#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ধ্রুব গাড়ি নিয়ে ছুটতে ছুটতে এসে পৌঁছালো দূর্ঘটনা স্থলে। ধীরাজও তার পেছনে গাড়ি নিয়ে এসে উপস্থিত। ধ্রুব দ্রুতবেগে গাড়ি থেকে নেমে জ্ব’লন্ত গাড়িটির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এই গাড়িটিতেই তো সুহানি ছিল৷
ধ্রুবর পুরো পৃথিবী যেন এক পলকে থমকে গেল৷ সে সুহানির নাম ধরে আর্তনাদ করতে লাগল৷ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো সামনে কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে আটকে দিল। ধীরাজও এগিয়ে এসে সামলাতে লাগল তাকে। ধ্রুব বিলাপ করে বলতে লাগল,
‘আমার সুহানি আছে ওখানে, ও তো পু’ড়ে যাবে। প্লিজ আমাকে ওখানে যেতে দাও। ওকে আমায় বাঁচাতেই হবে।’
ধীরাজ ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে তাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আ’গুন নেভানো সম্পন্ন হয়। অতঃপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাড়ির ভিতরে তল্লাশি করে দুটো লা’শ বের করে। ধ্রুব পুরোপুরি হতবাক হয়ে যায়। লা’শের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাকে আটকে দেয়। বডিগুলো পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
★★★
বিয়েবাড়ির আনন্দঘন পরিবেশ মুহুর্তেই শোকের ছায়ায় ছেয়ে গেছে৷ সুহানির মৃ’ত্যুর খবর ইতিমধ্যেই সবার কানে পৌঁছে গেছে। ধ্রুব সুহানির শোক সামলাতে না পেরে জ্ঞান হারিয়েছে। এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি।
এদিকে সীমান্তও নিজের বোনের এই অকালমৃত্যু মেনে নিতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছে। মিরাও এখন বিশ্বাস করতে পারছে না সুহানি আর নেই। সুহানিকে নিয়ে আসার জন্যই তো যাচ্ছিল কিন্তু মাঝপথে এমন একটি খা’রাপ সংবাদ পায় সে। মিরা নিজে যথেষ্ট কষ্ট পেলেও সীমান্তকে সামলানোর চেষ্টায় ব্যস্ত।
একটা দূ’র্ঘটনা যেন সবার জীবন বদলে দিয়েছে। অহনা খন্দকার মনে মনে অনেক খুশি হলেও সবার সামনে সমানে অভিনয় করে চলেছেন। সীমান্তর কাছে এসে মেকি কান্না করে বলছেন,
‘আমি জানি তোমার মনের অবস্থা এখন কেমন হতে পারে। তুমি নিজের বোনকে হারিয়েছ, তোমায় শান্তনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। কিন্তু আমাদের যে সত্যটা মেনে নিতেই হবে। মানুষের জন্ম মৃত্যু তো আল্লাহর হাতে, সেখানে আমাদের তো কিছু করার নেই। এদিকে আমাদের ছেলেটাও ভে’ঙে পড়েছে।’
এসবের মধ্যে একজন পুলিশ অফিসার এসে উপস্থিত হন। তিনি এসে সকলের উদ্দ্যেশ্যে বলেন,
‘আমরা কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি একটি ট্রাক গাড়িটিকে ধা’ক্কা দেয়। এরপর নাকি খুব দ্রুততার সাথে সেই ট্রাক থেকে কেউ একজন নেমে এসে গা’ড়িতে আগু’ন লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়। সেই ট্রাকের ছবিও তুলেছে কয়েকজন। আমরা ট্রাকের নাম্বার দেখে আসল খু’নিকে খুজে বের করার চেষ্টা করব।’
পুলিশ অফিসারের কথা শুনে সীমান্ত চ’টে যায়। বলে ওঠে,
‘তার মানে আমার বোনের মৃত্যুটা কোন দূর্ঘটনা নয় ওকে খু’ন করা হয়েছে। স্যার, আপনি যে করেই হোক আমার বোনের খু’নিকে খুঁজে বের করুন।’
‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’
মিরা বলে ওঠে,
‘কোন হেল্প লাগলে আমাকে বলবেন। আমিও একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। আমার ননদের খু’নিদের উপযুক্ত শা’স্তি দেব আমি।’
এসব কথাবার্তা শুনে ভয় পেয়ে যান অহনা খন্দকার। এখন যদি কোনভাবে কালাম ধরা পড়ে তাহলে তো তিনিও ফেসে যাবেন। তাই ভাবতে লাগলেন কিভাবে সবটা সামলাবেন। সকলের অলক্ষ্যে দূরে সরে এসে কালামকে ফোন করেন অহনা খন্দকার। অতঃপর তাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেন,
‘কোথায় তুমি? যেখানেই থাকো এক্ষুনি ঢাকার বাইরে চলে যাও। বর্ডারের পাশের কোন এলাকা যেমন খুলনা কিংবা সিলেটে আত্মগোপনে যাও যেন সুযোগ বুঝে ইন্ডিয়া চলে যেতে পারো। পুলিশ কিন্তু যেকোন মুহুর্তে তোমার খোঁজ পেয়ে যাবে।’
কালাম ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বলে,
‘আপনি যা বলছেন আমি তাই করব ম্যাডাম।’
অহনা খন্দকার নিশ্চিত হয়ে কল রেখে দেয়। অতঃপর তিনি ধীরাজের কাছে গিয়ে বলেন,
‘ধীরাজ ধ্রুব এখন কেমন আছে? ওর জ্ঞান ফিরেছে?’
‘কিছুক্ষণ আগে ভাইয়ার জ্ঞান ফিরেছিল আম্মু। সু্হানি আপুর জন্য খুব পাগলামো করছিল। তাই ডক্টর ওকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে দিয়েছে। কি থেকে কি হয়ে গেল তাই না আম্মু? কোথায় আজ আমাদের আনন্দ করার কথা ছিল সেখানে আমরা শোক পালন করছি।’
অহনা খন্দকার মনে মনে বিরক্ত হন ধীরাজের কথায়৷ কিন্তু তিনি সেটা প্রকাশ না করে বলেন,
‘কি আর করা যাবে বলো? যা হওয়ার তা হয়েই গেছে। যাইহোক তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।’
‘হ্যাঁ, বলো।’
‘সুহানি যে খু’ন হয়েছে সেটা যেন ধ্রুব জানতে না পারে।’
‘কি বলছ টা কি তুমি আম্মু? আমরা এতবড় একটা কথা ভাইয়ার থেকে কিভাবে লুকাতে পারি।’
‘কিছু যে করার নেই ধীরাজ। তুমি তো ধ্রুবর পা’গলামীটা দেখছই। এরপর যদি সত্যটা জানতে পারে তাহলে যে ও আরো ভেঙে পড়বে।’
‘ঠিক বলেছ তুমি আম্মু। ভাইয়ার থেকে সব লুকিয়ে রাখতে হবে।’
★★★
জ্ঞান ফিরতেই সুহানির নাম ধরে চি’ৎকার করতে থাকে ধ্রুব। ধীরাজ ছুটে এসে তার পাশে বসে বলে,
‘ভাইয়া শান্ত হও। সুহানি আপু আর আসবে না। সি ইজ নো মোর।’
ধ্রুব ধীরাজের কলার চেপে ধরে বলে,
‘চুপ। আমার সুহানির কিছু হতে পারে না। ও আমাকে ছে’ড়ে কোথাও যেতে পারে না বুঝলি তুই?’
ধীরাজ কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিল না। ধ্রুব ধীরাজকে ধা’ক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে তার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়। অতঃপর তার কাছে থাকা সুহানির একটি ছবিতে হাত বুলিয়ে বলতে থাকে,
‘সবাই বলছে তুমি নাকি আর নেই। ম’রে গেছ তুমি। কিন্তু আমি জানি সবাই ভুল বলছে৷ তুমি আমাকে ছে’ড়ে কোথাও যেতে পারো না। তাই না সুহানি?’
এমন সময় কেউ পেছন থেকে ধ্রুবকে স্পর্শ করে। ধ্রুব পেছন ফিরে তাকাতেই সুহানিকে দেখতে পায়। নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে জড়িয়ে ধরে সুহানিকে। অতঃপর বলে,
‘আমি জানতাম তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারো না।’
‘কোথায় যাব আমি বলো? তোমাকে ছে’ড়ে কোথাও যে আমার যাওয়ার যায়গা নেই।’
ধ্রুব হাসে। এরমধ্যে হঠাৎ করে সুহানি ধ্রুবর সামনে থেকে মিলিয়ে যায়। ধ্রুব কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসে। তাকে যে এখন সত্যটা মেনে নিতেই হবে যে সুহানি আর নেই।
ধ্রুব সুহানির সাথে কা’টানো সুন্দর সুন্দর মুহুর্তগুলো মনে করতে থাকে। সুহানির ছবি বুকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।
❝পাস আয়ে, দূরিয়া ফির ভি কাম না হুয়ি,
এক আধুরি ছি হামারি কাহানি রেহি
আসমা কো জামিন এ জারুরি নেহি
জা মিলে….জা মিলে
ইশক সাচ্চা ওহি
জিসকো মিলতি নেহি
মাঞ্জিলে.. মাঞ্জিলে
রাংগ থে নূর থা
যাব কারির তু থা
এক জান্নাত সা থা
এ যাহা…
বাতকি রেত পে
কুছ মেরে নাম ছা
লিখকে ছোড় গেয়া তু কাহা
হামারি আধুরি কাহানি….
হামারি আধুরি কাহানি।❞
ধ্রুব সুহানির নাম ধরে চিৎকার করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ভালোবাসার মানুষকে হারানোর পর প্রত্যেকের অবস্থাই এমন হয়। তখন না বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করে আর না তো ম’রে যাওয়ার উপায় থাকে। কাউকে পেয়েও হারানোর কষ্ট তো আরো বেশি। তাই তো ভালোবাসাকে পৃথিবীর সবথেকে প্রিয় অসুখও বলা হয়। যা আপনাকে কিছু মুহুর্ত সুখ দেবে কিন্তু অন্তিমে চিরকালের জন্য দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে চলে যাবে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨