#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি
সুহানি ড্রয়িংরুমে বসে ধ্রুবর সাথে বসে কথা বলছিল। এমন সময় চলে এলেন অহনা খন্দকার। তার সাথে অর্পাও ছিল। অহনা খন্দকার এসেই বললেন,
‘ধ্রুব তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিল।’
‘জ্বি, বলো।’
‘অর্পার বাবা আর আমি মিলে আজ আলোচনা করলাম। ভেবে দেখলাম শুভ কাজে দেরি করতে নেই। তাছাড়া তুমিও তো এখন ছুটিতে আছ। কয়দিন পর আবার ব্যস্ত হয়ে পড়বে। ধীরাজেরও সামনে এক্সাম আছে। তাই ভাবছি এই উইকের মধ্যেই তোমাদের বিয়েটা হয়ে যাক।’
ধ্রুব সুহানির দিকে তাকালো। সুহানি ভাবলেশহীন ভাবে বলল,
‘আমার কোন অসুবিধা নেই। আপনি যখন ইচ্ছা বিয়ের ব্যবস্থা করুন।’
ধ্রুব বিস্ময়ের সাথে সুহানিকে সুধালো,
‘কিন্তু তুমি যে বলেছিলে তোমার ভাইয়ের অনুমতি ব্যতিত বিয়ে করবে না।’
সুহানির মনে অভিমানের পাহাড় জমে ছিল। তাই সে বলল,
‘আমার ভাইয়া যদি আমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে না চায় তাহলে আমিও চাই না। আমার কারো অনুমতির দরকার নেই।’
‘একবার ভেবে দেখো..’
‘আমার যা ভাবার আমি ভেবে নিয়েছি। আর কিছু ভাবার নেই।’
সুহানির স্পষ্ট জবাব। যার বিপরীতে আর কিছু বলতে পারে না ধ্রুব। এদিকে অহনা খন্দকার বলে ওঠেন,
‘সুহানির যেহেতু কোন আপত্তি নেই, আগামী শুক্রবার তোমাদের দুইভাইয়ের বিয়ে হবে। আমি এখন থেকেই আয়োজন শুরু করে দেব।’
ধ্রুবও আর আপত্তি করলো না। সেও চায় সুহানিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপন করে নিতে।
এদিকে অর্পাও অনেক খুশি হয়েছে বিয়েটা দ্রুত ঠিক হয়ে যাওয়ায়। সে অহনা খন্দকারকে বলল,
‘আমি যাই ধীরাজের রুমে। ওকে সুখবরটা দিয়ে আসি।’
অহনা খন্দকার মাথা নাড়ান। অর্পা ধীরাজের রুমের দিকে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে,
‘তোমাকে আমি নিজের করেই নিলাম ধীরাজ। আমাদের মধ্যকার দূরত্ব খুব দ্রুতই দূর হবে।’
এমন সময় কেউ পেছন থেকে বলে ওঠে,
‘আমাদের শারীরিক দূরত্ব ঘুচলেও মানসিক দূরত্ব কখনো ঘুচবে না। আমার মনে আমি কখনো আপনাকে স্থান দেবো না।’
অর্পা পিছনে ফিরে তাকিয়ে ধীরাজকে দেখতে পায়। অতঃপর আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে,
‘আপনার মন প্রাণ জুড়ে শুধু আমিই থাকব। একবার শুধু বিয়েটা হতে দিন।’
ধীরাজ বিদ্রুপাত্মক হাসি দিয়ে চলে যায়। অর্পার মন হঠাৎ করে উদাস হয়ে যায়। ধীরাজের প্রতি তার অনুভূতি দিনকে দিন বেড়েই চলেছে কিন্তু ধীরাজের মনের মধ্যিখানে নিজের স্থান তৈরি করাই এখন তার জন্য সবথেকে বড় পরীক্ষা!
★★★
সময়ের স্রোত আপন গতিতে এগিয়ে চলেছে। আজ ধ্রুব-সুহানি এবং ধীরাজ-অর্পার গায়ে হলুদ, কাল বিয়ে। অহনা খন্দকার এখন খুব ব্যস্ততার সহিত দিন পার করছেন। তার দুই ছেলের বিয়ে বলে কথা।
এত আনন্দের মাঝেও সুহানির মন ভালো নেই। মুখে যতোই বলুক ভাইকে ছাড়াই বিয়ে করবে কিন্তু মন যে মানতে চাইছে না। সুহানি বর্তমানে অর্পাদের বাড়িতে অবস্থান করছে। আজ এখানেই তার গায়ে হলুদ সম্পন্ন হবে। বিয়ে অবশ্য হবে একটি কমিউনিটি সেন্টারে।
সুহানির গায়ে হলুদ সম্পন্ন হবার পর সে ভিডিও কলে কথা বললো ধ্রুবর সাথে। ধ্রুব সুহানির মুখ দেখেই বুঝতে পারল তার মন খারাপ। তাই শুধালো,
‘তোমাকে এমন লাগছে কেন? ভাইয়ের জন্য মন খারাপ?’
সুহানি মলিন হেসে বললো,
‘সেরকমই কিছু।’
‘তোমার এই মলিন মুখ দেখে আমার একদম ভালো লাগছে না সুহা। আমি তোমার মুখে সর্বদা হাসি দেখতে চাই। সেইজন্য তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ পাঠিয়ে দিয়েছি।’
‘কোথায় সারপ্রাইজ?’
‘তুমি এখন যেই রুমে আছ সেখান থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমে যাও। সেখানে তোমার জন্য অনেক সুন্দর সারপ্রাইজ আছে।’
সুহানি তাই করলো৷ অর্পাদের বাড়ির ড্রয়িংরুমে উপস্থিত হয়ে নিজের ভাই ও ভাবিকে দেখে চমকিত হলো সে সাথে খুশিও। আবেগের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরল আপন ভাইকে। সীমান্তও সুহানিকে গভীর আলিঙ্গনে সিক্ত করল। সুহানির চোখ দিয়ে বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে পড়ছিল।
সীমান্ত সুহানির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
‘আমার উপর আর অভিমান করে থাকিস না বোন।’
সুহানি বলে,
‘তুমিও আমার উপর রাগ করে থেকো না ভাইয়া। আমি তোমাকে মি*থ্যা বলে অনেক বড় অন্যায় করেছি। প্রমিজ করছি আর কখনো এমন করব না।’
সীমান্ত ও সুহানির পূনর্মিলনের সাক্ষী হয়ে মিরাও খুব খুশি হয়। তবে মেকি অভিমান দেখিয়ে বলে,
‘বাহ, ভাইবোনের মধ্যে মিল হতেই ভাবিকে ভুলে গেলে।’
সুহানি মিরার কাছে গিয়ে তাকেও জড়িয়ে ধরে। আর বলে,
‘তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ভাবি। আমি জানি তুমি ভাইয়াকে সব বুঝিয়েছ ‘
‘ভুল জানো তুমি, এখানে সত্যি বলতে আমার কোন অবদানই নেই। আমি তোমার ভাইয়াকে মানানোর অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন লাভ হয়নি। এসবকিছু তো ধ্রুবর অবদান। জানো কাল রাতে ও সারারাত আমাদের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়েছিল, কাল রাতে কি বৃষ্টিটাই না হলো। ও কোনকিছুর পরোয়া করে নি। তোমার ভাইয়ার শক্ত হৃদয় গলিয়ে তবে শান্ত হয়েছে।’
ধ্রুব সুহানির খুশির জন্য এতকিছু করেছে জেনে সুহানির অনেক ভালো লাগে। অতঃপর সে আবার ধ্রুবকে ভিডিও কল দেয়। ধ্রুব কল রিসিভ করেই বলে,
‘কেমন লাগল আমার সারপ্রাইজ?’
‘অনেক ভালো। কিন্তু তুমি রাত-বিরেতে বৃষ্টিতে ভিজতে গেলে কেন? যদি অসুস্থ হও।’
‘তোমার এই খুশি দেখার জন্য আমি এরকম হাজার বার অসুস্থ হতে রাজি। তাছাড়া তুমি তো আছই আমার সকল রোগের ওষুধ হিসেবে।’
সুহানি ভুবন ভোলানো হাসি দেয়। সত্যিই এমন ভালোবাসা যারা পায় তারা সৌভাগ্যবতী।
★★★
রাতে অর্পা সুহানির রুমে এসে বলে,
‘আপু চলো, আমাদের হাতে মেহেন্দি করে দেওয়ার জন্য মেহেন্দি আর্টিস্ট এসে গেছে।’
সুহানি অর্পার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি উপহার দিয়ে বলে,
‘তুমি যাও আমি আসছি।’
অর্পা জেদ দেখিয়ে বলে,
‘নাহ, আমি তোমাকে ছাড়া যাবোনা। গেলে একসাথেই যাব।’
অর্পার কথা শুনে সুহানি হেসেই দেয়। এই ক’দিনেই মেয়েটার সাথে বেশ ভাব জমে গেছে। একটু জেদি আর একগুঁয়ে হলেও মনের দিক থেকে অর্পা খা’রাপ নয়। খুব সহজেই সবার সাথে মিশে যেতে পারে। সবাইকে আপন করে নিতে জানে। সুহানি শুনেছে অর্পার মা নেই। ছোটবেলা থেকে একাই বড় হয়েছে। তাই হয়তো মেয়েটা ভালোবাসার কাঙ্গাল। সুহানির কাছে মনে হয় ধীরাজ ও অর্পা একসাথে সুখী হতে পারবে।
সুহানি ও অর্পা দুজনেই হাতে খুব সুন্দর করে মেহেদী দেয়। এরপর নাচগান, আনন্দে মেতে ওঠে সবাই। আর মাত্র একটা দিনের অপেক্ষা। তার পরেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে ৪ টি প্রাণ।
★★★
বিরিয়ানিতে যেমন এলাচ থাকে তেমন আনন্দের মাঝেও কোথাও না কোথাও একটা বি’পদের আগমনী সতর্কবার্তা থেকেই যায়।
এই যেমন সবাই যখন বিয়ের আনন্দে মাতোয়ারা সেই সময় অহনা খন্দকার পরিকল্পনা করছেন কিভাবে ধ্রুব ও সুহানিকে আলাদা করবেন। তিনি কখনো এত সহজে সুহানিকে মেনে নেবেন না। তাই তিনি তৈরি করলেন নিজের ষ’ড়যন্ত্রের জাল। কাউকে একটা ফোন দিয়ে বললেন,
‘তোমাকে কিভাবে কি করতে হবে সেটা মনে আছে তো?’
বিপরীত দিক থেকে গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসে,
‘একদম চিন্তা করবেন না ম্যাডাম। আমি সব বুঝে গেছি। আপনার কাজ হয়ে যাবে। আপনি শুধু টাকা রেডি রাখুন।’
‘তোমার যত টাকা লাগে আমি দেব, শুধু কাজটা ভালো ভাবে সেরে দাও। যে করেই হোক ঐ সুহানিকে রা’স্তা থেকে সরাতেই হবে।’
‘এই কালাম কখনো কোন কাজে ভুল করে না। আমার উপর ভরসা রাখতে পারেন।’
অহনা খন্দকার ফোন রেখে দিয়ে অট্টহাসিতে ফে’টে পড়েন। বলেন,
‘সুহানি, ভাগ্যের পরিহাসে আমায় তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। সেই অপ’মান আমি এখনো ভুলিনি। আজ যত আনন্দ করার করে নাও। কাল তোমার আনন্দ চিরতরে শে’ষ হতে চলেছে।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨