প্রেমচতুর্দশী পর্ব-০৭

0
1289

#প্রেমচতুর্দশী💛
[পর্ব-৭]

~|24`|
দরজার সামনে থমকে দাড়িয়ে আছে সেহরিশ।স্থির নজরে বেডে শুয়ে থাকা অহমির দিকে তাকিয়ে আছে সে।অহমির চোখ,মুখ শুকিয়ে চুপসে আছে।
সেহরিশ ধীর পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে অহমির কাছে।
একপ্রকার অহমির দিকে এগিয়ে গিয়ে বেডের পাশে চেয়ার টেনে বসলো।কাপাঁ কাপাঁ হাতে অহমির হাত স্পর্শ করো সেহরিশ।মুহুর্তেই চোখের কিনারে জলেরা ধরা দিতে লাগলো।একসময় সেহরিশের চোখ থেকে আপন গতিতে অশ্রুদের বর্ষন ঘটতে লাগলো।

অহমির হাতটা উঠিয়ে ঠোঁটের সাথে স্পর্শ করলো সে।কতটা বছর,কতটা দিন ধরে সে এই চেহারা,এই মায়াবিনী মুখ দেখেনা।সেহরিশ নিজের হাতের মাঝে অহমির হাত বদ্ধ করে চুপচাপ স্থির দৃষ্টিতে অহমির শুকিয়ে যাওয়া চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে।

এইদিকে..

হাত ল্যাগেজ নিয়ে দাড়িয়ে আছে সোহাগ তার থেকে কিছু দূরে দাড়িয়ে আছে নিরা।নিরার চোখে পানি টলমল করছে তা বিদ্যমান।সোহাগ গভীর নিশ্বাস ত্যাগ করে মুচকি হাসতে হাসতে নিরার দিকে এগিয়ে গেলো।
নিরার কাছে গিয়ে নিরাকে স্পর্শ করতে যাবে ওমনি নিরা দূরে সরে গেলো।অতঃপর গাড়িতে উঠার জন্য ইশারা করলো।সোহাগ আর দ্বিতীয়টি বলার সাহস পেলো না
ভ্রু কুটি কুচকে গাড়িতে উঠে গেলো।
সোহাগ গাড়িতে উঠতেই গভীর নিশ্বাস ত্যাগ করে ড্রাইভিং সিটে বসে গেলো নিরা।
সোহাগ পিছনে আর নিরা সামনে।এটা দেখে সোহাগ ভ্রু যুগল কুচকে রেখেই বলল।

– তুমি সামনে বসেছো কেনো ড্রাইভার কোথায়!(ভ্রু যুগল কুচকে)

নিরা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল।

– ড্রাইভারটা নাহয় আমিই হলাম বিয়ের পর থেকে তো তোমার মেইডই হয়ে আসলাম।আজ নাহয় ড্রাইাভারও হলাম ক্ষতি কি তাতে?(তাচ্ছিল্যের স্বরে)

নিরার কথা গুলো সোহাগের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করার জন্য যথেস্ট ছিলো।সোহাগ চুপ করে নিরার দিকে ফিরে নিরবে চেয়ে রইলো।
চোখে কার্নিশে জলে পরিপূর্ণ সোহাগের।

______

সবেমাত্র জ্ঞান ফিরেছে অহমির।চোখ খুলে চারিপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো।মুহুর্তেই চমকে উঠলো অহমি।
– একিঁ এটাতো সেহরিশের ঘর!আম আমি এখানে কি করে!(মনে মনে)

অহমির চোখে মুখে বিস্ময়,বিস্ময়কর চোখে পুরো রুমে চোখ বুলাতেই তার চোখ আটকে গেলো রুমের এক কোণায় সোফায় ঘুমন্ত রিশমিকে কোলে করে বসে আছে সেহরিশ।
অহমির নাক,মুখ থেকে গরম ধোঁয়া বের হতে লাগলো যেনো আবার সে অজ্ঞান হয়ে যাবে।

– অহমি আমি তোমাকে ভালোবাসি!(নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল সেহরিশ)

কথাটা শোনামাত্রই বিদ্যুৎতের গতিতে চমকালো অহমি।যেনো কান দুটো ভুল শব্দগুলো শুনে ফেলেছে।
চোখ বড় বড় করে সামনে সেহরিশের দিকে চোখ দিলে দেখলো সেহরিশেও তার দিকে তাকিয়ে আছে মুচকি হেসে।
অহমি যেনো কিছু বলতে পারলো না বাকশক্তি তার কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।শুধু ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে সে।
কথাগুলো সব গলার মধ্যে দলা পাকিয়ে আসছে তার।

~|25`|

– আজ প্রথমবারের মতো তোমাকে এই মসজিদ সাক্ষী করে বলছি!জীবনে যদি দ্বিতীয় বার আমাকে আর রিথিকে মাঝপথে ফেলে যাও কসম মরে যাবো!
আমি সম্পূর্ণ ভেংগে পড়েছি সোহাগ যখন তুমি আমাদেরকে তোমার জীবনের খাতা থেকে মুছে ফেলে ছিলে কারন আমাদের নামদুটো তুমি পেন্সিল দিয়ে লিখেছিলে যার দরুন মুছেও ফেলেছো কিন্তু এবার যদি নাম লেখো তাহলে কলমটা দিয়েই লিখো যাতে কখনো না মুছতে পারো।ছিড়েঁ ফেলা অবধি!(অশ্রুশিক্ত চোখে বলল নিরা)

নিরার কথা শুনে মুচকি হাসি দিলো এবং সযতনে নিরাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলে উঠলো।

– কথাদিচ্ছি কখনোই আর তোমাকে ছেড়ে যাবো না একা করে দিবো না এই জীবনের মাঝপথে!(মুচকি হেসে)

নিরা সোহাগের কথা শুনে কিছু বলল না চুপচাপ সোহাগের বুকের সাথে লেপ্টে রইলো।

– রিথি কোথায়!

– বাড়িতে চলো বাড়ি যাওয়া যাক জানো রিথি না মাঝে মাঝে তোমার কথা ভেবে কাদেঁ খুব কাদেঁ তখন
আমার এতটা অসহায় মনে হয় জেনো দম বন্ধ করে মরে যাই তো এই অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।(অসহায় কন্ঠে)

সোহাগ প্রতিত্তুরে আবারো মুচকি হাসি দিয়ে বলল।
– চলো রিথির কাছে যাওয়া যাক আর সত্যি বলছি আর কখনো তোমাদের কস্ট,কাদঁতে দিবো না।(মুচকি হেসে)

নিরা আর সোহাগ চলে গেলো বাড়ির উদ্দেশ্যে এমন একটা উদ্দেশ্যেতে যেখানে তাদের ছোট্ট একটা ফ্যামিলি হবে।
যেখানে থাকবে নিরা,সোহাগ,রিথি আর ..।

~|26`|

চৌধুরি পরিবারে একদিকে খুশি আরেকদিকে শোক লেগেছে।
সবেমাত্র টিভি থেকে জানতে পেরেছে পাশের একটু নতুন কম্লেক্স তৈরির জায়গায় দুটো মৃত বডি পাওয়া একটা মেয়ের বডি আরেকটা ছেলের বডি।
চেহারা হালকা বোঝা যাচ্ছে সাথে মেয়েটার পার্স থেকে লাস্ট নম্বর সেহরিশ চৌধুরির ছিলো।
এতেই বোঝা যায় ছেলে,মেয়ে দুটোই চৌধুরি পরিবারের সাথে কন্ট্রাক্টে ছিলো।পুলিশ সেই অনুযায়ী চৌধুরি বাড়িতে এতে হানা দেয়।

– মি. সেহরিশ চৌধুরি কোথায়??(গম্ভীর কন্ঠে)

মি. আজমীন নিজের নাতনী অর্থাৎ রিশমির সাথে ঘোড়া ঘোড়া খেলছিলেন।অতঃপর পুলিশ আসতে দেখে তিনি পিঠ থেকে রিশমিকে নামিয়ে সঠান হয়ে দাড়াঁন।এবং ভ্রু কুচঁকে সন্দেহের কন্ঠে বলে উঠলেন।

– সেহরিশ বাড়িতে নেই তবে আপনারা ওকে কিজন্যে খুজঁছেন?(সন্দিহান ভ্রু যুগল কুচঁকে)

পুলিশ অফিসার সঠান হয়ে বলল।
– পাশেই নতুন কম্লেক্স তৈরির স্থানে আমরা দুটো মৃত লাশ পেয়েছি বোঝাই যাচ্ছে লাশ দুটো ছয় তলা উপর থেকে পড়েছে।অনেকটাই থেতলে গেছে তবুও চেহারা হালকা বোঝা যাচ্ছে সাথে মৃত মেয়েটার লাশের পার্সের ফোন থেকে লাস্ট নম্ব আপনার ছেলের নম্বর ছিলো?এতেই বোঝা যায় কিছুনা কিছু সম্পর্ক আপনার ছেলের সাথে ছিলো!

পুলিশ অফিসারের কথা শুনে কিছুটা হয়তো আচঁ করতে পারলেন মি. আজমীন ছেলে-মেয়ের লাশ।লাস্ট নম্বর সেহরিশের।
মি. আজমীন চিন্তিত স্বরে বললেন।

– অফিসার আমি কি সেই লাশ দুটোকে দেখতে পারি।(করুন গলায়)

মি. আজমীনের কথায় পুলিশ অফিসার নিজের ফোন বের করেন।আর কিছু জিনিস পত্রও বের করেন।
মি. আজমীন জিনিসপত্র গুলো দেখে কিছুটা আচঁ করেই ফেলেন।যে নিশ্চয় এটা অর্ণা,ইফাজ ছাড়া আর কেউ হতেই পারেমা।
অফিসার কিছুক্ষন আগে লাশ দুটোর কয়েকটা পিক তুলে নিয়েছেন।
সেটা বের করে মি. আজমীনকে দেখালেন।
ছবি দুটোর দিকে তাকাতেই আতঁকে উঠলেন মি. আজমীন।এতো সত্যিই অর্ণা আর ইফাজ।
মি. আজমীন শুকনো ঢোক গিললেন।
ওনার দাড়াতেও কস্ট হচ্ছে ইফাজ আর অর্ণা যতই ভুল করুক না কেনো।
সবসময় সেহরিশ,ইফাজ,অর্ণাকে নিজের ছেলে-মেয়ে’রই মতো সমান চোখে দেখেছেন।
এদিকে মি. আজমীনের চেচাঁমেচিঁতে বাড়ির সকল লোক ড্রয়িংরুমে জড়ো হলেন।

~|27`|

নিরাকে পেছনে থেকে জরিয়ে কাধেঁ থুতঁনি রেখে দাড়িয়ে আছে সোহাগ।নিরা সেদিকে মন না দিয়ে এক মনে জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছে।
ক্ষণে ক্ষণে অহমি,রিশমির কথা মনে পড়ছে।যখন ওর মাথা গোজার ঠাই ছিলো না তখন অহমিই ওকে বোনের জায়গা সাথে থাকার ঠাই দিয়েছিলো।
অভিমান! সোহাগের প্রতি বড্ড অভিমান হচ্ছে নিরার।যতই মুখে বলুক মাফ করে দিয়েছে তবে অন্তরে কালো দাগ ঠিক রয়েছে যা সোহাগের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে।

নিরা সোহাগকে সরিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠলো।
– আ আব আমাকে ম্যামের কাছে যেতে হবে ম্যাম হসপিটালে আছে!তুমি রিথির খেয়াল রেখো(বলেই নিরা বেরিয়ে গেলো রুম থেকে)
নিরা যেতেই গভীর নিশ্বাস ত্যাগ করে নির্লিপ্ত চোখে নিরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।
শুকনো গলায় কিঞ্চিৎ হেসে বলে উঠলো।

– আমি জানি নিরু তুমি আমায় মন থেকে ক্ষমা করোনি!তাই আমার ছোঁয়াও তোমার অস্বস্তি কর লাগছে।জানি তোমার সাথে আমি অনেক অন্যায় করে ফেলেছি!
কিন্তু তা সংশোধন করতেই ছুটে তোমার কাছে এসেছি।(বলেই রিথির দিকে তাকালো‌ সোহাগ)

– ম্যাম রুম নম্বর 201 এর পেশেন্ট তো সেই কতক্ষন আগেই চলে গেছে প্রায় তিন চার ঘন্টার মতো হবে আপনি যাওয়ার পর পরই! কোন সেহরিশ চৌধুরি নামক ব্যাক্তি পেশেন্টলে রিলিজ করিয়ে নিয়ে গেছেন!

সেহরিশের নাম শুনে গভীর নিশ্বাস ছাড়লো নিরা।অবশেষে অহমি তার নিজ পাওনার কাছে ফিরে গেলো।নিরা নিস্প্রভ মুখে হসপিটালের বাহিরে চলে গেলো।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে