প্রিয়_প্রাণ পর্ব-৪৪+৪৫

0
137

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৪

বউ, বাচ্চা নিয়ে আরহাম হাজির শেখ বাড়ীতে। কাল আদনানে’র গায়ে হলুদ। শেখ বাড়ী তাই সেজেছে উজ্জ্বল লাল, নীল বাতি’তে। রংবেরঙের বাহার দেখে ছয় মাসের প্রাণ খুবই উচ্ছাসিত। তার মুখের হাসি আর হাত, পা নাড়ানো দেখেই বুঝা যাচ্ছে কতটা প্রাণবন্ত আপাতত সে। আরহাম থেকে একে একে সবাই কোলে নিলো ওকে। তোঁষা আরহামে’র পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। প্রাণ’কে এক পর্যায়ে যেই না ওর মা কোলে নিলো ওমনিই ফুঁসে উঠলো তোঁষা। আরহাম’কে ছেড়ে একপ্রকার ছিনিয়ে নিলো প্রাণ’কে ওর মায়ের কোল থেকে। রাগে কাঁপতে কাঁপতে দাঁত চেপে বললো,

— আমার বাবু ধরবে না।

মূহুর্তের ব্যাবধানে সবাই থমকে গেলো। হঠাৎ করে তোঁষা টেনে নেয়াতে প্রাণ ও ভয় পেয়ে কান্না জুড়ে জোরে। এতে যেন তোঁষা তেঁতেঁ উঠলো আরো। ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বললো,

— কেন কাঁদছিস? জানিস না এই মহিলা ভালো না? তোর মা’কে অনেক মে’রেছে। তোকেও মা’রবে।

ছোট্ট প্রাণ বুঝলো না মায়ের কথা। সে কেঁদে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। আরহাম দ্রততার সাথে এগিয়ে এসে কোনমতে ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে তোঁষা’কে টেনে রুমে নিয়ে গেলো। পেছনে অশ্রু চোখে তাকিয়ে রইলো তোঁষা’র মা। তুষার ধীর পায়ে মায়ের কাছে এগিয়ে এসে দাঁড়ালো। এক কাঁধে হাত রাখতেই তিনি বলে উঠলেন,

— ও কি আমায় মাফ করবে না?

— ওকে করেছিলে?

চমকে ছেলের চোখে তাকালেন উনি। তুষার মৃদু হাসলো। ধরফর করে উঠলো ওর মায়ের বুক। তুষার তাকে নিয়ে বসালো সোফায়। ওর মা ছলছল চোখ করে তাকিয়ে বললো,

— আমার ভুলের কি মাফ নেই?

— ভুল? সেটা পাপ ছিলো আম্মু। তুমি, আব্বু আর চাচ্চু মিলে করেছিলে সেই পাপ। আমার ছোট্ট পুতুলটাকে কতটা আঘাত দিয়েছিলে আম্মু। সত্যি টা আজও আরহাম’কে জানাই নি আমি। ও ডাক্তারি ছেড়ে দিয়েছে আম্মু। ভাবছে নিজের জ্ঞান এর অপব্যবহার করেছে ও অথচ সত্যি টা তো এখানে অর্ধ। সম্পূর্ণ সত্যি জানলে তোঁষা কেন কেউ তোমাকে মাফ করবে না।

হু হু করে কেঁদে উঠলো তোঁষা’র মা। রাগের বশে নিজের মেয়ের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটাই তার হাতে হয়েছে। তুষার মা’কে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। তথ্য রুমে একা। ওকে খাওয়াতে হবে এখন।
.
রুমে ঢুকেই দরজা লক করেছে আরহাম। না জানি তোঁষা কখন বের হয়ে কোন আকাম করে। এদিকে প্রাণ কেঁদেই যাচ্ছে। থামাথামির নাম নেই। আরহাম ভয়ে তোঁষা’কে বলতেও পারছে না একটু খাওয়াতে। ছেলেটা ফিডার মুখেই তুলছে না আজ। তোঁষা পা ছড়িয়ে বসা বিছানায়। রাগে লাল হওয়া মুখটা আপাতত কিছুটা স্থির। এক হাত তোঁষা’র পেটে। আরহাম সেদিকে খেয়াল করার সুযোগ পেলো না। প্রাণে’র মাত্রারিক্ত কান্না যখন কিছুতেই থামলো না তখন তোঁষা বিরক্ত হয়ে বললো,

— ও কাঁদছে না? দাও আমাকে। খাবে এখন। এটাও বুঝো না আবার বলো তোমার ছেলে!

আরহাম যেন দৌড়ে ছেলে নিয়ে হাজির হলো। তোঁষা তখনও বিরক্ত কিন্তু ছেলেকে দিয়ে আরহাম যখন ওকে শুয়িয়ে দিলো তখন শান্ত স্বরে তোঁষা বললো,

— তুমি শুবে না?

আরহাম নিঃশব্দে শুয়ে পরলো। এখনও শরীর কাঁপছে প্রাণ’টার কিন্তু কান্না নেই। সে আরামের সহিত মায়ের বুকে চোখ বুজে আছে।

_____________________

হলুদের অনুষ্ঠান জোরেসোরে শুরু হলো। চারদিকে চকচকে তকতকে একটা রমরমা ভাব৷ তোঁষা’কে তথ্য ধরে হলুদ একটা শাড়ী পরিয়ে সুন্দর করে সাজাতে বসালো। নিজেও এই ভারী শরীরে শাড়ী পেঁচালো তথ্য। তুষারের এই নিয়ে রাগারাগি’র অন্ত নেই। যদি বউটা শাড়ীতে পেঁচিয়ে পরে যায় তখন? যদি এই সুন্দর মুখটা দেখে নজর লেগে যায় তখন? কতশত ভাবনা তুষারের। এসব কি তথ্য বুঝে? মোটেও বুঝে না৷ হাতে দুধ নিয়ে গোমড়া মুখে তা তথ্য’কে দিলো তুষার। তথ্য ও পাত্তা দিলো না৷ নিজের মতো খেয়ে গ্লাসটা সাইডে রেখে তোঁষা’কে বললো,

— রুমে যেতে পারবে? আরহাম ভাই রুমে।

— পারব আপি।

হাসিমুখে উত্তর দিলো তোঁষা। তবুও তুষার বোনের হাতটা ধরে গালে আরেক হাত দিয়ে বললো,

— অনেক সুন্দর লাগছে পুতুল।

তোঁষা হাসলো। তুষার বোনকে হাত ধরে তার রুমে দিয়ে পা বাড়ালো নিজের রুমে। বউটাকে বুঝাতে হবে। এত সুন্দর হয়ে চলাফেরা করা যাবে না পাছে নজর লাগছে?

তোঁষা রুমে ঢুকতেই ওকে দেখে থমকে গেলো আরহামে’র হাত। ছেলেকে ডায়াপার পড়াচ্ছিলো ও। আজ বহুমাস পর তোঁষাকে এভাবে শাড়ী পরা দেখলো। নেশাময় চোখে তাকিয়ে রইলো আরহাম৷ ছোট্ট প্রাণ ও টুকুর টুকুর করে মা’কে দেখে যাচ্ছে। আরহামে’র চোখে আজ ভিন্ন কিছু দেখা গেলো৷ কি দেখা গেলো বুঝা গেলো না। ছেলেটার টলমলে চোখ শুধু জানান দিলো সে কৃতজ্ঞ। সে ব্যাথিত। সে অনুতপ্ত নিজের বিষাক্ত ভালোবাসা নিয়ে।
তোঁষা বিড়াল পায়ে এগিয়ে এলো। আস্তে করে হাত রাখলো আরহামে’র পিঠে। আরহাম হুট করে তোঁষার কোমড় জড়িয়ে ধরে। পেটে মুখ গুজে কেঁদে ফেলে ফুপিয়ে।
তোঁষা ওর প্রাণের চুলের ভাজে আঙুল চালনা করলো। ডাকলো মৃদু শব্দে,

— এই আরহাম ভাই?

ঝট করে সরে গেলো আরহাম। এই ডাকটা ওর কলিজাটা এফার ওফার করে দিলো মুহুর্তে। ছোট্ট প্রাণটাও উউ আআ করে তার কথা বলতে চাইলো। তোঁষা একটু ঝুঁকে আরহামে’র কপালে চুমু খেলো। ফিসফিস করে বললো,

— আজ রাতে ভালোবাসব তোমাকে।

কথাটা বলেই ছেলেকে ডায়াপার পরালো তোঁষা।
.
বেশ সুন্দর ভাবে হলুদের অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হলো। তোঁষা একদম স্বাভাবিক ছিলো কিন্তু কোন ভাবেই আদনান’কে হলুদ ছোঁয়াতে চাইলো না। আরহাম আর তুষার বাদে অন্য কোন পুরুষের সামনেই তোঁষা থাকতে বিরক্ত তা আরহাম স্পর্শ দেখতে পেয়েছিলো।

প্রাণ ঘুমিয়েছে ঘন্টা খানিক হলো। আজ অনেক আনন্দ করেছে সে বুঝা গিয়েছে। ক্লান্ত হয়ে ঘুমাচ্ছে সে। ইদানীং আবার বায়না ও বেড়েছে। মা’কে ছাড়া চলে না৷ তোঁষা’র কাছ থেকে ওকে নিয়ে ছোট্ট দোলনাতে রাখলো আরহাম৷

আরহাম এক লাফে বিছানায় উঠলো। তোঁষা কপাল কুঁচকে বললো,

— কিহ?

— প্রাণ ঘুমিয়ে গিয়েছে।

— হু। মাত্র ই ঘুমালো।

— তুই না বলেছিলি রাতে ভালোবাসবি?

বলেই বাঁকা হাসলো আরহাম৷ তোঁষা হাই তুলে বললো,

— ঘুম পাচ্ছে।

— শোন না।

— ঘুমাব।

— এই প্রাণ?

— প্রাণ ঘুম।

এবারে আরহাম ধৈর্য হারা হলো। হামলে পড়লো কিছুটা তোঁষার উপর। তোঁষা ভরকে গিয়ে যেই না চিৎকার করবে ওমনিই ওকে থামিয়ে দিলো আরহাম। ছেলে উঠলে এখন সব যাবে। আমও যাবে ছালা ও যাবে। তোঁষা দুষ্ট হাসলো। আরহাম টেবিল ল্যাম্পটা অফ করে বললো,

— এখন ঘুমিয়ে দেখা।

— দেখাবই তো।

— দেখা?

— কি দেখাব?

— তাও ঠিক সবই দেখা আমার।

তোঁষা কামড়ে ধরলো আরহাম’কে। থামিয়ে দিলো অসভ্য কথা। দুজন ভালোবাসা দেয়া শুরু করলো দুজনকে। একে একে হারালো দুজন ভালোবাসার মানুষ তাদের সুখের রাজ্যে।
.
বেশ সুন্দর ভাবেই কাটলো আদনানের বিয়ে। নতুন বউ’কে রুমে দিয়ে মাত্র ই সবাই যার যার রুমে গেলো তখনই গগন বিদারী চিৎকার করে উঠে তথ্য। এক সময়ের আর্মি ম্যান তুষার ছোট্ট বাচ্চার মতো আচরণ শুরু করলো। তোঁষা’কে নিজের মায়ের কাছে রেখে আরহাম সহ বাসর ছেড়ে আদনান ছুটলো হাসপাতালে।

সকলকে চিন্তামুক্ত করে ছোট্ট একটা পরি এলো তথ্য তুষারের ঘরে। তুষার নিজের মেয়েকে কোলে নিবে না৷ কিছুতেই না। তার শক্ত হাতে নাকি মেয়ে ব্যাথা পাবে অগত্যা তথ্য ক্লান্ত দেহেই রেগে বললো,

— আমার মেয়ে আমাকে দাও। কোনদিন যাতে আমার মেয়ে ধরতে না আসে এই লোক।

তড়িৎ বেগে মেয়েকে কোলে তুললো তুষার। ওর আচরণে হাসির রোল পরলো হসপিটালের কক্ষতে।

#চলবে…..

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৫

প্রাণ কিছুটা হামাগুড়ি দিয়ে ঘুমন্ত প্রিয়মের কাছে এলো। ছয়মাসের প্রিয়ম হাত পা ছড়িয়ে ঘুমে কাতুর। প্রাণ দেখলো ওকে। প্রিয়মের লালা গোলাপি গালটাতে ছোট্ট একটা মশা বসা। প্রাণ টুকুর টুকুর করে দেখলো ওটা৷ একটু পরই প্রিয়ম কেঁদে উঠলো উহু উহু করে। এরমানে মশাটা কামড় দিয়েছে। ছোট্ট প্রাণ বুঝলো না সেটা। সে শুধু বুঝলো তার প্রিয় কাঁদছে। উবুর হয়ে পরলো ও প্রিয়মের উপর। গালে লাল দাগটাতে মুখ লাগিয়ে আদর করে দিতে চাইলো। মুখে শব্দ করে ডাকতে লাগলো,

— বাব্বাহ।

বারান্দায় ছিলো আরহাম। ছেলের শব্দ পেতেই দ্রত ছুটে এলো রুমে। এসেই দেখলো একদিকে প্রিয়ম কাঁদছে অন্যদিকে কাঁদছে প্রাণ। সবার আগে ছেলেকেই কোলে তুললো আরহাম। ওকে নিয়ে বসলো প্রিয়মের কাছে। ছোট্ট পরিটার বুকে অলতো চাপর দিতেই সে ঘুমালো সে ঘুমালো কিন্তু থামলো না প্রাণ। বাবার কোলেই ঠেস দিয়ে দাঁড়াতে চাইলো ও। আরহাম ওকে থামাতে আদর করতে করতে বললো,

— কি বাবা? এই যে আমি। কেন কাঁদে বাবা’র প্রাণ?

প্রাণ নড়তে নড়তে হাত বাড়িয়ে ঘুমন্ত প্রিয়ম’কে দেখালো। আরহাম দেখলো তবে বুঝলো না। সে ছেলের ফুলা গালদুটোতে থাকা পানি মুছে দিতে দিতে উঠে দাঁড়াতে নিলেই প্রাণ তেড়াবেড়া শুরু করলো। ও যাবে না। আরহাম ছাড়লো। বুঝার চেষ্টা করলো। ওমনিই দেখলো প্রিয়মের গালটায় লাল দাগ দেখা যাচ্ছে। বুঝাই যাচ্ছে মশা কামড়েছে। ছোট্ট প্রাণ তার প্রিয়মের গালে পুণরায় ঠোঁট ছুঁয়ে আদর করতে গিয়ে লালা লাগিয়ে দিলো। আরহাম ফিক করে হাসির শব্দ শুনেই দরজায় তাকালো। তোঁষা দাঁড়িয়ে হাসছে। আরহাম না বুঝে জিজ্ঞেস করলো,

— হাসছিস কেন?

— হাসা বারণ নাকি?

— ইদানীং প্রশ্নের উত্তরে প্রশ্ন করিস।

তোঁষা ভেতরে ঢুকে আলমারি খুলে কাপড় বের করতে করতে বললো,

— প্রাণের কাপড় খুলো। গোসল করাবে না?

— হু।

বলেই আরহাম ছেলেকে টেনে নিলো নিজের কাছে। প্রিয়মের গালের লালাটুকু মুছে দিলো নিজ হাতে। প্রাণ তখনও সোজা দাঁড়িয়ে নেই। ছোট্ট ছোট্ট নড়বড়ে তার পা জোড়া এখনও দাঁড়াতে সক্ষম হয় নি। টলমলে ছেলেকে এই দফায় কোলে তুললো তোঁষা। প্রাণ এতে খুশি হলো বেশ তা তার মুখটা দেখেই বুঝা গেলো। কেমন কেমন চোখ করে তাকিয়ে হাসে। মায়ের মতো তার ফুলা ফুলা গালদুটো তখন বেশ দেখায়। মুখে অস্পষ্ট উচ্চারণে শুনা গেলো,

— আআমামমমা।

— হ্যাঁ বাবা, কি বলবে মা’কে?

— মাহ্।

তোঁষা ওর ন্যাংটু ছেলেকে নিয়ে যেতে নিলেই আরহাম বললো,

— হাসলি কেন তখন বললি না?

তোঁষা মুখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে বললো,

— ইতিহাস পুণরাবৃত্তি হবে।

— মানে?

— তোমার ছেলে প্রিয়’কে হাতছাড়া করবে না দেখিও।

বলেই দুষ্ট হাসলো তোঁষা। আবারও বললো,

— বাপকা বেটা হবে।

এবার আরহাম ও হেসে ফেললো। এক বছরের ছেলে ওর কিন্তু তার প্রিয়মের প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা আছে। দেখা যায় সেটা। বুঝা যায়। এদের ভবিষ্যৎ কি হবে তা জানা নেই কিন্তু তথ্য প্রায় সময় বলে প্রিয়’র জন্য প্রাণ’কে জামাই হিসেবে পছন্দ তার।

হঠাৎ প্রিয়ম জেগে উঠাতে তোঁষা আরহামে’র হাতে ছেলেকে দিয়ে প্রিয়মকে কোলে তুলে নিলো। ওর কান্নার শব্দে এবার তথ্য ই এলো। তোঁষা তথ্য’কে দেখেই বললো,

— আমার মেয়ে তার মা’কে খুঁজছে।

তথ্য মেয়েকে কোলে তুলতে তুলতে বললো,

— শাশুড়ী থাকতে মা’কে কি দরকার ওর?

তোঁষা হেসে ফেললো শব্দ করে। তথ্য মেয়েকে নিয়ে রুমে চলে যেতেই শুনতে পেলো ঝাপঝাপির শব্দ। পানি পেলেই প্রাণ পা*গল হয়ে যায়। এর সাথে আবার যোগ দেয় আরহাম৷ তোঁষা গিয়ে দেখলো অলরেডি দুই বাপ বেটা ভিজে চপচপা। নেংটু প্রাণ বোলে বসে হাত পা ঝাপিয়ে তার মা’কে ডাকছে। আরহাম ও তোঁষা’কে দেখে বললো,

— তুঁষ এখানে আয়।

তোঁষা ভেতরে ঢুকলো। প্রাণ মা’কে দেখে উচ্ছাসিত হলো। ঝপাৎ ঝপাৎ শব্দ তুললো পানিতে।

____________________

— এখন কেঁদে কি হবে আম্মু? কিসের জন্য কাঁদছো?

— আমার তোঁষা…..

— তোমার তোঁষা? তোঁষা শুধু আরহামে’র। আর কারো না৷ ওকে জানে মে’রে দিলেও তো পারতে। কি দরকার ছিলো বাঁচিয়ে রাখার? এখন কে ধুঁকে ধুঁকে ম’রছে? তুমি? আমি? কেউ না৷ শুধু ম’রছে পুতুল। আর ওর সাথে জড়িত দুটো প্রাণ।

— আমি ইচ্ছে করে….

— না করেছিলাম।

— ওর ভালোর জন্য ই….

— তোমাদের স্বার্থের জন্য।

— তুষার?

— কি বলবে? বলো দোষ নেই তোমার? পুতুলের এই অবস্থার জন্য তুমি দায়ী না? বলো আম্মু?

মুখে হাত চেপে কেঁদে উঠলেন তোঁষা’র মা। তোঁষা’কে যবে থেকে আরহাম থেকে সরাতে মা’র দেয়া শুরু করলো তখনই একদিন রাগে তোঁষা’র মাথায় হাতে থাকা স্টিলের জগ দিয়ে আঘাত করে বসেন। মাথা চেপে ফ্লোরে বসে পরে তোঁষা। এতক্ষণ ধরে করা হাউমাউ তার কান্না থেমে যায় নিমিষেই। ঝাপসা চোখে তাকায় মায়ের দিকে। তখনও রাগী চোখে তাকিয়ে সে। তোষার হা করা মুখটা থেকে লালা গড়িয়ে মুখ লেপ্টে গেলো। টাইটুম্বুর চোখে তখন হতভম্ব ভাব।
ওর মায়ের রাগী মুখটাতেও ভয় জন্মেছিলো যখন প্রায় পাঁচ মিনিট বসে থাকা তোঁষা হেলে পরে ফ্লোরে।
সেদিন বাসায় কেউ ছিলো না। টের পায় নি কেউ৷ তুহিন জানলে হয়তো আদরের স্ত্রী’কে ভয়ংকর শাস্তি দিতেন। তোঁষার মা ওকে ডাক্তার দেখান। মাথায় দুটো সিলি দিয়ে বাসায় ও আনা হয়। তোঁষার সাথে তখন এমনিতেও বাবা-চাচা কথা বলে না। রাতে গা কাঁপিয়ে যখন জ্বর এলো তখন চাচি এসে ছিলো ওর কাছে। তার কাছেই সত্যি টা বলেছিলো তোঁষা।
সেই থেকে মাথা ব্যাথা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় তোঁষার মাঝে। যার জন্য খেয়েছে ছাড়া ছাড়া ঔষধ। সবটার ইফেক্ট পরে সোজা ওর মস্তিষ্কে। তুষার একথা জেনেছে বছর খানিক আগে। তাই সে আরহামকে সোজা কখনো দোষ দেয় নি।
আরহাম এখনও জানে না তোঁষার অবস্থা। ধীরে ধীরে ঠিক হচ্ছে তোঁষা অথচ তুষারের ভয় হয়৷ ভীষণ ভয় হয়। হারানোর ভয়। একটা পা*গল করা প্রেমিককে নিয়ে ভয়। এক মাসুম প্রাণের জন্য ভয়।

তুষার ওর মা’কে ছেড়ে রুম ত্যাগ করতেই আরহামে’র মুখোমুখি হলো। বুকে যেন এক ধাক্কা খেলো সজোরে। আরহামের প্রতিক্রিয়া কি হবে তা জানা ছিলো না ওর। তবে এই তিক্ত সত্যি জেনেও আরহাম কিছু বললো না। শুধু তুষারকে জড়িয়ে ধরলো। তুষার টের পেলো আরহাম কাঁপছে। আরহাম ওভাবে থেকেই বললো,

— ওর আমাকে ভালোবাসাটাই ভুল ছিলো ভাই। ওকে এত কেন মা’রতো? তাদের কি মায়া জাগত না এই মায়াবী মুখটা দেখে?

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে