Monday, October 6, 2025







প্রেমজ্বালা

হাত টিপে দেই?’ –না না টিপতে হবে না ‘ময়নাতো সব সময়ই টিপে দেয়, তখনতো না বলেন না । আমি টিপতে চাইলেই শুধু না!’ কথা না বাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেই। সেদিন সন্ধ্যা হতেই লেপের নীচে ঢুকে পড়েছিলাম। ময়না এসে ধরলো লিভিংরুমে গিয়ে তার সাথে টিভি দেখতে হবে, উওম-সুচিএার মুভি। শাপমোচন। শীতের রাতে ঠান্ডা মেঝেতে আর পা রাখতে ইচ্ছে হলো না। বরং দুষ্টুমি মাথায় চেপে বসলো। বললাম, ও ঘরে এখনতো আর হেঁটে যেতে পারবো না — ঐ মুভি আগেই দেখেছি। যদি কোলে করে নিয়ে যেতে পারো তবেই যাবো, নইলে নয়। সেও কোলে করে লিভিং রুমে নিয়ে গেল । সেদিন কমলাও স্ব-চক্ষেই দেখেছে ঐ কোলে ওঠার রঙ্গ। সেখানে আজ সামান্য আঙ্গুল টেনে দিতে চেয়েছে সে– এতে এত বাঁধা কিসের? সেই বা মানবে কেন?
অস্বস্তি সত্ত্বেও কমলাকে আঙ্গুল টিপতে অনুমতি দিলাম। কমলা আঙ্গুল টিপছে গত পনের মিনিট ধরে আর আমি গল্পের বই পড়ছি, ন হন্যতে। গভীর প্রেমের কাহিনী। তারই মাঝে আঙ্গুলের টিপ চলছে। টিপের ভাব দেখে মনে হচ্ছে কিছু বলতে চায় সে। চাপ এবং গতি ওঠানামা করছে। আবার মাঝে মাঝে থেমেও যায়। সাতআটদিন আগে দরজায় খটাখট শব্দ। দরজা খুলি দেখি পনের-ষোল বছরের একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে চেহারাকে করুন করে। কি চাও জানতে চাইলে জানালো কাজ খুঁজছে। তেমন কোন চাওয়া পাওয়া নেই, শুধু একটু থাকতে চায়। এই মুহূর্তে একটি কাজ তার বড় দরকার। দেখে কেমন মায়া হলো। অত সাতপাঁচ না ভেবে মুখে কয়েকটি কড়া প্রশ্ন করে এবং চুরি করলে পুলিশে দেবো ঘোষণা দিয়ে তখনই তাকে রেখে নিলাম কাজে। সাতদিন হয়ে গিয়েছে কমলা মন দিয়ে ভালই কাজ করছে। অপছন্দ করার কোন কারন নেই। তবে একটু খেয়াল করলেই দেখি কেমন গভীর দৃষ্টিতে সে যেন ড্যাব ড্যাবে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আর সুযোগ পেলেই একটু বেশী কাছে এসে পাশে বসতে চায়। কোন প্রেমিকও আজ পর্যন্ত অত গভীর দৃষ্টিতে তাকায়নি আমার মুখের দিকে। বুঝে পাই না কী হলো তার? ভাবী মেয়ে হয়ে মেয়ে মানুষের প্রেমে পরলো নাতো আবার? অতপর আজ বলেই বসলো তাকে হাত টিপতে দিতে হবে। ময়না যখন আমাকে কোলে করে অন্য ঘরে নিতে পারে সেখানে আমার সামান্য আঙ্গুল টেনে দিতে তার বাঁধা কোথায় ? কেনই বা ? ময়না গত পনের বছর ধরে আমাদের বাসায় কাজ করছে। একেবারে পরিবারের সদস্যের মত। একই সাথে বেড়ে ওঠা আমাদের। এখন আর মনেও হয় না কোনদিন তাকে বাসার কাজের জন্যে রাখা হয়েছিল। ওর সাথে দুষ্টুমি থেকে শুরু করে সবই চলে। কিন্তু কমলা নতুন, এই সেদিন এলো– মাএ সাতদিন হলো সে এসেছে। পদবী এক হলেও তেমন কোন বন্ডিং এখনও তৈরী হয়নি। তার সাথে এখনও বেশ দূরত্ব অনুভূত হয়। কিন্তু সে বোঝে না। তার অভিজ্ঞতাই বা আর কতটুকু?
অনুমতি পেয়ে গত দু’দিন ধরে কমলা আমার আঙ্গুল টানছে আর শুধু কাছে এসে ঘেঁষে ঘেঁষে বসছে। তার ভাবে মনে হয় কিছু যেন বলবে। কিন্তু বলতে গিয়েও বলে না। ভাবী হয়ত বেতনতেটন কিছু হবে– এখনও বেতন নিয়ে কোন চূড়ান্ত কথা হয়নি যে তার সাথে। বলি, বলো কী বলতে চাও? তার সঙ্কোচ যায় না। আবার উৎসাহ দেই, ‘বলে ফেল কোন অসুবিধা নেই—আমরাইতো!’ ভরসা পেয়েও কেমন যেন চুপসে আছে সে । আঙ্গুল টানাও থেমে যায়। ঢোক গিলে বলে, ‘আমার না বাচ্চা হবে।’ মাথায় চক্কর লাগে আমার। কিসের আঙ্গুল টান খাওয়া, ঝট্ করে শোয়া থেকে উঠে বসি। সাথে সাথেই তার পেটের দিকে চোখ যায়—ফোলা পেট। এতদিন যে পেটকে বেশী খাওয়ায় চর্বি জমে ভুড়ি হয়েছে বলে মনে করেছি সেই পেট শুধু পেট নয় জীবন্ত বাচ্চা আছে ভেতরে। পেট তার খুবই বড়– আমি শেষ ! চিন্তায় পরে যাই । স্বপ্নেও ভাবিনি তাকে রেখে এত কঠিন সমস্যায় পড়বো। কি করবো বুঝতে না পেরে বোনকে ফোন দেই।বোন বলে, ‘ এই বেকুব, কাজে রাখার সময় দেখিসনি যে পেট বড় ? ভালো হয়েছে—এখন খালা হ!’ রাখার সময়ই দেখেছিলাম পেট তার বেশ বড়। ভেবেছিলাম গ্রামের মেয়ে হয়ত একটু বেশী ভাত খায় তাই কম বয়সেই ভুড়ি বাঁধিয়েছে। তাছাড়া সে যত পেট ঢাকছিল আমি তত খেয়ালও করিনি । চিন্তাতেই আসেনি মাএ পনের/ষোল বছরের একটি মেয়ে গর্ভবতী হয়ে ইয়া বড় পেট নিয়ে ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে ঠিকানাহীন হয়ে। কমলা যে বাড়ীতে কাজ করতো তার দেবরের সাথে নাকি ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়েছিল। অতপর ভালোবাসায় ভালোবাসায় একটু একটু করে অনেক বেশী কাছাকাছি আসা হয়ে যায় তাদের– ঘটনা গড়ায় একেবারে বাচ্চার বীজ বপণ পর্যন্ত। কিশোরী মেয়েটি বুঝতেই পারেনি সে ভালোবাসায় নয়, পড়েছিল ধোঁকায়। বিষয়টি যতক্ষণ বুঝতে লেগেছে তার আগেই এক কাপড়ে ঘরের বাইরে তাকে বের করে দেয়া হয়েছে। অতপর তার আশ্রয় হয় আমার বাসায়। যেখানে আমিই কথায় কথায় ধমক খাই সেখানে তাকে কতটা ভরসা দিতে পারবো এমন বিপদে? বাসার সবাই বিষয়টি নিয়ে রেগে আছে। কেন অচেনা লোক রাখলাম? এখন কী হবে? তবে কেউই তাড়িয়ে দেবার কথা বলছে না এটাই রক্ষা। নইলে বড় বিপদে পড়তে হতো। একবার আশ্রয় যখন দিয়েছি এই অবস্হায় তাকেতো আর ঘর থেকে তাড়ানো যায় না যখন তখন। যে বাসাতে সে ছিল সেখানে সে নিরাপত্তা পাবে, ভালোবাসা পাবে, পরিবারের সদস্যদের মতই থাকতে পারবে তেমনই হবার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। কিশোরী মেয়েটির অসহায়ত্ব তারা দেখেনি। বরং সুযোগ নিয়েছে। তার অধিকার খর্ব করেছে। ভালোবাসার দোহাই দিয়ে প্রেগনেন্ট বানিয়ে বের করে দিয়েছে অজানার পথে । শুনেছি বাদুরও আশেপাশের প্রতিবেশীর বাগানের কলা খায় না যেন হৃদ্যতা বজায় থাকে প্রতিবেশীদের মাঝে, যেন মিলেমিশে বসবাস সম্ভব হয়। তারাতো বাদুরের ধর্মও পালন করেনি কমলার সাথে। সেতো চাইলে পতিতার কাছেও যেতে পারতো শখ মেটাতে। তত বেশীতো ব্যয়বহুল নয় – ব্যবস্হাও বৈধ । মেয়েটিকে এই অবস্হায় না ফেললে তারতো কোন ক্ষতি হতো না। নিরাপত্তাতো শ্রমিকের অধিকার। কিন্তু দূর্বলের অধিকার কেই বা দেখে ? যে নিজের অধিকার জানে না তার অধিকারতো খর্ব হবেই। বাঙালী সমাজতো আজও ততটা উন্নত হয়নি যে ক্ষমতাহীন তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না! আজকাল একটু পর পরই কমলা বটি নিয়ে ছোটে পেট কাটবে। কোন মতেই বাচ্চা সে রাখবে না পেটে । তার নিজেরই জীবন চলে না, বাচ্চা দিয়ে কী হবে তার ? বড় টেনশনে পড়ে গেলাম। জানি পেট কাটলে সে যাবে আর আমি হবো মার্ডার কেসের আসামী। চরম ফাঁসা ফাঁসবো । পুলিশ এসে হাতকরা পরিয়ে আমায় রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে নেবে থানায় । লোক জড় হয়ে যাবে ঐ দৃশ্য দেখতে। মেয়ে হয়ে ঐ অবস্হায় একবার রাস্তায় হাঁটলেই আমার কম্ম ফতেহ—জীবনে আর বিয়ের মুখ দেখতে হবে না। মৃত্যু ঘটবে কুমারী অবস্হায় । লোকে জানতেও চাইবে না আসল আসমী কে ? আসল ঘটনা কি? আমিতো শেষ , সেতো শেষই। বাসায় বর্তমান ‘পেট কাটতে যাওয়া’ সমস্যাটি জানাতেই আরেক প্রস্হ বুদ্ধি কম হবার ধমক খেলাম । কি আর করা? তাকে বোঝালাম আপাতত পেট কেটো না আর, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো তোমাকে–ব্যবস্হা একটি হবেই। কাটতে হলে সেই পেট কাটুক–সে পেট কাটলে সমস্যা কম হবে! কমলাও শান্ত হলো।
অল্প বয়স্ক, অশিক্ষিত, নিরাশ্রয়, গরীব হওয়ায় বৈধতা বা অবৈধতা নিয়ে কমলার কোন মাথা ব্যথা নেই। সে হয়ত ভাবে কবুল বলা হোক বা না হোক বাচ্চা হবার উপায়তো একই—কোন সমস্যা নেই । সে শুধু ভালোবেসেছে ব্যস , এর বাইরে সে আর কিছু জানে না। তারা যখন বের করে দিয়েছে বিনা বাক্য ব্যয়ে সে বের হয়ে এসেছে। বোঝেওনি বাচ্চার অধিকার রক্ষায় প্রতিবাদ করা উচিত ছিল। কলিগের সাথে মোহান্মদপুরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাই তাকে । আজ তার বাচ্চা নষ্ট করা হবে । পেট আবার মিশে যাবে পিঠের সাথে। আবার সিঙ্গেল হয়ে যাবে সে। এমন ভুল আর জীবনে কখনও হয়ত করবে না । ভালোবাসবে না আর কাউকে । চিরতরে সব সমস্যা শেষ । এখানে ওখানে টিপেটুপে দেখে ডাক্তার সাহেব বললেন, ‘মণি ছ’ মাসতো হয়ে গিয়েছে তোমার ! বাচ্চা হাত-পা-মাথা সবই গজিয়ে গিয়েছে । এমনকি মনে মনে হয়ত মায়ের নামও জপতে শুরু করেছে সে । এখনতো আর কিছুইতো করা যাবে না –তাহলে বাচ্চাতো মরবেই, তুমিও যাবে। তাকে বোঝাই , ছ’ মাস যখন চলেই গিয়েছে আর মাত্র কয়েক মাস, মা’ইতো এ ক’মাস না হয় পেটে নিয়ে ঘোরো। তারপর বাচ্চা হতেই কাউকে দিয়ে দিও। কত লোকের বাচ্চা হয় না–তাঁদের কত দুঃখ! ওরাও বাচ্চা পাবে আবার তোমার বাচ্চাও বেঁচে থাকবে। ভালো পরিবার পাবে, কত সুখে থাকবে! কাঁদতে কাঁদতে সে আরও তিন/চার মাস বাচ্চা বহন করতে রাজী হয়। তার অবস্হা দেখে রান্নার বুয়াকেও আর বাদ দেইনি। গর্ভবতী অবস্হাতেও সে তার দায়িত্ব ভালো মতই পালন করেছে। কাজ না করতে বললেও শোণে না । দেখেছি বিয়ের পর মেয়েরা গর্ভবতী হলে কত আদরযত্ন বেড়ে যায় তাদের — জোরে হেঁটো না , এই করো না, সেই করো না, কি খেতে ইচ্ছে করে…আরও কত কি? তার বেলায় এসব কিছুই করা হয়নি এখনও। এমন কী একটু তেতুলও খায়নি সে। একদিন কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করি, কি খেতে ইচ্ছে করে তোমার মন খুলে বলো? বললো, আতাফল। বললাম, আচ্ছা, আতাফল খাওয়াবো তোমাকে। পুরো ঢাকা শহরের মার্কেট চষে ফেললাম মাএ একটি আতাফলের খোঁজে কিন্তু কোথাও নেই। সে অবেলায় খেতে চেয়েছে আতাফল, যেমন তার বাচ্চাটিও আসছে অবেলায় অনাকাঙ্ক্ষিত হয়ে। হয়ত কমলাদের জীবনে অতি ছোট ছোট আশাগুলোও কখনও পূরণ হয় না। হয়ত তাদের ভাগ্যই এমন– তারা শুধু হারায়, পায় না কিছুই। দত্তক পিতামাতার খোঁজে লেগে গিয়েছি আমরা। মাত্র তিন মাস হাতে আছে। শিক্ষিত, ধণী, এবং মায়াবতী পিতামাতাই আমাদের লক্ষ্য। যেন বাচ্চা পড়ালেখা শিখতে পারে, আদর পায়। পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া পায়। এরই মধ্যে ময়না ‘আমি বাচ্চা নেবো’ বলে ধমক খায় বোনের। সেই থাকে অন্যের বাসায়। এখনও সিঙ্গেল। সে বাচ্চা নেবে কী করে ? এতে ঝামেলা বাড়বে বই কমবে না। ময়নাকে ধমক খেতে দেখে কমলা বলে, তাহলে আপনাকে বাচ্চা দেবো। আমি সিঙ্গেল হলেও আমার চাকরি আছে। খাওয়াতে পারবো। রাজী হয়ে ‘আচ্ছা’ বলি। দত্তক পিতা না পাওয়া গেলেও দত্তক মাতা পাওয়া গিয়েছে। সমস্যা শেষ। দ্রুত খবরটি বাসায় জানাই। তারা বলে, ‘এই গাধা! সুস্মিতা সেনের দত্তক বাচ্চা নিয়ে বিয়ে হয়নি এখনও, তুই দত্তক নিলে তোকে বিয়ে করবে কে?’ চাপে মত পাল্টাই – তাইতো আমাদের সমাজে অবিবাহিত মেয়েরা এখনও দত্তক নিতে পারছে কই! কমলার মতই তাদেরও ভবিষ্যত অনিশ্চিত–বাচ্চাসহ সহজে কেউ বিয়ে করে না কোন মেয়েকে। ছেলে হলে অন্য কথা ছিল– লোকে সাধু বলে বাহবা দিত কিন্তু মেয়ে আমি। বাহবার পরিবর্তে অপবাদই ভাগ্যে জুটবে। তিন মাসে সমাজ বদলানো যাবে না তবে দত্তক বাবামা পাওয়া যেতেও পারে। আবার লেগে যাই দত্তক দেবার খোঁজে— হাসপাতালসহ এদিকওদিকে সবাইকে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। খুঁজতে খুঁজতে দিনরাত এক করে ফেলেছি আমরা। একমাস যেতেই মিলে গেল দত্তক পিতামাতা।
বহুদিন পর তারা ছেলে সন্তানের মুখ দেখবেন। তার মুখে আব্বা -মা ডাক শুনবেন। কত মধুর সে ডাক–তাদের জীবন সার্থক হবে। তড়িঘড়ি করে তারাও লেগে পড়েছেন কেনাকাটায়। মাএ দুমাস সময় আছে হাতে। কমলারও মন ভালো। নিজে গরীব হলেও বাচ্চা বড়লোক হবে—ভালো খেতে পারবে, পরতে পারবে। সমাজে তার পরিচিতি থাকবে। তার মত আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে না তাকে। একজন মায়ের জন্যে এটিওতো কম পাওয়া নয়। সকাল দশটা। ব্যথা উঠেছে কমলার। আজই বাচ্চা হবে। ময়নাকে বোনের বাসা থেকে আনতে পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যে। যেন সে এসে তার সেবাযত্ন করতে পারে। কমলা ক্ষণে ক্ষণে ব্যথায় কোকায়, চোখ পানিতে ভিজে যায়, তবু ভাত রান্না করতে ছোটে। বলি, আমাদের জন্যে আজ আর ভাত রান্নার চিন্তা করতে হবে না তোমার—একটি ব্যবস্থা হবেই। বলে, ‘ আপনারা তাহলে দুপুরে কি খাবেন ?’ ভাবী, যে মেয়ে ভয়াণক পেট ব্যথা নিয়েও আমরা দুপুরে কি খাবো এখনও সেই কথাই ভাবছে সে তাহলে কত ভালোই না বেসেছিল বাচ্চার বাবাটিকে? কমলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পাশে ময়না আছে। হবু দত্তক পিতামাতা এসেছেন। আমার বিবাহিত আত্মীয়রা আছে। আকাশসম ব্যথায় কুকড়ে ঘন্টা দুই বাবারে, মারে, গেলামরে করে চিৎকার চেচামেচির পর ফুটফুটে একটি ছেলের জন্ম দেয় সে। ধবধবে ফর্সা, ছোট ছোট হাতপা । মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া কালো চুল। মিষ্টি মুখের অবয়ব । দওক পিতামাতাও উৎসুক। আজ তারা অমূল্য রতন নিয়ে ঘরে ফিরবেন। আজ থেকে তাদের শূন্য ঘরটি ভরে উঠবে। কমলা শুধু প্রথম এবং শেষবারের মত বাচ্চার মুখটি একবার দেখবে আজ, আর কোনদিন নয়। জানবেও না তার বাচ্চাটি কোথায় আছে? কেমন আছে? কত বড় হয়েছে? কথা বলছে কিনা?চিরদিনের জন্যে দূর হবে সব ঝামেলা। আবার সিঙ্গেল হয়ে যাবে সে। ছুটে যাবে সব বন্ধন । বাচ্চাটিকে তার কাছে নিয়ে আসা হলো শেষবার দেখাতে। দেখেই বলে, ‘দেখতে একেবারে বাবার মত সুন্দর হয়েছে—বাচ্চা দেবো না আমি!’ না কিছুতেই বাচ্চা দেবে না সে। একেবারে কঞ্চির মত বেঁকে গিয়েছে যেন– মচকাবে তবু ভাঙবে না। বাচ্চা না দেবার সিদ্ধান্তে একেবারে অনড়। তার নিজের বাচ্চা — অন্যের সাধ্য কী কেড়ে নেবার? নার্স বোঝায়। আয়া বোঝায়—কে শোনে কার কথা? দরকারে পথে পথে হাটবে সে, ভিক্ষে করবে—তবু বাচ্চা ছাড়বে না। শ্রমিকের জীবন তার। কাজের ভয় সে করে না। তার এখনও দু’টি হাত দু’টি পা আছে সাথে—সুস্হ। ভয় কিসের ? মনের ভয়ই আসল ভয়। সে ভয় তার আর নেই। নিজের পেট পালতে পারলে বাচ্চাকেও সে পালতে পারবে।
পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ