#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি
প্রভাতের কিরণ চোখে পড়তেই ঘুমের জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে সুহানি। সকালে উঠেই তার মনটা খারাপ হয়ে যায়৷ কারণ গতকাল রাতে একটি বা’জে স্বপ্ন দেখেছে সে। সুহানি স্বপ্নে দেখেছে সীমান্ত সুহানির ব্যাপারে সব সত্য জেনে গেছে যে সুহানি ঢাকায় কোন প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করছে না বরং এয়ার হোস্টেজ হিসেবে যোগদান করেছে। এটা জেনে সীমান্ত সুহানির সাথে সব সম্পর্ক ছি’ন্ন করে দিয়েছে। স্বপ্নটার কথা মনে পড়লেই কান্না পাচ্ছে সুহানি। মা-বাবাকে হারানোর পর এখন ভাই-ভাবিই তার একমাত্র আপনজন। যদি কোনভাবে তাদের হারিয়ে ফেলে তাহলে যে সুহানি একদম একা হয়ে যাবে। তাই সে প্রার্থনা করতে লাগল এই স্বপ্নটা যেন সত্য না হয়৷ সাথে সুহানি এটাও ভাবল খুব শীঘ্রই তার ভাই নিজে থেকে সবকিছু জেনে যাওয়ার আগেই তাকে সব জানাবে। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করবে। এতে যদি কোন কাজ হয়।
ইশা হাতে কফি মগ নিয়ে এগিয়ে এলো সুহানির দিকে। সুহানির দিকে কফি মগটা বাড়িয়ে বলল,
‘এই নে কফিটা খা। আমি নিজের হাতে বানিয়েছি।’
সুহানি কফিটা নিয়ে খেতে লাগল। এমন সময় হঠাৎ করে তার ফোন বেজে উঠল। সুহানি ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেল তার ভাবি মিরা কল দিয়েছে। সুহানি বলে উঠল,
‘ভাবি হঠাৎ এত সকালে ফোন দিল কেন?’
ফোনটা রিসিভ করে সুহানি জিজ্ঞেস করে,
‘কি হয়েছে ভাবি? সবকিছু ঠিক আছে তো? এত সকালে ফোন দিলে যে তাই আমার টেনশন হচ্ছে।’
মিরা উদ্বীগ্নতার সহিত উত্তর দেয়,
‘কিচ্ছু ঠিক নেই সুহানি। এদিকে বড় গণ্ডগোল হয়ে গেছে।’
‘কি হয়েছে ভাবি?’
‘তোমার ভাইয়া আজ তোমার সাথে দেখা করার জন্য ঢাকায় যাবে। ও এটাও বলল যে আজ গিয়ে তোমার অফিসও দেখে আসবে।’
সুহানির মাথায় যেন আকাশ ভে’ঙে পড়ল। তাহলে কি সকালে দেখা স্বপ্নটাই সত্য হতে চলেছে? সুহানি ভয় পেয়ে গেল খুব। মিরার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
‘তাহলে এখন কি হবে ভাবি? আমি তো এখানে কোন অফিসে জব করছি না। ভাইয়াকে আমি কি বলব?’
‘সেটাই তো ভাবছি।’
সুহানি কিছুক্ষণ ভেবে বলে,
‘আমি ভাবছি এইসব মিথ্যা লুকোচুরি খেলা এখানেই বন্ধ করে দেব। ভাইয়াকে সব সত্য বলে দেব। তারপর যা হবার হবে। এমনিতেও সত্য বেশিদিন চাপা থাকে না।’
‘এই কাজ ভুলেও করো না। গতকাল ফেসবুকে তোমার ভাইয়া একটা নিউজে দেখেছে একজন এয়ার হোস্টেজ নাকি কিসব অ’বৈধ কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। এটা দেখে ও অনেক রিয়্যাক্ট করে। সাথে এও বলে, ভাগ্য ভালো সুহানি তার এয়ার হোস্টেজ হওয়ার জেদ ছেড়ে দিয়ে অন্য জব করছে। নাহলে আমি তো ওর সাথে কোন সম্পর্কই রাখতাম না।’
সুহানি দিগবিদিক শূণ্য হয়ে গেল যেন। পরিস্থিতি তার জন্য এখন বেশ জটিল। মিরা একটু থেকে আবার বলল,
‘এখন যেহেতু এসব কারণে তোমার ভাইয়া অনেক রেগে আছে তাই তাকে সত্য বলার দরকার নেই। আর কয়েকটা দিন যাক তারপর আমরা দুজন মিলে ওকে বুঝিয়ে বলব। আপাতত তুমি কোনভাবে নিজের ভাইয়াকে ম্যানেজ করো। ও কিন্তু একটু পর রওনা দেবে।’
সুহানি তার ভাবির সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয়। এখন তাকে ভাবতে হবে কিভাবে সব পরিস্থিতি সামলাবে।
ইশা সুহানির উদ্বিগ্ন চেহারা দেখে বলে,
‘এত চিন্তা করিস না সুহানি৷ তোর ভাইয়া যাতে কিছু বুঝতে না পারে সেইজন্য আমি প্রয়োজনে ওনাকে বলব তুই আমার সাথে জব করিস। তাহলে উনি নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবেন।’
‘না রে ইশা। ব্যাপারটা এত সহজ না। ভাইয়া আমার অফিসে গিয়ে দেখে আসবে বলেছে।’
‘তাহলে এবার কি করবি তুই?’
‘সেটাই তো ভাবছি।’
★★★
সীমান্ত ঘন্টাখানেক আগেই সুহানির ফ্ল্যাটে এসেছে। ইশা ও সুহানির সাথে কিছু সময় গল্পগুজবও করেছে। ইশা তাকে বলেছে সুহানির সাথে সে একই কোম্পানিতে জব করে। সীমান্ত সেটা শুনে খুব খুশি হয়। কারণ ইশা ও সুহানি সেই স্কুল থেকে একে অপরের বন্ধু। তাই সুহানি ও ইশা একইসাথে থাকায় সীমান্ত নিশ্চিত হয়েছে।
অনেকক্ষণ গল্পগুজব করার পর সীমান্ত সুহানির উদ্দ্যেশ্যে বলল,
‘তাহলে চল এখন তোর অফিসে যাই।’
সুহানি চিন্তায় পড়ে যায়। এখন কি করবে সে। মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে বলে,
‘আজ তো অফিস বন্ধ। তাছাড়া এত তাড়া কিসের যাওয়ার। আরেকটু পর নাহয়…’
‘আসলে আমাকে আবার নারায়ণগঞ্জে ফিরে যেতে হবে তাই আরকি।’
সুহানি ইশার দিকে তাকায় অসহায় চোখে। অতঃপর সীমান্তকে নিয়ে বের হয়ে আসে।
সীমান্তকে নিয়ে একটি প্রাইভেট কোম্পানির কাছে এসে সুহানি বলে,
‘আমি এই কোম্পানিতেই জব করি।’
‘বাহ, বেশ ভালো তো। তুই না বললি অফিস বন্ধ কিন্তু অফিস তো মনে হচ্ছে খোলা। তাহলে আজ আমি আসব জন্য কি তুই অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিস?’
সুহানি কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিল না৷ এমন সময় সীমান্তর ফোনে কল আসায় সে একটু দূরে যায় কথা বলার জন্য।
সুহানি ঘামতে থাকে। সে যে কি করবে বুঝতে পারছিল না। এমন সময় সে দেখতে পেল ধ্রুবকে। ধ্রুব সুহানিকে দেখে তার কাছে এসে বলে,
‘কি করছ তুমি এখানে?’
‘আমি এখানে একটা জরুরি কাজে এসেছিলাম। আপনি?’
‘এই কোম্পানিটা তো আমার মায়ের। তাই একটু দেখতে এসেছিলাম।’
সুহানি যেন হাতের কাছে চাঁদ পেয়ে যায়। ধ্রুবকে অনুরোধের সুরে বলে,
‘আমায় একটা সাহায্য করতে পারবেন?’
‘কি সাহায্য?’
সুহানি তার সকল পরিস্থিতির কথা খুলে বলে ধ্রুবকে। সব শুনে ধ্রুব বলে,
‘আমি তোমাকে সাহায্য করতে রাজি আছি কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।’
‘কি শর্ত?’
‘তোমাকে আমার সাথে ডেটে যেতে হবে।’
‘কি? আপনার মাথা ঠিক আছে তো, আমি যাবো না।’
‘তাহলে আমিও তোমায় হেল্প করতে পারবো না। তুমি বরং তোমার ভাইকে সব সত্য বলে দাও।’
সুহানি ভাবতে থাকে একদিনেরই তো ব্যাপার। ধ্রুবর সাথে একবারই তো ডেটে যেতে হবে। এতে তো বেশি কোন ক্ষ’তি নেই। তাই সে রাজি হয়ে যায়। ধ্রুবকে বলে,
‘আমি আপনার শর্ত মেনে নিলাম এখন প্লিজ আমায় সাহায্য করুন।’
★★★
সুহানি ও সীমান্ত একসাথে এসে বসেছে কোম্পানির ম্যানেজারের সামনে। ম্যানেজার ধ্রুবর কথা শুনে সুহানির নামে অনেক মিথ্যা প্রশংসা করছিল এবং সাথে এটাও বলছিল সুহানি তাদের কোম্পানির নতুন কর্মচারীদের মধ্যে সবথেকে বেশি একটিভ।
সীমান্ত এটা ভেবে খুব শান্তি পায় যে তার বোন এখন ভালো আছে। অন্তত এয়ার হোস্টেজ হওয়ার ভূত মাথা থেকে নেমেছে আর এখন সে ভালো জবও করছে।
কোম্পানি থেকে বের হয়ে সীমান্ত সুহানির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘যাক এখন আমি একেবারে নিশ্চিত হলাম। তুই মন দিয়ে কাজ কর। এখন আর আমি তোর বিয়ে নিয়েও ভাবব না। তুই নিজের মনমতো একটা ছেলেকে নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াস। যদি আমি ছেলেটার খোঁজ নিয়ে দেখি ও ভালো তাহলে আমি নিঃসংকোচে তার হাতে তুলে দিব। এখন তাহলে আমি আসি। আমার আবার আজকে চেম্বারে বসতে হবে।’
‘আচ্ছা, সাবধানে যেও।’
সীমান্ত চলে যায়। সুহানি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আজ একটুর জন্য বেঁচে গেছে। ভাগ্যিস ধ্রুবর সাথে দেখা হয়েছিল। নাহলে কি যে হত!
সীমান্ত চলে যাওয়ার পরই ধ্রুব সুহানির সামনে চলে আসে। বাঁকা হেসে বলে,
‘আমার শর্তটা মনে আছে তো? রেডি ফর আওয়ার ডেট।’
সুহানি মাথায় হাত দেয়। একটা সমস্যা থেকে বাঁচতে গিয়ে আরেক সমস্যা এসে কপালে জুটল।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨