প্রেমসাগরের উত্তাল ঢেউ পর্ব-০৭

0
1114

#প্রেমসাগরের_উত্তাল_ঢেউ
লেখিকা-লাবিবা নুসরত
||পর্ব-৭||

আয়ুস আর আরোহির বিয়ের আজ এক মাস। আরোহি যতই খুশি হোক না কেন আয়ুসের মনে তেমন আনন্দ নেই। এ নিয়ে আবার আরোহির জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। সারাদিন আয়ুসের কানের কাছে গিয়ে বলতে থাকে প্রাচীর জন্য আমাকে দূরে সরিয়ে রেখেছো। একটা খারাপ মেয়ের জন্য আমাকে কষ্ট দিচ্ছো। নিজের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করছো!

আয়ুসের আর ভালো লাগে না এসব কথা। তবুও চুপ থাকার চেষ্টা করে। নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। প্রাচীর ব্যাপারে এসব বললে আয়ুসের খারাপ লাগে সেটা আরোহি বোঝে না।

এইতো দুদিন আগের কথা। আয়ুস ল্যাপটপে এক ধ্যানে কি যেন একটা করছিল। আরোহি সেজেগুজে সেখানে এসে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু আয়ুসের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। আরোহি অনেক ভাবে চেষ্টা করেছে আয়ুসের নজরের পরার। শেষে রাগ হয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে দিয়ে বলে,

“আয়স! আশ্চর্য! বুঝলাম না আমি এতো সময় ধরে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। শাড়ি পরেছি। তা তোমার নজরে পরছে না? প্রাচী হলে তো ঠিকই প্রশংসা করতে! ওই দুশ্চরিত্রা মেয়ের জন্য এখনো যদি মনে জায়গা রাখো তো আমি কি করতে পারি সেটা তোমাকে দেখাবো।”

আয়ুস ল্যাপটপ লাশে রেখে দিল। আরোহিকে নিজের কাছে টেনে এনে বলল,

“কথায় কথায় প্রাচীকে টানো কেন? আমার তো মনে হয় তুমি ওকে নিয়ে ভাবতে থাকো!”

আরোহি~”উফফফ চুপ করো তো৷ তুমি তো জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ কাউকে সহ্য করতে পারি না তোমার পাশে। এখন শোনো?”

আয়ুস~”হুম বলো?”

প্রাচী~”আমরা তো বিয়ের পরে কোথাও ঘুরতে গেলাম না। এক মাস হয়ে গেলো। কোথাও তো যাওয়া উচিৎ তাই না বেবি?”

আয়ুসের কোথাও যেতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু আরোহির মন রাখতে সে বলল,

“ওকে আমরা যাবো।”

আরোহি~”তাহলে এই সপ্তাহেই যাবো ঠিক আছে?”

আয়ুস~”আমি অফিস থেকে ছুটি নিবো৷ এরপর যাবো। ওকে?”

আরোহি~”ওকে!”

_________________________
প্রাচী ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখছিল। নিজেকে কিছুটা হলেও সামলে নিয়েছে সে। আগের স্মৃতিগুলো তাকে হুটহাট কাঁদাতে পারে না। যথেষ্ট পরিমান বিবেকী হয়েছে সে। আবেগপ্রবণতা কমে এসেছে। ঘরের কোণে চুপটি করে বসে থাকে না। হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করে। বিষাক্ত অতিতকে নিজের দুঃস্বপ্ন ভাবে। আর এই সবকিছুই সে করতে পেরেছে পরিবারের জন্য। লাস্ট এক মাস মা আর বাবা তাকে অনেক সাপোর্ট করেছে। সবসময় পাশে ছিল।
যদিও। মাঝরাতে আয়ুসের কথা মনে পরলে বুকের ভিতর কেমন একটা করে উঠে। কিন্তু সেটা কাউকে বলে না। আসলে মায়ায় পরেছিলো তো! এতো সহজে ভোলা যায় না।

আজ প্রাচী একটু বেশি খুশি৷ প্রহরদের৷ বাসায় যাবে। বিকালে যাওয়ার কথা। হঠাৎ করেই আজ সকালে মিস্টার ইজাজ বলেছেন যে প্রহরের কাছে যাবেন। অনেকদিন দেখা হয় না। একই শহরে থাকার সুবিধা।

প্রাচী টিভি অফ করে লারার কাছে গেলো। তিনি নিজের ঘরেই ছিলেন। প্রহরের বাচ্চার জন্য অনেক গুলো কাঁথা বানিয়েছেন। সেসব গোছাচ্ছিলেন। প্রাচী গিয়ে বলল,

“মা? আপুর তো সবে সারে তিন মাস! আর তুমি কাঁথা সেলাই শুরু করে এতোগুলো বানিয়ে ফেলেছো? আজকাল তো কিনতেই পাওয়া যায়!”

মিসেস লারা~”তুই হলি এই যুগের মানুষ। আমাদের সময় কিনতে পাওয়া যেতো না৷ আর নিজের হাতে বানালে মায়া লেগে থাকে। বুঝেছিস?”

প্রাচী হেসে বলল,

“হুম বুঝেছি! আচ্ছা আমি যাই। বাবা একটু পরে চলে আসবে৷ আর তুমিও রেডি হও।”

প্রাচী চলে গেলো৷ মিসেস লারা বেশ খুশি। মেয়েটার মুখে হাসি ফুটেছে। আগের মতো আর নেই। আসলে সন্তানের মুখে হাসি থাকলেই মা-বাবার মুখে হাসি ফোটে। মিসেস লারার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

____________________________
বিকালে ইজাজ আসার পরে তারা সবাই প্রহরের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মিসেস লারা অনেক রকমের খাবার রান্না করে নিয়েছেন। যাওয়ার পথে মিষ্টি কিনে নিয়েছেন।
বাড়িতে পৌঁছানোর পর এতো কিছু আনতে দেখে প্রহর বেশ রাগারাগি করেছে মিসেস লারা আএ মিস্টার ইজাজকে। এতো কিছু আনার দরকার ছিল না। এটাই বলেছে।

তারা যাওয়াতে ফারহানা আর আনোয়ার অনেক খুশি। সবাই মিলে গল্প করছিল। আর প্রহর,প্রাচী প্রহরের রুমে ছিল।

“জানিস প্রাচী এমন একটা পরিবার পেয়ে আমি আসলেই ধন্য! আমাকে খাট থেকে নামতে দেয় না। ঘরের সব কাজ আম্মু করেন। আর ফারহানের কথা নাই বা বললাম। এতো কেয়ার করে আমার!”

প্রাচী হেসে বলে,

“হুম আমার ভাগ্যবতী বোন!”

প্রহর~”তুই তো আগের থেকে অনেক পাল্টে গিয়েছিস। এখন কি কিছু ভাবছিস?”

প্রাচী~”আসলে আপুনি পাল্টে গিয়েছি বলতে সত্যিটা মেনে নিতে শিখেছি৷ আয়ুস আমাকে ঠকিয়েছে। কোনোদিন ভালোবেসেছিল কিনা আমার জানা নেই। আমি ভাবতাম যে ওকে ছাড়া হয়তো আমার চলবে না। আমি মারাই যাবো! কিন্তু একটা সময় এসে আমি বুঝতে পেরেছি যে আয়ুস আমার জীবন নামন গল্পের একটা অধ্যায় ছিল। ও চলে গিয়েছে মানে এই অধ্যায় শেষ হয়েছে। জীবন না! আর মা-বাবাকে আমি ক্রেডিট দেব! এই এক মাস যেভাবে আমার পাশে থেকেছে। জানিস বাবার বুকে মাথা রেখে কতো রাত পর্যন্ত বসে ছিলাম। কতো রকমের গল্প করতো আমার সাথে! আসলে পরিবারের ভালোবাসাটাই হচ্ছে আসল! এটা না পেলে মানুষ বাঁচতে পারে না।”

প্রহর~”এইতো আমার বুদ্ধিমতী বোন! সব বুঝে গিয়েছিস। এখন নিজের জীবন নিয়ে ভাব?”

প্রাচী~”সেটার জন্য আমার আরও সময় লাগবে। কিছুদিন পরে ভাবা শুরু করবো।”

প্রহর~”আচ্ছা তোকে জোর করবো না৷ অন্তত এটা ভেবে ভালো লাগছে যে বেইমানদের নিয়ে অতিতে পরে থাকিস নি। সামনে আগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিস।”

প্রাচী~”হুম। চল এবার। বাইরে যাই?”

প্রাচী আর প্রহর ড্রয়িংরুমে আসতেই সবাই চুপ হয়ে গেলো। কি নিয়ে যেন কথা বলছিল তারা। প্রাচী ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,

“আমি আসতেই চুপ হয়ে গেলে কেন তোমরা? কি ব্যাপার?”

মিস্টার ইজাজ ~”কই নাতো! আমরা এমনি কথা বলছিলাম। আমাদের নাতি-নাতনিদের নিয়ে। মানে হবু নাতি-নাতনী আরকি! কি বলেন বেয়াই?”

আনোয়ার~”হ্যাঁ হ্যাঁ তাই তো! আচ্ছা ফারহানা তুমি যাও! রান্না কতোদূর?”

ফারহানা~”রান্না হচ্ছে তো৷ আমি যাই দেখে আসি।”

মিসেস লারা~”আমিও আসি!”

তারা দুজন চলে গেলেন। প্রাচী এসে ইজাজের পাশে বসলো। প্রহর সামনেই ছিল। মিস্টার ইজাজ জিজ্ঞেস করলেন,

“কেমন অবস্থা এখন মা? ডক্টর কি বলে?”

প্রহর~”ভালো আছি বাবা। সবাই এতো কেয়ার করে আমার যা বলার বাহিরে।”

ইজাজ~”ভালো ভালো।”

আনোয়ার~”তো আপনি কি ভেবেছিলেন? এখানে মেয়ের কোনো যত্ন হবে না?”

ইজাজ~”হুম ওমনই ভেবেছি! হা হা হা!”

প্রাচী~”কেবল তো সন্ধ্যা হলো আর রান্না শুরু হয়ে গিয়েছে?”

আনোয়ার~”হুম আজকে রাজভোগ হবে মা! তোমার জন্য স্পেশাল।”

প্রাচী~”আমার জন্য?”

আনোয়ার~”হুমমম। তোমার জন্য।”

ইজাজ~”আচ্ছা ফারহান আর জাহিন কখন আসবে?”
প্রহর~”ফারহান আটটার মধ্যে চলে আসবে। আর জাহিনের ঠিক নেই। অনেক রাতে আসে ও। ডিউটি থাকে।”

________________________

রাতে ফারহান আসার পরে খাওয়া দাওয়া হয়। সবাই মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা দেয় তারা। তবে বার বার প্রাচীর মনে হয়েছে কিছু একটা লুকানো হচ্ছে। প্রহরকে জিজ্ঞেস করেও কোনো উত্তর পায় নি সে।
রাত দশটার দিকে তারা বাসায় চলে আসে। প্রহর থাকতে বলেছিল কিন্তু চলে এসেছে।

প্রাচী নিজের ঘরে এসে ঘুমিয়ে পরে। ক্লান্ত লাগছিল অনেক।

পরেরদিন সকালে,,,,,,,,,

প্রাচীকে লারা ঘুম থেকে ওঠান। সকাল তখন প্রায় সারে দশটা। প্রাচী আবার ঘুম প্রিয়। বেশি ঘুমায় সকালে। এটা নিয়ে লারার কাছে কম বকা শোনে নি। তারপরেও এমনই করে।

ঘুমু ঘুমু কণ্ঠে প্রাচী বলে,

“কি হয়েছে মা?”

লারা~”জলদি নিচে আয় তো। যা ফ্রেশ হ।”

প্রাচী জলদি ফ্রেশ হয়ে লারার সাথে নিচে যায়। নিচে মিস্টার ইজাজের বসে ছিলেন। প্রাচী অবাক হয়৷ কারন এই সময় তিনি অফিসে যান। কিন্তু আজ যায় নি কেন?

প্রাচী~”বাবা কিছু বলবে?”

মিস্টার ইজাজ প্রাচীকে এমন একটা কথা বললেন যা শুনে প্রাচী অবাক হলো। আর ভাবলো গতকাল হয়তো এটা নিয়েই কথা হয়েছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে