প্রেমের উড়ান পর্ব-০৮

0
630

#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

ধ্রুব নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে সবেমাত্র বিছানায় গা এলিয়ে দিতে যাবে এমন সময় ধীরাজ তার রুমে এসে বলে ওঠে,
‘এটা আমি কি শুনলাম ভাইয়া? তুমি আম্মুকে নিজের জন্য মেয়ে দেখতে বললে কেন?’

‘কতদিন আর আইবুড়ো থাকব বল। আমারও তো বিয়ে করার সাধ হয়।’

বিদ্রুপাত্মক সুরে কথাটা বলল ধ্রুব। যা শুনে ধীরাজ থতমত খেয়ে গেল। বিস্ময়ের সাথে বলল,
‘দীর্ঘ ৬ বছর সুহানি আপুর জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণে এখন তাকে ফিরে পাওয়ার পর তুমি এমন কথা বলছ!’

ধ্রুবর কন্ঠ ক্ষীণ হয়ে আসে। সে জবাব দেয়,
‘সুহা আমাকে আর চায়না। ওই আমাকে বলেছে মুভ অন করতে।’

‘না, সুহানি আপু এমনটা করতে পারে না। আমি নিজে কথা বলব সুহানি আপুর সাথে।’

‘তুই এমন করিস না ভাই। সুহাকে আমি কথা দিয়েছি ওকে আর ডিস্টার্ব করব না। এখন তুই ওকে এসব বিষয় নিয়ে কিছু বললে ও আমাকে আবার ভুল বুঝবে।’

‘কিন্তু তাই বলে এভাবে সবকিছু শে’ষ হতে পারে না।’

‘সব কিছু তো আজ থেকে ৬ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছিল। আমিই বোকা ছিলাম তাই এতগুলো দিন শুধু শুধু সুহার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। এবার আর সেই বোকামো করবো না। সুহা যদি আমাকে ভুলে যেতে পারে তাহলে আমিও পারব।’

‘ভাইয়া…’

‘আমাকে প্লিজ একটু একা থাকতে দে ধীরাজ।’

ধীরাজ আর কোন কিছু বলার অবকাশ পেল না। কিন্তু সে মনে মনে ঠিক করে নিল এর একটা বিহিত সে করবেই!

★★★
অহনা খন্দকার আজ এসেছেন তার বিজনেস পার্টনার আজাদ চৌধুরীর সাথে দেখা করতে। আজাদ চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে অর্পা চৌধুরীকে তার বেশ পছন্দ হয়েছে। মেয়েটা ছোটবেলা থেকে লন্ডনে মানুষ হয়েছে। শিক্ষিত, ভদ্র সবদিক দিয়ে মেয়েটা একদম পার্ফেক্ট। তাই অর্পার সাথে ধ্রুবর বিয়ে দিতে চান অহনা খন্দকার। এতে করে তাদের মধ্যকার বিজনেসের সম্পর্কেরও অনেক উন্নতি হবে।

আজাদ চৌধুরীর মুখোমুখি হয়ে অহনা খন্দকার বললেন,
‘আজ আমি কোন বিজনেসের ব্যাপারে কথা বলতে আসিনি। এসেছি অন্য প্রস্তাব নিয়ে।’

‘কি প্রস্তাব?’

‘দেখুন, আমাদের মধ্যকার সম্পর্ক তো অনেক পুরানো। আমি ভাবছি এই ব্যবসায়িক সম্পর্ককে যদি আত্মীয়তার সম্পর্কে রূপান্তরিত করা যায়।’

‘মানে ঠিক বুঝলাম না।’

‘আমি আমার বড় ছেলে এহসান ধ্রুবর সাথে আপনার মেয়ে অর্পার বিয়ের সম্মন্ধ নিয়ে এসেছিলাম।’

আজাদ চৌধুরীর মুখে খুশির ঝলক ফুটে ওঠে। তিনি বলেন,
‘প্রস্তাবটা দারুণ। আমিও এমন কিছুই ভাবছিলাম। তবে আমার কাছে আমার মেয়ের মতামত সবার আগে। ছোটবেলায় ওর মায়ের মৃত্যুর পর আমি একা হাতে ওকে মানুষ করেছি। ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করিনি। আগামীকাল অর্পা লন্ডন থেকে দেশে ফিরছে। ও আসুক তারপর আমি ওর সাথে এই নিয়ে কথা বলে ডিসিশন ফাইনাল করে আপনাকে জানাবো।’

অহনা খন্দকার আজাদ চৌধুরীর কথায় খুশি হন। ধ্রুব যা সুদর্শন দেখতে তাতে কোন মেয়েই তার প্রস্তাব ফেলতে পারবে না। তাই তিনি আপাতত এটা নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে ধ্রুব আর অর্পার বিয়ে হচ্ছে।

আজাদ চৌধুরীকে বিদায় জানিয়ে বাইরে এসে নিজের গাড়িতে বসলেন অহনা খন্দকার। এমন সময় তাঁর ফোনে হঠাৎ ম্যাসেজের নোটিফিকেশন এলো। অহনা ফোন বের করে দেখলেন তার একজন পুরাতন বান্ধবীর ম্যাসেজ। ম্যাসেজটা ওপেন করতেই থমকে গেলেন অহনা খন্দকার। কারণ ম্যাসেজটায় সুহানি ও ধ্রুবর গতকালকে কফিশপের ছবি ছিল। অহনা খন্দকার তড়িঘড়ি করে নিজের বান্ধবীকে ফোন করেন। ফোন রিসিভ হতেই জিজ্ঞেস করেন,
‘কি পাঠিয়েছিস তুই এটা?’

‘কাল আমি ছেলেমেয়েদের নিয়ে কফিশপে গেছলাম। সেখানেই দেখলাম তোর ছেলে ধ্রুব একটা মেয়ের সাথে বসে আছে। ধ্রুব লজ্জা পাবে ভেবে আমি ওর কাছে যাই নি। তোকেই ছবিটা পাঠিয়ে দিলাম। আফটার অল, বান্ধবী বলে কথা। তোর ছেলে ডুবে ডুবে পানি খাচ্ছে সেটা জানানো তো আমার দায়িত্ব ছিল।’

অহনা খন্দকার রাগ করে ফোনটা কে’টে দেন। ফোন’টা ছু’রে মা’রেন পাশে। অহনা খন্দকারের কোম্পানির ম্যানেজার তার সাথেই এসেছিল। তিনি ফোনটা কুড়িয়ে সুহানির ছবি দেখে বলেন,
‘আরে এটা তো সেই মেয়ে যাকে ধ্রুব স্যার সেদিন অফিসে নিয়ে এসেছিলেন।’

ম্যানেজারের কথা শুনে অহনা খন্দকার তার কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি সবকিছু খুলে বলেন। সব শুনে অহনা খন্দকার বলেন,
‘এই মেয়েটা তাহলে আবার ফিরে এসেছে ধ্রুবর জীবনে। না এটা আমি হতে দেবো না। ধ্রুব অনেক কষ্টে বিয়েতে রাজি হয়েছে এখন এই মেয়ে যদি কোন গণ্ডগোল করে! আগেরবার ওকে যেভাবে তাড়িয়েছিলাম এবারেও সেভাবে তাড়াতে হবে।’

★★★
রেস্টুরেন্টে মুখোমুখি বসে আছেন অহনা খন্দকার ও সুহানি। অহনা খন্দকারই মূলত সুহানিকে এখানে ডেকে পাঠিয়েছেন। সুহানি আজ এতগুলো বছর পর অহনা খন্দকারের মুখোমুখি হয়ে মনে করছে অতীতের কিছু তিক্ত স্মৃতিকে। তার ভয় হচ্ছে অতীতের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। অহনা খন্দকার সুহানির উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
‘তোমাদের মতো মিডেল ক্লাস মেয়েদের লজ্জা বলতে কিছু নেই তাই না? আবার চলে এসেছ আমার ছেলের পেছনে লা’গতে। ৬ বছর আগে তো খুব বড় মুখ করে বলেছিল আমার ছেলের জীবন থেকে দূরে সরে যাবে। কি হলো এখন?’

‘ভদ্রভাবে কথা বলুন। আমি আপনার ছেলের পেছনে লা’গি নি। বরং আপনার ছেলেই..’

‘থাক তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। তুমি শুধু এতটুকু বলো কত টাকা চাই তোমার। কত টাকা পেলে আমার ছেলের জীবন থেকে চলে যাবে।’

‘আমার কিছু চাই না। আমি গতকাল স্পষ্ট করে আপনার ছেলেকে বলে দিয়েছি সে যেন আমার থেকে দূরে থাকে। আশা করি এরপর আর ধ্রুব কখনো আমার কাছে আসবে না।’

‘না আসলেই ভালো। আমি খুব শীঘ্রই ধ্রুবর বিয়ে দিতে চলেছি। এমন মেয়ের সাথে ওর বিয়ে দেব যে আমাদের স্টেটাসের সাথে মিল খায়।’

কথাটা বলে তিনি উঠে পড়লেন। সুহানির মনের মধ্যে ঝড় উঠল ধ্রুবর বিয়ের কথা শুনে।

কিন্তু সুহানি কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না। সে চোখ বন্ধ করে শুধু ভাবতে লাগল ৬ বছর আগের কথাগুলোই। এসব ভেবে তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হলো। ধ্রুবকে সুহানি কম ভালোবাসতো না। তাই শুধুমাত্র অহনা খন্দকারের কথায় তাকে ভুলে যাবার মেয়ে সুহানি নয়। সেই সময় ঘটনাই কিছু এমন ঘটেছিল যে সুহানিকে বাধ্য হয়েছিল ধ্রুবর সাথে সব সম্পর্ক ছি’ন্ন করতে, এমনকি সেই কারণে এখনো অব্দি ধ্রুবকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।

অহনা খন্দকার উঠে চলে যাবার পর সুহানি লক্ষ্য করল কোন একটা ছায়ামূর্তি তার সামনে দাঁড়িয়ে। সুহানি কিছুটা ঘাবড়ে গেল। ভীত সন্ত্রস্ত চেহারা নিয়ে সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল৷ বিস্ময়ের সাথে বলে উঠল,
‘তুমি।’

‘কিছু জরুরি কাজে এসেছিলাম এখানে। ভাগ্য ভালো ছিল তাই তোমাদের সব ককথোপকথন শুনে ফেলেছি৷ এখন তুমি ছটফট সব সত্য বলে দাও তো আমাকে।’

সুহানি ভাবতে লাগল সব সত্য বলা তার জন্য ঠিক হবে কিনা।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে