#প্রেমের_উড়ান
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
সুহানি জানালা দিয়ে বাহিরের পানে তাকিয়ে আছে। আজ তার মন ভালো নেই একদম। এত বছর পর ফেলে আসা অতীতের সম্মুখীন হয়ে অন্যরকম অনুভূতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাকে।
আচমকা কারো স্পর্শে পিছনে ফিরে তাকায় সুহানি। পিছন ফিরে ইশাকে দেখতে পায়৷ ইশা সুহানির মলিন মুখ দেখে বুঝতে পারে তার সাথে কিছু একটা তো হয়েই ছে। তাই ইশা সুহানিকে জিজ্ঞেস করে,
‘কি হয়েছে তোর সুহানি? আমি ফিরেছি থেকে দেখছি তুই মন খারাপ করে আছিস। এর কি কোন বিশেষ কারণ আছে?’
ইশার প্রশ্নের জবাবে সুহান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
‘আজ অনেক বছর পর ধ্রুবর দেখা পেলাম।’
সুহানির কথা শুনে ইশা চমকে ওঠে। উত্তেজিত হয়ে বলে,
‘কি বললি তুই? ধ্রুবর সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু কিভাবে?’
‘আমি আজ যেই ফ্লাইটে ছিলাম সেখানকার পাইলট ছিল ও।’
‘কি বলছিস তুই? ধ্রুব পাইলট হলো কিভাবে ওর তো ডক্টর হওয়ার ইচ্ছা ছিল। কলেজে থাকতে তো আমরা দুজনেই দেখেছি ও কতটা সিরিয়াস ছিল ডক্টর হওয়ার জন্য।’
‘আমিও সেটাই ভাবছিলাম। যাক গে, সেটা ওর ব্যক্তিগত ব্যাপার।’
‘সত্যি করে বল তো সুহানি তোর মনে কি ধ্রুবর জন্য এখনো কোন অনুভূতি আছে?’
ইশার প্রশ্ন শুনে সুহানির চোখমুখের ভঙ্গিমা আচমকা বদলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সে বলে ওঠে,
‘অতীতের ঘটনাগুলো কি তুই ভুলে গেছিস ইশা? তোর কি মনে হয় এত কিছুর পরেও আমার মনে কোন অনুভূতি টিকে থাকতে পারে?’
‘হ্যাঁ, আমি মানছি অতীতটা খারাপ ছিল কিন্তু ধ্রুবর তো কোন দো’ষ ছিলনা।’
‘দো’ষ তো আমারও ছিল না। বাট সাফারটা আমাকেই করতে হয়েছে।’
‘সেটা জানি আমি কিন্তু এভাবে অন্য একজনের কারণে ধ্রবকে কষ্ট দিয়ে তুই ঠিক করিস নি।’
সুহানি এবার অনেকটা রেগে যায়। একপ্রকার চেচিয়ে বলে,
‘তুই কিভাবে এই কথা বলতে পারি? সেই সময়টা তুই তো সব নিজের চোখের সামনে দেখেছিলি। তুই দেখিস নি আমার উপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে গেছিল। তোর কি মনে হয়, এতকিছুর পরেও আমি নিজের বাবার সম্মানের কথা না ভেবে ধ্রুবর সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যেতাম?’
ইশা সুহানিকে শান্ত করার চেষ্টা করে। সেই উদ্দ্যেশ্যেই বলে,
‘সুহানি আমি জানি তোর কষ্টটা৷ কিন্তু তুই ভেবে দেখ ধ্রুবও তো কম কষ্ট পায়নি। তুই মনে করে দেখ সেই দিনটার কথা যেদিন তুই ধ্রুবকে ব্রেকআপের কথা বলেছিলি। ধ্রুব সেদিন কিভাবে পাগলের মতো কাঁদছিল। এর আগে আমি কোন ছেলেকে এভাবে কাঁদতে দেখিনি। ও তোর পায়ে পর্যন্ত পড়েছিল সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য।’
‘তো তুই কি বলতে চাইছিস? আমার উচিৎ ছিল সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখা তাই তো? এত অপমানের পরেও আমি নির্ল’জ্জের মতো ওর সাথে সম্পর্কে থাকতাম। বাহ, খুব ভালো কথা বলছিস তুই।”
‘তুই নিজের দিক থেকে হয়তো ঠিক ছিলি কিন্তু ধ্রুবর কষ্টটাও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। ছেলেটা তোকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতো। আর আমার তো এখন মনে হয় ও এখনো তোকেই ভালোবাসে।’
‘কিভাবে বুঝলি তুই?’
‘ও তো আগে থেকে ডক্টর হতে চাইত আর তুই এয়ার হোস্টেজ। এমনো তো হতে পারে যাতে তোর সাথে আবার দেখা করতে পারে সেই উদ্দ্যেশ্যেই ও নিজের স্বপ্নভঙ্গ করে পাইলটের প্রোফশন বেছে নিয়েছে যেন তোর সাথে আবার ওর দেখা হয়।’
ইশার কথা শুনে সুহানি অবাক হয়ে গেল। সত্যি তো, এই ব্যাপারটা তো সে ভেবে দেখেনি। তাহলে কি ধ্রুব এখনো তাকে ভালোবাসে?
নিজের ভাবনার উপর নিজেই বিরক্ত হলো সুহানি৷ ধ্রুব তার অতীত এটা মনেপ্রাণে মেনে নিয়েছে সে। তাই এখন আর ধ্রুবকে নিয়ে ভাবতে চায় না তার মস্তিষ্ক। কিন্তু মন? মন থেকে কি ধ্রুবকে আদৌ বের করতে পেরেছে সুহানি? সেই উত্তর অধরা তার কাছে।
★★★
নিজের রুমে অবস্থিত ডিভানের উপর আসন গ্রহণ করে বসে আছে ধ্রুব। আজ তার মন মেজাজ বেশ ভালো। কতগুলো বছর পর নিজের প্রেয়সীর দেখা পেল সে। ভেবেই মনটা ভালো হয়ে যাচ্ছে। ধ্রুব সুহানির কথা ভেবে মিটিমিটি হাসছিল। এমন সময় কারো ডাকে তার ধ্যান ভাঙে।
‘এত খুশি লাগছে কেন তোমায় ভাইয়া? আলাদিনের চেরাগ পেয়েছ নাকি?’
ধ্রুব চোখ তুলে তাকায় তার ছোট ভাই ধীরাজের দিকে। গায়ে সাদা এফ্রোন জড়িয়ে আছে সে। ধ্রুবর খুব আনন্দ হয় যখন সে ধীরাজকে দেখে। কারণ ধীরাজের মধ্য দিয়েই তো তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ধ্রুব মৃদু হেসে বলে,
‘তুই কখন এলি ধীরাজ? ক্লাস কেমন হলো?’
‘ক্লাসের কথা আর কি বলব ভাইয়া, তুমি তো জানোই মেডিকেলের পড়াশোনা কত কঠিন। আমার তো পড়তে পড়তে অবস্থা খা’রাপ।’
‘সত্যি কত বড় হয়ে গেছিস তুই। আমার যেই ভাইকে পি’টিয়েও পড়াতে বসানো যেত না আজ সে ঢাকা মেডিকেলের স্টুডেন্ট।’
ধীরাজ বলে ওঠে,
‘সবটাই তোমার জন্য। নিজে তো একটা মেয়ের জন্য নিজের ডক্টর হওয়ার প্যাশন ছেড়ে দিয়ে পাইলট হয়ে গেলে। তাই তোমার স্বপ্নটা আমার মাধ্যমে পূরণ করলে। অথচ যার জন্য পাইলট হলে আজ অব্দি তার দেখা পেলাম না।’
‘কে বলল পাইনি? পেয়েছি তো?’
ধীরাজ লাফিয়ে উঠে বলে,
‘কি বললে ভাইয়া তুমি তার মানে সুহানি আপুর দেখা পেয়েছ।’
ধ্রুব ভুবন ভোলানো হাসি দেয়। বড় ভাইকে এভাবে খুশি দেখে ধীরাজও খুশি হয়। ধীরাজ ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে বলে,
সুহানি আপুর সাথে আমার দেখা করাও প্লিজ।’
‘ওর কথা তোর মনে আছে?’
‘কেন মনে থাকবে না? সেই সময় আমি ক্লাস এইটে পড়তাম। সুহানি আপু আমাকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখত। দেখা হলেই ক্যাটবেরি দিত আমাকে। আমার গাল টেনে বলতো চকলেট বয়।’
‘ভুল কি বলতো? ঐ সময় তো তুই দেখতে বাচ্চাদের মতোই ছিলি।’
‘আরেকবার আপুর সাথে দেখা হলে আমি তাকে দেখাব আমি আর আগের মতো বাচ্চা নেই। এখন আমি একজন যুবক।’
ধ্রুব আনমনে বলে,
‘সুহানি এখন অনেক বদলে গেছে জানিস! এখন আর ও আগের মতো নেই।’
ধীরাজের মুখের অববয় বদলে গেল আচমকা। সে বলে উঠল,
‘কি রকম বদল ঘটেছে আপুর মধ্যে?’
‘ও এখন অনেক স্ট্রং হয়েছে। হয়তো আমাকেও এতদিনে মন থেকে বের করে দিয়েছে।’
‘তুমি এমনটা ভেবো না ভাইয়া। সুহানি আপু তোমায় এত সহজে ভুলতে পারে না। তোমাকে আপু অনেক ভালোবাসে। আপু নিজেকে ভুলে যাবে কিন্তু তোমাকে ভুলবে না। এতোটাই ভালোবাসে তোমাকে।’
তাদের দুজনের মধ্যকার কথাবার্তার মধ্যে হঠাৎ করে রুমে প্রবেশ করলেন তাদের মা অহনা খন্দক্লক্সক্সকার। তিনি এসেই দুই ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
‘কি কথা হচ্ছে দুই ভাইয়ের মধ্যে?’
ধীরাজ কিছু বলতে যাবে তার আগেই ধ্রুব প্রসঙ্গ বদলে দিয়ে বলল, ‘সেরকম গুরুত্বপূর্ণ কোন কথা নয়। তুমি কি কিছু বলবে আম্মু?’
‘তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা ছিল ধ্রুব। ধীরাজ একটু বাইরে যাও তো।’
ধীরাজ কোন কথা না বাড়িয়ে বাইরে চলে গেল। ধীরাজ যেতেই অহনা খন্দকার ধ্রুবর উদ্দ্যেশ্যে বলল,
‘আমার বয়স হয়ে যাচ্ছে ধ্রুব। আমি আর কতদিন একা হাতে কোম্পানি সামলাবো? তোমরা দুই ভাই তো নিজেদের প্রফেশন বেছে নিয়েছ। আমার কথা কি ভেবেছ?’
‘তুমি চাইছ আম্মু?’
‘তোমার বিয়ে দিতে। তাও আবার আমার পছন্দের মেয়ের সাথে। যে আমার হাতে হাত মিলিয়ে বিজনেস সামলাবে।’
‘আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব নয়।’
কথাটা বলেই ধ্রুব ওয়াশরুমের দিকে যায়। অহনা খন্দকার বলতে থাকেন,
‘ধ্রুব, ধ্রুব আমার কথা শোনো বেটা। এবার লাইফে মুভ অন করার কথা ভাবো। আর কতদিন অতীত নিয়ে পড়ে থাকবে?’
ধ্রুব মুচকি হাসে। অতীত যে আবার দোড়গড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। তার কথা তো ভাবতেই হবে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨