#প্রেমচতুর্দশী💛
[পর্ব-২]
~|4`|
– পেঙ্গুইনের বাচ্চা আমায় ব্যাড টার্চ করিস!আমার ফ্রেন্ডকে টিজ করিস আজ তোকে এমন পেটাবো না যে হাড়গোড় জোড়া লাগাতে কমপক্ষে ছয় মাস লাগবে!(রাগান্বিত গলায়)
বলেই ছেলেটার চুল ধরে ইচ্ছেমতো পেটাচ্ছে রিশমি।রাগে রিশমির মুখ লাল হয়ে এসেছে।রিশমির থেকে কিছু দূরে দাড়িয়ে কান্না করছে রিথি।
আশে-পাশে ইতিমধ্যে লোকজন জড় হয়ে গেছে।
রিশানের ভাবতেও অবাক লাগছে এইটুকুনি একটা পিচ্চি ১৪ বছরের একটা ছেলেকে পেটাচ্ছে।অবাক হয়ে রিশমির দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে রিশান।
.
.
ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফিরছিলো অহমি।রাস্তায় লোকজনের এত ভিড় দেখে ভ্রু কুচকে বিরক্ত হয়ে গাড়ির থেকে নেমে দাড়ালো।ব্যাপারটা কি বোঝার জন্য এগিয়ে গেলো অহমি।
লোকজনের কথাবার্তা শুনে কিছুটা আচঁ করতে পারলো অহমি।এখানে সম্ভবত কোন মেয়ে কোনো ছেলেকে পেটাচ্ছে।অহমি ভিড় এরিয়ে একটু এগোতেই থমকে গেলো।বড় বড় চোখ করে সামনে হাত করে তাকিয়ে রইলো।
মুখ হাত দিয়ে মনে মনে বলে উঠলো।
– রিশমি!
অহমি ছেলেটার অবস্থা বুঝে দ্রুত এগিয়ে রিশমিকে ছেলেটার থেকে ছাড়িয়ে আনলো।অহমির রিশমিকে ধরে রাখতেও কস্ট হচ্ছে।
অহমি বেশ ভালোই বুঝলো রিশমি অতিরিক্ত রেগে আছে।
– আহ্! রিশমি হচ্ছেটা কি এভাবে পাবলিকেলি এই ছেলেটাকে মারছো কেনো?(কড়া গলায়)
মাম্মা’র কথা কানে আসতেই নিজের রাগকে একটু থামালো রিশমি তবুও রাগে ফোস ফোস করতে করতে বলল।
– মাম্মা এই ছেলে আমায় ব্যাড টার্চ করেছে সাথে সাথে,রিথি ওড়না ধরে টান দিয়েছে ওকে তো আমি ছাড়বো না ইডিয়েট কোথাকারের?(রাগান্বিত গলায়)
অহমির একবার চারপাশে তাকিয়ে রিথি’র দিকে তাকালো আর ইশারা করলো গাড়িতে ওঠার জন্য রিথি কান্না করতে করতে গাড়িতে উঠে গেলো।
– সার্ট আপ রিশমি যাও গিয়ে গাড়িতে উঠে বসো!(রাগী গলায়)
রিশমি রাগান্বিত চোখে ছেলেটার দিকে তাকালো।ছেলেটা বুকে হাত দিয়ে ক্রমান্বয়ে কাশঁছে।
রিশমি রাগে ফোস ফোস করতে করতে গাড়িতে গিয়ে রিথির পাশে বসলো।
অহমি বড় একটা শ্বাস ফেলে গম্ভীর গলায় ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলো।
ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করে ছেলেটার হাত ধরিয়ে দিয়ে বললো।
– আজ হয়তো ভুল মেয়েকে টিজ করে ফেলেছো!ও ছোট হলে কি হয়েছে রাগটা নাকের ডগায় কজ অন্যায় সহ্য করতে পারে না।নেক্সট টাইম থেকে কোন মেয়েকে ডিস্টার্ব করার আগে আমার মেয়ের মারের কথা মনে রাখবে সময়টা তোমার এসব করার নয় পড়ালেখা করার সময়।(বলেই অহমি গাড়িতে গিয়ে বসলো)
~|5`|
বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে সেহরিশ।আজ কেনো জানি অহমিকে বড্ড অনুভব করেছিলো।
সেহরিশের এমন মনে হয়েছিলো যেনো অহমি তার পাশেই তাকে স্পর্শ করেছে।
অহমির কথা মনে পড়তেই চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো সেহরিশের।
– অহু আমি জানি না তুমি কেনো আমায় ছেড়ে চলে গেছো!গত ৭ টা বছর ধরে তোমার শূন্যতা আমার বড্ড পোড়াচ্ছে অহু!আজো তোমায় ভোলা আমার বড্ড দায় হয়ে পড়ছে!আজ তোমাকে আমি আমার অনেক কাছে অনুভব করেছিলাম অহু জেনো তুমি আপন হাতে আমায় স্পর্শ করেছো!(কথাটা বলতে না বলতে চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো সেহরিশের)
দরজা খোলার আওয়াজে চোখ মেলে তাকালো সেহরিশ।
– বড় ভাই কেমন আছিস এখন?(বাকাঁ হেসে)
সেহরিশ সামনে তাকালো দেখলো ইফাজ দাড়িয়ে বাকাঁ হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
সেহরিশ স্নান হেসে মিহি গলায় বলল।
– এখন ভালো আছি তুই কবে দেশে ফিরলি!(মিহি কন্ঠে)
ইফাজ বাকাঁ হেসে দরজার সাথে হেলান দিয়ে বলল।
– এইতো কাল রাতে তোর খবর শুনে দ্রুত দেশে ব্যাক করেছি!আচ্ছা বল আর কত নিজের লাইফটাকে একাকিত্ব অনুভব করাবি।তুই তোর লাইফে মুভ অন করছিস না কেনো।
দেখ আমি জানি অহু ভাবি যা করেছে তোকে ধোঁকা দিয়ে অন্য লোকের সাথে পালিয়ে গেছে বাট তার জন্যে তুই কেনো কস্ট পাবি চিল ইয়ার নিজের লাইফটাকে ইন্জয় কর??(বাকাঁ হেসে)
ইফাজের কথা শুনে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল সেহরিশ।
.
– ভালোবাসাকে কখনো ভোলা যায় না ইফাজ!তুই যেমন একটা মেয়েকে ভালোবাসতিস এখনো তাকে ভুলতে পারিস নি ঠিক তেমন আমিও অহুকে কখনোই ভুলতে পারবো না কারন আমরা সবটা জুড়েই শুধু অহু রয়েছে!সারাজীবন ওর জন্যে অপেক্ষা করবো শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত কারন আমার প্রেমময় প্রেমচতুর্দশী হলো অহু(চোখ বন্ধ করে)
সেহরিশের কথায় ইফাজ রাগে হাত মুঠো করে নিলো।দাঁতে দাঁতে চেপে মনে মনে বলে উঠলো।
– আলাদা তো করেই দিয়েছি গত ৭ বছর ধরে তবুও এর অহমির প্রতি প্রেম কমেনি!তবে চিন্তা করিস না সেহরিশ তুই কখনো চাইলেও অহমিকে পাবি না কারন তার আগে তোকেই আমি উপরে পাঠিয়ে দিবো!(মনে মনে বলেই বাকাঁ হাসলো ইফাজ)
~|6`|
.
– রিশমি তুমি নিজের রাগকে এতো প্রশ্রয় কেনো দেও তুমি জানো বয়সের তুলনায় একটু বেশি রাগী,জেদি তুমি!তুমি ভাবতে পারছো না পৃথিবীটা কতটা খারাপ এমন না হয় জেনো এই রাগ,জেদ টাই তোমার জন্য প্রনয় ঢেকে আনে?(রাগী গলায় বলল অহমি)
রিশমি আর রিথি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে অহমির সামনে।
– বাট মাম্ম..
– কোন কথা নয় যাও গিয়ে পড়তে বসো পরশু তোমার এক্সাম আছে ভুলে গেছো?আর হ্যাঁ আশাকরি তুমি আমার কথা বুঝতে পেরেছো! নাও ইউ গো টু ইউর রুম?(বলেই ধপ করে রাগের সাথে সোফায় বসে পড়লো অহমি)
রিশমি রাগে গম্ভীর হয়ে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো সাথে রিথিও মাথা নিচু করে চলে গেলো।
অহমি মাথা নিচু করে কপালে হাত দিয়ে নুইয়ে রয়েছে।রিশমি যে পথ ঘাটে এইরকম একটা পরিস্থিতি করে তুলবে কখনো ভাবতে পারেনি।
অহমি আর সেহরিশের পরিচয় দেওয়া যাক
( অহমি শিকদার। বয়স ২৫ পেশায় একজন নামকরা ডক্টর।অহমির এক মেয়ে রিশমি।অহমির বাবা ইশান শিকদার পেশায় একজন ব্যাংকের ম্যানেজার।মা রুম্পা শিকদার গৃহনী অহমিরা তিন বোন তিশা,ইশা আর অহমি।তাদের কোন ভাই নেই)
( সেহরিশ চৌধুরি।বয়স ২৯ পেশায় বাবার কোম্পানির সিইও।সেহরিশের বাবা মি,আজমীন চৌধুরি পেশায় একজ বিজনেস ম্যান।সেহরিশের মনিমা মিসেস নিতু গৃহনী।সেহরিশের একটা ছোট বোন আছে পৃথা এবার ইন্টার ফার্ষ্ট ইয়ারে বয়স ১৯।
সেহরিশের বাবারা দুজন।সেহরিশের ছোট কাকা মি. ইমরান চৌধুরি পেশায় একজন বিজনেস ম্যাম সেহরিশের কাকিমনি মিসেস.তরা পেশায় গৃহণী মি. ইমরানের একমাত্র ছেলে ইফাজ চৌধুরি)
এই হলো ওদের পরিচয়।
.
.
.
দুদিনপর,,
রাতে,
বেলকনির রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে আছে সেহরিশ।আকাশের দিকে আপনমনে তাকিয়ে আছে সেহরিশ।
চাদেঁর কাছে তার প্রেম তারা আছে।কালো আধাঁর মাখা আকাশের বুকে তার বড় উজ্জল চাদঁ আছে।
আর সেহরিশের মনের মধ্যে একরাশ বিষন্নতা,শূন্যতা রয়েছে।
– আর কত তুমি আমায় কস্ট দিবে অহু!তোমার শূন্যতা যে আমায় খুব পোড়ায়।গত ৭ বছর পুড়তে পুড়তে আজ আমি নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি অহু!আমি ভালো নেই অহু আমি সত্যিই ভালো নেই?তিল তিল করে আমি মরে যাচ্ছি অহু প্লিজ কাম ব্যাক টু মাই লাইফ!(বলতে বলতে সেহরিশের চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো)
~|7`|
ছাদের রেলিং ঘেষে দাড়িয়ে আছে অহমি।সেহরিশের কথা বড্ড মনে পড়ছে তার।বারবার সেহরিশের মুখ ভেসে উঠছে কল্পনায়।
শাড়িতে টান পড়ায় পিছু ঘুরে তাকায় অহমি।দেখে রিশমি দাড়িয়ে আছে।
স্নান হেসে রিশমিকে কোলে তুলে নিলো অহমি।
– মাম্মা তুমি কাদঁছো কেনো?পাপার কথা মনে পড়ছে তাইনা!আচ্ছা আকাশের এই তারা গুলোর মধ্যে পাপা কোনটা(গম্ভীর গলায়)
রিশমির কথা শুনে আকাশের দিকে তাকালো অহমি।অহমি পারছে না আজও মিথ্যা বলতে এত বছর রিশমিকে ভুল বলে এসেছে যে তার পাপা এই পৃথিবীতে নেই আকাশের স্টার হয়ে।
কিন্তু আজ কেনো জানি সেহরিশ আর নেই কথাটা বলতে কস্ট হচ্ছে অহমির।
চলবে,,
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)