প্রিয়সীর_চিরকুট পর্বঃ ০২
– আবির খান
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আমি গম্ভীর হয়ে গেলাম। খানিকটা বিচলিত হয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি কালকের ঠিক একই জায়গায় সেই উনি মানে সেই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। আমিতো পুরো অবাক। আমি তার কাছে এগিয়ে যাচ্ছি আর আমার হৃদস্পন্দন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আমি ঠিক তার একটু কাছে যেতেই পরপর গুনে গুনে দুইটা হাঁচি দিয়ে ফেললাম। ঠান্ডাটা বেশ ভালো ভাবেই লেগেছে তাহলে। তারপর তার দিকে লজ্জাসিক্ত চাহনিতে তাকিয়ে আস্তে করে সরি বললাম। সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আর ঠিক গতকালকের মতো ঠোঁট বাকা করে হাসছে। আমার অসহ্য লাগছে বলে আমি হাঁটা শুরু করি কলেজের জন্য। কিন্তু হঠাৎ পিছনে থেকে উনি বলে উঠলো,
— এই যে শুনুন।
ডাকটা আমার পা দুটোকে থামিয়ে দেয়। আমি আস্তে করে পিছনে ঘুরে তার পানে তাকাই। সে আমার দিকে একটা রুমাল এগিয়ে দেয়। আমি নিতে অনেক মানা করলেও শেষমেশ আমার হাতে রুমালটা গুজেই দেয়। আর বলে,
— বৃষ্টিতে তো ভিজলেন। সর্দি লেগেছেতো। তাই হাঁচিটাও পিছু ছাড়ছে না।
হাতের ঘড়িটা নাড়াতে নাড়াতে বলল আর সেই বাকা হাসিটা আবার দিল। আর আমার ভাগ্যেটাও কি!! সাথে সাথেই আরেকটা হাঁচি আসে। আমি রুমালটা নাকে দিলাম। কি অপূর্ব সুবাস। মন মাতিয়ে যাচ্ছে। যেন কত মায়া জরিয়ে আছে এই রুমালে। রুমালটা মুখ থেকে সরিয়ে সামনে তাকিয়ে যেন আমি সক খাই। লোকটা কি ভূত নাকি। এভাবে গায়েব হয়ে গেলো। আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নাই। শুধু তার দেওয়া রুমালটা আমার হাতে আছে। রুমালটা ব্যাগে ভরে আবার হাঁটা শুরু করি কলেজের উদ্দেশ্যে। এরপর ক্লাস করে বাসায় এসে রুমালটা ধুয়ে সুন্দর করে সযত্নে রেখে দিলাম। কারণ দেখা হলে দিয়ে দিবো। এরপর একটু বিশ্রাম নিয়ে পড়তে বসলাম। পড়া শেষ হলে উঠে খেয়ে এসে ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুয়ে পরলাম। কিন্তু ঘুম আসছে না। শুধু তার কথাই মনে পরছে। লোকটা কত আজব৷ গতকাল বৃষ্টিতে ভিজলাম বলে আমার ঠান্ডা লেগেছে উনার কি করে মনে আছে?? আর বাকি রইলো আজ ওনার দাঁড়িয়ে থাকা। অপেক্ষাকৃত চাতকের মতো এমন ভাবে অপেক্ষা করছিল যেন আমার জন্যই দাঁড়িয়ে আছে৷ কেনো দাঁড়িয়ে ছিলো উনি?? নাহ আর ভাবতে পারছি না। এসব ফালতু কথা ভেবে লাভ নাই। তার চেয়ে ঘুমাই। এরপর ঘুমিয়ে পরি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সবার আগে রুমালটা ব্যাগে ভরে নেই। তারপর রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরি কলেজের উদ্দেশ্যে। আজ আর বাসের জন্য অপেক্ষা করিনি। সোজা হাঁটা শুরু করলাম সেই চেনা পথে। কিন্তু আজ আর উনি নেই সেইখানে। নিমিষেই মনে বিষন্নতা অার খারাপ লাগা এসে ভীড় জমায়৷ খুব খারাপ লাগলো তাকে না পেয়ে। কারণ রুমালটা যে আর দেওয়া হলো না। রুমালটা দেওয়ার জন্য আমি এতো উতালা হতাম না যদি তাতে লিখা না থাকতো,
– ” Wait for me forever.”
আর “R” দিয়ে অনেক ডিজাইন করা। হয়তো তার কোনো প্রিয় মানুষের। তাইতো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এতো ছটফট করছি। কিন্তু সেতো নেই।
এরপর দীর্ঘ ২৫ টি দিন কেঁটে গেলো। কিন্তু তার দেখা আর মিললো না। আমি সবসময় উনাকে খুঁজতাম রুমালটা দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাকে আজও পাইনি৷ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে জীবন যাপন করছি।
আজ একটু জলদিই কলেজ ছুটি হয়েছে। তাই গ্যালারিতে বসে আছি আমার বেস্টু রিমির সাথে৷ আমরা বিভিন্ন কথা বলছি। হঠাৎই একটা পিচ্চি মেয়ে এসে আমাকে ডাক দেয়। আমি ওর দিকে তাকাতেই ও একটা চিরকুট আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে একটা মন মুগ্ধকর হাসি দেয়৷ আমি ওর কাছ থেকে চিরকুট’টা নিতে সে দৌড়ে চলে যায়। আমি অবাক হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছি। পাশ থেকে বান্ধবী বলে উঠলো,
— কিরে এটা কি দিলো??
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আবার চিরকুট’টার দিকে তাকালাম। নীল কাগজের চিরকুট। আমি আস্তে করে খুললাম। তাতে লিখা,
– “প্রিয় মানুষটার কাছে প্রিয় জিনিসটা খুব যত্নে থাকে।”
চিরকুটটা পড়ে অনেক অবাক হলাম। এর অর্থ বুঝতে পারলাম না। জীবনে প্রথম কারো চিরকুট পেলাম। তাও আবার এই রহস্যময় ভাবে। জানি না কে দিয়েছে আর কেনই বা দিলো। সেদিনটা চিরকুট নিয়েই আমার কেঁটে গেলো।
পরদিন যথারীতি টিফিন ব্রেকে ক্লাসে বসে আছি। হঠাৎ আমার একটা বান্ধবী আমাকে বাইরে ডাক দিলে আমি ওর সাথে কথা বলতে চলে যাই। কথা শেষ করে আমরা আবার ক্লাসে চলে আসি। এরপর ক্লাস শেষ করে বাইরে এসে দেখি প্রচন্ড রোদ। তাই ব্যাগ থেকে ছাতাটা বের করে খুলতেই দেখি ছাতাতে একটা চিরকুট লাগানো। আমি চিরকুটটা নিয়ে খুলে পড়ে দেখি তাতে লিখা,
-“শিউলি ফুল খুব ভালোবাসেন তাইনা। আজ একবার বড় পুকুরের শিউলি ফুলের গাছের নিচে আসিয়েন।”
পরপর দুটি চিরকুট দেখে বেশ অবাক আর বিরক্ত হলাম। আজ এর একটা বিহিত করতেই হবে। তাই বাসায় যাওয়ার সময় সেই শিউলি ফুলের গাছের কাছে গেলাম। গিয়েতো আমি পুরো “থ”। কারণ পুকুরে শিউলি ফুল দিয়ে পরপর সাজিয়ে লিখা,
-” প্রিয়সী”
আমার এটা দেখে যে কি রাগ উঠলো না। আশেপাশে তাকিয়ে বেটাকে খুঁজছি। আজ পেলে খবর আছে। প্রিয়সী কি বুঝবে। কিন্তু কোথাও পেলাম না।
সেদিনের পর থেকে দীর্ঘ ১ টি মাস আরো কেঁটে যায় কিন্তু তার চিরকুট আর পাইনি। আজ বাইরে বসেছিলাম। হঠাৎ খেলাল করি কিছু শিউলি ফুল। আমি অস্থির হয়ে দৌড়ে সেগুলোর কাছে যাই। গিয়ে দেখি সেই চিরকুট। তাড়াতাড়ি চিরকুটটা খুলে পড়ি। তাতে লিখা,
-“প্রিয়সী, গোধূলি বিকেলে একটু শ্যাওলার ঘাটে আসবেন?”
চিরকুটটা পেয়ে আমি হা করে আছি। কারণ এতোটা দিন পর আবার সেই নীল কাগজের চিরকুট। কেন জানি না আজ খুব ইচ্ছে হচ্ছে এই নীল কাগজের চিরকুট দেওয়া মানুষটাকে একটি বার দেখতে। সত্যিই খুব ইচ্ছে হচ্ছে।
তাই আজ আর দুপুরে ঘুমালাম না। অপেক্ষা শুধু গোধূলি বিকেলের। মনটা খুব অস্থির হয়ে আছে। কি জানি কি হবে আজ। যাই হোক সূর্যমামা এলিয়ে পরেছে ওই মস্ত বড়ো বিল্ডিংয়ের পিছনে। আমিও আজ মনের মতো করে রেডি হয়ে বের হলাম।
আজ অনেক দিন পর বিকেলে বের হয়েছি। হাঁটতে হাঁটতে শ্যাওলার ঘাটে পৌঁছালাম। এখানে এসেতো আমার চক্ষুতো চড়ক গাছ। কারণ,
চলবে….
কেমন লেগেছে এই পর্বটি?? জানাবেন কিন্তু। সবার ভালো সাড়া চাই। সাথে থাকবেন সবসময়।