প্রেমের উড়ান পর্ব-১৬

0
567

#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

সুহানি বধূবেশে তৈরি হয়েছে। আর মাত্র কিছু সময়ের অপেক্ষা তারপরই ধ্রুবর বধূ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে সে। অর্পা ও সুহানি একসাথে পার্লারে এসেছে তৈরি হওয়ার জন্য। দুজনকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতঃপর তাদের যাওয়ার পালা এলো। কিন্তু এরমধ্যে হঠাৎ করে একটি সমস্যা দেখা দেয়। সুহানির স্কিন সেন্সেটিভ হওয়ার কারণে হুট করেই তার এলার্জি দেখা দেয়।

অর্পা খুব চিন্তার মধ্যে পড়ে যায়। ততক্ষণাৎ সে অহনা খন্দকারকে ফোন করে। অহনা খন্দকার ফোন রিসিভ করলে অর্পা তাকে সুহানির কথাটা খুলে বলে। সেসব শুনে তিনি অর্পাকে বলেন,
‘তুমি তাহলে এখন চলে এসো। এখানে অনেক গেস্ট চলে এসেছে। কাজি সাহিবও উপস্থিত। তোমার আর ধীরাজের বিয়েটা আগে হয়ে যাক তারপর সুহানির সমস্যা মিটে গেলে ও আসবে। তুমি ওকে বলো ডক্টরের কাছে গিয়ে মেডিসিন নিতে।’

অর্পা ফোন রেখে দিয়ে সুহানিকে বলে,
‘আপু চলো আমি তোমাকে ডক্টরের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।’

সুহানি মৃদু হেসে বলে,
‘তার কোন দরকার নেই। আমি একা চলে যাব। তুমি কমিউনিটি সেন্টারে চলে যাও।’

‘কিন্তু তুমি একা কিভাবে যাবে?’

‘চিন্তা করো না অর্পা, আমার একজন ফ্রেন্ড আছে ডক্টর। তার কাছে গেলেই সে মেডিসিন দিয়ে দেবে।’

অর্পা আর কথা বাড়ালো না। সুহানিকে নিজের খেয়াল রাখতে বলে চলে গেল কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দ্যেশ্যে।

সুহানিও বের হলো ডক্টরের কাছে যাওয়ার জন্য।

অহনা খন্দকার পার্লারে ফোন করে একজন কর্মচারীকে বলল,
‘চেক করে দেখ তোমার একাউন্টে টাকা চলে গেছে। ধন্যবাদ কাজটা করে দেওয়ার জন্য।’

অতঃপর কল রেখে দিয়ে তিনি কালামকে কল করেন। দুইবার রিং হওয়ার পর কালাম ফোন রিসিভ করলে অহনা খন্দকার রাগী গলায় বলে ওঠেন,
‘তোমার এত লেট হলো কেন ফোন রিসিভ করতে?’

‘ম্যাম একটু বিজি ছিলাম।’

‘আচ্ছা যাইহোক, শোনো ঐ মেয়েটা পার্লার থেকে বেরিয়ে গেছে। আমাদের বাড়ির গাড়িতে করেই গেছে। তুমি এখন তোমার কাজ শুরু করে দাও।’

‘আপনি কোন চিন্তা করবেন না ম্যাডাম। আমি পার্লারের কাছেই আছি। খুব শীঘ্রই আমি নিজের কাজ সম্পন্ন করব।’

‘গুড। কাজটা হয়ে গেলেই তোমার একাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে। কোন ভুলত্রুটি যেন না হয়। রাখছি এখন।’

অহনা খন্দকার ফোন রেখে দিলে কালাম একটি ট্রাক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে নিজের উদ্দ্যেশ্য সফল করার জন্য।

★★★
ঢাকার একটি বিখ্যাত কমিউনিটি সেন্টারে ধীরাজ-অর্পা ও সুহানি-ধ্রুবর বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই অনেক গেস্ট এসে উপস্থিত হয়েছে সেখানে। আর কিছুজনের আসা শুধু বাকি।

ধীরাজ ও ধ্রুব দুজনই বরবেশে তৈরি হয়ে আছে। ধীরাজ পড়েছে একটি লাল কালারের শেরওয়ানি আর ধ্রুবর পড়নে সুন্দর কারুকাজ করা সাদা সেরওয়ানি। দুজনকেই অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। যার ফলে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে তারা। বরবেশে দুজনেই বসে আছে সকলের মধ্যমনি হয়ে। এখন শুধু কনেদের আসার পালা।

ধ্রুবর মনে খুশি থাকলেও ধীরাজ এখনো মন থেকে এই বিয়েটা মেনে নিতে পারছে না। অর্পাকে তার একদম পছন্দ নয়, তাই কিভাবে বাকি জীবন তার সাথে কা’টাবে সে নিয়ে সন্দিহান ধীরাজ। কিন্তু ধ্রুবর হাসিমুখ দেখে নিজের সব গ্লানি ভুলে যায় ধীরাজ। অতঃপর স্বগোতক্তি করে বলে,
‘ভাইয়ার মুখে এই হাসি দেখার জন্য আমি সব করতে পারি।’

এসব কিছুর মধ্যেই অর্পার আগমন ঘটে। তার পরনে লাল রঙের খুব সুন্দর একটি লেহেঙ্গা। ধীরাজ একপলকের জন্য মুগ্ধ হয়ে যায় অর্পাকে এই বেশে দেখে। কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকে। অর্পা তার দিকে তাকাতেই চোখ ফিরিয়ে নেয়।

অর্পাকে একা আসতে দেখে ধ্রুব প্রশ্ন করে,
‘তুমি একা এসেছ কেন? সুহানি কোথায়?’

অর্পা উত্তর দেয়,
‘আপুর তো এলার্জি দেখা দিয়েছিল তাই উনি ডক্টরের কাছে গেছে।’

‘সে কি! আমাকে বলল না কেন? ও কোন ডাক্তারের কাছে গেছে আমায় বলো। আমি দেখে আসছি।’

‘আপু নিজের কোন এক বন্ধু ডাক্তারের কাছে যাবে বলল।’

অহনা খন্দকার এর মাঝে এসে বললেন,
‘ধ্রুব বেটা তুমি একদম চিন্তা করো না। অহনা ঠিক চলে আসবে। আপাতত ধীরাজ আর অর্পার বিয়েটা হয়ে যাক। তারপর সুহানি ফিরলে নাহয় তোদের বিয়ে হবে।’

ধীরাজ আপত্তি করে বলে,
‘এটা কি করে হয় আম্মু? আমাদের দুই ভাইয়ের বিয়ে তো একসাথেই হওয়ার কথা। আমরা নাহয় আপুর জন্য অপেক্ষা করি। ও এলে নাহয় একসাথেই আমাদের বিয়ে হবে।’

‘অনেক গেস্ট এসেছে ধীরাজ। তাদের অপেক্ষা করানোটা ভালো হবে না।’

‘কিন্তু…’

ধীরাজের কথা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে ধ্রুব বলে ওঠে,
‘আম্মু ঠিকই বলছে ধীরাজ। তুই বিয়েটা করে নে। সুহানি আসুক তারপর আমরা বিয়ে করে নেব।’

ধীরাজ আর আপত্তি করলো না। ধীরাজ ও অর্পা একসাথে বিয়ের আসরে চলে গেল।

অতঃপর কাজি তাদের বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। খুব ভালো ভাবেই দুজনের বিয়ে পড়ানো সম্পন্ন হয়ে গেল। দুজনে কবুল বলে একে অপরকে স্বীকার করে নিল। অর্পার মুখে খুশির ঝিলিক দেখা গেলেও ধীরাজের মনে কালো মেঘ ছেয়ে গেল।

★★★
সুহানির ফিরতে দেরি হচ্ছিল জন্য মিরা সীমান্তকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
‘আচ্ছা এখানে সুহানির কোন বান্ধবী আছে তার ঠিকানা আমাকে দাও তো আমি দেখে আসছি।’

সীমান্ত বলে,
‘চলো আমিও যাচ্ছি তোমার সাথে।’

‘না তোমার যাওয়ার দরকার নেই। তুমি কনের ভাই। তোমাকে এদিকটা সামলাতে হবে।’

সীমান্ত মিরাকে ঠিকানাটা দিয়ে দিল। অতঃপর মিরা রওনা হলো। এদিকে ধ্রুবও ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল। আর থাকতে না পেরে অহনা খন্দকারকে বলল,
‘আম্মু আমার মনে হয় এখন গিয়ে দেখে আসা উচিৎ যে সুহানি কত দূর।’

‘বেটা তুমি চিন্তা করো না আমার ড্রাইভারের সাথে কথা হয়েছিল। ওরা ডক্টরের সাথে দেখা করে রওনা দিয়েছে একটু পরই পৌঁছে যাবে।’

ধ্রুব নিশ্চিত হলো।

★★
সুহানি কারে করে আসছিল এমন সময় হঠাৎ করেই মাঝপথে একটি ট্রাক এসে তাদের গাড়িকে ধা’ক্কা দেয়। যার ফলে গাড়িটা ছি’টকে গিয়ে দূরে পড়ে। কালাম ট্রাক থেকে নেমে আসে। সুহানির মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য কারের মধ্যে পে’ট্রোল ঢে’লে আ’গুন লাগিয়ে দেয়।

অতঃপর বিশ্রী হাসি দিয়ে বলে,
‘অহনা ম্যাডামের দেওয়া কাজ আমি করে দিয়েছি। এবার তিনি নিশ্চয়ই খুশি হবেন আর আমাকে টাকাটা দিয়ে দেবেন।’

কালাম আর অপেক্ষা না করে সেখানে লোক সমাগম হওয়ার আগেই সেখান থেকে পালিয়ে গেল।

★★★
ধ্রুব ঘড়িতে সময় দেখে অহনা খন্দকারের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘আমার পক্ষে আর অপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না আম্মু। আই হ্যাভ টু লিভ।’

অহনা খন্দকার আর বাধা দিলো না। ধ্রুব বেড়িয়ে যেতে নিবে এমন সময় তার কাছে ফোন এলো। ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে ধ্রুবর এক বন্ধু তাকে বলে,
‘ধ্রুব কোথায় তুই? তোদের বাড়ির গাড়ির তো এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি তোকে লোকেশন সেন্ড করে দিচ্ছি তুই এক্ষুনি চলে আয়।’

ধ্রুব কথাটা শোনামাত্রই পা’গলের মতো ছুটে বেরিয়ে গেল। তাকে এভাবে যেতে দেখে ধীরাজও পিছু পিছু বেরিয়ে গেল। অহনা খন্দকারের ফোনে কল করল কালাম। সুসংবাদ পেয়ে লা’ফিয়ে উঠলেন অহনা খন্দকার। মনে মনে বললেন,
‘তাহলে সুহানি নামের ঐ পথের কা’টা দূর হলো চিরতরে।’

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে