#প্রেমচতুর্দশী💛
[পর্ব-৬]
~|21`|
প্রায় ১ ঘন্টা ধরে অহমির ফোনে কল দিচ্ছে নিরা কলটা যাচ্ছে।কিন্তু অহমি রিসিভ করছে না।
নিরার মনে আস্তে আস্তে ভয় জাগতে লাগলো।রিশমিকে সেহরিশদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সময় অহমি।স্নান হাসি দিয়ে বলেছিলো
“সেহরিশকে বলবে রিশমিকে সারাজীবন আগলে রাখতে যতদিন না পর্যন্ত নিশ্বাস ত্যাগ করেন”
কথাটা মনে পড়তেই মাথায় হাত দিয়ে ফেলল নিরা।
– ওহ্হ নো ম্যাম আপনি এটা করতে পারেন না।
নিরা আর দেরি না করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো অহমিকে খুজঁতে।
অহমির ফোন নাম্বার ট্র্যাক করে নিরা সেই এলাকায় পৌঁছে গেলো।হন্তদন্ত হয়ে গাড়ি থেকে নামতেই কিছুদূর যাওয়ার পর থামকে গেলো নিরা।
সামনেই দুটো থেতলে যাওয়া রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে আছে।এটা দেখে আত্বা শুকিয়ে গেছে নিরার।যত জোরে পারে আত্বচিৎকার দিয়ে উঠলো।
ভয়ে নিরা থরথর করে কাপঁছে।লাশ দুটোকে এড়িয়ে থমথমে পায়ে বিল্ডিংয়ের ছাদে যেতে লাগলো নিরা লাশ দুটোর কথা দুচোখর ভাশঁছে তার।উপরে উঠতেও কস্ট হচ্ছে তার।কোনমতে দেয়ালের সাথে ঘেষে ঘেষে ছাদের উপর উঠলো নিরা।
দেখলো সামনেই চেয়ারে উল্টো বাধাঁ অবস্থায় পড়ে আছে অহমি।নিরা দ্রুত ম্যাম বলেই অহমির কাছে এগিয়ে গেলো।
অহমির হাতের শরীরেত বাধঁন খুলে অহমিকে ডাকতে লাগলো নিরা।
কিন্তু ফলাফল নো রেসপন্স। নিরা কিছু বুঝতে না পেরে দ্রুত হসপিটালের একটা নার্স যে নিরার বেস্টফ্রেন্ড তাকে ফোন করে এখানে আসতে বলল।
– ইশা তুই যত দ্রুত পারিস এই ঠিকানায় চলে আস!পরিস্থিতি অনেক বাজে তুই দ্রুত এখানে চলে আয়।(কাপাঁ কাপাঁ গলায়)
বলেই ফোন কেটে দিলো নিরা।ঘনঘন শ্বাস ফেলে অহমির কাছে এগিয়ে গেলো সে।আর অহমিকে ডাকতে লাগলো।
নিরা একটা ব্যাপার খেয়াল করল।অহমির ঠোঁটের কিনারা,সাথে নাক থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ার সরু দাগ।এখনো রক্ত বেয়ে বেয়ে পড়ছে।
এটা দেখে আরও ঘনঘন শ্বাস ফেলতে লাগলো নিরা।কি থেকে কি করবে নিরা বুঝতে পারছে না।অহমির নাক,মুখ থেকে কেনো রক্ত বের হচ্ছে।
নিরার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।কাধেঁ কারো স্পর্শে চমকে উঠলো নিরা।সাথে কাধেঁ হাত দেওয়া ব্যাক্তিটিও।
– আরে নিরা তুই চমকাচ্ছিস কেন আমি ইশা!
নিরা যেনো স্বস্তি পেলো।মিনে মিনে গলায় চিন্তিত স্বরে এনে বলে উঠলো।
– দোস্ত ম্যামকে জলদি হসপিটালে নিতে হবে তুই একটু হেল্প কর!ম্যামের নাক,মুখ থেকে ব্লাড বের হচ্ছে।আর শরীরও প্রায় ঠান্ডা হয়ে এসেছে।(চিন্তিত স্বরে)
ইশা দ্রুতচোখে অহমির দিকে তাকালো এরপর অহমির হাতের শিরা ধরে বলে উঠলো।
– ওহ্ নো ওনার তো শরীর একদম বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে আর দেরী করা যাবে না নিরা তুই ওনাকে ধর!আমিও হেল্প করছি(বলেই নিরা আর ইশা দুজনে মিলে অহমিকে ধরে নিচে নামতে লাগলো)
~|22`|
মুখ গোমড়া করে বসে আছে রিশমি যতই পাপার কাছে থাকুক না কেনো বর্তমান সময়ে অহমির কথা খুব করে মনে পড়ছে রিশমির।
গালে হাত দিয়ে মন মরা হয়ে ডায়নিং টেবিলের উপর বসে আছে রিশমি।
আজ সকাল থেকেই এবাড়িতে আসার পর থেকেই সবাই এত্ত এত্ত খাবার খাইয়েছে তাকে।যা রিশমি কখনো খায়নি একসাথে।
খাওয়া শেষে এখন সবাই তাকে ঘিড়ে ধরেছে আর এত এত মজা করা শুরু করে দিয়েছে।
রিশমি লক্ষ্য করছে কেউ তার মাম্মাকে নিয়ে কোন কথাই বলছে না শুধু তাকেই জিজ্ঞাসা করে যাচ্ছে।
শেষমেষ রিশমি আর না পেরে কান্না করে দিলো।এতো লোকের প্রশ্নে একসাথে করা দেখে কনফিউশানে কান্না করে দিলো রিশমি।
– মাম্মা!আমি মাম্মার কাছে যাবো পাপাই আমাকে মাম্মার কাছে দিয়ে এসো?(চোখ ডলে)
রিশমির মুখে আচমকা অহমির কথা শুনে চমকে গেলো সেহরিশ।অহমি!অহমির ব্যাপারে ভাবতে পারছে না সেহরিশ।কিভাবে অহমির সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলবে কি বলবে অহমিকে।
অহমিতো তাকে মস্ত বড় ভুল বুঝে বসেছিলো।যা অহমি বুঝতে পেরেছে কিন্তু তাও কিভাবে অহমির মুখমুখি হবে সেহরিশ।
শেষে আর কিছু না ভেবে সেহরিশ বলে উঠলো।
- এইতো মা আরেকটু পর তোমার মাম্মার কাছে যাবো।আমরা এত এত মজা করবো।
কক্সবাজার যাবো ঘুরতে ওকে মা!(রিশমির কান্না থামিয়ে বলল সেহরিশ)
রিশমি সেহরিশের কোলে উঠে গেলো।
সেহরিশ রিশমিকে রুমে নিয়ে গেলো আর বিছানায় শুয়িয়ে দিলো।সেহরিশ ভালোই বুঝতে পেরেছে রিশমির ঘুম ধরেছে।
সেহরিশ চুপ করে রিশমির পাশে বসলো।
আর ভাবতে লাগলো রিশমি নামটা ঠিক তার আর অহমির নামের সাথে অনেকটা মিলে।হয়তো দুজনকে স্মৃতিতে আবদ্ধ রাখার জন্য মেয়েটার নাম রিশমি রেখেছে।
সেহরিশের “রিশ„ আর অহমির “মি„ রিশমি।
ভাবতেই আনমনে মুচকি হাসলো সেহরিশ।সেহরিশ মনে মনে ভেবেনিলো এত বছর সেই ভালোবাসার কথা সে অহমিকে বলতে পারেনি সেই ভালোবাসার কথা সে বলে দিবে।অহমির সাথে দেখা করবে।
সেহরিশ কথাটা ভেবে রেডি হয়ে নিলো।সাথে ফোনটা হাতে নিয়ে নিলো সেখানে নিরার নম্বর আছে নিশ্চয় নিরার সাথে কনট্রাক করলে নিশ্চিত অহমির সাথে দেখা করা যাবে।ভাবতেই আনমনে মুচকি হাসলো সেহরিশ।
আর বেরিয়ে পড়লো ওর শুভাকাঙ্খীর গন্তব্যে।
~|23`|
কেবিনে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে অহমি।পাশেই নিরা অহমির হাত ধরে বসে আছে।আর পাশে দাড়িয়ে ইশা।
– নিরা আই থিংক উনি এখন বেটার আছে আমি আসছি ওনার খেয়াল রাখিস!আমি আসি আমার নার্সিং ডিউটি আছে(বলেই মুচকি হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ইশা)
নিরা মুচকি হেসে ইশাকে বায় জানালো।ইশা না থাকলে আজ হয়তো অহমিকে হসপিটালে আনা যেতো না।
ডক্টর বলেছে মুখে প্রচন্ড আঘাত করায় নাকের বাশিঁ ফেটে ব্লিডিং হচ্ছিলো সাথে ঠোঁটও ফেটে গিয়েছিলো সেটা স্বাভাবিক ব্যাপার।আর সারা দিন কিছু না খাওয়ায় অজ্ঞান হয়ে যায় অহমি সাথে প্রচন্ড ঠান্ডার কারনে ওর শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়।
ডক্টরের কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল নিরা অহমির সেইরকম কিছু হয়নি এটাই অনেক।
নিরা অহমির হাত ছেড়ে জানালার কাছে গেলো।ওরা অনেক উচুঁ বিল্ডিংয়ের একটি কক্ষে আছে।
নিরা দৃষ্টি ভেদ করে জানালার বাহিরে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।মুহুর্তেই নিরার মনে পড়ে গেলো তখনকার ওখানে পড়ে থাকা দুটো নিথর দেহের কথা।
আচ্ছা ইশা আসার সময় কি একবারও ওই বডিগুলো দেখেনি।
এইরকম কথা বার্তা মনের মধ্যে উকিঁ দিচ্ছে নিরার।
নিরার ভাবনার মাঝেই ফোন বেজে উঠে নিরার।নিরা হঠাৎ ফোনের শব্দে কেপেঁ উঠে হন্তদন্ত হতে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে ফোনের স্কিনে সেহরিশ স্যাস নামটা ভাস্যমান।
নিরা গভীর নিশ্বাস নিয়ে কলটা রিসিভ করলো।
কল রিসিভ করতেই পিপাসু এক কন্ঠ শুনতে পেলো নিরা।
– হ্যালো নিরা আমি সেহরিশ বলছি অ অহু মানে অহমি কোথায়?(পিপাসু কন্ঠে)
নিরা গভীর নিশ্বাস ফেলল পুনরায়।এরপর বলে উঠলো।
– এই ঠিকানায় চলে আসুন অহমি ম্যামকে দেখতে পারবেন।(বলেই কল কেটে দিলো নিরা)
কল কাটতেই আবারো ফোন বেজে উঠলো নিরার। কিন্তু ফোনের স্কিনে আননোন একটা নাম্বার দেখে ভ্রু কুচকে উঠলো তার।কলটা রিসিভ করলো এরপর ভ্রু কুচকে বলে উঠলো।
– কে! কে বলছেন!(ভ্রু কুচকে)
ওপাশে থাকা লোকটা চুপ থেকে কিছুক্ষন পর বলে উঠলো।
– আমি বলছি নিরু সোহাগ!(মোহনীয় কন্ঠে)
কথাটা শুনেই এক দমকা বাতাস বয়ে গেলো নিরার শরীর।শরীরে কাটা দিয়ে উঠেছে তার কাপাঁ কাপাঁ পাপড়িতে এদিক সেদিক তাকিয়ে একটা ডোক গিলে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো।এরপর কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে উঠলো।
– সো সোহাগ তু তুমি!(কাপাঁ কাপাঁ গলায়)
ওপাশ থেকে কান্নার শব্দ আসতে লাগলো।সোহাগ কাদঁছে ভয়ে নিরার বাকশক্তি হাড়ানোর মতো পাচঁ বছর পর হঠাৎ সোহাগ কল দিয়ে এভাবে আচমকা পাগলের মতো কাদঁছে।
– আমায় ক্ষমা করে দাও নিরা!আমি জানি গত পাচঁ বছর ধরে আমার জন্য তোমাকে অনেক কিছু আমলে নিতে হয়েছে এমনকি আমার জন্য রিথিও কস্ট পেয়েছে।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি নিরু প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও আমি আসছি আর মাত্র দুই ঘন্টা বাকি এরপর তোমার,রিথিকে আর কখনো একলা চলতে দিবো না প্লিজ নিরু তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও!(কান্নারত গলায়)
নিরা বাকশক্তি হাড়িয়ে ফেলেছে।কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে বসে আছে গলায়।যেনো তারা বেরই হতে চায়না আর ভেতরেও থাকতে চায়না।
চলবে,,
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)