#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
সুহানি সীমান্তর কাছে এসে তার হাত ধরে বলে,
‘ভাইয়া প্লিজ আমার পুরো কথাটা শোনো আগে।’
‘কি শুনব আমি? কি শোনার আছে আর?’
‘আমি তোমার থেকে কিছু লুকাতে চাই নি কিন্তু ভয় পেয়ে গেছিলাম যে আমার এয়ার হোস্টেজ হওয়ার কথাটা তুমি যদি না মেনে নাও।’
সীমান্ত ধ্রুবর পানে তাকিয়ে বলে,
‘এই প্রসঙ্গে নাহয় পরে কথা বলছি। আগে তুই আমাকে এই ছেলেটার ব্যাপারে বল। এই ছেলেটার মা’ই তো বাবাকে আর তোকে অনেক অপমান করেছিল। যার কারণে বাবা অসুস্থ হয়ে গেছিলেন এবং পরে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন। তারপরেও তুই এই ছেলেটাকেই ভালোবাসিস আর বিয়ে করতে চাস!’
‘ভাইয়া তুমি ভুল বুঝছ। ধ্রুবর তো এখানে কোন দো’ষ নেই।’
‘না, ওর কোন দো’ষ নেই৷ দোষ তোর। তুই একটা লোভী ও স্বার্থপর মেয়ে। তুই নিজের স্বার্থের জন্য আমাকে মিথ্যা বলে এয়ার হোস্টেজ হয়েছিস আর এখন ঠিক একই কারণে এই ছেলেটাকে বিয়ে করতে চাইছিস।’
‘ভাইয়া…’
‘চুপ। আমাকে একদম ভাইয়া বলে ডাকবি না। আমি তোর কোন ভাই নই। আজ থেকে জানবি তোর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।’
সুহানির চোখে জল চলে আসে। সে অশ্রুসিক্ত নয়নে বলে ওঠে,
‘ভাইয়া তুমি আমায় এভাবে বলতে পারলে?!’
মিরা সীমান্তকে বোঝানোর জন্য বলে,
‘আমি জানি তুমি রাগের মাথায় এসব বলছ। একটু ঠান্ডা মাথায় সবটা ভাবো।’
‘আমার যা ভাবার আমি ভেবে নিয়েছি মিরা। আজ থেকে সুহানির সাথে আমাদের আর কোন সম্পর্ক নেই। আর হ্যাঁ, তুমি যদি আমার কথা অমান্য করে ওর সাথে যোগাযোগ বজায় রাখো তাহলে আমি তোমার সাথেও সব সম্পর্ক ত্যাগ করব।’
‘সীমান্ত…’
সীমান্ত আর কোন কথা না বলে চলে যায়। সুহানি, ধ্রুব, মিরা সবাই অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মিরা সুহানিকে শান্তনা দিয়ে বলে,
‘তোমার ভাই এখন একটু রেগে আছে তাই এভাবে বলছে। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
সুহানি সবার কথা শুনে খানিকটা ভরসা পায়। ধ্রুব সুহানিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘এখন চলো এখান থেকে। তোমার ভাইয়ের রাগ কমে গেলে আবার আসব।’
সুহানি মাথা নাড়ায়। যার অর্থ সে যাবে। অতঃপর দুজনে একইসাথে রওনা দেয়।
সুহানিকে নিয়ে ঘোরার জন্য একটি সুন্দর পার্কে যায় ধ্রুব। সুহানি জিজ্ঞেস করে,
‘এখানে নিয়ে এলে কেন?’
ধ্রুব স্মিত হেসে জবাব দেয়,
‘তোমার মন ভালো করার জন্য। তোমার উদাস চেহারা আমার একদম ভালো লাগছে না। তাই আমি তোমাকে খুশি করার জন্য এখানে নিয়ে এসেছি।’
ধ্রুব তার কথা এত ভাবে দেখে সুহানিও অনেক আনন্দ পায়। তার অধরের হাসির দেখা মেলে।
অতঃপর দুজনে পার্কের মধ্যে যায়। সুহানি ও ধ্রুব একে অপরের হাত ধরে হাটছিল। পার্ক জুড়ে ছিল বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছের সমাহার। সুহানির অনেক ভালো লাগছিল সেগুলো দেখতে। কিছু দূরে গিয়ে দুজনে একটি বসার যায়গা পেয়ে বসে পড়ে।
ধ্রুব সুহানির হাতটা আলতো করে স্পর্শ করে বলে,
‘তোমার সাথে কা’টানো সময় গুলো আমার কাছে অনেক মধুর লাগে জানো? নিজেকে অনেক সুখী লাগে তখন।’
‘আমারও।’
ধ্রুব কিছুক্ষণ চুপ থেকে সুধায়,
‘আচ্ছা আমাদের বিয়ের পর হানিমুনে কোথায় যাওয়া যায় বলো তো? আমি তো চাই প্যারিসে যেতে। আমার খুব ভালো লাগে, বেশ কয়েকবার প্যারিসে গেছিলামও ঘুরতে।’
সুহানির মুখটা হঠাৎ করে শুকনো হয়ে যায়। ধ্রুব সেটা খেয়াল করে বলে,
‘তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন সুহা?’
সুহানি সংকোচ নিয়ে বলে,
‘আমার মন কেমন জানি কু ডাকছে। আচ্ছা আমাদের বিয়েটা হবে তো?’
‘এমন কথা কেন ভাবছ তুমি? দেখবে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
‘কিন্তু ভাইয়া যদি মত না দেয় তাহলে তো আমার পক্ষে বিয়েটা করা সম্ভব হবে না। তুমি তো জানো বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়াই আমার সবকিছু।’
‘তোমার ভাইয়া নিশ্চয়ই রাজি হবে দেখে নিও।’
‘তাই যেন হয়। আমিও তাই চাই। সকলের অনুমতি নিয়ে আমরা একটি সুখী দাম্পত্য জীবনের সূচনা করব।’
ধ্রুব ঘড়িতে টাইম দেখে বলে,
‘এখন বাড়িতে চলো। রাতে আবার আমার একটা ফ্লাইট আছে। তোমারও আছে মেইবি?’
‘হুম, লেটস গো।’
★★★
ধীরাজের মেডিকেল কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে তার জন্য অপেক্ষমাণ ছিল অর্পা। ধীরাজ চলে আসতেই অর্পা খুশি হয়ে গেল। অতঃপর ধীরাজের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ধীরাজ বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে তাকালো। অর্পার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
‘আপনি এখানে?!’
অর্পা সানগ্লাসটা খুলে বেশ ভাব নিয়ে বলল,
‘তোমার সাথে দেখা করতে এলাম। সামনে তো আমাদের বিয়ে হতে চলেছে তাই আমাদের একত্রে সময় কাটানো প্রয়োজন। আর তুমি আমাকে আপনি করে বলছ কেন? হবু স্ত্রীকে কেউ আপনি বলে নাকি?!’
ধীরাজ বিরক্তবোধ করে। বলে,
‘আপনার সাথে এখনো আমার বিয়ে হয়নি তাই আমি আপনাকে তুমি বলতে পারব না। এখন সরে দাঁড়ান আমার পথ থেকে আমি অনেক টায়ার্ড। বাসায় গিয়ে রেস্ট নিতে হবে।’
ধীরাজ যেতে নিতেই অর্পা তার হাত টেনে ধরে। এরপর বলে,
‘আমি তোমার কোন কথা শুনছি না মিস্টার। আমি এখানে তোমাকে নিতে এসেছি। এখন তাই তোমাকে আমার সাথে যেতে হবেই।’
অর্পার এমন জেদ দেখে ভড়কে যায় ধীরাজ। অর্পাকে মৃদু ধা’ক্কা দিয়ে বলে,
‘আপনি কি বাংলা বোঝেন না? একবার আমি বলেছি যেতে চাই না এর মানে আমি যাবো না। কেন জোর করছেন আমায়? ফর গড ছেক, আমাকে যেতে দিন।’
‘তুমি যেখানেই যাবে আমিও তোমার সাথে যাব। তোমার পিছু আমি এত সহজে ছাড়ব না মাইন্ড ইট। তোমাকে আমার হতেই হবে।’
‘আমি কখনোই মন থেকে আপনাকে মেনে নেব না।’
অর্পা হেসে বলে,
‘আমি চ্যালেঞ্জ নিতে খুব পছন্দ করি। আজ তোমার সাথেও একটা চ্যালেঞ্জ নিলাম। তুমি আমাকে ভালোবাসবে, নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসবে আমায় একদিন। এটা আমার চ্যালেঞ্জ।’
‘ইন ইউর ড্রিম।’
কথাটা বলেই অর্পা চলে যায়।
★★★
সীমান্তর চেম্বারের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সুহানি। অপেক্ষা করছে তার বেরানোর। সীমান্ত চেম্বার থেকে বেরোনো মাত্রই সুহানি তার পায়ের কাছে বসে যায়। অতঃপর বলে,
‘ভাইয়া তোমাকে মিথ্যা বলার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও। আমার উপর এভাবে রাগ করে থেকো না।’
সীমান্ত ভড়কে যায়৷ দ্রুতগতিতে সরে এসে বলে,
‘কে আপনি? আর আমার কাছে ক্ষমা চাইছেন কেন? আমি তো আপনাকে চিনি না।’
সুহানি অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
‘ভাইয়া…’
সীমান্ত বলে,
‘আমার তো কোন বোন নেই।’
কথাটা বলে সে চলে যেতে নেয়। সুহানি পেছন থেকে অভিমানী সুরে বলে,
‘বেশ তুমি যা চাও তাই হবে। আজ থেকে আমি আর আসব না। তুমি আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে না চাইলে আমিও রাখব না। কিন্তু মনে রেখো ভাইয়া এরজন্য তোমায় একদিন ঠিকই আফসোস করতে হবে।’
কথাটা বলে সুহানি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে। সীমান্ত তার যাওয়ার পানেই তাকিয়ে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨