধ্যে রেখে আসছিলো।”

-” মূহুর্তের মধ্যে নাতাশা চৌধুরী মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। তিনি মনে মনে বললেন,অজান্তা কে যখন পাই তখন ওর বয়স ও আনুমানিক তিন থেকে চার মাস ছিলো।আর আশ্চর্যজনক বিষয় হলো মেয়েটা অনেক কান্না করছিলো,আর আমি যখন কোলে তুলে নিয়েছিলাম একদম চুপ হয়ে গিয়েছিলো। মনে হচ্ছিলো যেন তার মায়ের কোল খুঁজে পেয়েছে। তার মানে কি অজান্তাই আমার হারিয়ে যাওয়া মেয়ে?”

___________________________________

-” এজন্যই তুমি বারবার বেলা কে দোষারোপ করছিলে তাই না? নিজের দোষ বেলার উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলে তাই না রেশমী? কিন্তু তোমার ছোট্ট একটা ভুল আমাদের কে খু’নী পর্যন্ত পৌঁছে দিলো।”

-” হয় সাহেব।আমি এসব করছি। আমার পোলা ডার বড়ো অসুখ হয়ছে। চিকিৎসার জন্যি মেলা টাহা প্রয়োজন।কতো মানুষের কাছে হাত পাতিছি কেউ সাহায্য করি নেই।আর মানুষ সবসময় মানুষের দূর্বলতা খুঁজে। দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে সুযোগের সৎ ব্যবহার করে। যেমন টা আমার সাথে করছে। আমি যহন টাহার জন্যি হন্যে হয়ে রাস্তায় রাস্তায় বেড়াচ্ছিলাম তখন এক বেডা আমারে কয়লো, আমার পোলার অসুখ সারার সমস্ত খরচ সে বহন‌ করবে। বিনিময়ে আমার বেলা রে জঙ্গলে নিয়ে যাতি হবি। আপনি নিজেই কন সাহেব কোন মা চায় তার কলিজার টুকরো কে চোখের সামনে মরতে দেখতে । আমি কিছু না ভেবেই রাজি হয় যায়।ঐ বাচ্চাদের যে বেডা নিয়ে গেছিলো সে শিশু পাচারকারীদের সাথে জড়িত ছিলো।এইডা বেলা পরে বুঝতি পারে। বেলা পুলিশে খবর দেওয়ার হু’ম’কি দেয় তাদের।আর তহন‌ই বেলা কে তারা একটা বন্ধ কামরায় আটকে রাহে।বেলা অনেক চালাক চতুর ছিলো।যার জন্যি সহজেই তাদের চোখে ধুলো দিয়ে চলে আসে। এইহানে আসার পর বেলা আপনাদের খবর দিতে চায়। কিন্তু তার আগেই আমি ওকে জঙ্গলে নিয়ে যাই।বাকি ডা তো আপনারা জানেন সাহেব।”

-” নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য খু’নে’র মতো এতো জঘন্য একটা কাজ করতে একটু ও বিবেকে বাধে নি তোমার? তুমি আমাদের কে বলতে পারতে।আমরা তোমার বাচ্চার চিকিৎসা করাতাম। আচ্ছা ঐ লোকটা কে ছিলো যে বাচ্চাদের নিয়ে গিয়েছিলো?আর এসবের পিছনে কে বা কারা রয়েছে কিছু বলতে পারবে তুমি?”

-” এসবের পিছনে একজন বেডি মানুষ আছে সাহেব।”

-” তুমি শিওর?”

-“হ্যাঁ সাহেব।যে বেডা বাচ্চাদের নিয়ে গিছিলো সে ফোনে কচ্ছিল, মা ঐদিকের সব ঠিকঠাক আছে তো? দুই একদিনের মধ্যেই বাচ্চাদের কে পাচার করে দিবো।আর বিনিময়ে আমরা কোটি কোটি টাকা পাবো।এই দুই দিন একটু কষ্ট করে তুমি বাচ্চাদের সামলে রেখো মা।বেডার কথা শুনে আমি বুঝতি পারছি এসবের পিছনে তার মা রয়ছে।অথবা যে রয়ছে তাকে সে মা ডাকে।”

-” মা থাকুক বা বাবা থাকুক আমরা ঠিক তাকে ধরে ফেলবো।তবে তুমি যা করেছো এর জন্য তুমি ও শাস্তি পাবে। শাস্তির জন্য প্রস্তুত হ‌ও রেশমী।”
___________________________________

-” মাঝরাতে কোনো কিছুর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় অঙ্কনের। পাশে অজান্তা কে না পেয়ে অনেক টা চিন্তিত হয়ে যায় অঙ্কন। অঙ্কন নিচে এসে ও অজান্তা কে না পেয়ে কি মনে করে ছাদে চলে যায়।ছাদে এসে দেখে কেউ একজন ফিসফিসিয়ে কথা বলছে।যা পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না। অঙ্কন বোঝার চেষ্টা করে ঠিক কি কথা হচ্ছে। অঙ্কন সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই তার কানে বাজে, বাচ্চাদের কে এই চৌধুরী মঞ্জিলে রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র সকালের অপেক্ষা। সকালে তাদের পাচার করে দেওয়া হবে।”

-” মূহুর্তের মধ্যে অঙ্কনের পা থমকে যায়। অঙ্কন ভাবতে থাকে, কে হতে পারে এই মহিলা? কণ্ঠস্বর ও ভালো করে বুঝতে পারছি না। আমাদের বাড়িতে মহিলার সংখ্যা চার জন।মম,অজান্তা , সুইটহার্ট,আর বেলী। মম বা সুইটহার্ট এখনো এই কাজ করবে না। তাছাড়া মম ড্যাড তো ঘুমোচ্ছে। সুইটহার্ট ও নাকি অসুস্থ।বেলীর রুম ও ভেতর থেকে লক করা দেখে আসলাম। একমাত্র অজান্তা রুমের বাইরে রয়েছে। ও নো! তাহলে কি এসবের পিছনে অজান্তা রয়েছে? ।অজান্তাই করেছে এইসব??

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে