প্রেমের বৈঠা গেছে খুলে পর্ব-০৩

0
806

#প্রেমের_বৈঠা_গেছে_খুলে(০৩)

#নূন_মাহবুব

-“অজান্তা ভেতর থেকে অঙ্কনের কোন রেসপন্স না পেয়ে আবারো দরজায় নক করার সাথে সাথেই অঙ্কন হ্যাঁচকা টানে তাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যেতেই দুজনে ব্যালেন্স হারিয়ে শাওয়ারের নিচে পড়ে যায়।শাওয়ারের নিচে পড়ে দুজনেই কাক ভেজা হয়ে গিয়েছে। অঙ্কন অজান্তার দিকে তাকিয়ে ভাবছে,শুনেছি বাঙ্গালী মেয়েদের নাকি বিয়ের পরে সৌন্দর্য শতগুণ বেড়ে যায়।অজান্তার ক্ষেত্রে ও তাই হয়েছে?হয়তো হয়েছে।আজ ওকে সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগছে।মনে হচ্ছে নতুন কোন অজান্তা কে দেখছি। কিন্তু কেন?তখন‌ই অঙ্কনের চোখ যায় অজান্তার নোজ পিনের দিকে। অঙ্কন বুঝতে পারে অজান্তার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কারণ তার নোজ পিন।যা এতো দিন তার নাকে ছিলো না। হঠাৎ করে নাকফুল পরেছে যার কারণে তাকে সম্পূর্ণ অন্যরকম লাগছে। পরক্ষণেই অঙ্কন কি হচ্ছে বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি করে অজান্তার উপর থেকে উঠে অজান্তা কে বললো,হাউ ডেয়ার ইউ ? তোর সাহস হলো কি করে পারমিশন ছাড়া আমার ওয়াশরুমে ‌রুমে প্রবেশ করার?নাকি আমার হাতে ম’রা’র সাধ‌ জেগেছে তোর? দিবো নাকি গু’লি করে মাথার খুলি উড়িয়ে?”

-“অজান্তা মনে মনে বললো,দাদীমা সবসময় একটা কথা বলে ,নরম মাটিতে নাকি কেঁচো লাগে বেশি। তাই আমি যত অঙ্কন ভাইয়ের সামনে দূর্বলতা প্রকাশ করবো, অঙ্কন ভাই ততো আমাকে আঘাত করবে, অপমান করবে। যেমন টা গতরাতে করেছিলো।অজান্তা নিজেকে সংযত করে বললো, আমি ইচ্ছে করে এসেছি নাকি? আপনি নিজেই বারবার টাওয়াল চাচ্ছিলেন,তাই বাধ্য হয়ে আমার আসতে হয়েছে।”

-” তুই কি সুইটহার্ট? আমি সুইটহার্ট কে টাওয়াল দেওয়ার জন্য ডেকেছি ,তোকে নয়।”

-” আমি তো আপনার উপকার করতে এসেছিলাম। কিন্তু আপনি যে আমার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে আসলেন ,‌ আমাকে ভিজিয়ে দিলেন।এই বেলায় কিছুই না।আর আমি কিছু বলতেই গেলেই আপনার সেই চিরচেনা এক ডায়লগ দিবেন একদম গু’লি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দিবো।বলি কি এ পর্যন্ত কয়টা মানুষের গু’লি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দিয়েছেন?”

-” তোর সাহস দেখে সত্যিই আমি অনেক অবাক হয়ে যাচ্ছি।এক রাতের ব্যবধানে মুখে খ‌ই ফুটতে শুরু হয়ে গিয়েছে।রাতে ও তোর চোখে মুখে আমি ভয়ের স্পষ্ট ছাপ দেখতে পেয়েছি।বাট এখন সেই ভয়ের ছাপ নেই।এক রাতেই এতো চেন্জ?

-” আপনি বাঘ না ভাল্লুক যে আপনাকে ভয় পেতে হবে। হ্যাঁ আগে ভয় পেয়েছি কারণ তখন আপনি অন্য পুরুষ ছিলেন।আর এখন আপনি বিয়ে করা বর আমার।বিয়েটা যেভাবেই হোক হয়েছে তো। বড়মা বলেছে বিয়ের পরে বরের সবকিছু নিজের হয়ে যায়।তাই এটা যেমন আপনার রুম তেমনি আমার ও রুম।আর নিজের রুমে প্রবেশ করতে যদি অনুমতি নিতে হয়,তাহলে আপনি ও আমার থেকে অনুমতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করবেন।”

-“অঙ্কন কিছু বলতে যাবে তার আগেই রুম থেকে আলিশা হাঁক ছেড়ে বললো,অজান্তা আপু , অঙ্কন ভাইয়া তোমরা কি করছো ওয়াশরুমে?মাই গড! তোমাদের কি রুমে জায়গা কম পড়েছে যে ওয়াশরুমে গিয়ে রোমান্স করতে হচ্ছে? তোমাদের রোমান্স শেষ হলে তাড়াতাড়ি নিচে আসো ।সবাই তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।”

-“আলিশার সাড়া পেয়ে অজান্তা নিজের রুমে গিয়ে চেন্জ করে অন্য একটা শাড়ি পরে নিচে এসে দেখে সবাই ব্রেকফাস্ট না করে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে।অজান্তা ডাইনিং টেবিলে এসে দেখে হরেক রকমের রেসিপি রান্না হয়েছে। যার মৌ মৌ গন্ধে পুরো বাড়ি ছড়িয়ে গিয়েছে। অজান্তা মেকি রাগ দেখিয়ে নাতাশা চৌধুরী কে বললো,তোমাকে বারণ করেছিলাম বড়মা কিচেনে যাবে না। তবুও কেন অসুস্থ শরীর নিয়ে রান্না করতে গেলে? তাছাড়া ব্রেকফাস্টে তো ভারী কোনো খাবার খাওয়া হয় না। তাহলে আজ ঘটা করে এতো আয়োজন কেন ?”

-” তোকে হয়তো আমি গর্ভে ধারণ করিনি। কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকে মায়ের আদর দিয়ে তোকে বড় করেছি।সেই ছোট্ট মেয়েটা আজ নতুন জীবনের সূচনা করেছে।তার খুশির জন্য আমার এইটুকু কষ্ট কিছুই না। সাধারণত বিয়েতে কতো বড় আয়োজন করা হয়।আমরা তো সেই ধরনের কিছু করি নি।তাই নিজেই সামান্য কিছু ট্রাই করেছি। অবশ্য আমি একা করি নি।আলিশা ,বেলি ও সাহায্য করেছে আমাকে।”

-” অজান্তা নাতাশা চৌধুরী কে জরিয়ে ধরে বললো, তোমাকে জরিয়ে ধরলে কেন আমি মায়ের ফিল , আমার মায়ের গায়ের গন্ধ পাই বড়মা? কেন মনে হয় তুমি আমার গর্ভধারিনী মা? ”

-” তুই আমার নিজের পেটের মেয়ে তাই।হয়েছে শান্তি? এবার কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি খেতে বস। আমি তোদের তিন জন কেই নিজের হাতে খাইয়ে দিবো। কিন্তু বাবু এখনো আসছে না কেন?”

-” মম ঐ যে দেখো ভাইয়া চলে এসেছে।এখন তাড়াতাড়ি খেতে দাও তো খুব ক্ষুধা পেয়েছে। ব্রেকফাস্টে আজ এতো এতো খাবার খেতে পারবো কখনো ভাবিনি।এসব কিছু হয়েছে অজান্তা আপুর জন্য । ধন্যবাদ আপু।”

-” হয়েছে আর এতো ধন্যবাদ দিতে হবে না।”

-” অঙ্কন চেয়ার টেনে আড়চোখে অজান্তার দিকে তাকিয়ে বললো, সকাল সকাল ড্রামা শুরু করে দিয়েছে।ড্রামাবাজ মহিলা একটা।”

অঙ্কন বসা মাত্রই আঞ্জুম আরা চৌধুরী অঙ্কন কে ফিসফিস করে বললো, হোয়াট হ্যাপেন্ড দাদুভাই? সকাল সকাল দুজনেরই চুল ভেজা।ডাল মে কুছ কালা হে?”

-” অঙ্কন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললো, তুমি যেরকম ভাবছো সেরকম কিছুই হয় নি সুইটহার্ট।”

-” এরকম দিন আমি ও পাড় করে এসেছি দাদুভাই। চুলে পাক এমনি এমনি ধরে নি। বিয়ের পরের কয়েক টা মাস হচ্ছে মধুমাস।মধুরাজা তার মধুরানীর থেকে মধু সংগ্রহ করবে এইটাই স্বাভাবিক ।এতে এতো লজ্জা পাওয়ার কি আছে?”

-” অঙ্কন প্রসঙ্গ পরিবর্তন করতে বললো, মম কোথায় সুইটহার্ট ? তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট দিতে বলো তো। আমার একটু তাড়া আছে। বেড়োতে হবে আমাকে।”

-“বিয়ের পরের দিনই নতুন ব‌উ ছেড়ে কোথায় যাবে দাদুভাই?”

-” ইনভেস্টিগেশনে যেতে হবে সুইটহার্ট।”

-” তুমি তো ছুটি তে রয়েছো।তাহলে আবার ইনভেস্টিগেশনে কেন? নতুন নতুন বিয়ে করছো কোথায় ব‌উকে একটু সময় দিবা।আদর আহ্লাদ করবা তা নয় তো সেই ছুটছো ইনভেস্টিগেশনে।অন্য অফিসার তো আছে তারা ঠিক সামলে নেবে। তোমাকে আজ কোথাও যেতে হবে না।গ্ৰাম থেকে কিছু মেহমান আসবে । বিকালে ছোট খাটো বৌভাতের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তুমি কোথাও যাচ্ছো না ব্যাস।”

-” এমন টা হয় না সুইটহার্ট । থানায় চার চার টা মিসিং ডায়েরি এসেছে বাচ্চা নিখোঁজ হওয়ার।যার ইনভেস্টিগেশনের সম্পূর্ণ দায়িত্ব পড়েছে আমাদের সিআইডি টিমের উপর।আর ডিপার্টমেন্টের আমি একজন সিনিয়র সিআইডি অফিসার হয়ে হাত পা গুটিয়ে বাড়ি বসে থাকতে পারি না সুইটহার্ট। একটার পর একটা বাচ্চা নিখোঁজ হচ্ছে এতিমখানা থেকে।আর আমাদের সন্দেহ এতিমখানার সাথে জড়িত কেউ এই কাজ করেছে।হয়তো সে বাচ্চা পাচারকারীদের সাথে ও জড়িত।তাই আরো বাচ্চা মিসিং হ‌ওয়ার আগেই আমাদের অপরাধীদের ধরতে হবে। ”

-” নাতাশা চৌধুরী কিচেন থেকে পায়েসের বাটি নিয়ে আসছিলো ডাইনিংয়ে‌‌ দিকে,এমন সময় এতিমখানার কথা শুনে অঙ্কন কে জিজ্ঞেস করলো, কোথায় যাবি বাবু? তুই না ছুটি নিলি?

-” কুসুমপুর এতিমখানায় মম।”

-“কুসুমপুর এতিমখানার কথা শুনে নাতাশা চৌধুরীর হাত থেকে পায়েসের বাটি নিচে পড়ে বাটিতে থাকা পায়েস মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে।।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে