প্রিয়তমা পর্বঃ ০৪

0
1267

প্রিয়তমা পর্বঃ ০৪
লেখকঃ আবির খান

আমি দৌঁড়ে যেতে নিলে তমা আমাকে রীতিমতো ঝাপটে ধরে আর বলে,

~ এই কই যাও? বলো কি বলতে চাইছিলা?
– আরে কিছু না কিছু না।
~ উহুম কি জানি বলছো। শেষ করো। আমি শুনবো।
– আরেক দিন বলবো। প্লিজ জোর কইরো না।
~ সত্যি তো?
– কোটি কোটি সত্যি।
~ আচ্ছা ঠিক আছে।
– লাইব্রেরীতে যাবো চলো।
~ আচ্ছা। চলো।

আমি তমাকে নিয়ে লাইব্রেরীতে চলে আসি। এসে দুজনে মিলিয়ে অনেকক্ষণ পড়াশোনা করি। ও আমাকে বুঝায়, আমি ওকে বুঝাই। ও আমার পড়া ধরে, আমি ওর পড়া ধরি। আমরা সত্যিই খুব সুইট একটা কাপলের মতো ছিলাম। কিন্তু মজার কথা হলো আমরা রিলেশনে ছিলাম না। আমরা একে অপরকে ভালবাসি বলি নি। কিন্তু দুজনেই বুঝতাম আমরা একে অপরকে অনেক ভালবাসি। তমা আমাকে ছাড়া একমুহূর্তও ক্যাম্পাসে থাকে না। সারাদিন আমার সাথেই। এভাবে আমাদের একটি বছর চলে যায়। ফাস্ট ইয়ার থেকে সেকেন্ড ইয়ারে উঠি আমরা। ক্লাসে তমা আর আমি সবসময় ফাস্ট এবং সেকেন্ড হয়ে এসেছি। কারণ আমাদের বন্ডিং অনেক ভালো।

আমরা পড়াশোনা নিয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ভালবাসার দিকটায় বেশী গুরুত্ব দেই নি। কিন্তু আমাদের মাঝেই ভালবাসাটা ছিল। আমরা জীবন আর পড়াশোনাকে গুরুত্ব দিয়েছি এই একটা বছর। এখন আমাদের সেমিস্টার ব্রেক চলছে। আমরা দুজনই ফ্রী আর খুশী। একদিন,

– আচ্ছা তমা আমার সাথে তোমার এতো জমে কীভাবে?
~ কারণ তুমি মানুষটা ভালো। সবার কথা ভাবো। সবাইকে বুঝো। তাই এতো জমে।
– বুঝলাম। সবই যে আমার একার ক্রেডিট তা কিন্তু না। তোমারও অনেক ক্রেডিট আছে। তুমি আমার কথা শোনো। আমাকে সময় দেও। তোমার মিষ্টি হাসিটা আমাকে উপহার দেও। হ্যাঁ হ্যাঁ এই হাসিটা৷ বাহ! প্রাণ জুড়িয়ে যায় তোমার এই হাসিটা দেখলে। তোমার আর আমার কারণেই আমাদের অনেক জমে।
~ আচ্ছা বুঝলাম সব। তা এতো জমাজমি কেন? হুম?
– না মানে আমি চাচ্ছিলাম একটা রিলেশন করবো। তুমি যদি একটা মেয়ে খুঁজে দিতে ভালো দেখে।(তমাকে পরীক্ষা করার জন্য)

তমার উজ্জ্বল মুখখানা কালো আঁধার নেমে আসে মুহূর্তেই। ও আমার দিক থেকে মাথা নামিয়ে নিচে ঘাসের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বলে,

~ কেমন মেয়ে চাই তোমার?
– যার হাসিটা ঠিক তোমার মতো। যার নয়নজোড়া দেখলে শুধু হারিয়ে যেতে মন চাবে। যার চুলগুলো তোমার মতো ঘন কালো মেঘের মতো। যার ঠোঁট একদম তোমার মতো মিষ্টি। যার মুখখানার মায়ায় ভরপুর। একদম তোমার মতো একজনকে চাই।

তমার চোখ থেকে টপটপ করে অশ্রু ঝরছে। তা আড়াল করতেই তমা উঠে দাঁড়িয়ে কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলে,
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


~ আমি পেলে তোমাকে জানাবো।

বলেই ও যেতে নেয়। বুঝলাম ঔষধ এ কাজ হয়েছে। আমি দাঁড়িয়ে ওর হাতটা খপ করে ধরে ফেলি। ও আমার দিকে তাকায়। মায়াবী চোখটা অশ্রুতে টলমল করছে। আমি একটানে ওকে আমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরি। আশেপাশে কোথাও কেউ ছিল না। তমা আমার বুকের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলি,

– তোমাকে যে এভাবে জড়িয়ে ধরলাম কিছু বলবানা?
~ না। আমার ভালো লাগছে। আরো শক্ত করে ধরো।
– ওরে বাবা। এতো 5g নেটওয়ার্ক এর মেয়ে। কই ভাবলাম একটু ছাড়াছাড়ি করবা। তা না সে আরও আদর চাচ্ছে।
~ তো চাবো না। তুমি কি আমাকে বোকা ভাবো? তোমার সব গল্প পড়ি আমি। তুমি আমাকে কতটা ভালবাসো আমি জানি। আর একটু আগেও তুমি আমার সাথে দুষ্টামি করছো তাও জানি।

আমিতো পুরো টাসকি খেয়ে গেলাম। এতো সাংঘাতিক মেয়ে। সব জেনে বসে আছে। ইচ্ছা করে ধরা দেয় নি। আমি অবাক স্বরে বললাম,

– তাহলে চোখে পানি কেন তোমার?
~ জানি না। একটু কষ্ট লাগছে৷ তুমি আমাকে না চেয়ে অন্য কাউকে চাইছ তাই।
– তমা..
~ কিহ?
– বলবো?
~ বলো। (খুব লজ্জাসিক্ত হয়ে)
– বললাম কিন্তু।
~ না বললে এখন পিটাবো তোমাকে।
– ভালোবাসি প্রিয়তমা আমার।

তমার অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ দুজনার। মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখছি শুধু। ও কাঁদছে। আমারও চোখে পানি। আসলে মুহূর্তটা খুব বিশেষ। তমা আস্তে করে আমার বুকে মাথা রেখে বলে,

~ যতটা ভালবাসলে ভালবাসার পূর্ণতা হবে তার চেয়েও বেশী ভালবাসি তোমাকে। তোমাকে আমি ভালবাসি সেদিন থেকে যেদিন থেকে তোমার গল্প আমি পড়ি। সেদিন বাসে পরিচয় হওয়ার পর থেকে কেন আমি তোমার এতো ক্লোজ হয়েছি? কারণ আমি তোমাকে ভালবাসি। তোমার মনটা অনেক ভালো। তুমি জানো কীভাবে ভালবাসতে হয়। যা অনেকেই জানে না। ভালবাসা মানে যত্ন, ভালবাসা মানে একে অপরকে বোঝা, সম্মান করা আর খুব খুব ভালবাসা। তুমি শিখিয়েছ আমাকে তা। সত্যি অনেক ভালবাসি তোমাকে অনেক।

আমার মনে হচ্ছে আমি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবান একজন ব্যাক্তি। কারণ আমি তমাকে পেয়েছি। তমার মতো একজনকে পেয়েছি যে ভালবাসতে জানে। যে আমাকে বুঝে। আমার অব্যক্ত কথাগুলো তার মনের গহীনে চলে যায়। আমি তমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,

– জীবনটা সুন্দর করে দিলে। আমি তোমাকে সারাজীবনের জন্য চাই।
~ আমিও আবির।

আমি তমাকে ছেড়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

– আমাদের সেইম এইজ রিলেশন। অবশ্য বয়সে আমি তোমার দু বছরের বড়৷ কিন্তু ক্লাসে এক। সো আমাদের সামনে অনেক বড় বড় সমস্যা আসতে পারে। সেটা শেষ করার জন্যই আমি আমার পরিবারকে আর তুমি তোমার পরিবারকে সব বলবে। তাদের সম্মতিতে আমরা সামনে এগোবো।
~ যদি না মানে?
– অবশ্যই মানবে। না মানলে আমি মানাবো। আমরা তো আর লুকিয়ে কিছু করছি না। বড়দের জানালে আর সমস্যা হবে না। লাগলে আকদ করে ফেলবো। কিন্তু তাদের জানিয়ে আমরা সামনে আগাবো। সম্পর্কের শুরুতেই সব সমস্যা সমাধান করে নিলে সামনের সময়টা খুব ভালো যায়।
~ আচ্ছা তাই ই হবে। আবির তুমি আমার এক সুন্দর স্বপ্ন ছিলে। যা আজ সত্যি হলো। তোমার রঙে আমায় রঙিন করে দেও।
– দিলাম।

এরপর আমরা একটা ভালো সময় দেখে আমাদের পরিবারকে সব জানাই। আমার বাবা-মা আর তমার বাবা-মা দেখা করে। আমাদের একসাথে ভালো রেজাল্ট আমাদের সম্পর্কটাকে শেষ হওয়া থেকে বাঁচায়। বড়রা আমাদের সব কিছু মেনে নেয়৷ তবে শর্ত দেয় পড়াশোনার কোন ক্ষতি হলে সব শেষ। আমরা রাজি হই।

তমার বাবাঃ আমরা সত্যিই খুব খুশী হয়েছি যে তোমরা আমাদের সবকিছু জানিয়েছো। আজকালকার ছেলেমেয়েরা বাবা-মাকে না জানিয়ে কত কিছু করে ফেলে। সেদিক থেকে তোমরা আমাদের মন জয় করেছো। আর তোমাদের মিলেমিশে ভালো রেজাল্ট করা আমরা সবসময় প্রত্যাশা করলাম। আশা করি তা অক্ষুণ্ণ থাকবে।

আমিঃ ইনশাআল্লাহ থাকবে।

এরপর আমাদের আংটি পড়ানোও হয়ে যায়। আমরা যা চেয়েছিলাম সব কিছু সুন্দর ভাবেই হয়। আমরা পড়াশোনায় আবার ব্যস্ত হয়ে যাই। দুজন লাভ বার্ড মিলে ধুমছে ভালবাসা আর পড়াশোনা করতে থাকি। দীর্ঘ আরো ৪ টা বছর মোট ৫ বছর আমাদের সম্পর্কের কেটে যায়। পড়াশোনা শেষ করতে করতেই আমাদের প্রাইভেট ফার্মে চাকরি হয়ে যায় ভালো পদে। আমাদের ডেডিকেশন, কষ্ট, অপেক্ষা সবকিছু মিলিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎটাকে সুন্দর করে দিয়েছে। দুজন একই অফিসে চাকরি পেয়েছি। খুব খুশী আমরা।

এরপর যেটা বাকি ছিল, বিয়ে। সেটায় আর একমুহূর্ত দেরী করি নি। আমার বিয়ের জন্য এত্তো উত্তেজনা দেখে তমা হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। ও লজ্জা পাবে নাকি হাসবে নাকি কাঁদবে মেয়েটা কিচ্ছু বুঝে না। দুটি পরিবারের হাসিখুশী মুখ নিয়ে আমাদের বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়।

তমা বাসর ঘরে বসে আছে। আমিতো সেই খুশী। আমাকে কে ভিতরে পাঠাবে? আমি উল্টো সবাইকে বিদায় দিয়ে তাড়াতাড়ি তমার কাছে যাই। ভিতরে ঢুকে আস্তে করে দরজাটা দিয়ে তমার দিকে তাকাই। ও আমাকে সালাম দেয়। আমি উত্তর দি। ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে লাল বেনারসিতে ওকে। আমি মুচকি হাসছি ওর দিকে তাকিয়ে। খুব এক্সাইটেড হয়ে আছি। আমি আর কিছু না ভাবে লুঙ্গি ড্যান্স শুরু করি। আমার খুশী আর নাচ দেখে তমা হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমি ওর কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে ঘুরছি। তমা আমার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,

~ তুমি এত্তো খুশী কেন?
– বিয়া তো সবাই একটাই করে। আর বাসরতো একটাই তাইনা? একটু স্মরণীয় করছি। যাতে আমাদের সবসময় মনে থাকে। হাহা।

বলেই তমাকে নিয়ে বিছানাত ঠাস করে পড়ে গেলাম। আর রুমের লাইটাও কীভাবে যেন বন্ধ হয়ে গেল। এরপর যে কি হলো আর মনে নেই। হাহা।

– সমাপ্ত।

পুরো গল্পটি কেমন লেগেছে আপনাদের তা জানবেন কিন্তু। আমি অপেক্ষায় থাকবো আমার প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের মূল্যবান মন্তব্যের আশায়। ধন্যবাদ সবাইকে এতোটা সময় ধরে সাথে থাকার জন্য। সামনেও থাকবেন আশা করি। আর,

বাসায় থাকুন-আল্লাহর ইবাদত করুন-সবার জন্য দোয়া করুন।

© আবির খান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে