#প্রেমগুঞ্জন
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১
বিয়েবাড়িতে কানাঘুষা শুরু হয়ে গেছে। বউ নাকি পালিয়েছে। অনেকে তো এই ও বলছে যে একবার বড় বোনের কথা ভাবলো না। ওই বাসার বউ সে। এমন করে ভেগে গিয়ে নিজের পরিবারকে তো ছোট করলোই। নিজের বড় বোনের জন্য শশুর বাড়ির লোকের ক্ষোভ রেখে গেল।বিয়ের দিন নাকি সে তার আশিকের সঙ্গে পালালো।
কথাগুলো সবই কানে যাচ্ছিলো শাহরিয়ারের। বর সেজে একদম ফিটফাট হয়ে এসেছিলো সে তার প্রিয়তমাকে নিজের করে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু না আজ তার দেখা হলো প্রিয়তমাকে লালটুকটুকে বউ সাজে দেখতে। হুট করেই শাহরিয়ার উঠে দাড়ালো। গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল প্রিয়তমার ঠোঁট রুমটাতে।
দক্ষিণ পাশের ছোট রুমটা আজ বেশ অগোছালো হয়ে পড়ে আছে। বিছানায় ছড়িয়ে আছে লাল টুকটুকে শাড়িটা যেটা পড়ে নিজের প্রিয়তমাকে দেখার বেশ ইচ্ছা ছিলো শাহরিয়ার। গহনা সাজানোর জিনিস সবই ছড়িয়ে আছে ছোট বিছানাটায়।
শাহরিয়ার প্রাণ ভরে একটা নিশ্বাস টানলো। প্রিয়তমার গায়ের গন্ধ মো মো করছে পুরো ঘর জুড়ে। ধীর পায়ে সে এগিয়ে গেল বিছানার দিকে। আলতো হাতে হাত বুলিয়ে দিলো সবগুলো জিনিসে। খুব পছন্দ করে পছন্দের মানুষের জন্য নিজে কিনেছে সে। বুকে তীক্ষ্ণ ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার। চোখ দুটো জ্বলছে। শাহরিয়ার সবকিছু নিয়ে নিজের বুকে চেপে ধরলো। চোখ বুজে কিছুসময় বসে রইলো সে।
বেডসাইট টেবিলে রাখা হিয়ার চিঠিটা তুলে নিলো শাহরিয়ার। চিঠিতে লেখা আছে
**আমি বাধ্য হয়েই তোমাদের না জানিয়ে পালাতে হচ্ছে। বাবা তোমাকে সাহস করে বলতে পারিনি। আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি। তার সঙ্গেই আমি সারাজীবন থাকতে চাই। সবার কাছে আমি ক্ষমা চাইছি। আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিও। আমার পক্ষে একজনকে ভালোবেসে অন্যজনকে বিয়ে করা সম্ভব না। তোমরা আমার খোঁজ করোনা।
ইতি
তোমার অপ্রিয় মেয়ে
হিয়া**
চিঠিটাও বুকে জড়িয়ে নিলো শাহরিয়ার। একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো শাহরিয়ারের।
সে অগোছালো পায়ে রুম থেকে বেড়িয়ে সোজা গাড়িতে গিয়ে বসলো। বেশ ভাঙা সুরেই সে দম নিয়ে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বলল
-“রহিম চাচা বাসায় চলো।”
রহিমের আত্মা ছ্যাত করে উঠলো। ছোটবেলা থেকে শাহরিয়ারকে দেখছে সে। এমনটা অগোছালো কখনো দেখেনি। হাসিখুশি গোছালো ছেলেটি আজ এলোমেলো হয়ে গেছে শুধু ভালোবাসার জন্য। রহিম আবারও একপলক তাকালো শাহরিয়ারের দিকে। শাহরিয়ার বুকে শাড়ি আকড়ে চোখ বুজে সিটে হেলান দিয়ে আছে।
রহিম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
———————-
অন্যদিকে শাহরিয়ারের ভাই, ভাবি,মা,বাবা সবাই হাসপাতালে বসে আছে। হিয়ার বাবা স্ট্রোক করেছেন। আদরের ছোট মেয়েটার নামে এতো খারাপ কথা সে শুনতে পারেনি। তার উপর তার প্রাণপ্রিয় বড় মেয়ে হিমিশার সংসারের কি হবে। এতো টেনশন সে নিতে পারেনি।
শাহরিয়ারের বড় ভাই রণবীর অসহায় হয়ে পড়েছে। একদিকে আদরের ছোটভাই, প্রিয়তমার বাবার এতো বড় বিপদ, আবার হিয়া ছিলো তার ছোটবোনের মতো। সে এমনটা করতে পারে কল্পনাও করতে পারেনি। কিভাবে সবদিকে সামলাবে সে। অন্যদিকে তার মাও বেশ চটে আছে। সব রাগ হিমিশার উপর তুলতে চাইছেন। এই নিয়ে এতক্ষণে কম কথা শোনায়নি সে।
অন্যদিকে প্রিয় মানুষটার চোখে চোখের পানিও সহ্য হচ্ছেনা তার।
অসহায় দৃষ্টি বেশকিছু সময় চারপাশে তাকালো রণবীর। শাহরিয়ারের বন্ধু নিরবকে হিমিশাদের কাছে রেখে ওর বাবা মা আর শাহরিয়ারের আরেক বন্ধু শাদিকে নিয়ে সে বাড়ির দিকে রওনা হলো। ড্রাইভার ফোন দিয়ে জানিয়েছে যে শাহরিয়ার বাসায় ফিরেছে।
———————–
শাহরিয়ার বাসায় ফিরে টলমল পায়ে নিজের রুমে গেল। যত্ন সহকারে হিয়ার জিনিসগুলো বিছানার উপর রাখলো। সারা বিছানায় ছড়িয়ে নিজে তার পাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়লো। বিরবিরিয়ে বলতে লাগল
-“কোথায় হারিয়ে গেলে তুমি! আমি যে তোমাকে ছাড়া আর পারছিনা। দেখ না সবাই তোমাকে নিয়ে কি কি বলছে?”
পরপর কয়েকটা তপ্ত নিশ্বাস ত্যাগ করলো সে। চোখটা আজ খুব বেইমানি করছে শাহরিয়ারের সঙ্গে। অবাদ্ধ পানি গুলো গড়িয়ে পড়ছে চোখ বেয়ে। ভাঙা কন্ঠে আবারও সে বিরবির করে বলল
“নিজের ভালোবাসার উপর আমার বিশ্বাস আছে। আমার প্রিয়তমা কখনোই আমাকে ধোকা দিতে পারেনা। সবাইকে আমি প্রমাণ করে দিবো যে সবাই তোমরা ভুল।”
———————————-
রণবীর বাসায় ফিরে দেখলো বাসার সব সার্ভেন্ট একসঙ্গে দাড়িয়ে কানাঘুষা করছে। রণবীর ধমকে তাদের সরিয়ে দিলো। রণবীরের মা আয়েশা বেগম গম্ভীর মুখে নিজের ছেলের রুমে গেলেন। ওনার পিছনে ওনার হাসবেন্ড রেজাউল হকও গেলেন। রণবীর ও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেলো।
শাহরিয়ারের রুমে গিয়ে আয়েশা বেগম নিজের ছেলেকে অজ্ঞান হয়ে থাকতে দেখে অস্থির হয়ে পড়লেন। রণবীর কোনোমতে ওনাকে শান্ত ডাক্তারকে কল করলো।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার চলে এলেন। সবাই চিন্তিত চিত্তে তাকিয়ে রইলো। ডাক্তার শাহরিয়ারকে দেখে গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“ওনার পেসার টা ফল করেছে। হয় তো উনি অনেকটা চাপ নিয়েছেন। যার কারণে জ্ঞান হারিয়েছেন। ওনার ঘুমের প্রয়োজন। আমার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি। আপনারা ওনার খেয়াল রাখবেন। তেমন সিরিয়াস কিছু না। টেনশন করার কিছু নেই।”
রণবীর একটা সস্থির নিশ্বাস ছেড়ে শাদিকে ইশারায় ডাক্তারকে এগিয়ে দিতে বলল। শাদিও ডাক্তারকে এগিয়ে দিতে গেল।
রণবীর আয়েশা বেগমের কাধে হাত রেখে বলল
-“আম্মু তুমি এখন রুমে যাও। সারাদিন অনেক ধকল গেছে।”
আয়েশা বেগম অশ্রুসিক্ত চোখে বড় ছেলের দিকে তাকালো। রণবীরের বেশ খারাপ লাগল সেই দৃষ্টি। তবুও যতটা সম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক রাখলো।
#চলবে কি?