প্রেমের বৈঠা গেছে খুলে পর্ব-০৪

0
761

#প্রেমের_বৈঠা_গেছে_খুলে (০৪)

#নূন_মাহবুব

-“তুমি শুধু শুধু টেনশন করছো ব‌উমা। তুমি যে রকম ভাবছো সে রকম কিছুই হবে না দেখো।”

-” আম্মা ! কুসুমপুর এতিমখানায় গিয়ে যদি বাবুর অতীত তার সামনে চলে আসে? বাবু যদি ওর নিজের সম্পর্কে সবটা যেনে যায়?আর যদি আমাদের ভুল বুঝে দূরে সরে যায়?তখন কি নিয়ে বাঁচবো আমি।”

-” তুমি অযথা টেনশন করছো। তাছাড়া তুমি কোন অন্যায় তো করো নি। তোমার প্রয়োজন ছিলো একটা সন্তানের।আর দাদু ভাইয়ের প্রয়োজন ছিল একটা পরিবার।মা বাবা। দাদুভাই একটা পরিবার পেয়েছে , তুমি পেয়েছো একটা সন্তান।যদি ও তুমি দীর্ঘ আট বছর পরে একটা মৃত সন্তান জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছিলে। কিন্তু সে তো আর পৃথিবীর আলো দেখতে পারে নি।”

-” না না আম্মা।আমি মৃত সন্তান জন্ম দেই নি। যদিও চেক আপ করে আমাকে বলা হয়েছিল আমার ছেলে সন্তান হবে। কিন্তু আমার স্পষ্ট মনে আছে যখন আমার জ্ঞান ছিলো আমি কন্যা সন্তানের কান্নার আওয়াজ পেয়েছিলাম। অর্থাৎ আমি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলাম। কিন্তু যখন আমার জ্ঞান ফিরে আসে নার্স আমার কাছে একটা মৃত ছেলে সন্তান দেয়।আর বলে আমি মৃত সন্তান জন্ম দিয়েছি।আমি আগে ও আপনাদের বলেছি আম্মা , কিন্তু আপনারা কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেন নি। উল্টো আমাকে সন্তান হারানোর বেদনায় মানসিক রোগী বলেছেন। বিশ্বাস করেন আম্মা আমার সত্যিই মেয়ে হয়েছিলো।কিন্তু জানি না কার নজর লেগেছিল আমার মেয়ের উপর , আমার পরিবারের উপর।তারা আমার মেয়েকে সরিয়ে তার জায়গায় একটা মৃত ছেলে সন্তান দিয়ে দিলো।আর ইমতিয়াজ ও ভেবেছিলো আমি হয়তো আট বছর পরে কোন মৃ’ত সন্তান মেনে নিতে পারিনি।তাই উল্টো পাল্টা বকেছি যার কারণে ইমতিয়াজ ও আমার মেয়েটার কোন খোঁজ করে নি বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন নাতাশা চৌধুরী।”

-” এখন আর এসব বলে কি লাভ ব‌উমা?যা হবার হয়েছে। এখন বেশি না বকে তুমি একটু বিশ্রাম নাও।”
___________________________________

-“অঙ্কন আর তার টিমের সদস্যরা পাঁচ মিনিট আগে কুসুমপুর এতিমখানায় এসে পৌঁছেছে। এতিমখানায় প্রায় ৩০০-৪০০ বাচ্চা রয়েছে।যার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন স্থানীয় এলাকার চেয়ারম্যান র‌ওনক হোসেন। এবং তার সাথে কিছু ফাউন্ডেশন যুক্ত রয়েছে।যা থেকে এতিমখানার বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন অনুদান , আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। একে একে যখন চারটা বাচ্চা নিখোঁজ হয়ে যায়, তখন র‌ওনক হোসেন নিজে থানায় গিয়ে মিসিং ডায়েরি করে আসে। অঙ্কন এসে র‌ওনক হোসেন কে জিজ্ঞেস করলো, আচ্ছা চেয়ারম্যান সাহেব এসব হলো কিভাবে?চারটা বাচ্চা কি একসাথে নিখোঁজ হয়েছে? নাকি আলাদা আলাদা ভাবে?”

-” স্যার আমি চেয়ারম্যান মানুষ। আমার নানান কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। আমি শুধু মাত্র এতিমখানার পরিচালনা করি। কিন্তু বাচ্চাদের দেখাশোনা করে রহমত চাচা ।রহমত চাচা অনেক বিশ্বস্ত একজন লোক। অনেক আগে থেকে এইখানে রয়েছে। অর্থাৎ আমার আগে এই এতিমখানা পরিচালনা করতো আমার বাবা।রহমত চাচা তখন থেকে এইখানে রয়েছে। দুই দিন আগে রহমত চাচা আমাকে ফোন করে বলে যে, রাব্বি নামের একটা ছেলেকে অনেকক্ষণ যাবৎ দেখতে পাচ্ছে না।পরে নাকি বেলা জানায় , সকাল দশটা নাগাদ রাব্বির দুঃসম্পর্কের কোন মামা এসে রাব্বি কে নিয়ে গিয়েছে।তবে বিকালের মধ্যে এসে রাব্বি কে আবার দিয়ে যাবে। কিন্তু রাব্বি আর ফিরে আসে নি। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যায়, কিন্তু রাব্বি আসেনা। আর যখন সবাই যখন রাব্বি কে খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তখন আলিফ নামের ছেলেটা ও নিখোঁজ হয়ে যায়।”

-” এক মিনিট চেয়ারম্যান সাহেব।এই বেলা কে?”

-” অঙ্কনের কথা শুনে পাশ থেকে একটা মধ্য বয়সী মহিলা বলে উঠলো, আমি কচ্ছি সাহেব।এই বেলা এক নাম্বারের কু’ট’নি বেডি।এক জনের কথা অন্য জনের কাছে লাগানো ওর কাজ। বে’য়া’দ’ব একটা মহিলা।ওর মধ্যি কোন শিক্ষে দিক্ষে নাই।আছে খালি কু’ট’না’মি ওরার গুণ।ওর ঐ কু’ট’নামির জন্য ওর বর ওরে তা’লা’ক দিছে।তাই এহন এই এতিমখানায় আসে উঠিছে। এতিমখানার রান্ধার কাম করে ঐ কু’ট’নি বেডি। আমার মনে হচ্ছে ঐ কু’ট’নি বেডি নিশ্চয় এই কাজের লগে জড়িত আছে।ঐ বেডি এই ফুলের মতোন বাচ্চাগুলান রে গায়েব করিছে।”

-” কিন্তু তুমি কে?”

-” আমি রেশমী সাহেব। আমি আগে এই এতিমখানার রান্ধার কাম করতাম। কিন্তু ঐ বেলা কু’ট’নি উড়ে এসে জুড়ে বয়ছে।

-“কে কু’ট’নি আর কে সু’ট’নি সেইটা আমরা ঠিকই বের করে নিবো।তোমরা এইটা বলো যে এই কু’ট’নি সরি এই বেলা কে কোথায় পাবো?”

-” চেয়ারম্যান সাহেব বললো, স্যার ঐ বেলা এখানেই থাকে তবে আজ সকাল থেকে ওকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।”

-” আমি ক‌ইছিলাম না সাহেব ঐ কু’ট’নি বেলা এর সাথে জড়িত। আপনারা আসপেন জানতি পারে হয়তো কোনো হানে ঘাপটি মে’রে বসে আছে। আপনি খালি একবার আমারে হুকুম দেন সাহেব আমি ঐ কু’ট’নি’র চুলির মু’ঠি ধরে টানে নিয়ে আসবানি।”

-” তাহলে তো তুমি নিশ্চয় জানো বেলা কোথায় গিয়েছে?এখন ঝটপট বলে দাও বেলা কোথায়?”

-” রেশমী আমতা আমতা করে বললো, না না সাহেব আমি কিছু জানি নে।ঐ রাগের বশে এতো কিছু কয়ে ফেলেছি সাহেব।

-” বুঝতে পেরেছি বেলার প্রতি অনেক ক্ষোভ জমে আছে তোমার ‌।”

-” আমারে চোর অপবাদ দিয়ে বেলা আমার জায়গা দখল ওরিছে‌ সাহেব। ক্ষোভ তো থাকার ই কথা।তবে আমি সত্যিই জানি নে এই বেলা কু’ট’নি কনে গিয়ে ম’রি’ছে।

-“ঠিক আছে সমস্যা নেই।আমরা ঠিক জেনে নিবো।”

-” রেশমি ফিসফিস করে বললো,ঐ বেলা কু’ট’নি যেইহানেয় যাক ওর মুহে যেন ঠাডা পড়ে ,ওরে যেন কালনাগিনী ছোবল দিয়ে মারে শ’য়’তা’ন বেডি।”

-” রেশমি যদিও ফিসফিস করে কথাগুলো বলেছেন তবু ও অঙ্কনের কান পর্যন্ত ঠিক পৌঁছে গেছে। অঙ্কন মুচকি হেসে রেশমীর ভাষা ফলো করে বললো, বেডি মাইনষেই বেডি মাইনষের শত্রু।”

___________________________________
-“আজ বিকালে ছোট খাটো বৌভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা ছিল। কিন্তু অঙ্কন না থাকায় অনুষ্ঠান ক্যান্সেল করা হয়েছে।অজান্তা অঙ্কনের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে এমন সময় দেখে বেলি তার সমস্ত জিনিসপত্র অঙ্কনের রুমে নিয়ে এসেছে।যা দেখে অজান্তা অনেক টা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,একি বেলি তুমি আমার সব জিনিসপত্র অঙ্কন ভাইয়ের রুমে নিয়ে এসেছো কেন?”

-” আমি বলেছি,পাশ থেকে নাতাশা চৌধুরী বললেন। এখন থেকে তোর সবকিছু এখানেই থাকবে।নে তোর কাপড় চোপড় আলমারি তে গুছিয়ে রাখ।”

-” বড়মা কি হয়েছে তোমার? তোমাকে এমন লাগছে কেন?চোখ ফোলা,নাক লাল হয়ে আছে। নিশ্চয় অনেক কান্না করছো? কিন্তু কেন বড়মা? তোমাকে মাঝে মাঝে দেখি লুকিয়ে লুকিয়ে কান্না করো।কিসের এতো কষ্ট তোমার বড়মা ?বলো না বড়মা? তোমার কষ্টে আমার ভালো লাগে না। আমার ক’লি’জা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চাই।বলো না বড়মা কি হয়েছে তোমার?”

-” নাতাশা চৌধুরী কোন কথার উত্তর না দিয়ে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে আসে।”

-” অজান্তা চোখের পানি মুছে তার কাপড় চোপড় আলমারি তে গুছিয়ে রাখছে এমন সময় একটা ছবির দিকে চোখ পড়তেই থমকে যায় অজান্তা। অজান্তা ছবিটা হাতে নিয়ে বলে ,আরে এটা তো আমার নিজের ই ছবি।অজান্তা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে শুধু একটা না হাজার টা ছবি। যেগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে ছবিগুলো লুকিয়ে তোলা হয়েছে।অজান্তা ভাবছে , অঙ্কন ভাইয়ের আলমারি তে আমার ছবি তাও আবার লুকিয়ে রাখা হয়েছে? কিন্তু কেন?

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে