প্রেমেরপরশ
পার্ট_31 ( লাস্ট পার্ট)
__ “ নাহহ! হটাৎ করে লোকটা হারিয়ে গেলো ই বা কোথায়। ” রিমি ওর ভাইকে বলে।
শুভ তখন বলে,
__ “ চিন্তা করিস না, কালপিট কে একদিন না একদিন খুঁজে পাবোই। যারা কিনা আমার নিরুকে এতিম করেছিলো, যারা নিরুর বোন কে নষ্ট করেছে, যে কিনা আমার একমাত্র বোনকে নিয়ে গেমস খেলেছে। তাকে আমি সহজে ছেড়ে দিবো না। একদিন সময় আসবেই। আর সেদিন সব শত্রু কে জীবন থেকে সরিয়ে দিবো। ”
__ “ চলো ভাইয়া, ভাবী বাসায় একাই আছে। ”
শুভরা চলে আসে বাসাতে। দেখতে দেখতে এক মাস কেটে যায়। শুভর একার পক্ষে এতো বড় বিজনেস সামলানো খুব কঠিন হয়ে গিয়েছে। সারাক্ষণ অফিসে, একেক সময় একেক অফিসে যাওয়া, আর বাসায় বসে ল্যাপটপ এ অফিসের কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে শুভ। আজকাল নিরুকে বা শায়ান কেও তেমন সময় দিতে পারেনা শুভ।
সেদিন রাতে ঘরে গিয়ে শায়ানের পাশে বসে,
__ “ পাপ্পা টা কেমন আছে, আই এম সো সরি পাপ্পা, তোমার আব্বু টা খুব পঁচা। তোমাকে একদম ই সময় দিতে পারে না। ”
শায়ান বাবার গলা পেয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে হাসে আর শব্দ করে। নিরু পিছন থেকে শুভ কে জড়িয়ে ধরে, অনেক দিন পর নিরুর স্পর্শে শুভ কেঁপে ওঠে। নিরুর দিকে তাকিয়ে দেখে, নিরু কালো শাড়ির সাথে পিংক কালারের পাড়ের সিল্কের শাড়ি পড়েছে। চোখে কাজল দিয়েছে গাড় করে। চুল গুলো বুকের বাঁ পাশে ছেড়ে রেখেছে। গলায় কিছুই দেয়নি কিন্তু কানে পিংক কালারের দুল দিয়েছে। পায়ে নুপুর পড়েছে নিরু এই প্রথম।
নিরুর দিকে তাকিয়ে অপলক দৃষ্টিতে দেখে কিছুক্ষণ। এরপর নিরু বলে,
__ “ বেবি হবার পর তুমি তো আমায় ভুলেই গেছো। নাকি আগের মতো ভালোবাসোনা আমায় আর। ”
__ “ বউটা মনে হচ্ছে অনেক অভিমান করেছে আমার উপর। ” নিরুর কোমরে হাত দিয়ে নিজের কাছে টেনে নেয় শুভ। এরপর আবার বলে,
__ “ সামনে তুমি এইচএসসি পরীক্ষা দিবে, রিমিও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। তাই তোমাকে ও সুযোগ দিয়েছি। এতোদিন তো এতো মানসিক টেনশন এ পড়াশোনা কিছুই করোনি। তাছাড়া সাগর ভাই নেই। এতো বড় বিজনেস আমাদের সাথে তোমার পারিবারিক বিজনেস সব একা সামলাতে হচ্ছে। এতো কিছু মেইনটেইন করে সত্যিই আমি আমার পরিবার কে সময় দিতে পারিনি। আমি জানি তুমি মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছো। মাফ করে দেয়া যায়না তোমার হাজবেন্ড টা কে। ” শুভ নিরুকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।।
__ “ জানো! খুব একা লাগে নিজেকে। তুমি সব সময় ব্যস্ত থাকো। আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়? ”
__ “ কি কাজ বলো? ”
__ “ এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলে রিমির জন্য একটা পাত্র দেখলে কেমন হয়। ”
__ “ আগে তো শেষ হোক, এরপর না হয় দেখা যাবে। ”
নিরুকে জড়িয়ে ধরে আরোও শক্ত করে। এরপর শুভ বলে,
__ “ এখন না হয় তোমার সাথে একটু রোমান্স করি। ” বলেই নিরুর গলাতে মুখ গুঁজে দেয় শুভ। ওরা ভাসুক ওদের ভালোবাসার রাজ্যে।
৫ মাস পর,
শুভদের বাসার ভিতর সাজানো হয়েছে ফুলে ফুলে। বাইরে দিকে রঙ বেরঙের লাইটিং। অনেক মেহমান কে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। আজ রিমির গায়ে হলুদ। রিমি কে হলুদ শাড়ি আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। নিরু রিমিকে কানে কানে বলে,
__ “ একেবারে হলুদ পরী লাগছে তোমাকে ননদিনী। ” বলে নিরুর চোখ থেকে একটু কাজল নিয়ে রিমির গলাতে দিয়ে দেয়।
__ “ ভাবী এই বিয়েটা করতে ইচ্ছে করছে না। কোন ভাবে কি নিষেধ করা যায় না। ”
__ “ তোমার কি অন্য কোন পছন্দ আছে রিমি! ”
__ “ তুমি তো জানোই যাকে একবার ভালোবেসে ফেলা যায়, সে যতই খারাপ হোক না কেনো ভুলে থাকা খুব কষ্টের। আমি কেনো জানি অন্য কাউকেই মেনে নিতে পারছিনা। ”
__ “ যাই করো, ভুল বুঝোনা আমায়, কষ্ট হলেও বিয়েটা করেই নাও। কারণ জীবনে সুখী হতে হবে রিমি। একা একা শুধুই কষ্ট ই পাবে। কাউকে জীবন সাথী হিসেবে পেলে আরোও ভালো লাগবে দেখিও। অতীত ভুলিয়ে দিবে তোমার বর। ”
__ “ হুমম”
সবার হৈচৈ শুরু হয়ে যায়, একে একে সবাই রিমির গায়ে হলুদ দেয়, মিষ্টি খাওয়ায় রিমিকে। সবার খাওয়ানো হয়ে গেলে সাগর শুভকে ভিডিও কল দেয়। সেখানে রিমি আর সাগর দুজনেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। নিরুর কাঁধে মাথা দিয়ে রিমি বসে আছে। রাতে রিমির হাতে মেহেদী দিয়ে দেওয়া হয়। রাত দুটো তে সবাই কফি পান করে।
মজার ছলে রিমি শুভ কে বলে,
__ “ ভাইয়া আমার বিয়ের গিফট চাই এখুনি। ”
__ “ কি বল! ”
__ “ ভাবীর সাথে ডান্স করবে তুমি আজ। ”
সবাই হাত তালি দিতে থাকে, নিরুও রিমির মন রক্ষার্থে রাজি হয়ে যায়, কিন্তু বলে,
__ “ আমি নাচবো ঠিক আছে, যদি আমার সাথে এখানে যতো কাপল আছে সবাই নাচে। এমনকি আব্বু আম্মু কেও নাচতে হবে । ”
সবার মাঝে হাসির রোল পড়ে যায়, মেয়েকে সুখী দেখতে সবাই রাজী হয়ে যায়।
শুভ একটা গান প্লে করে, আর গানের তালে যে যেমন পারে ডান্স দেয়।
এখন তো সময় ভালোবাসার
এ দুটি হৃদয় কাছে আসার
তুমি যে একা আমিও যে একা
লাগে যে ভালো ও প্রিয় ও প্রিয়।।
পেয়েছি তোমাকে এতদিনে
যেও না সরে গো আভিমানে।
আমি তোমারই ও বুকের **।।
কী ছোয়া আমাকে দিলে তুমি
রাত দিন তোমাকে ভাবি আমি।
কেন বোঝ না প্রেমেরও পাগলামি।।
পরদিন বিয়েতে বরযাত্রী আসে, কেউ গেট আটকায় নি। বরযাত্রী বেশ অবাক হয়ে ভিতরে প্রবেশ করে। অন্যরা আপ্যায়ন করলো বরযাত্রী দের কে। বরের বোন বলে,
__ “ বর তো এলো, বউ কোথায়। একটু দেখি তাকে। “
রিমির ফুপাতো বোন বলে,
__ “ বউ দেখা মুখের কথা না, দেখতে হলে শর্ত আছে। ”
__ “ ওকে ডান, চলো নিয়ে যাও বউয়ের কাছে। ”
পাশের রুমে সবাই কে নিয়ে যাওয়া হয়। সবার চক্ষু চড়কগাছ হবার দশা। একই পোশাক একই সাজসজ্জার দুইটা মেয়ে বউ সেজে বসে আছে।
__ “আসল বউ কোনটা!” বরের ভাই জিজ্ঞেস করে।
__ “ আসল বউ কোনটা সেটা বলবেন আপনারা! যদি আসল বউ চিনতে না পারেন তাহলে কিন্তু ১ লক্ষ টাকা আমাদের গচ্চা দিয়ে বিয়ে বসতে হবে। ” রিমির ফুপাতো বোন রোজী বলে।
__ “ আমার বউ আমি খেয়াল করলেই চিনতে পারবো। ” একটু ওভার কনফিডেন্সের সাথে বলে রিমির হবু বর। ”
চয়ন খেয়াল করে ভালো ভাবে,
দুই টা মেয়েই লাল লেহেঙ্গা পড়ে বসে আছে, গলা ভর্তি সেম গয়না দুজনের ই। হাত ভর্তি সেম চুরি, আংটি। মেহেদীর ডিজাইন টা একটু আলাদা মনে হচ্ছে চয়নের। কিন্তু বুঝতে পারছেনা, কারণ দুজনের মাথার উপর শাড়ি দিয়ে ঢেকে দিয়েছে এমন ভাবে শুধু থুতনি দেখা যাচ্ছে।
__ “ আর পর্যবেক্ষণ করার টাইম নেই, এখুনি বলে দিন কোনটা আপনার বউ! ” রোজী বলে,
ডান পাশের বউ টা একটা আঙুল তুলে, এতে চয়ন ভাবে যে বউ মনে হয় তাকে চিনিয়ে দেওয়ার জন্য ইশারা করছে। হুট করেই বলে দেয়,
__ “ ডান পাশের টা আমার বউ। ”
সবাই হো হো করে হেসে উঠে, মাথার উপর থেকে ঘোমটা সরিয়ে ফেলা হয়। চয়ন এবার নিজেই লজ্জা পাচ্ছে। শুভ পাশ থেকে এসে বলে,
__ “ ভায়া ডান পাশের টা আমার বউ, বাম দিকের টা তোমার। হাহাহা ”
নিরু আর রিমি দুজনে ই মুচকি হাসে, অতঃপর চয়নের কাছে এক লক্ষ টাকা আদায় করে ছাড়ে রিমির ভাই বোনেরা।
ভালো ভাবেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে, রিমি কে নিয়ে যাওয়া হয় শ্বশুর বাড়ি।
দুইদিন পর রিমির শ্বশুর বাড়ি তে অনুষ্ঠান এর আয়োজন করা হয়। নিরু শুভ সহ অনেক আত্মীয় আসে রিমি আর চয়ন কে নিয়ে যেতে।
রিমি চেয়ারে বসে আছে, নীল রঙ এর বেনারসি পড়ে। চয়ন নীল শেরওয়ানি পড়েছে। দুজন কে বেশ মানিয়েছে। ফটোগ্রাফার ডাকা হয়েছে, ছবি তুলার জন্য। রিমি কিছুক্ষণ পর উঠে গিয়ে একজনের কলার চেপে ধরে।
নতুন বউয়ের এমন কীর্তি দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। রিমি চিৎকার দিয়ে উঠে,
__ “ ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া! ”
সবাই দৌড়ে আসে, নিরুও অবাক হয়ে যায়। শুভ গিয়ে লোকটা কে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে।
চয়ন শুভ কে সরিয়ে ধরলেও রাকিবের অবস্থা মার খেয়ে কাহিল হয়ে যায়। নাক, মুখে রক্ত ফুটে উঠেছে।
__ “ ভাইয়া, আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন নাকি! ফটোগ্রাফার কে মারছেন কেনো? ”
__ “ এই লোক একটা ক্রিমিনাল, এতোদিন গা ঢাকা দিয়ে ছিলো। আজ পেয়েছি ওকে, আমরা কি ছেড়ে দিবো নাকি?”
বিয়ে বাড়ির সব লোকে জটলা পাকিয়ে ফেলে।
শুভ পুলিশ কে ফোন দেয়, সবাইকে সব ঘটনা খুলে বলে। রাকিবের মাধ্যমে ওর মা কেও ধরে ফেলে।
রাকিবের স্বীকারোক্তি নেওয়ার সময় শুভ উপস্থিত থাকে। প্রচুর টর্চার করার পর রাকিব স্বীকার করে সব।
রাকিব বলে,
__ “ রুবিকে ভালোবেসেছিলাম সত্যিই সম্পত্তির মালিক ভেবে কিন্তু যখন আম্মা বলে রুবির নামে কোন সম্পত্তি নেই তখন রুবিকে ত্যাগ করি। এরপর জানতে পারি সব কিছু নিরুর নামে। ওকে ইউজ করার চেষ্টা করেও পারিনি। কোনভাবে বেঁচে যায়। পরে বড়লোক মেয়ে দেখে রিমির বান্ধবী কে পটিয়ে ওর নাম্বার নিয়ে ওর সাথে প্রেম করি। পরে জানতে পারি নিরুর ননদ রিমি। এক সাথে বড়লোক হবার স্বপ্নে আমি বিভোর হয়ে পাপের পর পাপ করতে থাকি। ”
রাকিব এর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কোর্ট এ ওর ফাঁসির আদেশ হয়ে যায়, ওর মা খুনের অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এতো কিছু জানার পর চয়ন একটু রাগ করলেও চয়ন কে নিরু বোঝানোর পর চয়ন ভুল বুঝতে পারে। রিমি কে মেনে নেয় চয়ন।
সাগর তুরস্কের কোন মেয়েকে যদি পছন্দ হয় তাহলে বিয়ে করবে না ইচ্ছে হলে বিয়ে করবেনা এটা সম্পুর্ণ সাগরের ইচ্ছের উপর নির্ভর করছে।
শুভ কাজের চাপ সামলাতে না পেরে রিমির অংশ টুকু রিমির নামে করিয়ে দেয়, এতে চয়ন দেখবে বিজনেস।
শুভ এবার একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারলো।
নিরু শায়ান কে খাওয়াচ্ছে, এমন সময় শুভ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে নিরুকে,
__ “ আরে করছো টা কি? বাবুর ক্ষিদে পেয়েছে তো। ”
__ “আমার ও খুদা পেয়েছে! আমি কখন খাবো। ”
__ “ হিংসুটে! ”
শায়ান কে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় নিরু, উল্টো দিকে ঘুরে শুতেই শুভ হ্যাচকা টানে নিরু কে শুভর উপর নিয়ে নেয়।
__ “ কি মহাশয়, এতো দিন পর কি রোমান্স উথলে উঠেছে নাকি!”
__ “ হুমম ”
শুভ নিরুর কপালে চুমু দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।
( সমাপ্ত)
#বিঃদ্রঃ জানিনা কেমন হলো , এটা আমার লিখা তৃতীয় উপন্যাস। আসলে আমি লিখালিখি শুরু করেছি শখের বসে। কেমন করে লিখতে হয় নিজেও জানিনা। এই লিখা শুরুর পর অনেকের কটু কথা শুনেছি। সেগুলো উহ্য করে আপনাদের ভালোবাসা নিয়ে লিখায় মন দিতাম। লিখালিখি শুরুর পর আপনাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। খুব ভালো লাগতো তখন। কিন্তু কাজের চাপে নিয়মিত ভাবে পর্ব গুলো দিতে পারিনি। তাই খুব খুব দুঃখিত। তাছাড়া এগুলো প্রথম প্রথম লিখা তাই ভুল ত্রুটি থাকতেই পারে। সেইজন্য ক্ষমা করে দিবেন। আর এই উপন্যাস টা কেমন হলো অবশ্যই জানাবেন।
Comment: suru valo chilo kintu ending ta valo hoine .Best of luck next time
Nice Kintu Shuruta Beshi Bhalo Chilo
বাহ,আপনার কল্পনা শক্তি তো দারুণ!!!!