#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ধ্রুব রাত্রিকালে নিজের ঘরে বসে ছিল। তার কাছে থাকা সুহানির কিছু ছবি দেখছিল। সুহানির ছবির উপর হাত বুলাচ্ছিল। এমন সময় অহনা খন্দকার ধ্রুবর রুমে চলে এলেন। ধ্রুবকে সুহানির ছবি দেখতে দেখে তিনি বিরক্ত হলেন। মনে মনে বললেন,
‘এত কিছু করলাম এই সুহানিকে ধ্রুবর থেকে আলাদা করার জন্য কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হলো না। নাহ, এবার আমাকে বড় কিছু করতে হবে। যাতে ধ্রুব ঐ মেয়েটার থেকে দূরে সরে আসে।’
এমনটা ভেবে অহনা খন্দকার বলে উঠলেন,
‘বেটা, আমার তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিল।’
ধ্রুব পিছনে ফিরে নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘জ্বি, আম্মু। তুমি কি বলতে চাও বলো।’
‘তুমি আমাকে ভুল বুঝবে না তো?’
‘এসব তুমি কি বলছ আম্মু? আমি কেন তোমায় ভুল বুঝতে যাব।’
‘সুহানি আর তোমাকে আমিই আলাদা করেছিলাম।’
অহনা খন্দকারের কথা শুনে ধ্রুব বিস্ফোরিত নয়নে তাকায় তার পানে। উত্তেজিত গলায় শুধায়,
‘এসব তুমি কি বলছ আম্মু? কেন করলে তুমি এমন?’
অহনা খন্দকার নিজের নাটক শুরু করে দেন। কান্নার মিথ্যা অভিনয় করেন। বলেন,
‘ঐ মেয়েটা ভালো ছিল না বেটা। ও একটা গোল্ড ডিগার ছিল। তুমি জানো না, ও শুধুমাত্র টাকার জন্য তোমার পেছনে পড়ে ছিল। ও আসলে অন্য আরো অনেক ছেলের সাথে রিলেশনে ছিল। আগেরবার আমি ওকে টাকা দিয়ে তোমার জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দেই।’
‘সুহানি এমন করতে পারে না।’
‘তুমি আমাকে অবিশ্বাস করছ বেটা? আমি তোমার মা। তোমার বাবার মৃত্যুর পর একা হাতে তোমাদের দুই ভাইকে সামলেছি। তোমাদের ক্ষ’তি আমি চাইতে পারি? বলো।’
কথাটা বলে তিনি একটা ছবি বের করে ধ্রুবকে দেখান অহনা খন্দকার। যেখানে সুহানি ও কাশেমের বিয়ের ফটো ছিল। অহনা খন্দকারের এক বন্ধু কাশেমের মামা। তার কাছ থেকেই ছবিটা সংগ্রহ করেছেন অহনা খন্দকার। ছবিটা ধ্রুবকে দেখিয়ে অহনা খন্দকার বলেন,
‘দেখ বেটা, ঐ সুহানি বিয়ে করে নিয়েছে। কিন্তু এখন ও আবার তোমার জীবনে ফিরতে চাইছিল। তাই আমি আবার ওকে টাকা দিয়ে তোমার জীবন থেকে দূরে সরে যেতে বলেছি। এইজন্য তো ও তোমার সাথে ব্রেকআপ করে নিয়েছে। কিন্তু আমার খুব ভয় হচ্ছে বেটা, ঐ সুহানি যদি তোমার জীবনে আবার ফিরে আসতে চায়। আবার যদি তোমার ক্ষ’তি করতে চায়।’
ধ্রুব রাগে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিয়েছে। সুহানি যে তাকে এভাবে ঠকাতে পারে, তার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার অভিনয় করতে পারে এমনটা ভাবতেই পারে নি ধ্রুব। কষ্টে তার বুক ফে’টে যাচ্ছিল। অহনা খন্দকার বলেন,
‘আমি তোমার কষ্টটা বুঝতে পারছি। এই কষ্ট থেকে তোমাকে দূরে রাখার জন্য এতদিন তোমায় কিছু জানাই নি। তুমি ঐ ঠ’কবাজ মেয়ের কথা ভুলে যাও। আবার নতুন করে জীবন শুরু করো। আমি আমার বিজনেস পার্টনার আজাদ চৌধুরীর সাথে কথা বলেছি। তার একমাত্র মেয়ে অর্পা চৌধুরীর সাথে আমি তোমার বিয়ে দিতে চাই।’
‘তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের ব্যবস্থা করো আম্মু। আমার কোন অসুবিধা নেই৷ এখন প্লিজ একটু আমায় একা থাকতে দাও।’
অহনা খন্দকার ধ্রুবর মাথায় হাত বুলিয়ে বের হয়ে আসেন। বাইরে এসে কুটিল হেসে বলেন,
‘মিশন সাকসেসফুল। সুহানির প্রতি ধ্রুবর ভালোবাসা এবার ঘৃণায় পরিণত হবে। হা হা হা।’
এদিকে ধ্রুব নিজের ঘরের সব জিনিসপত্র এদিক ওদিক ছু’ড়ে দিয়ে বলে,
‘কেন? কেন এমন করলে সুহানি? তোমার মত একটা ঠকবাজ মেয়ের জন্য আমি নিজের জীবনের এতগুলো সময় ন”ষ্ট করলাম। অনেক হয়েছে আর না। এবার আমি তোমাকে চিরতরে নিজের মন থেকে বের করব।’
★★★
অর্পা তার বাবা আজাদ চৌধুরীর সাথে বসে গল্প করছিল। এতগুলো দিন বাদে নিজের মেয়েকে কাছে পেয়ে বেশ খুশি হয়েছেন আজাদ চৌধুরী। তাই নানান গল্পে মেতে গেছেন। এসব গল্পের মাঝেই আজাদ চৌধুরী বলে উঠলেন,
‘তোমার তো অনেক বয়স হয়ে গেল অর্পা, আমার সেই ছোট্ট বেবি ডল দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেল।’
অর্পা স্মিত হাসলো৷ এরমধ্যে আজাদ চৌধুরী বলে উঠলেন,
‘আমি ভাবছি তোমার বিয়ে নিয়ে।’
অর্পার মুখের হাসি হঠাৎ করে মিলিয়ে গেল। সে প্রতিবাদী কণ্ঠে বলে উঠল,
‘আমি বিয়ে করতে চাই না ড্যাড।’
‘সেটা বললে তো হয়না অর্পা। বয়স হয়ে গেলে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যে বাবাদের দায়িত্ব।’
‘আমার এখন বিয়ে করার কোন ইচ্ছা নেই। আগে লাইফটাকে এনজয় করতে চাই।’
‘আসলে আমার বিজনেস পার্টনার অহনা খন্দকার তার ছেলে ধ্রুবর জন্য তোমার সম্মন্ধ নিয়ে এসেছিল। তাই আমি ভাবছিলাম তোমাদের বিয়ে হলে মন্দ হয়না। কিন্তু যেহেতু তোমার মত নেই তাই আমি আর জোর করবো না।’
অর্পা চমকে গেল৷ আচমকাই তার মুখের অববয় বদলে গেল। দুম করে বলে বসল,
‘আমি এই বিয়েতে রাজি ড্যাড।’
‘কি? তুমি সত্যি বলছ?’
‘হুম। যেহেতু তোমার বিজনেস পার্টনারের ছেলে তাই আমার কোন প্রব্লেম নেই।’
অর্পার কথা শুনে আজাদ চৌধুরী খুশি হয়ে যান। প্রফুল্ল চিত্তে বলেন,
‘তাহলে আমি আজই অহনা খন্দকারের সাথে বলব বিয়ের বিষয়ে। শুধু তোমার মতের অপেক্ষাতেই ছিলাম।’
অর্পা ভাবতে লাগল গতকালকের ঘটনাটা। কালকে ছেলেটির বন্ধুরা তো বলেছিল ও নাকি অহনা খন্দকারের ছেলে। অতঃপর স্বগোতক্তি করে বলল,
‘বলেছিলাম না, আমি তোমাকে দেখে নেব। আর দেখ আমি চান্সও পেয়ে গেলাম। আমাকে গা’লাগাল করেছিলে তাইনা? এবার তুমি মজা বুঝবে মিস্টার। তোমার বউ হয়ে তোমায় জ্ব’লিয়ে সবকিছুর শোধ তুলব।’
অতঃপর অর্পা ধীরাজের কথাই ভাবতে থাকে। ছেলেটা অনেক সুদর্শন। অর্পা মৃদু হাসল। তবে কি তার মনে অনুভূতির জন্ম নিতে শুরু করল?
★★★
আজাদ চৌধুরী অহনা খন্দকারকে ফোন করে অর্পার সম্মতির বিষয়ে জানান। অহনা খন্দকার তো একদম খুশিতে আত্মহারা হয়ে যান। এটাই তো৷ চেয়েছিলেন তিনি। অর্পার সাথে ধ্রুবর বিয়ে হলে ব্যবসায়িক দিক দিয়ে অনেক লাভবান হবেন তিনি।
অহনা খন্দকার ফোন রেখে দিয়ে বলেন,
“অবশেষে আমি সফল। ঐ সুহানিকে ধ্রুবর জীবন থেকে চিরতরে সরাতে পেরেছি৷ এখন শুধু অর্পার সাথে ধ্রুবর বিয়েটা হয়ে গেলেই সোনায় সোহাগা। আল্লাহ এত দিনে আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন।”
রাতে খাবার টেবিলে বসে ধ্রুব ও ধীরাজের সামনে অহনা খন্দকার সবকিছু বিস্তারিত বলেন। সব শুনে ধ্রুবর তেমন কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না। কিন্তু ধীরাজ ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছিল না। সে দ্রুত খাওয়া শে’ষ করে নিজের রুমে এসে সুহানিকে ফোন দেয়। সুহানি ফোন রিসিভ করলে তাকে সবকিছু বলে। এরপর জিজ্ঞেস করে,
‘তুমি কি এখনো আমায় চুপ করে থাকতে বলবে সুহানি আপু? এভাবে তো ধ্রুব ভাইয়ার বিয়ে হয়ে যাবে।’
সুহানির অনেকটা অভিমান হয় ধ্রুব বিয়েতে রাজি হয়েছে এটা শুনে। তাই সে বলে,
‘তোমার ভাই যদি বিয়েতে রাজি থাকে তাহলে আমার কিছু করার নেই ধীরাজ।’
‘কিন্তু…’
সুহানি পুরো কথা সম্পূর্ণ না করেই ফোন রেখে দেয়। কষ্ট অনুভূত হচ্ছে তার বুকের বা পাশটায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨