#প্রেমচতুর্দশী💛
[পর্ব-১]
#Rubaita_Rimi(লেখিকা)
দীর্ঘ ৭ বছর পর প্রাক্তন হাসবেন্ডকে অপারেশন থিয়েটারে দেখে চমকে উঠলো অহমি।
বিস্ময়কর চোখে অপারেশন থিয়েটার রুমে থাকা দরজার কাচঁ ভেদ করে মুখে অক্সিজেন মার্ক্স পড়া নিথর ভাবে শুয়ে থাকা সেহরিশের দিকে তাকালো অহমি।দীর্ঘ সময়ের পর যে সেহরিশকে এভাবে দেখবে কখনো ভাবতে পারেনি অহমি।
সেহরিশের সুখের জন্যেই তো তাকে ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলো এক অন্য দুনিয়ায়।যেখানে না থাকবে সেহরিশ আর না থাকবে কোন কস্ট,দুঃখ যেখানে থাকবে একটু শান্তি পাওয়ার আশা আর একটা নতুন জীবন।যেথায় থাকবে অহমি,রিশমি সেথায় সেহরিশ নামক কেউ থাকবে না।
অহমির হাত পা প্রচুর রকম ভাবে কাপঁছে অপারেশন থিয়েটারের দিকে এগোনো কঠিন হয়ে পড়ছে অহমির।
কিন্তু যে করেই হোক আজ যে তাকে নিজের হাতে সেহরিশের অপারেশন করতে হবে।
এদিকে অপারেশন থিয়েটারের কিছুদূরেই দাড়িয়ে অহমির পরিবার আর সেহরিশের পরিবার।সকলের মুখে চিন্তার ছাপ মিসেস রিহিয়া কান্না করতে করতে একদম ভেংগে পড়েছেন।এত বছর ছেলেটা কস্ট পেয়ে এসেছে আর ,আজও কস্টই পেয়ে যাচ্ছে।
কাধেঁ কারো স্পর্শ পেতে বিদ্যুৎতের গতিতে চমকে উঠলো অহমি।চোখ দুটো,ঠোঁট দুটো সমান্বয়ে কাপঁছে তার।প্রতিনিয়ত ঘামছে সে।
এদিকে অহমিকে এভাবে রিয়েক্ট করতে দেখে অবাক হলো নিরা।কপালে ভাঁজ ফেলে বলে উঠলো।
– MAM are you okey?(কপালে ভাঁজ ফেলে)
নিরার কথায় ধ্যান ভাংলো অহমির।গায়ে থাকা সাদা এপ্রোনের পকেট থেকে একটা টিসু বের করে কপালের ঘাম মুছে নিলো অহমি।সাথে মুখে মার্ক্স পড়ে নিলো।কাপাঁ কাপাঁ গলায় নিরাকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলো।
– Yeah iam, iam okey nira lest’s go?ভিতরে যাওয়া যাক এমনিতেও পেশেন্টের অব অব অবস্থা ভালো না(বলেই অপারেশন থিয়েটারের সামনে অতশত লোককে এভোয়েড করে নিরাকে নিয়ে ভেতরে ডুকে গেলো অহমি)
সাথে সাথে অপারেশন থিরটারের লাল বাতি জ্বল জ্বল করে উঠলো।
দীর্ঘ ২ ঘন্টা পর,,
অপারেশন থিয়েটারের লাল লাইট অফ হয়ে গেলো পরমুহুর্তেই গ্রীন বাতি জ্বলে উঠলো।সাথে সাথে অপারেশন থিয়েটারের দরজা খুলে বেরিয়ে আসলো অহমি।
ক্লান্ত চোখে চারিপাশে চোখ বুলাতেই ভয়ে থমকে গেলো অহমি।কারন সামনেই তার আর সেহরিশের পরিবারের সকল সদস্য তার দিকেই একটু আশান্বিত চোখে অতি আগ্রহে তাকিয়ে আছে।নির্ঘাত অহমির মুখে মার্ক্স ছিলো।
সেটা দেখে গভীর নিশ্বাস ফেলে কাপাঁ কাপাঁ গলায় বলে উঠলো।
– সি ই ইজ আউট অফ ডেন্জার।এএ এন্ড কিছুক্ষন প পর ওনাকে বেডে সিফট করা হবে!(বলেই অহমি হনহনিয়ে তার কেবিনের দিকে চলে গেলো)
নিরা অহমিকে যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে আজকে অহমি একটু অন্যরকম ভাবেই আচরণ করছে।যা আর কখনো দৃশ্যমান হয়নি তার জীবনে।
নিরাও গভীর একটা শ্বাস ফেলে সকলের দিকে তাকিয়ে আশার একটা মুচকি হাসি দিয়ে অহমির পিছু পিছু চলে গেলো।
এদিকে মিসেস রুম্পা চিন্তিত ও ব্যাথিত গলায় বলে উঠলেন।
– হ্যাঁ গো আপা নিজেকে একটু সামলান ডাক্তার ম্যাম তো আশ্বাস দিলেন যে সেহরিশ বাবা’র কিচ্ছুটি হয়নি।সে একদম সুস্থ আছে আপনি আর অযথাই চিন্তা করবেন না চলুন সবাই খেয়ে নিন কেউ তো গত ২৪ ঘন্টা ধরে মুখে একটি ধানাও দেননি?(চিন্তিত ও ব্যাথিত গলায়)
মিসেস রুম্পার কথা শুনে সকলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মিসেস রিহিয়াকে নিয়ে সবাই বাহিরে খাবারের জন্য চলে গেলো।
~|2`|
– রিশমি বাবুই আর রাগ করে থেকো না মাম্মামের উপর দেখো বাবুই মাম্মামের আজ অনেক ইম্পোট্যার্ন্ট অপারেশন ছিলো তাই তোমার সাথে কথা বলতে ভুলে গেছি মাম্মা আচ্ছা রিশমি বাবুই আসার পথে তোমার জন্য এত্ত এত্ত চকলেট নিয়ে আসবো কেমন?(মুচকি হেসে)
এদিকে ফোনের অপাশে থেকে গম্ভীর গলার কিউট পিচ্চি মেয়ের কন্ঠ ভেশে আসলো
– মাম্মাম এখন আমার রাগ ভাংতে না পেরে চকলেটের লোভ এন্ড বিজি থাকার এক্সকিউজ দিচ্ছো।যাও তোমার সাথে আড়ি আড়ি আড়ি আর কথা বলবোনা?(টুট টুট টুট)
রিশমি গম্ভীর গলায় কথাটা বলেই ফোনটা কেটে দিলো।ফোন কাটার শব্দ পেয়ে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নিলো অহমি।
– যাহ্ বাবাহ্ কেটে দিলো উফফ এই মেয়েটাও না কল দিতে দেরি হলে রাগ,কল রিসিভ করতে দেরি হলে রাগ,তার কথামতো না চললে রাগ উফফ মাঝে মাঝে আমার ডাউট হয় ওর এত রাগ,জেদ কোথেক্কে হলো ঠিক একদম ওর পাপা,,,(বলতে গিয়ে থেমে গেলো অহমি চোখে হাজারো কস্ট ধরা দিলো)
চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে নিলেই।বা হাত দিয়ে চোখের জল মুছে নিলো অহমি আর শক্ত গলায় বলে উঠলো।
– না রিশমি একদম ওর পাপাইয়ের মতো হয়নি ওর আমার মেয়ে আমার মতোই হয়েছে।ওর কোন পাপা নেই?(বলতে বলতে অতীতে চলে গেলো অহমি)
________________________________
চারদিকে ছোট ছোট ক্যান্ডেলাইট দিয়ে সুন্দর করে পুরো ছাদ সাজানো হয়েছে সাথে রয়েছে ফেরিলাইট।ছাদের দিকে ঠিক মাঝখান বরাবর একটা সাদা বেড রাখা হয়েছে।চারদিকের লাইটের আলোয় সাদা বেডটাতে বেশ ভালোই একটা রঙিন আবরণ তৈরি হয়েছে।যা চোখের পাতায় মনোরম এক দৃশ্য আকাঁর মতো।
ঠিক বেডের মাঝখানেই পরিপাটি হয়ে বসে আছে অহমি।মনটা তার আজকে অন্নেক খুশি।অহমি পারছে না মন খুলে নাচঁতে আপাতত নাচঁলে সেহরিশের জন্য সাজঁটা নস্ট হবে বলে নাচঁতে পারছে না।
পাশে থেকে ফোনটা উঠিয়ে আনমনে মুচকি হেসে বলে উঠলো
– আজ প্রথমবারের মতো আমি মা হতে চলেছি সেহরিশ আর আপনি বাবা!আজকের দিনটাকে আমি অন্যরকম ভাবে সেলিব্রেট করতে চাই সেহরিশ।কখন আসবেন আপনি!(বলতে না বলতে অহমির ফোনে একটা মেসেজ আসলো)
~|3`|
– আমার অপ্রিয় সঙ্গি
অপ্রিয় বললাম কারনটা আমি আপনাকে মোটেও পছন্দ করিনা অহমি।কারন আপনাদের মতো ক্ষ্যাত,গাইঁয়া মেয়েদের আমি একদম দেখতে পারিনা।আপনি যতই পড়ালেখা জানুন না কেন কাজকর্ম চলাফেরা একদম অশিক্ষিতদের মতো আমি মাঝে মাঝে ভাবি আপনি পড়ালেখা জেনেও এভাবে চলাফেরা করেন কেন।আর জানেন আপনাদের গ্রামের মেয়েরা একদম সিলি টাইপ,এন্ড অসহ্যকর জানেন আপনাকে দেখলেই আমার রাগের সীমানা ছুঁয়ে আরও রাগটা বেড়ে যায় যখন আপনি আপনার চুলে ইডিয়েটদের মতো একগাদাঁ তেল দিয়ে দুই বেনুনি করেন তখন ঠিক আপনাকে আমার চোখের বিষ মনে হয়।নেহাৎ মনিমা আমায় দিব্বি দিয়ে বলেছিলো যে আপনার সাথে খারাপ ব্যাবহার না করতে তাই এতদিন চুপ ছিলাম বাট আজকে আর আপনাকে সহ্য করতে পারছি না কারন আমি আমার জীবনে পারফেক্ট জীবন সঙ্গি পেয়ে গেছি।আর এটাই ভালো হবে যে আপনি আমার রুমে রাখা বিছানার উপর ডিভোর্স পেপারে সাইন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান আর হ্যাঁ সেটাতে আমি আগেই সাইন করে দিয়েছি আর আপনি অনেকদূরে চলে যান যেখান পর্যন্ত আমি পৌঁছাতে পারবো না।
ইতি,সেহরিশ
মেসেজে টা পড়ে কান্নায় ভেংগে পড়লো অহমি।কখনো ভাবতে পারেনি সেহরিশ তার সাথে এমনটা করবে তাও এমন একটা দিনে যেদিনে সে তার চাঁদ,ভালোবাসা তাদের ভালোবাসার চিহ্নকে পেয়েছে সে।
অহমি এতদিন ভাবতো সেহরিশ তাকে মন থেকে ভালোবাসে কখনো ভাবেনি সেই ভালোবাসাটা নিছকই একটা মিথ্যা কেয়ার।যেটা দিব্বির উপর নির্ভরশীল ছিলো।
মেসেজটা পড়ে অহমি নিজেকে সেহরিশের সাথে মেলাতে লাগলো আসলেই তো সে কি আর সেহরিশ কি।
অহমি ধীর পায়ে রুমে গেলো ডিভোর্স পেপারটার দিকে একপলক তাকালো দেখলো সত্যিই সেহরিশ সেতে সাইন করে দিয়েছে। একবুক কান্না,কস্ট নিয়ে সাইন করে দিলো।সাথে ছোট্ট একটা চিঠি লিখে ডিভোর্স পেপারের ভাজেঁ রেখে সেটা টেবিলের উপর রেখে পুরো রুমের দিকে একবার চেয়ে নিলো।
কত সপ্ন,খুনশুটি,দুস্টমি,দুঃখ,খুশি ছিলো এই রুম এই বাড়ির সাথে।কিন্তু সেহরিশের খুশির জন্য আজ তাকে সব ছাড়তে হচ্ছে।
ভাবতেই তাচ্ছিল্যে হেসে বেরিয়ে এলো অহমি চৌধুরি বাড়ি থেকে।সাথে সাথে অহমির নামের পাশ থেকে চৌধুরি শব্দটা উঠে গেলো।অহমি শুধুই বর্তমানে অহমি শিকদার।
বাড়ি থেকে বেরিয়েই একবার পিছু ঘুরে বাড়িটার দিকে তাকালো রাত হওয়াতে নিস্তব্দ প্রহরীর রাজপ্রাসাদের মতো লাগছে বাড়িটাকে।অহমি চোখের জল মুছে ঠোঁটে হালকা হাসি ফুটিয়ে পেটে হাত দিয়ে বলে উঠলো।
– আমি গাইঁয়া,ক্ষ্যাত কিন্তু বাবুই পাখি বিশ্বাস করো কেউ তোকে এই কথা বলার সুযোগ দিবো না কখনো।তোকে সময়ের সাথে সাথে বেস্ট করে তুলবো কখনো তোকে কেউ ক্ষ্যাত বলবে সেটার সুযোগ দিবো না।(বলেই অহমি বাড়িটার দিকে একপলক তাকিয়ে ঘুরে হাটাঁ ধরলো)
_________
নিরার ডাকে অতীত থেকে বেরিয়ে এলো অহমি।চোখের কোণের জলটুকু মুছে নাক টেনে নিজেকে শান্ত করলো।
নিরা গলা খাকারি দিয়ে বলে উঠলো।
– ম্যাম আর ইউ ওকে আজ আপনি একটু ভিন্ন রকম আচরণ করছেন ইভেন লক্ষ্য করছি ওই পেশেন্টটার অপারেশন করতে গিয়ে আপনার হাত কাপঁছিলো যা এই প্রথম হয়ছে,বা দেখেছি।আর ম্যাম আপনি কাদঁছিলেন?
অহমি কি বলবে ভেবে না পেয়ে ইতস্তত বোধ করে বলে উঠলো।
– ওই রিশমির কথা মনে পড়ছিলো তা তাই আরকি,আব আব তুমি কি ক কিছু বলবে?
~|4`|
– ম্যাম আসলে পেশেন্টের মা,বাবা এন্ড রিলেটিভ’সরা আপনার সাথে কথা বলতে চান?
মুহুর্তেই অহমি দাড়িয়ে গেলো।যেই অতীতের থেকে এতদিন ছুটছিলো সেই অতীতই আজ তার এত সন্নিকটে অহমি ভয়ে ঘামতে লাগলো।সে আর সেহরিশ কিংবা পরিবারের সামনে বা সাথে মুখোমুখি হতে চায়না।কারন ৭ বছর আগে সেই পথটা সেহরিশ নিজে একটা ছোট্ট মেসেজে বন্ধ করে দিয়েছে।
.
চলবে,,