#প্রেমের_বৈঠা_গেছে_খুলে (০৬)
#নূন_মাহবুব
-“দেখতে দেখতে কে’টে গেল কয়েকদিন।কেসের ইনভেস্টিগেশন চলছে কিন্তু কাঙ্খিত কোনো তথ্য বা প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। অঙ্কন এতিমখানার সব বাচ্চাদের চকলেট দিয়ে তাদের মনোরঞ্জন করার পর তাদের জিজ্ঞেসা করছে তারা কিছু জানে বা দেখেছে কি না।এমন সময় অঙ্কনের ফোন বেজে উঠলো। অঙ্কন কল রিসিভ করে বললো, হ্যাঁ ইশান বলো।ঐ দিকের কি খবর কিছু জানতে পেরেছো কি?”
-” হ্যাঁ স্যার। এতিমখানা থেকে তিন কিলো দূরে একটা জঙ্গল রয়েছে।ঐ জঙ্গলে বেলা নামের মহিলা টার লা’শ পাওয়া গেছে।আমরা আশেপাশের লোকদের ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেছি।তারা নিশ্চিত করছে এইটা বেলার লা’শ ।মনে হচ্ছে মাথায় আঘাতের ফলে এর মৃ’ত্যু হয়েছে।”
-” কিভাবে মৃ’ত্যু হয়েছে সেটা তো ফরেনসিক রিপোর্ট এলে জানা যাবে। তুমি এক কাজ করো লা’শ টা কে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়ে দাও।”
-” জ্বি স্যার। আমি এক্ষুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি।তবে স্যার একটা বিষয় আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না।আমরা তো বেলা কেই সন্দেহ করেছিলাম।আর আশ্চর্যজনক ভাবে সেই বেলা খু’ন হয়ে গেল। কিন্তু কেন?”
-” বেলা নিশ্চয় এমন কিছু জানতে পেরেছিলো বা দেখেছিলো যা খু’নি’র জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। ব্যাস তারা পথের কাঁটা সরিয়ে দিয়েছে।এই বেলা বেঁচে থাকলে আমাদেরকে অনেক তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারতো। কিন্তু কোনো ব্যাপার না।এই বেলায় আমাদের পৌঁছে দিবে আসল অপরাধী পর্যন্ত। তুমি ফরেনসিক ল্যাবে চলে যাও। আমি ও আসছি।”
-“ঠিক আছে স্যার।”
___________________________________
-“হ্যাঁ উক্টর রবিন কিছু জানতে পারলেন?”
-“হ্যাঁ অঙ্কন। আনুমানিক চার ঘণ্টা আগে বেলা মা’রা গিয়েছে।তবে এই বেলার মৃ’ত্যু আঘাতের ফলে হয় নি।”
-” তাহলে কিভাবে হয়েছে?”
-” বিষের কারণে।বেলা কে বিষ দিয়ে মা’রা
হয়েছে।এই দেখো ওর ঠোঁট ,গলা কেমন নীল হয়ে গিয়েছে। আমি হয়তো খুনি কে এইটা বলতে পারবো না । কিন্তু বেলা কে বিষ কে দিয়েছে সেটা বলতে পারবো।”
-“ডক্টর রবিনের কথা শুনে ইশান বললো , কিভাবে স্যার?”
-” এই যে এই পানির বোতল টা।যেটা বেলার লাশের কাছে পড়ে ছিলো।আমি এই বোতলে দুইজনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট পেয়েছি।যার একটা বেলার ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে ম্যাচ করছে।আর একটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট হচ্ছে সেই ব্যক্তির যে বেলা কে এই বিষ দেওয়া পানি খেতে দিয়েছিলো।”
-” অঙ্কন বললো, এবার আমার কাছে বিষয় টা একদম পানির মতো পরিষ্কার হয়ে গেল।মানে কেউ বেলা কে জঙ্গলে ডাকে। এরপর বেলা যখন জঙ্গলে যায় তখন কেউ বেলা কে পিছন থেকে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে বাজেভাবে আঘাত করে। বেলা মৃ’ত্যু যন্ত্রনার ছটফট করতে থাকে।তার পানির তেষ্টা পায়। শেষ বারের মতো হয়তো পানি খেতে চেয়েছিলো।আর তখনই কেউ বেলা কে এই বিষ মিশ্রিত পানির বোতল দেয়।আর যার ফলে বেলার মৃ’ত্যু ঘটে।
-“একদম ঠিক বলেছো অঙ্কন।বেলার সাথে এমনটায় হয়েছে।”
-” ফিঙ্গারপ্রিন্ট যখন পাওয়া গিয়েছে ,খু’নি
কেও খুব সহজে আমরা ধরে ফেলবো।কাল সকালে আবারো আমাদের কুসুমপুর এতিমখানায় যেতে হবে।ঐ এতিমখানায়ই লুকিয়ে রয়েছে সব রহস্যের সমাধান।”
___________________________________
-” অফিসের কাজ শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় অঙ্কন দেখলো একজন ঝালমুড়ি বিক্রেতা ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। অঙ্কন ভাবলো ড্রামাবাজ মেয়েটা ঝালমুড়ি খুব পছন্দ করে। ঝালমুড়ি পেলে যেন দিন দুনিয়া সব ভুলে যায়।কি সব অখাদ্য গিলে মেয়েটা।এসব অখাদ্য খাওয়ার ফলে শরীরের এই অবস্থা।মনে মনে অজান্তা কে হাজার টা বকা দিয়ে অঙ্কন একশত টাকার ঝালমুড়ি নিয়ে বাইকের স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছালো। অঙ্কন ভেবেছিলো হয়তো অজান্তা তার ফেরা অব্দি অপেক্ষা করবে। কিন্তু কলিং বেল পেয়ে দরজা খুলে দিল নাতাশা চৌধুরী।যা দেখে অঙ্কন বললো, মম তুমি এখনো জেগে রয়েছো কেন?”
-“জেগে না থাকলে দরজা খুলে দিতো কে শুনি?”
-“কেন তোমার আদরের মেয়ে অজান্তা কোথায়?”
-” অজান্তা বললো যে ,ওর নাকি শরীর খারাপ লাগছে।তাই আমি ওকে রুমে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
-” অঙ্কন বললো, শরীর খারাপ টারাপ কিছু না।সব ওর ড্রামা।”
-” মানে কি বলতে চায়ছিস বাবু?”
-” কিছু না মম।”
-” ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি খাবার দিচ্ছি।”
-” ঠিক আছে মম।”
-” অঙ্কন রুমে এসে দেখলো,অজান্তা বেলকনিতে বিছানা করছে। হঠাৎ অঙ্কনের দিকে চোখ পড়া মাত্রই এক হাত ঘোমটা টেনে দিলো।যা দেখে অঙ্কন মুচকি হেসে বললো, বাব্বা মহারানীর রাগ এখনো কমে নি? অঙ্কন বেলকনিতে গিয়ে বললো,কি মজার ঝালমুড়ি রে অজান্তা। আমার জীবনে ও এমন মজার ঝালমুড়ি আমি খায় নি।আজ রাতে ঝালমুড়ি দিয়েই ডিনারের কাজ সম্পন্ন করবো।”
-” ঝালমুড়ি কথা শুনে অজান্তার জিহবা লকলক করছে। এমনিতেই ঝালমুড়ি তার খুব পছন্দের।অজান্তা সামান্য একটু ঘোমটা সরিয়ে দেখলো, অঙ্কন সত্যি সত্যি ঝালমুড়ি খাচ্ছে।অজান্তার মন চাচ্ছে ছো মে’রে অঙ্কনের হাত ঝালমুড়ি নিয়ে খাওয়া শুরু করতে। কিন্তু না।সে এতটা ও নির্লজ্জ নয়। মূহুর্তের মধ্যে অজান্তার চোখ ভিজে এলো।মনে পড়ে গেল সেদিন রাতের ঘটনা।অজান্তা যখন আবেগে আপ্লুত হয়ে অঙ্কন কে জিজ্ঞেস করেছিলো, আমাকে ভালোবাসেন অঙ্কন ভাই? উত্তরে অঙ্কন ভাতের লোকমা টা অজান্তার মুখের সামনে থেকে নিয়ে নিজে খেয়ে ফেলে বললো, সামান্য এক লোকমা ভাত খাইয়ে দিতে চেয়েছি আর ভেবেছিস আমি তোকে ভালোবাসি।থাক প্রয়োজন নেই তোকে খাইয়ে দেওয়া। এবার নিশ্চয় তোর প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছিস।”
-” না উত্তর পাই নি।আমি আপনা কে জিজ্ঞেস করেছি ভালোবাসেন কি না। ইয়েস অর নো?
-“তোর প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয় আমি।এই মুহূর্তে তোর মুখ ও দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না আমার। সরে যা আমার সামনে থেকে। মূহুর্তের মধ্যে অজান্তা কোমল হৃদয় ব্যথিত হয়ে ওঠে।অজান্তা টলমলে চোখে বললো, ঠিক আছে দেখতে হবে না আমার মুখ আপনাকে । এরপর থেকে অজান্তা অঙ্কন কে এড়িয়ে চলছে।তার সামনে ও আসছে না। ভুলবশত চোখাচোখি হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ ঘোমটার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখছে। পুরোনো কথা মনে করে ঘোমটার আড়ালে চোখের পানি মুছে নিলো অজান্তা।যা অঙ্কনের চোখ এড়ালো না। অঙ্কন অজান্তা কে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,কেউ তো আর ঝালমুড়ি খাচ্ছে না।কি আর করার আমি নিজেই সবটা খেয়ে ফেলি। অঙ্কনের কথা শুনে অজান্তা সমস্ত লাজ লজ্জা ভুলে ছো মে’রে অঙ্কনের হাত থেকে ঝালমুড়ি নিয়ে দিলো এক দৌড়।যা দেখে অঙ্কন হো হো করে হেসে উঠলো।
___________________________________
-“রাত এগারোটা।অজান্তা ঘুমোনোর জন্য বেলকনিতে বিছানা ঠিকঠাক করে ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময় অঙ্কন বেলকনিতে উপস্থিত হয়। অঙ্কন কে দেখা মাত্র হায় আল্লাহ বলে অজান্তা মাথায় ঘোমটা টেনে নিজেকে আড়াল করে নেয়।”
-“অঙ্কন বিরক্তিতে মুখ থেকে চ জাতীয় শব্দ বের করে বললো,ড্রামাবাজ মহিলা! দয়া করে তোর ড্রামা বন্ধ কর।এমন ভাব করছিস যেন তোর সামনে স্বয়ং তোর ভাসুর এসেছে।তাকে দেখে নিজেকে ঘোমটার আড়ালে নিয়ে গিয়েছিস।”
-” আপনি নিজেই বলেছেন আপনাকে যেন আমার মুখ না দেখায়।তার জন্যই এই অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়েছে।এতে আপনার সমস্যা কোথায় আমি বুঝতে পারছি না। তাছাড়া আপনার এইখানে কি চায়?”
-” তোকে”
-“মানে?”
-” মানে এইখানে তোর শুতে হবে না। বিছানায় চল। এমনিতেই বেলকনিতে শুয়ে শুয়ে জ্বর ঠাণ্ডা বাঁধিয়ে নিয়েছিস।বড় কোনো রোগ বাঁধানোর আগে বিছানায় চল।”
-“ম’রে গেলেও যাবো না আমি। আপনার করা অপমানের কথা ভুলি নি আমি।”
-” ঠিক আছে তোর যাওয়া লাগবে না। আমি নিজেই তোকে নিয়ে যাচ্ছি বলে অঙ্কন অজান্তা কে কোলে তুলে নেয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ।।।