প্রেমের বৈঠা গেছে খুলে পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
1007

#প্রেমের_বৈঠা_গেছে_খুলে (১০)

#নূন_মাহবুব

-“এক্ষুনি কি বললেন আপনি মা? আবার বলুন।”

-” অজান্তাই তোমার হারিয়ে যাওয়া মেয়ে। তুমি সেদিন মৃ’ত সন্তানের জন্ম দাও নি। আমি চাই নি তোমার কোন উত্তরাধিকার পৃথিবীর আলো দেখুক।তাই তো সেদিন তুলি কে দিয়ে তোমার মেয়ে কে সরিয়ে তার জায়গায় মৃ’ত ছেলে রেখে দেয়। কিন্তু তুলির কাজিন গা’ধা টা আর কোথাও ওকে রাখার জায়গা পায় নি।ম’র’তে ম’র’তে এই চৌধুরী মঞ্জিলে রেখে যায়।আর তুমি ও অন্যের সন্তান মনে করে নিজের সন্তান কে কোলে পিঠে করে বড়ো করো। যায় হোক অনেক ক্ষতি করেছি তোমাদের।এখন তো আর আমি থাকছি নি।আই হোপ তোমরা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।”

-” নাতাশা চৌধুরী এসে অজান্তা কে জরিয়ে ধরে চোখে মুখে অজস্র চুমু দিয়ে বললো,তার মানে আমার ধারণা সঠিক ছিলো। একজন মা কখনো তার সন্তান চিন্তে ভুল করে না। তুই অজান্তা নোস মা। তোর ও পরিচয় আছে। তুই এই চৌধুরী মঞ্জিলের একমাত্র রাজকন্যা। তুই আমার আর ইমতিয়াজের মেয়ে বলে অজান্তা কে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন নাতাশা চৌধুরী।”

-” এজন্যই আমি তোমার গায়ে মায়ের গন্ধ পেতাম। তোমার প্রতি টান অনুভব করতাম। তুমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে আমার সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যেতো।কারণ তুমি যে আমার মা। আমার শান্তির জায়গা।”

-” ইমতিয়াজ চৌধুরী এসে বললো,জানিস মা আমি তোকে দেখে সবসময় আফসোস করতাম এই ভেবে যে তুই আমার নিজের মেয়ে হলি না কেন?আজ যখন জানতে পারলাম তুই আমার নিজের মেয়ে তখন মনে হয়েছিলো পৃথিবীর সমস্ত সুখ আমার হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। কিন্তু একটা বিষয় আমাকে খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে।আমি বুঝতে পারছি না বাবুর সামনে কিভাবে দাঁড়াবো?ওকে যে অনেক কষ্ট দিয়েছি।”

-“অঙ্কন এসে ইমতিয়াজের হাত ধরে বললো, সমস্যা নেই শ্বশুর মশাই।আমরা আমরাই তো। কিন্তু এখন তো আমি এই‌ বাড়ির ঘরজামাই হয়ে গেলাম। তাহলে আপনাদের কি বলে সম্বোধন করবো? শ্বশুর আব্বা আর শ্বাশুড়ি আম্মা?”

-” নাতাশা চৌধুরী এসে অঙ্কনের কান ম’লে
দিয়ে বললেন এক মূহুর্তের মধ্যে পর করে দিলি আমাদের? ”

-“জাস্ট কিডিং মম।”

-” দেখ বাবু যা হবার হয়েছে। আমি চাই তোরা নতুন করে তোদের জীবন শুরু কর। এবার দেখিস আমরা সবাই খুব সুখে শান্তিতে থাকবো।”
_________________________________

-” ফুলে সজ্জিত বিছানায় এক হাত ঘোমটা টেনে বসে রয়েছে অজান্তা।এই তো কয়েক মাস আগে এরকমই ফুলে সজ্জিত বিছানা থেকে তাকে টেনে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। হাজারো অপমান করা হয়েছিলো। কিন্তু সেই অপমানের পিছনে লুকিয়ে ছিলো হাজারো রহস্য, অপ্রকাশিত ভালোবাসা।অজান্তার পুরোনো কথা মনে করে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।অজান্তা চোখের পানি মুছে দেখে অঙ্কন এসেছে। অঙ্কন এসে বললো,আমি তো এই বাড়ির ঘরজামাই হয়ে গিয়েছি রে অজান্তা।এখন সবকিছু তোর রাজত্বে চলে গেছে।তোর ঘর,তোর বিছানা,তোর বর এখন তোর যা ইচ্ছা কর। আমি কিছুই বলবো না।”

-” ড্রামা শুধু আমি করতে পারি না। আপনি ও খুব ভালো ড্রামা করতে পারেন অঙ্কন ভাই। ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছেন।অথচ সবার সামনে কতো হাসি মুখে রয়েছেন। খুব কষ্ট পেয়েছেন আপনার সত্যি টা জানার পর তাই‌ না অঙ্কন ভাই।আমি স্পষ্ট লক্ষ্য করেছিলাম যখন বাবা আপনাকে বাইরের ছেলে বলেছিলো আপনার চোখের পানি মুছতে।”

-” এতে কষ্ট পাওয়ার কি আছে অজান্তা? আমি আগে থেকেই জানতাম আমি এই পরিবারের কেউ না।”

-“কিন্তু কিভাবে ?”

-” আমার ডিএনএ টেস্ট করিয়েছিলাম। কিন্তু মম বা ড্যাড কারো সাথে ম্যাচ করে নি। সেদিন থেকেই আমি শিওর ছিলাম আমি তাদের সন্তান না। কিন্তু আমি জানতাম না আমার আসল পরিচয় কি? আমার আসল বাবা মা কে? প্রথম যেদিন আমি কুসুমপুর এতিমখানায় যাই , সেদিন আমার আসল পরিচয় জানতে পারি ‌। রহমত দাদু অনেক দিন ধরে এতিমখানায় রয়েছে। তিনি আমাকে দেখে আমার পরিচয় জানতে চান। আমি সব কিছু বলার পর তিনি বললেন, তুমি তাহলে সেই অঙ্কন?কতো বড়ো হয়ে গেছো। এতো টুকু একটা বাচ্চা ছেলে দেখেছিলাম‌ আর আজ সে একজন নামকরা সিআইডি অফিসার। ব্যাস দাদুর কথা শুনে আমার সন্দেহ বেড়ে যায়।আমি আমার নিজের ইনভেস্টিগেশনের কাজে লেগে পড়ি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার মা জমিদার বংশের মেয়ে ছিলো। তাদের বংশে প্রেম করা বা প্রেম করে বিয়ে করা নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু একবার কারো যদি প্রেমের বৈঠা খুলে যায়, তাহলে প্রেম সাগরে ডুবে ম’রা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। ঠিক তেমনি হয়েছিল আমার মায়ের সাথে।নানু ভাই মায়ের বিয়ে ঠিক করে এলাকার চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে। মা বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে বাবা কে বিয়ে করে।এতে নানুভাই আম্মু কে ত্যাজ্য করে দেয়। বিয়ের পর ভুলে ও একটা বারের জন্য হলেও কোনো খোঁজ করে নি মায়ের। আমার বাবা একজন সেনা সদস্য ছিলেন। আমার জন্মের কয়েক বছর পরে একটা এক্সিডেন্টে আমার বাবা মা মা’রা যায়। কিন্তু সেটা আদৌ এক্সিডেন্ট না খু’ন ছিলো জানা যায় নি। এমনকি আমার চাচারা আমার বাবা মায়ের মৃ’ত্যু’র খবর কেউ আমার নানু বাড়ি তে জানায় নি।বাবা মায়ের মৃ’ত্যু’র পর চাচারা আমাদের সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়ে আমাকে এতিমখানায় রেখে আসে। তারপর মম ড্যাড আমাকে এই চৌধুরী মঞ্জিলে নিয়ে আসে। অবশ্য তারা আমাকে দত্তক নিতে চেয়েছিলো। কিন্তু সুইটহার্ট নিতে দেয় নি‌। সুইটহার্ট চায় নি চৌধুরী মঞ্জিলে কোন উত্তরাধিকার আসুক।সে চেয়েছিলো সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবে তার ছেলে আব্দুল্লাহ। এজন্যই সুইটহার্ট তোকে ও নার্সকে টাকা দিয়ে সরিয়ে দেয়।ব্যাস না থাকলো বাঁশ আর না বাজলো বাঁশি।”

-” মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গিয়েছি। শুধু মাত্র একটা প্রশ্নের উত্তর ছাড়া।”

-” কি প্রশ্ন শুনি?এ বাড়ির ঘরজামাই সদা প্রস্তুত আছে তার ব‌উয়ের প্রশ্নের উত্তর দিতে। এখন ঝটপট প্রশ্ন কর দেখি।”

-” আমাকে ভালোবাসেন?”

-” হ্যাঁ আমার জীবনের থেকে ও বেশি।তাই তো দূরে দূরে রেখেছিলাম তোকে। যেদিন আমি বিডি তে ফিরে প্রথম তোকে দেখি সেদিনই আমার প্রেমের বৈঠা খুলে যায়। আস্তে আস্তে প্রেম সাগরে ডুবে যেতে থাকি আমি। কিন্তু আমার এই অনিশ্চিত জীবনের সাথে তোকে জড়াতে চাই নি।”

-” ভালোই যখন বাসেন তাহলে চুক্তির বিয়ে কেন করলেন?”

-” সুইটহার্ট এর কথায়।তবে সেই কন্ট্রাক্ট পেপার ছিলো নকল।আর আসল পেপার আমার কাছে রয়েছে।যাতে আমি বা তুই আমরা দুজনের একজন ও সাইন করি নি।তাই আমাদের কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ ও হয় নি।দেখ অজান্তা অনেক হয়েছে পুরোনো কথা। আমি আর পুরোনো কথা মনে করতে চাই না। প্রথম বার বাসর রাত হেলায় অবহেলায় কাটিয়েছি।তাই আমি চাচ্ছি না এইবার ও এমন টা হোক। আমি চাই আমাদের এই রাত টা চির স্বরণীয় হয়ে থাকুক।আজ থেকে নতুন জীবনের সূচনা হলো আমাদের। আমাদের একসাথে পথ চলা শুরু হলো। বিশ্বাস কর অনেক ভালোবাসবো তোকে।আ’দরে
আ’দ’রে ভরিয়ে দিবো। আমি বেঁচে থাকতে তোর চোখে কখনো পানি আসতে দিবো না।”

-“অজান্তা এসে অঙ্কন কে জরিয়ে ধরে বললো,আই লাভ ইউ মোর দ্যান মাই লাইফ।”

-“অঙ্কন ও অজান্তা কে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো,

” আমার প্রেমের তরী বয়ে চলে,প্রেমের বৈঠা ধরে

যারে নাইয়া যেদিক খুশি ,পিরীতের পাল তুলে

বড্ড প্রেম পাগল হয়েছি আমি, বুঝি নি গো কখন আমার #প্রেমের_বৈঠা_গেছে_খুলে।”

‌‌ সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে