#প্রেমচতুর্দশী💛
[পর্ব-৮+৯]শেষপর্ব
~|28`|
মাথা নিচু করে বসে আছে অহমি।সামনেই বসে আছে সেহরিশ,সেহরিশের কোলে বসে আছে রিশমি।
অহমি কাপাঁ কাপাঁ গলায় সেহরিশকে বলে উঠলো।
– আম আমি কোথায়!
সেহরিশ করুন চোখে,চোখ মুখ শক্ত করে উত্তর দিলো।
– মার্কিও হোটেলে!
অহমি চোখ বড় বড় করে সেহরিশের দিকে তাকালো।এরপর নজর নামিয়ে নিলো।মিনমিনে স্বরে বলল।
– আম আমি বাড়ি যাবো!আপনি আমাকে এখানে এনেছেন কেনো!তাছাড়া রিশমি এখানে কেনো?(মিনমিনে স্বরে)
সেহরিশ নিজেকে শক্ত করে বলে উঠলো।
– শুধু একটা মেসেজের উপর ডিপেন্ট করে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছো অহমি কিভাবে করতে পারলে এটা!এত বছর রিশমিকে আমার থেকে দূরে করে রাখতে পারলে কিভাবে!
যখন তোমার বাবা আর আমার বাবা আমাদের বিয়ে দেন ইচ্ছের বিরুদ্ধে।অবশ্য এই বিয়েতে তুমি রাজি থাকলেও আমি রাজি ছিলাম না।যতই আমাদের মাঝে স্বামি স্ত্রী সম্পর্ক ছিলো তোমাকে কখনো বলিনি তোমাকে আমি ভালোবাসি।কারন আমি তখন রিয়াকে ভালোবাসতাম কিন্তু তোমার সাথে থাকতে থাকতে তোমার সাথে মিশতে মিশতে আমি রিয়েলাইজ করি আমি তোমাকে ভালোবাসি!খুব ভালোবাসি কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে যায় ইফাজ আমাদের সম্পর্কের দেয়াল তৈরি করে।
সত্যি বলতে আমি তোমায় খুব ভালোবাসি অহু।জানোনা তুমি এই সাত সাতটা বছর আমার কিভাবে কেটেছে।নিজেকে তিলে তিলে শেষ করতে চেয়েছি কিন্তু পারিনী।(সেহরিশের কথা গুলো বলতে বলতে গলা ভেংগে আসছে চোখের কোনে না চাইতেও জল গড়িয়ে পড়ছে)
অহমি মাথা নিচু করে রয়েছে তারও সহ্যর বাধঁ ভেংগে যাচ্ছে ইচ্ছে করছে সেহরিশকে জড়িয়ে বলতে।
– আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি না চাইতেও আপনাকে খুব ভালোবাসতাম!এখনো খুব ভালোবাসি!আমরা কি আমাদের জীবনটা আবার নতুন করে শুরু করতে পারি না যেখানে আমি আপনি আর রিশমি থাকবে।
আফসোস অহমি না পারছে মুখ ফোঁটে কিছু বলতে না পারছে সেহরিশের চোখের সাথে চোখ মিলাতে।
– অহু আমরা কি সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করতে পারিনা!যেখানে তুমি আমি রিশমি থাকবো?(মিহি কন্ঠে)
সেহরিশের মিহি কন্ঠে আবদার গুলো শুনে কান্না থামাতে পারলো না।ফুপিঁয়ে কান্না করে দিলো।আর কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে উঠলো।
– আমাকে আপনি ক্ষমা করে দিবেন সেহরিশ আমি সত্যটা যাচাই না করেই আপনার থেকে দূরে চলে গিয়েছিলাম।আপনার থেকে রিশমিকে দূরে রেখেছিলাম ওকে গত ৭ বছর ধরে ওর বাবার ভালোবাসা পেতে দেয়নি শুধুমাত্র আমার জন্য।
পারলে আমায় ক্ষমা করে দিয়েন!(কান্না করতে করতে)
অহমির কথা শুনে সেহরিশ মুচকি হাসলো।এবং রিশমিকে ভালো করে কোলে নিয়ে অহমির দিকে ডান হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল।
– তাহলে যাওয়া যাক বাড়িতে!(মুচকি হেসে)
অহমি অশ্রুশিক্ত চোখ সেহরিশের দিকে তাকালো এরপর হেসে দিয়ে সেহরিশের হাতে হাত রাখলো এবং বলল।
– চলুন।
~|29`|
অহমি,রিশমি সেহরিশ তাদের বাড়িতে আসতেই।সেহরিশের ভ্রু কুচকে গেলো তাদের বাড়িতে এই টাইমে পুলিশ কি করছে।
রিশমিকে অহমির কোলে দিলো সেহরিশ।
এদিকে এত বছর পর অহমিকে দেখে চমকালেন বাড়ির সকলে।
মিসেস তরা কান্নার মাঝেও হা করে অহমির দিকে চেয়ে আছেন।
মুহুর্তেই মি. আজমীন আর মিসেস নিতুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
পরাপরই ইফাজ অর্ণার কথা ভেবে মুখে শোকের ছায়া বয়ে গেলো।
সেহরিশ ড্রয়িংরুমের ভিতরে আসতেই পুলিশ অফিসার সেহরিশের দিকে তীন্ক্ষ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে বলে উঠলেন।
– মি. সেহরিশ আপনি এতক্ষন কোথায় ছিলেন!
সেহরিশ ভ্রু কুচকে বলে উঠলো।
– হোটেলে ছিলাম।কিন্তু আপনারা এইসময়ে এই জায়গায়।
পুলিশ অফিসারটি সেহরিশের কাছে এসে বলে উঠলেন।
– আপনার কাকাতো ভাইবোন মিস অর্ণা আর মি. ইফাজের ডেড বডি পেয়েছি আমরা পাশের নতুন কম্লেক্স তৈরির স্থানে।আর মিস অর্ণার ফোনের লাস্ট কল নাম্বারটা কিন্তু আপনারই ছিলো।
আপনি কি এই সম্পর্কে জানেন।
সেহরিশ ভ্রু কুচকালো আরও গভীর ভাবে।এদিকে অহমি বুঝে ফেলেছে পুলিশ কেনো এখানে এসেছে।
অহমি বুঝতে পেরেছে পুলিশ ভেবেছে এতে সেহরিশ কোন মতে ইনবল্ভ আছে।কিন্তু অহমিতো জানে সত্যিটা কি।
অহমি রিশমিকে কোল থেকে নিচে নামিয়ে মিনমিনে স্বরে বলে উঠলো।
– অফিসার আমি এই ব্যাপারে জানি ইনফেক্ট আমি ওই জায়গায় ছিলামও।
সেহরিশ সহ বাড়ির সকলে অহমির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো।অফিসার ভ্রু কুচকে বলে উঠলেন।
– আপনি ওখানে উপস্থিত ছিলেন!মিসেস চৌধুরি আপনি কি খুল বলতে পারবেন যে ওখানে কি কি হয়েছিলো।
অহমি মাথা নিচু করে এক নিশ্বাসে সকল ঘটে যাওয়া ঘটনা খুলে বলল।কথাগুলো শুনে অফিসার বুঝতে পারলো ওদের মৃত্যুর জন্য কেউ দ্বায়ি নয়।
তবে ফোন নম্বর নিয়ে কনফিউশান আছে।
অফিসার সেহরিশের দিকে তাকাতেই সেহরিশ বলে উঠলো।
– আপনি ফোন নম্বর নিয়ে নিশ্চিত না তাইতো।হ্যাঁ এটা সত্য যে অর্ণা আমায় ফোন করেছে তবে আমি ফোনটা ধরিনি এবং আমার ফোনটা তখন বন্ধও ছিলো।
~|30`|
চৌধুরি পরিবারে যেমন খুশির রেশ তেমনই শোকের রেশ।বাড়ির দুইজন ছেলে,মেয়ে উপস্থিত শূণ্য হয়ে গেছে।সাথে অপরদিকে বাড়ির বউ এত বছর পর বাড়িতে ফিরেছে।
সব মিলিয়ে একটা দম বন্ধ কর অবস্থা।
মি. ইমরান আর মিসেস তরা ঠিক করেছেন আর এখানে থাকবেন না।
একমাত্র ছেলেমেয়েদের জন্য এতবছর এখানে পড়ে ছিলেন নিজেদের বাড়ি,ঘর থাকতেও।
আজ তাদের ছেলেমেয়ে দুজন নেই হাড়িয়ে গেছে।তারা আর এখানে থাকবেন না।
কথা মতো মি.ইমরান আর মিসেস তরা মি. আজমীন ও মিসেস নিতুর কাছে তার ছেলে,মেয়ের করা ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন মি. আজমীন ওনাদের অনেক বলেছেন যে তাদের সাথে থাকতে।
কিন্তু ছেলেমেয়ের করা কান্ডজ্ঞানহীন আচরণের জন্য এতটাই অনুতপ্ত যে আর একমুহুর্তেই এবাড়িতে থাকবেন বলে ঠিক করেছেন।
____________
২ দিন পর,,
নিরা,সোহাগ আর রিথি এসেছে চৌধুরি বাড়িতে।
অহমি সাফসাফ বলে দিয়েছে ওরা আজ থেকে এখানেই থাকবে।সবাই এতে একমত।
মি. আজমীন আর মিসেস নিতু বান্দরবন গিয়েছেন।
বাগানে আজ ছোট খাটো আড্ডা বসেছে।
আড্ডার মূল টপিক পৃথা আর ইথানের প্রেম কাহিনী।
ইথান হলো পৃথার ৩ বছরের ভালোবাসা।
আর দুই পরিবার এটা মেনেও নেয়।কিছু দিন আগেই দুই পরিবার মিলে ইথান আর পৃথার বিয়ে ঠিক করে আর কয়েকদিন পর তাদের বিয়ে।
পৃথা লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে মাথা নিচু করে মিটমিট করে হাসছে।
আর ইথান ব্যাক্কলের মতো দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
সাথে বাকি সবাইও।কারন রিশমি তাকে মহা মূল্যবান প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে ফেলেছে।
প্রশ্নটা এই ছিলোঃ
“আংকেল আংকেল তোমাকে দেখতে এইরকম কক মুরগীর মতো লাগে কেনো!তোমার নাম কি কক মুরগী!
লজ্জায় ইথানের মাথা কাটাঁ যাচ্ছে।
~|31`|
রিশমি আর রিথিকে অন্যদিকে খেলতে পাঠিয়ে দিলো অহমি।
রিশমি যেই কথা বলেছে ইথানতো লজ্জায় শেষ।সবাই এখনও মিটমিট করে হাসছে।
অহমি খুক খুক করে কাশিঁ দিয়ে সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বলে উঠলো।
– ও বাচ্চা মেয়ে মুখের কন্ট্রোল নাই যাই হোক বাদ দাও!তারপর বলো তোমাদের প্রথম দেখা ও প্রেম কোথায় এবং কিভাবে হয়েছিলো।(সৌজন্য মূলক হেসে)
অহমির কথা শুনে নিরা,সেহরিশ ট্যারা ট্যারা চোখে অহমির দিকে তাকালো।
ওদের তাকানো দেখে আবারো কাশিঁ দিয়ে উঠলো অহমি।এরপর বলে উঠলো।
– আই থিংক আমাদের এখন উঠা উচিৎ রান্না আছে চলো নিরা।(বলেই নিরাকে নিয়ে কোনমতে সেখান থেকে কেটে পড়লো অহমি)
রাতে,,,,,
রাত প্রায় ১১ টার কাটাঁয় ছুই ছুই।
হুমায়ন আহমেদের একটা বই নিয়ে,এক কাফ গরম কফি নিয়ে বেলকনিতে বসেছে অহমি।নিস্তব্দ শহরটাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আর মাঝে মাঝে কফির কাপে এক চুমুক দিচ্ছে।
কিছুক্ষণ আগেই প্রিয় একটি বই আর এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছে সে।
এটা তার প্রতিদিনেরই অভ্যাস।প্রতিদিন বিষন্ন মনে বসলেও আজকে খুশি মনেই বসেছে সে।ডিসেম্বর মাস শীতের চলাচল।চারদিকে মৃদ্যু ঠান্ডা বাতাস বইয়ে কুয়াশায় চারিপাশে কেমন একটা নিকষ কালো হয়ে রয়েছে।
এরই মাঝে দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়লো অহমি।সেহরিশের বেলকনি থেকে শহরটাকে দেখা যায় বটে তবে সুন্দর বাগান,আর পাচঁ তলা একটা বিল্ডিং,পার্কিং সাইট,সুইমিং পুল বলতে গেলে সেহরিশের বাড়িতে আগে যেমন ছিলো তেমন না সময়ের সাথে সাথে বাড়িটাকেও সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে সেহরিশ।
অহমির এটা ভেবেই খুশি লাগছে যে সে তার ভালোবাসা মা,বাবা সব ফিরে পেয়েছে, পেয়েছে সেহরিশের না বলা সেই ভালোবাসি শব্দটি।এইটুকুতেই সে খুশি প্রচুর খুশি।
সল্প সময়ের মধ্যেই অহমি অনুভব কেউ তার গায়ে কি জড়িয়ে দিয়েছে।গায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা চার,পাচেঁক হাত একটা কম্বল তার পাশেই সেহরিশ বসেছে।
সেহরিশ নিজেকে আর অহমিকে ভালো করে কম্বলে মুড়িয়ে অহমিকে কম্বলের ভিতরে জড়িয়ে ধরে।
মুচকি হাসে অহমি,স্নান হেসে সেহরিশের কাধেঁ আলতো করে মাথা রাখে সে।
আজ কতগুলো বছর পর এইরকম একটা মুহুর্ত কাছেপাচ্ছে অহমি ভাবতেই তার খুশির সাথে সাথে আনন্দের কান্না আসছে।
– কি ম্যাডাম এত রাতে একা একা এই শীতের মধ্যে এখানে বসে আছো কেনো!
অহমি মুচকি হেসে বলল।
– এটা আমার নিত্যদিনের অভ্যাস শুধু গত পরশু আর গত কাল এই অভ্যাসটা পালন করা হয়নি তাই ভাবলাম এই এক কাপ কফি,প্রিয় বইটাকে উপভোগ করা যাক এইরকম একটা মনোমুগ্ধ কর সময়ে।(মুচকি হেসে)
সেহরিশও মুচকি হাসে।দুজনে নিরব হয়ে কতক্ষণ বসে রইলো।
নিরবতার মাঝেই সেহরিশ অহমির কপালে চুমু খেয়ে বলল।
– আমাকে আর কখনো একা করে যাবেনা প্রমিজ দাও!
অহমি মুচকি হাসলো আর চোখের ভরসা দিলো।সেহরিশ আবারো অহমির কপালে চুমু খেলো।
~|32`|
১০ বছর পর,,,
আজ রিশমির ১৮ তম জন্মদিন।পুরো বাড়ি ফেইরি লাইট দিয়ে সাজানো হয়েছে সাথে মরিচ বাতিঁ তো আছেই।
শহরের নামী দামী গেস্টরা আজ রিশমিদের বাড়িতে এসেছে।
সবাই ড্রিংক’স হাতে দাড়িয়ে আছে সবার মুখে পার্টিমার্ক্স।
সিড়িঁ উপর থেকে প্রিন্সেসের মতো সেজে নিচে নামছে রিশমি পাশেই রিথি।দুজনেরই নজর কারার মতো ভাব তবে রিশমিকে আজ একটু বেশিই কিউট,সুন্দর লাগছে।
রিশমিকে দেখে বারবার হার্ট বিট মিস করছে হৃদ।হা করে রিশমির নামার দিকে তাকিয়ে আছে।হৃদের পাশেই দাড়িয়ে রিশি রিথির দিকে ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে আছে।
যেই কেউ বলবে
” দেখ দেখ পোলা দুটো কিভাবে মেয়ে দুইটার দিকে লুষু নজরে তাকিয়ে আছে”
কথাটি ঘাটলো না হৃদ,রিশির মাঝর তার নিজ নজরে,রিথি,রিশমির দিকে তাকিয়ে আছে।
এদিকে সেহরিশ,অহমি দাড়িয়ে আছে কেক কাটার টেবিলের সামনে।
সেহরিশের চোখ গেলো সামনেই হা করে দাড়িয়ে থাকা হৃদের দিকে।হৃদ হা করে রিশমির দিক তাকিয়ে আছে।
তা দেখে মিটমিটিয়ে হাসলো সেহরিশ।অহমিকে ইশারা করে বলল।
– আমাদের সময়ে তোহ্ ভালোবাসা টালোবাসা খেলা খেলতে পারলাম না অন্তত এইবার রিশমি,হৃদের ভালোবাসাটাকে নস্ট হতে দিবো না কি বলো জান,,(মিটমিট করে হেসে)
অহমি ভ্রু কুচকে সবার নজরের আড়ালে প্লাস্টিকের ছুড়িঁ দেখিয়ে সেহরিশকে বলে উঠলো।
– কতদিন বলছি আমায় জান,মান বলবে না আর আজকেও দিনেও জান জান বকে বেড়াচ্ছো!গেস্টদের মধ্যে কেউ শুনলে কি বলবে,,
– ম্যাম আমরা অলরেডি শুনেও ফেলেছি কি মিল-কি মোহাব্বত!(দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল নিরা)
নিরার কন্ঠস্বর পেয়ে পিছু ঘুড়লো অহমি দেখলো সোহাগ আর নিরা দাড়িয়ে আছে।
দুজনেই দাঁত কেলিয়ে হাসছে অহমি খানিক কি অনেকখানি লজ্জা পেলো।
এরপর নিরাকে নিয়ে অন্যদিকে চলে গেলো।
দাড়িয়ে আছে সোহাগ,সেহরিশ।দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
– তারপর বলো ভাই বউয়ের কি কি অত্যচার সহ্য করছো!
দুজনের একই প্রশ্ন শুনে দুজনেই হেসে দিলো।
~|33`|
– দেখ ভাই রিথিরে কি সুন্দর লাগতাছে মন চাইতাছে এক্ষনি তুলে নিয়ে গিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করে ফেলি!কিন্তু শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির জন্য তুলে নিয়েও যেতে পারতাছি না।(গালে হাত দিয়ে বলল রিশি)
হৃদ মেয়েদের মতো মুখ ভেংচি কেটে বলল।
– হুহহ ঢং তুলে নিয়ে যাবে!তোর শ্বশুড় যে এত ভালো মেয়ে তোর মতো ছ্যাচড়া পোলার কাছে বিয়ে দিতেছে এটাই বড়ো কথানা আবার বলস তুলে নিয়ে যাবি মাজাক হে কেয়া!(মুখ ভেংচি দিয়ে বলল হৃদ)
রিশি ভ্রু কুচকে বলে উঠলো।
– রিশু ভাবী তোরে পাত্তা কি গরুর ঘাসও দেয়না!আবার বড় বড় কথা বলিস! তোর মনে আছে কলেজে যখন প্রথম ভাবীরে ফুল দিয়া প্রপোজ করছিস তখন তোরে কি ধোলাইটাই না দিসে
আর ভাবা যায় আজ তোর লগে রিশু ভাবীর ইন্গেজমেন্ট সাথে আমার আর রিথির।(ভ্রু কুচকে)
হৃদ রিশির কথা না শুনে এক ধ্যান রিশমির দিকে পড়লো হঠাৎ রিশমিরও চোখ পড়ে হৃদের দিকে হৃদ সুযোগ বুঝে রিশমিকে চোখ মেরে দেয় সাথে ফ্লাইংকিসও।
হৃদের কান্ডে চোখ বড় বড় করে করে চোখ সরিয়ে নেয় রিশমি।এই পোলায় সবসময় ওকে এইরকম একটা এক্সেপ্রেশন দিবেই দিবে।
এদিকে হৃদের কান্ডে হতবাক রিশি।এটা ছেলে না আর কিছু।রিশি একবার হৃদ তো একবার রিশমির দিকে তাকায়।এরপর মাথা চুলকে রিথির দিকে তাকালো দেখলো রিথি তার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
কাধেঁ কারো স্পর্শে রিশি,হৃদ দুজনেই সঠান হয়ে দাড়ায়।
– কি মাই সান’স এখানে কি করছো তোমাদের তো এখন লজ্জায় গা ঢাকা দেওয়ার কথা।!
(মি. আবরার রিশি আর হৃদের বাবা।মি. অনিপা রিশি,হৃদের মা।আর রিশি হৃদ জমজ ভাই।দুজনেরই বয়স ২৩ এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।ওদের কোন বোন নেই।মি. আবরার সেহরিশ,সোহাগের বিজনেস পার্টনার।সেই সুবাদের আজকের এই বার্থডে পার্টির সাথে ওদের এন্গেজমেন্টও এনাউন্সমেন্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সবাই মিলে)
মি.আবরারের কথা শুনে রিশি হৃদের দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে উঠলো।
– লজ্জা আর হৃদ কখনোই বন্ধু হতে পারেনা বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে দেখোনা আর চোখ মারছে,ফ্লাইং কিস ছুড়ছে একমাত্র আমিই কিছু ছুড়ঁতে পারছি না মন তো চাচ্ছে হৃদের মাথায়ই গোবর ছুড়ে মারি।
একধাপ বিরবিরিয়ে হৃদকে বিনা সাবানে ওয়া করে বলে উঠলো রিশি।
– ইয়ে মানে পাপা হৃদ না রিশমি ভাবীকে দেখতে এখানে এসেছে সাথে আমাকেও টানতে টানতে এখানে নিয়ে আসছে।(নকল হাসি দিয়ে)
মি. আবরার ভ্রু কুচকে দুজনের দিকে তাকালেন।
হৃদ আড়চোখে রিশির দিকে তাকালো আর রিশি ট্যারা চোখে হৃদের দিকে তাকালো।
ছেলেটা কি সুন্দর ফাশাঁতে পারে।
মিসেস অনিপা মুচকি হেসে মিসেস অহমি,মিসেস নিরার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন।
~|34`|
মাইক হাতে ছোট করে বানানো স্টেজে দাড়িয়ে আছে সেহরিশ,সোহাগ পাশেই কাপল হয়ে দাড়িয়ে রিথি,রিশি – রিশমি,হৃদ।রিশমি হৃদের হাত ধরে আছে সাথে রিশি রিথির হাত ধরে আছে।
– আজ আমার প্রিন্সেসদের বার্থডের সাথে মি.আবরার খানের দুই ছেলে রিশি খান ও হৃদ খানের সাথে আমার দুই মেয়ে রিথি আর রিশমির এন্গেজমেন্ট ঠিক করেছি।সো রিথি,রিশি-হৃদ,রিশমি আজ এখানেই বার্থডে সেলিব্রিশনের সাথে সাথে এন্গেজমেন্টও হয়ে যাবে।(মুচকি হেসে)
সেহরিশের কথায় সবাই হাতে তালি দিতে লাগলো।আর রিথি,রিশি দুজন দুজনের দিকে তাকালো সাথে রিশমি,হৃদও।আজ অনেক কিছু অতিক্রম হওয়ার পর ওদের এন্গেজমেন্ট হবে।
রিশমির তো লাফাতে ইচ্ছা করছে তার পছন্দেরই ছেলের সাথে তার বিয়ে হবে।রিশমির খুশি রিশমির মুখেই ফুটে উঠেছে হৃদ এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
এন্গেজমেন্ট রিং পড়ানোর শেষে সবাই গেলো কেক কাটতে।
রিশমি আর রিথি একসাথে ছুঁড়ি ধরে কেক কেটেছে।কেক কেটে রিশমি সর্বপ্রথম তার মা,বাবাকে খাওয়ালো এরপর রিথিকে।তারপরও সিরিয়ালে হৃদ খাওয়ালো।
বলতে গেলে ধুমধামে বার্থডে আর এন্গেজমেন্ট পার্টিটা শেষ হলো।
রিশমির বার্থডের আয়োজনে সেহরিশ অনেক পথশিশু,দরিদ্র লোকজন যারা দুবেলা দুমুঠো খেতে পারেনা,সাথে অনেক গুলো বৃদ্ধা আশ্রমের লোকজনদের খাওয়ার আলাদা ব্যাবস্থা করেছে।
সব শেষ রিশমি,হৃদ একে অপরের হাত ধরে সেই জায়গায় গেলো।যেখানে সবাইকে খেতে দেওয়া হয়েছে।
সবাইকে পেট ভরে খেতে দেখে অনেক খুশি হলো রিশমি।তার অনেক ইচ্ছা ছিলো নিজের ১৮ তম জন্মদিনে সব দরিদ্র লোকদের কিছু না কিছু খাওয়াবে পেট পুরে।
এই কয়েকটা পথ শিশুআর লোজজন কম পড়েছে।খোঁজ নিলে দেখা যাবে এই পৃথিবীতে এই রকম হাজারো অবলা পথ শিশু,বৃদ্ধালোকজন,ঘর বাড়ি থাকতেও বৃদ্ধাআশ্রমে থাকতে হয়।
এইরকম হাজারো লোক আপনারা পথে-ঘাটে খুজে পাবেন।
রিশমি খুব খুশি আজকে সবাইকে এক বেলা হলেও খাবার পরিবেশন করতে পেরে।
আর নিজের জীবনে খুব ভালো একটা জীবনসঙ্গীনী পেয়ে।
দেখতে দেখতে ওদের জীবনের থেকে ১০, ১০টা বছর কেটে গেছে।
এই ১০ বছরে অনেক কিছু পাল্টিয়েছে।অহমি এখন একজন সাকসেস ফুল ডক্টর।সেহরিশও নিজের কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে।
নিজের নাম ডাক সব খানেই ছড়িয়েছে।
পৃথা আর ইথানেরও বিয়ে হয়েছে আজ ৯ বছর তাদের দুটো ছেলে মেয়ে আছে ছেলের নাম রিথান আর মেয়ের নাম পৃথিশা।রিথানের বয়স ৭ আর পৃথিশার বয়স ৬।রিথান এবার ক্লাস ৩ তে উঠবে আর পৃথিশা ক্লাস ২ এ।
দুজনেই খুব দুস্টু।
সোহাগও নিজের প্রচেষ্ঠায় একটা কোম্পানি খুলেছে বিজনেস করার জন্য।বর্তমানে তারও বেশ সুনাম আছে।
আর সোহাগ,সেহরিশ মি. আবরার তিনজনই বিজনেস পার্টনার।
এই হলো ওদের জীবনের সফলতা।
বর্তমানে তারা সবাই খুব খুশি আছে।খুনশুটি,দুস্টুমিতে ওদের জীবন চলছে।
ভালো থাকুক আরও এইরকম পরিবারের খুনশুটি।কখনো যেনো কারো কালো নজর না পরে এইরকম হ্যাপি ফ্যামেলিতে।
সব বাধাঁ অতিক্রম করার ধৈর্য্য দিক।
~~~~~~সমাপ্ত,,
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)