প্রেমের বৈঠা গেছে খুলে পর্ব-০৭

0
735

#প্রেমের_বৈঠা_গেছে_খুলে (০৭)

#নূন_মাহবুব

-” ফজরের আযানের মিষ্টি ধ্বনি কর্ণপাত হতেই ঘুম হালকা হয়ে গেল অজান্তার।অজান্তার মনে হচ্ছে সে কোন শক্ত পাথর ব্যবহার করেছে তার বালিশ হিসেবে। পরক্ষণেই অজান্তা বুঝতে পারে তার বালিশ হিসেবে ব্যবহৃত জিনিস টা কোনো পাথর নয়। স্বয়ং তার বর সিআইডি অফিসার অঙ্কন চৌধুরীর বুক।তখন‌ই অজান্তার মনে পড়ে যায় রাতের ঘটনা। অজান্তা বিছানায় আসবে না বলতেই অঙ্কন তাকে কোলে তুলে নেয়।অজান্তা অঙ্কনের কোল থেকে নামার জন্য ছটফট করলে অঙ্কন ফট করে অজান্তার কপালে চুমু দিয়ে দেয়। ব্যাস অজান্তার সারা শরীরে বিদ্যুৎ গতিতে শিহরণ বয়ে যায়। মূহুর্তের মধ্যে সে যেন কাঠের পুতুলে পরিণত হয়ে যায়।একদম বিড়াল ছানার মতো অঙ্কনের বুকে লেপ্টে পড়ে থাকে অজান্তা। অঙ্কন তাকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজে ও তার পাশে শুয়ে পড়ে। অবশ্য শোয়ার আগে অঙ্কন মাঝখানে কোলবালিশ দিয়েছিলো। কিন্তু অজান্তা দেখলো কোলবালিশ নিচে পড়ে রয়েছে।আর অজান্তা পড়ে রয়েছে অঙ্কনের বুকে।অজান্তা অঙ্কন কে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে বললো, ইশ্ আমার ব্লাক ডায়মন্ড টা। আমি খুব ভালো করে জানি ব্লাক ডায়মন্ড আপনি আমাকে ভালোবাসেন।আর সেই ভালোবাসার গভীরতা অনেক বেশি। আপনি আমার সাথে যা যা করেছেন সবটা আপনার অভিনয়। কোনো এক অজানা কারণে আপনি আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন। আমার মতো আপনার ও প্রেমের বৈঠা অনেক আগেই খুলেছে।আর খুব শীঘ্রই আপনি নিজে মুখে বলবেন, হ্যাঁ অজান্তা তোর মতো আমার ও প্রেমের বৈঠা গেছে খুলে। সাতপাঁচ ভেবে অজান্তা বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবে তার আগেই শাড়িতে টান পায়‌।অজান্তা দেখে তার শাড়ির আঁচলের কিছু অংশ অঙ্কনের পিঠের নিচে রয়েছে।অজান্তা এসে আবারো অঙ্কন কে জরিয়ে ধরে বলে,‌আচ্ছা ব্লাক ডায়মন্ড আপনি কালা ,আমি ধলা। আমাদের পোলাপাইন কি কালা ধলার সংমিশ্রণে বেগুনি কালারের হবে?”

-” বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করতেই অঙ্কনের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখে অজান্তা তার বুকের উপর বিড়াল ছানার মতো লেপ্টে রয়েছে।যা দেখে অঙ্কনের ইচ্ছে হয় না অজান্তা কে জাগাতে।সে চোখ বুজে ঘুমের ভান ধরে পড়ে থাকে। কিন্তু অজান্তার আজগুবি কথা শুনে সে আর স্থির থাকতে পারে না। অঙ্কন এক ঝটকায় অজান্তা কে নিজের থেকে সরিয়ে ধমক দিয়ে বলে ,হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ?”

-” অঙ্কনের ধমকে অজান্তা ভয় পাওয়ার পরিবর্তে দাঁত কেলিয়ে বলে, বলেন না অঙ্কন ভাই। আমাদের পোলাপাইন কি বেগুনি কালারের হবে?”

-” এজন্যই কথায় বলে বানরদের বেশি লায় দিতে নেই। বেশি লায় পেয়ে তারা ঠিক এইভাবে মাথায় উঠে নাচতে শুরু করে। অনেক নেচেছিস এবার নাম আমার বিছানা থেকে।”

-“অজান্তা বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে যেতে গিয়ে ফিরে এসে অঙ্কনের দুই গালে দুইটা চুমু দিয়ে বললো, আমি কখনো কারো কাছে ঋণী থাকি না। আপনি রাতে আমাকে একটা চুমু দিয়েছিলেন ,তাই এখন আমি সুদসহ দুইটা ফেরত দিলাম।হিসাব একদম বরাবর বলে অজান্তা ওয়াশরুমে চলে গেল।”

-” অজান্তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে অঙ্কন বললো, আমি ও দেনাদার হয়ে থাকতে পছন্দ করি না। পাওনাদার কে তার পাওনা ঠিক সময়ে পরিশোধ করে দিতে পছন্দ করি বলে আবারো ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো অঙ্কন।”

-” অজান্তা ফজরের নামাজ আদায় করে নিচে এসে দেখলো নাতাশা চৌধুরী কিচেনে রান্না করছে।অজান্তা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,একি বড়মা! এতো সকাল সকাল তুমি কিচেনে কেন? তোমার ক্ষুধা লেগেছে আমাকে বলতে পারতে।আমি নাস্তা তৈরি করে দিতাম। তুমি শুধু শুধু কষ্ট করে এতো সকাল সকাল উঠতে গেলে কেন?”

-” আমাদের এক জায়গায় যেতে হবে অজান্তা।তার জন্যই সকাল সকাল রান্না বসিয়েছি।তোর দাদীমার ও যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ওনার নাকি হুট করে মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে।তাই আমি আর তুই যাবো। তুই দাঁড়িয়ে না থেকে আমার কাজে হাত লাগা। আবার বিকালের মধ্যে ফিরতে হবে তো।”

-” ঠিক আছে বড়মা।বলো কি করতে হবে আমাকে?”

-“তুই ছোলার ডাল টা ধুয়ে প্রেসার কুকারে দিয়ে দে।আমি লুচির জন্য ময়দা মেখে রাখি।বাবু কিছু দিন থেকে লুচি আর ছোলার ডাল খেতে চায়ছে।তাই ভাবলাম আজ বাবুর পছন্দের লুচি আর নারকেল দিয়ে ছোলার ডাল করি।”

-” ঠিক আছে বড়মা। তাহলে আজকে সকালের নাস্তা একদম জমে ক্ষীর হবে। তোমার হাতের লুচি আর ছোলার ডাল। উফ্ এখন‌ই জিভে পানি এসে গেছে।”

-” হয়েছে হয়েছে ,এতো আলু দিতে হবে না।অজান্তা আর নাতাশা চৌধুরী রান্না করছে এমন সময় সেখানে বেলি উপস্থিত হয়।বেলি কে দেখে নাতাশা অজান্তা কে বললো, তুই এখন যা।রেডি হয়ে নে।রান্না প্রায় হয়ে এসেছে।বাকি টা আমি আর বেলি করে নিচ্ছি।”

-” ঠিক আছে বড়মা।”

__________________________________

-” মম! সকাল সকাল সাজগোজ করে কোথাও যাচ্ছো নাকি?”

-” হ্যাঁ বাবু।তোর বিথী আন্টি কে চিনিস না?”

-” হ্যাঁ । কি হয়ছে বিথী আন্টির?”

-” ও নাকি দুই দিন আগে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় ,পায়ে বাজে ভাবে আঘাত পেয়েছে। হসপিটালে ছিলো এখন নাকি একটু সুস্থ ।তাই বাড়িতে রেখে ট্রিটমেন্ট করা করা হচ্ছে।”

-” ঠিক আছে যাও তাহলে।দেখে আসো তোমার বান্ধবী কে।”

-” বলছিলাম কি বাবু , তুই কি গাড়ি করে যাবি?”

-” না মম।গ্ৰামে ছোট ছোট রাস্তা।গাড়ি যায় না।বাইকে করে যাবো । কেন কি হয়েছে মম?”

-” তোর ড্যাড গাড়ি নিয়ে বেড়িয়েছে।এখন আমরা কিভাবে যাবো বুঝতে পারছি না।”

-” এক কাজ করো মম।বাসে করে চলে যাও।”

-” আমি ও বাসে করে যাবো ভাবছিলাম। কিন্তু অজান্তা তো বাসে জার্নি করতে পারে না।মেয়েটার মাথা ঘোরায় ,বমি পায়।ওর জন্যেই তো না হলে আমার কোনো সমস্যা ছিলো না।”

-” অজান্তা ও যাবে? বলতেই অঙ্কনের চোখ যায় সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসা নববধূর দিকে। ফর্সা গায়ে কালো জামদানি শাড়ি টা একদম ফুটে উঠেছে। কোমর পর্যন্ত কোঁকড়ানো চুলগুলো যেন সমুদ্রের ঢেউ খেলে যাচ্ছে।মুখে নেই কোনো ভারী মেকআপ। মেয়েদের চোখে কাজল দিলে মায়াবী লাগে। কিন্তু এই মেয়ে কখনো কাজল পরে না।চোখে আইলানা আর ঠোঁটে সামান্য একটু লিপস্টিক।ব্যাস এতেই যেন তার সাজ পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে ‌। অঙ্কের কাছে মনে হচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে ফুটন্ত কোনো গোলাপ নেমে আসছে। অঙ্কন অজান্তার দিকে তাকিয়ে হুট করে বলে উঠলো,মম তোমরা বরং আমার বাইকে চলো। আমি তোমাদের ড্রপ করে দিবো।”

-” অজান্তা এগিয়ে এসে বললো,আমি আপনার সাথে যাবো না ব্লাক ডায়মন্ড।”

-” অঙ্কন তেড়ে এসে বললো, বেশি পাকনামি করলে, একদম গু’লি করে মাথার খু’লি উড়িয়ে দিবো ।আমি বাইরে ওয়েট করছি তাড়াতাড়ি মম কে নিয়ে আয়।”

-” অঙ্কন যাওয়ার পানে চেয়ে অজান্তা ব্যঙ্গ করে বললো, একদম গু’লি করে খুলি উড়িয়ে দিবো।আসিস গু’লি করে খু’লি উড়িয়ে দিতে।তোর ও লুঙ্গি পরা ছবি ভাইরাল করে দিবো।হা হা হা।”

__________________________________

-“বিথী খন্দকার।পেশায় একজন শিক্ষিকা।তার প্রথম স্বামী এক্সিডেন্ট করে মা’রা যাওয়ার পর পারিবারিক ভাবে রেদওয়ান নামের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতির সাথে বিয়ে হয়।রেদ‌ওয়ানের প্রথম স্ত্রীর একজন মেয়ে রয়েছে।যে একদম দুচোখে বিথী কে সহ্য করতে পারে না। দুই দিন আগে বিথী কলেজে যাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি করে সিঁড়ি বেয়ে নামছিলো। হঠাৎ করে কোনো পিচ্ছিল জাতীয় কিছুর উপর স্লিপ করে সে পড়ে যায়।যার কারণে মাথায় ও পায়ে আঘাত পায়।বিথীর ধারণা কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে তাকে আঘাত করার জন্য এই কাজ করেছে। যদিও সে জানে এই কাজ করেছে তবুও কিছু না বলে মুখ বুজে সবটা সহ্য করে নিয়েছে। বিথী এখন একটু সুস্থ্য ।যার কারণে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।তুলি নামের এক নার্স কে রাখা হয়েছে তার দেখভালের জন্য।তুলি তাকে মেডিসিন দিচ্ছে ,এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। কলিংবেলের আওয়াজ শুনে বিথী বললো, নিশ্চয় কাজের মেয়েটা এসেছে।বিথী উঠতে গেলে তুলি বললো, আরে আরে ম্যাম আপনি উঠছেন কেন? এখনো পরিপূর্ণ ভাবে সুস্থ্য নন আপনি। আপনি শুয়ে থাকুন।আমি গিয়ে দেখছি কে এসেছে?”

-” তোমাকে রাখা হয়েছে আমার দেখভালের জন্য। তুমি বাসার কাজ করবে ,এইটা কেমন দেখায়?”

-” দেখুন ম্যাম মানুষ মানুষের জন্য।আমি যদি এইটুকু আপনার জন্য না করতে পারি ,তাহলে কেমন মানুষ আমি?”

-” ঠিক আছে।তাহলে এই খাবার টা ও নিয়ে যাও।আমি আর খেতে পাচ্ছি না। তুমি বরং খাবার টা বাইরের ডাস্টবিনে ফেলে দিও।না হলে রেদওয়ান এসে বকাঝকা করবে। কেন খাবার না খেয়ে রেখে দিয়েছি এজন্য।”

-” ঠিক আছে ম্যাম।”

-” তুলি একহাতে খাবারের প্লেট নিয়ে অন্য হাতে দরজা খুলে নাতাশা চৌধুরী কে দেখা মাত্রই চমকে উঠে।যার ফলে তার হাতে রাখা খাবারের প্লেট নিচে পড়ে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে