#প্রেমের আটফোড়ন
#writer :Arshiya shidratul falak
#পর্ব :৮(শেষ)
অধরা কোনো উপায় না পেয়েই রিহানকে সাথে করে নিয়ে গেল,,,
অধরা আব্রাহামের বাসার সামনে কলিং বেল চাপ দিতেই ভাবি এসে দরজা খুলে দিলেন। আব্রাহামের বাবা বিদেশ থাকেন। তাই ভাবি আর আব্রাহাম ওদের পরিবারে,
হাই ভাবি কেমন আছেন,,?
আরে অধরা যে আসো ভেতরে আসো,,
অধরার পাশে রিহানকে দেখে ভাবি মাথা নেরে অধরাকে ইশারা করলেন যে কে ইনি,,
অধরা বলল আমার ভার্সিটির ফেন্ড,,
রিহানের এবার রাগ হলো তাও নিজের রাগকে সংযুত রেখে বল্লেন
ভাবি আমরা কি ভেতরে আসবো??
আরে হে আসো তোমরা, আমিও পাগলের মত তোমাদের বাহিরে দাড় করিয়ে রাখছি। আসো ভেতে আসো,,
অধরা আর রিহান বাসার ভেতরে ডুকতেই আব্রাহাম ছুটে আসলো , এসেই অধরাকে জরিয়ে ধরলো,,
তারপর রিহানকে দেখে অধরার কানে কানে বলতে লাগলো ….
পুফি পুফি এতা কে হয় তোমার??
অধরা কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিহান বলে উঠলো,,
আমাকে চিনতে পারছোনা বাবু। আমি তোমার তোমার আংকেল। তোমার ফুপির স্বা……
বলতে পারলো না অধরা রিহানের কথার মাঝে টান দিল,,
আব্রাহাম সোনা ওনি আমার বন্ধু নতুন বন্ধু বুঝলে,,
ও আত্তা।
রিহান এবার অধরার মুখের দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে রইলেন,,
অধরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা এই রিহানটা চায় আসলে কি???
নিজেই বলল কারো কাছে বৌ হিসাবে পরিচয় না দিতে আবার এখন নিজে এসেই বলে পরিচয় দিতে চাচ্ছে স্ত্রী হিসাবে,,
অধরা পড়েছে মহা ঝামেলায়,, আব্রাহামের বাসায় কিছুক্ষন গল্প করে বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য বের হয়,তখন সামনে এসে রিহান আবার পথ আটকায়,,
এই মেয়ে আপনাকে না বল্লাম আমার সাথে আমার বাসায় যেতে । বাবা বলছে আপনাকে নিয়ে যেন বাসায় যাই,
আমি যাবো না যাবোনা যাবোনা ব্যাস হয়েছে,, যান এবার আপনার পথ আপনি ধরেন।
রিহান এবার রেগে গেল, তাই অধরাকে কোলে করে বাইকের সামনে বসিয়ে রাখল এবং পেছনে সে বসে পড়লো, অধরা বেচারি তো পুরা শক খাচ্ছে,, এ ছেলে চাইছেটা কি সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না,,,
অধরাকে নিয়ে রিহান বাসার আসলেন,, বাসার ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলেন তার গুনধর বন্ধুরা সব ছাদ থেকে তাদের কাহিনী দেখছে আর হাসছে মুখ টিপে।
অধরা ঘরে প্রবেশ করতেই রেহানা ছুটে এসে অধরাকে জরিয়ে ধরলেন , আরিফ চৌধুরি সোফায় বসে টিভি দেখছিলেন অধরাকে দেখে তাড়াতাড়ি সামনে আসে, এসেই অধরাকে আর রেহানাকে জরিয়ে ধরে দুই মেয়ের কপালে চুমু একে দেয়,,
ওনার এমন পরম ভালোবাসার আবেশে অধরার চোখ থেকে অঝরে পানি পড়ছে ,,,
অধরা মনে মনে বলছে শুনেছি বড়লোকরা নাকি গরিবদের সহ্য করতে পারেন না। আর ওনারা কত বড় মনের মকনুষ আমার মত একটা এতিম গরিব মেয়েকে কতটা ভলোবাসা দিয়েছেন। আজ যদি আমার বাবা বেচে থাকতেন তাহলে আমাকে হয়তো এভাবে আদর করতেন, তখন আরিফ চৌধুরি অধরাকে বলতে লাগলেন,,,
কি হলো মা তুই এভাবে বার বার কাদিস কেন??
না বাবা এমনেই,,
না আমাকে বলতে হবে তোর এত কষ্ট কেন??
তখনই রোদ্দুর এসে বলল,,
আসলে আমার বোনটা ছোট থেকে বাবার আদর স্নেহ, ভালোবসা কিছুই পাইনি তো তাই,,,
আরিফ চৌধুরি এবার মুখটাকে মলিন করে নরম কন্ঠে বল্লেন,,
কে বলল সে বাবার ভালোবাসা পায় নি আমি দেব, আজ থেকে আমার দুই মেয়ে এক ছেলে,,
অধরা বেশ খুশি মনে বাবাকে জরিয়ে ধরলেন,
————————-
রৌদ্দুর ভাইয়া দারান???
হঠাৎ মেয়ালি কন্ঠ ভেসে আসতেই রৌদ্দুর পেছন ফিরে তাকালো তাকিয়ে রেহানাকে দেখতে পেল,,,, রৌদ্দুরের সাথে তুর্য দাড়িয়ে ছিল,, রেহানা ইশারা করায় সে চলে যায়,
রেহানা বসে আছে একটা টুল এর উপর রেহানা থেকে রৌদ্দুর কিছুটা দূরত্ব রেখে দাড়িয়ে আছে,,
কি জন্য ডাকলে (রৌদ্দুর)
একটা কথা ছিল( রেহানা()
কি কথা,,,,
রেহানা আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,,
আ আ আসলে আপনি বিয়ে করবেন কবে,,,???
রেহানার এমন প্রশ্নে রৌদ্দুর ভ্যাবাচ্যাকা ধেয়ে যায়। কি বলবে বুঝে ওঠতে পারছেনা।
তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে বলল,,
হুম বিয়ে তো করবোই,,
কথাটা বলার সাথে সাথেই রেহানা রৌদ্দুরকে প্রশ্ন করে ফেলেল,,, কোনো মেয়েকে পছন্দ করে কিনা,, রৌদ্দুর বিষ্মিতমুখ নিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল তারপর কোমল কন্ঠে বলল,,
হুম মেয়েটাকে আমি খুব লাভ করি। বাট সে করে কিনা তা আদোও জানা হয়ে ওঠে নি,,
কে সে,,??
আছে একজন আমার মনের রানী,,,
ও
রেহানা রৌদ্দুর মুখপানে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো গভীর চাহনীতে,, তারপর চোখের কোনে একরাশ জল নিয়ে চলে গেল সেখান থেকে,,
নিরর্জন রাস্তার কিনারে মাঝপথে হেটে চলেছে রেহানা,,চোখ থেকে বিষাদময় আশ্রু গরিয়ে পরছে গাল বেয়ে বেয়ে, একতরফা ভালোবাসাটা আসলেই কঠিনজনক।দুই বছর ধরে রৌদ্দুকে ভালোবেসে এসেছে,, কিন্তু মুখফুটে কখনোই বলে উঠতে পারে নি যে,, রৌদ্দুর আমি তোমাকে ভীষন রকম ভালোবাসি,,
এতদিন রেহানা মনে করে ছিলের হয়তো রৌদ্দুর তাকে পছন্দ করে। কিন্তু আজ সব মিথ্যা করে দিল।।
______________
রাতে সবাই একসাথে ডিনারে বসেছে অধরাও আছে সাথে। বাবার জোরাজুরিতে রিহানের বাসায়ই রয়ে গেল,,, সবাই খাবার খাচ্ছে কিন্তু অধরা খাচ্ছেনা, সকাল থেকে কিছু না খাওয়ায় তার শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছে,, আর এখন টেবিলে রাখা খাবারের গন্ধে কেমন যেন বমি বমি পাচ্ছে,,,
অধরা চিকেন থেকে একটা চিকেনের লেগ পিছ নিল। সেটা মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই দৌড়ে ওয়াস রুমে গেল,, রিহানও খাবার ছেড়ে অধরার পেছন দৌড় দিল এসে দেখে অধরা ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছে,, তাই রিহান আর জ্বালালো না,,
সে শুয়ে পরে মাঝে কোলবালিশ রেখে। মধ্যে রাতে কারো গরম নিঃস্বাশে ঘুম ভেঙ্গে যায় রিহানের, তাকিয়ে দেখে অধরা তাকে জরিয়ে শুয়ে আছে কোলবালিশ নিচে ফেলে, এমনভাবে জরিয়ে আছে যেন ছুটলেই পালিয়ে যাবে,, রিহান একটা মুচকি হাসি দিল,,
চলে গেল অতীতে,,,,, আজ থেকে প্রায় চার বছর আগে অধরাকে দেখেছিলো রাস্তার একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে হেটে হেটে কোথায় যাচ্ছে,, রিহান প্রথম দেখায় অধরাকে ভালো লেগে যায়। তারপর আস্তে আস্তে খোজ নিয়ে দেখে অধরার এতিম এব্ং অসহায়।
সেদিনের পর থেকে রিহান অধরাকে ফলো করতে থাকে,,
অধরা পাশের বাসার ভাবিটা ছিল রিহানের বন্ধু অতসী,, রিহান তাকে সব কিছু খুলে বলায় অতসী তাকে সাহায্য করে,,,,
____
ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে অধরার ডাকে,,
এই যে মিস্টার আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরুন খুব ঠান্ডা লাগছে,,,
ঘুম ঘুম চোখেই অধরা কথাগুলো বলল,, রিহান অধরাকে জরিয়ে ধরতে যাওয়ায় থেমে গেল, কারন অধরার গায়ে জ্বর এ পুরে যাচ্ছে, রিহান তাড়াতাড়ি ওঠে একটা বাটিতে করে পানি এনে জল পট্টি দিতে থাকে, এভাবে সকাল হয়,,
অধরা সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখে রিহান তার পাশে বসে বসে ঘুমাচ্ছে,, তার সামনে একটা পাত্রে জল তার ভেতর আবার একটা কাপড় অধরার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে কাল সারা রাত রিহান অধরার সেবায় মগ্ন ছিলেন৷,, তারপর অধরা লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়,,, গিয়ে দেখে রেহানা মন মরা করে বসে আছে,, তাকে জিজ্ঞেস করায় সে সব কিছু বলে,, প্রথমে বলতে চাইছিলো না কিন্তু অধরার জোরাজুরিতে বলতে বাধ্য হইছে, ,
অধরা সব শুনে তো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না,,
,,,এভাবে কেটে গেলো তাদের একটি বছর,,
একটি বছরে অনেক কিছুই পরীবর্তন হয়েছে,,,
রিহান অধরাকে নিজের করে পেয়ছে,,
রৌদ্দুও রেহানাকে আপন করতে পেরেছে,, সেদিন রৌদ্দুর যখন রেহানে বলেছিল সে একটি মেয়েকে ভালোবাসে সেটা আর কেউ নয় রেহানাই ছিল,,,,
____________
রাস্তার পাশে হাটছে রিহান অধরার হাত ধরে তখন অধরা বলল,,
আচ্ছা রিহান আমাদের সম্পর্কটাকে কি নাম দেওয়া যায় বলো তো,, যেখানে আমরা সারাদিন ঝগড়া করি পরে আবার এক হয়ে যাই,,
রিহান বলল টম এন্ড জেরি,,
অধরা হোহো করে হেসে ওঠলো
সমাপ্ত