প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর (ভৌতিক গল্প) পার্ট: ১

0
3236

প্রেমেপড়েছিঅদৃশ্য_কিছুর (ভৌতিক গল্প)

পার্ট: ১

লেখিকা: সুলতানা তমা

রোদের আলো মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো, চোখ খুলতেই মনে পরলো আমি তো নতুন বাসায় আছি গতকাল সন্ধ্যায় আমরা এই বাসায় এসেছি, বাসাটা ভালো করে ঘুরে দেখার মতো সময়ও ছিল না কাল এসে অনেক কাজ করতে হয়েছে, তাই উঠে পরলাম নতুন বাসা ঘুরে দেখার লোভ সামলাতে পারছি না

ওহ আপনাদের তো আমার পরিচয় দেওয়া হয়নি, আমি অর্পিতা ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ছি, আম্মু আব্বুর আদরের বড় মেয়ে আমার একটা ছোট ভাইও আছে, এই চারজন মিলেই আমাদের ছোট্ট পরিবার, আব্বু সরকারি চাকরি করেন বিভিন্ন জায়গায় আব্বুকে ট্রান্সফার করা হয় সেই সুবাদে বিভিন্ন জায়গা আমরাও ঘুরতে পারি, আব্বুকে এখন আবার এখানে ট্রান্সফার করা হয়েছে তাই এই নতুন বাসায় গতকাল আমরা এসেছি, বাসাটা আব্বু কিনে নিয়েছেন এখানে নাকি অনেক বছর থাকতে হবে

উঠে ফ্রেশ হয়ে এক মগ কপি নিয়ে বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখতে শুরু করলাম অনেক গুলো রোম, আমার রোমের সাথে বড় একটা বারান্দা আছে, একদম আমার মনের মতো বাসা, সব রোম ঘুরে ঘুরে দেখে ছাদে উঠলাম
ছাদে উঠে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে অনেক গুলো ফুল গাছ শুধু গাছ বললে ভুল হবে পুরো বাগান, সাদা গোলাপ, লাল গোলাপ, গাঁদাফুল আরো অনেক রকমের ফুলের গাছ লাগানো পুরো বাগান বলা যায়, অনেক বড় ছাদ একপাশে চিলেকোঠার ঘর আর বেশ খানিক ছাদ জুরে ফুলের বাগান, বাগানের পাশে একটা দোলনাও আছে

ফুল গাছ গুলোর কাছে গেলাম অনেক ফুল ফুটেছে দোলনাটাও পরিষ্কার কিন্তু আব্বু তো বললো এই বাসা নাকি চার বছর ধরে পরিত্যক্ত তাহলে এই ফুলের বাগানের পরিচর্যা কে করে এই দোলনাই বা কে পরিষ্কার করে রাখে, আশে পাশে তো তেমন বাসাও নেই

কে এই বাগানের পরিচর্যা করে এসব ভাবতে ভাবতে চিলেকোঠার ঘরে গিয়ে ঢুকলাম, ঢুকে তো আবার আমার চোখ কপালে উঠলো রোমটা খুব সুন্দর ভাবে পরিপাটি করা মনে হচ্ছে এই রোমে কেউ থাকে কিন্তু কে থাকবে আব্বু তো বলেছে এখানে চার বছর ধরে কেউ থাকে না, কিছুই বুঝতেছি না

চিন্তিত মুখে আম্মুর কাছে গেলাম
আম্মু: কিরে বাসা পছন্দ হয়েছে
–হ্যা আম্মু একদম আমার মনের মতো কিন্তু
–কিন্তু কি
–না কিছু না আমি রোমে যাই

আম্মুকে বললাম না কিনা কি ভেবে যদি বাসা ছেড়ে দেয় তাই, এই বাসা আমার খুব পছন্দ হয়েছে এই বাসা ছেড়ে আমি সহজে যাচ্ছি না

সারা দিন আম্মুর সাথে বাসার জিনিসপত্র গুছগাছ করেই কেটে গেলো, সন্ধ্যায় ছাদে গেলাম ফুল গাছে পানি দিতে গাছ গুলো যেই পরিচর্যা করুক এখন তো মালিক আমি, কিন্তু ছাদে ফুল গাছের কাছে যেতেই আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো গাছে তো পানি দেওয়া কিন্তু কে দিল আম্মু নাহ আম্মু তো সারাদিন আমার সাথেই ছিল তাহলে কি জিসান দুর ও তো সারাদিন খেলা নিয়েই থাকে এসবে মন নেই ও দিবে কেন

আম্মু আম্মু বলে চেঁচিয়ে রান্না ঘরে গেলাম
–কিরে এভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন
–আম্মু ছাদে যে ফুল গাছ গুলো সে গুলোতে কি তুমি পানি দিছ
–আমি তো এখনো ছাদে যাইনি
–ওহ
–কেন
–না আমিই মনে হয় পানি দিছিলাম মনে নেই
–কি যে আবুল তাবুল বলিস যা পড়তে বস গিয়ে
–হুম

উফফফ পড়তে মন বসছে না কে গাছ গুলোতে পানি দেয় ভেবে পাচ্ছি না, সারা রাত এই ভাবনায় ঠিকমতো ঘুমাতেও পারি নি

সকালে আম্মু এসে ঘুম থেকে জাগালো
–কলেজে যাবি না
–না দুদিন বসে খাই তারপর যাবো
–তুই যে কি আচ্ছা আমি জিসান কে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছি টেবিলে নাস্তা রাখা আছে খেয়ে নিস
–জিসান ক্লাস ফাইভে পড়ে ওকে নিয়ে স্কুলে যেতে হবে কেন ও একা যেতে পারে না
–নতুন জায়গা ও একা যাবে কিভাবে
–আচ্ছা যাও

উঠে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিলাম, তারপর একটা গল্পের বই হাতে নিয়ে চিলেকোঠোর ঘরে গেলাম, টেবিলে বই রাখতে গিয়ে দেখলাম টেবিলের উপর একটি বই রাখা কয়েক পৃষ্ঠা উল্টানো মনে হচ্ছে যেন কেউ বইটা পড়ছিল আমি আসাতে লুকিয়ে গেছে কিন্তু আমি ছাড়া তো বাসায় এখন কেউ নেই কে এই ঘরে এসে বই পড়বে, ভাবতে ভাবতে রোমটার চারদিকে চোখ বুলালাম হঠাৎ রোমের এক কোনে একটা গিটার দেখতে পেলাম, অদ্ভুত ব্যাপার তো যে বাসা চার বছর ধরে পরিত্যক্ত সেই বাসায় গিটার আর গিটারে তো কোনো ময়লা লেগে নেই একদম পরিষ্কার মনে হচ্ছে কেউ এইটা কে অনেক যত্ন করে রাখে কিন্তু কে এই গিটারের মালিক, কে ফুল বাগানের মালিক আর কেই বা এই রোমে থাকে

সারা দিন এই ভাবনা মাথা থেকে একটু সময়ের জন্যেও সরেনি উফফফফ মাথা ব্যাথা করতেছে, মাথা ব্যাথার জন্য এই সন্ধ্যা বেলায় বিছানায় শুয়ে রইলাম, চোখে একটু একটু ঘুম আসলো শুধু ঠিক তখনি শুনতে পেলাম ছাদে গিটার বাজছে কিন্তু ছাদে কে গিটার বাজাবে আচ্ছা সকালে যে গিটার দেখছিলাম ওইটা কেউ বাজাচ্ছে না তো কিন্তু বাজাবে কে, উঠে দৌড়ে ছাদে গেলাম কিন্তু কাউকে পেলাম না দোলনাটা দুলছে মনে হচ্ছে কেউ বসে ছিল আর এই মাত্র উঠে চলে গেলো, তাড়াতাড়ি চিলেকোঠোর ঘরে গিয়ে ঢুকলাম গিটার তো জায়গা মতোই আছে তাহলে আমি কি ভুল শুনলাম, না না ভুল হবে কেন আমি স্পষ্ট শুনেছি ছাদে গিটার বাজছিল

দৌড়ে আম্মুর কাছে গেলাম
–আম্মু একটু আগে কি তুমি গিটারের শব্দ শুনেছ
–গিটার কে বাজাবে আর আশেপাশে তো কোনো বাসা নেই যেখানে আছে সেখান থেকে গিটারের শব্দ শুনা যাবে না
–তাহলে আমি যে শুনলাম
–মাথা ব্যাথায় উল্টাপাল্টা বকছিস যা গিয়ে শুয়ে থাক
–হুম

দুর কি হচ্ছে এসব আমি গিটারের শব্দ শুনলাম অথচ আম্মু শুনেনি কিভাবে সম্ভব, তারমানে কি আমি ভুল শুনেছি, হতেও পারে……

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে