#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪২
এলোমেলো দিনগুলো তাদের এবার বেশ ভালোই কাটলো। তথ্য’কে নিয়ে তুষার বের হলো আজ ঘুরতে। তাও কি না রিকশায়। প্রেম জিনিস টা কিন্তু অদ্ভুত। এটা বদলায় পরিবেশ ভেদে। এই যেমন সকালে নিজের বদ্ধদারে থাকা সিগ্ধতায় ঘেরা প্রেয়সী এক রুপে তার প্রেমিক’কে ঘায়েল করে তেমনই আবার রাতের উষ্ণতায় তাদের প্রেম ছড়ায় ভিন্ন সুবাস। মাখোমাখো প্রেমাতুর ক্লান্ত বিকেলে বাদাম হাতে প্রেমটা আবার একটু ভিন্ন। ঠিক তেমনই দুপুরে রোদে পুড়ে প্রেমিকার জন্য করা অপেক্ষাটা’র স্বাদ আরেকটু ভিন্ন। লং ড্রাইভে রাত বিলাস হোক বা হোক তিন চাকায় চালিত রিক্সা। প্রেমটা কিন্তু ভিন্ন অনুভূতি জাগাবে মনে। হাতে হাত ধরে পিচ ঢালা রাস্তায় যখন প্রেমিকা নগ্ন পাটে হাটবে তার পাশে পুরুষটা যখন আর মর্দানি ভুলে প্রিয় নারীর জুতা হাতে আরেকপাশ হতে তার হাতটা ধরে হাটে সেটার মিষ্টতা কিন্তু আবার একদমই আলাদা।
এই যে এখন তথ্য আর তুষার পাশাপাশি রিক্সায় চড়ে বসেছে সাথে তাদের ক্ষুদ্র সোনা অথচ ক্ষুদ্রটাকে এখনও হাতে পাওয়া হয় নি কিন্তু সে তো আছে। তার অস্তিত্বের জানান ই বা কম কিসে? তুষারের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে তার এক বাহু বুকে জড়িয়ে বসে আছে তথ্য। তুষার যত্নসহকারে তথ্য’কে আগলে বসেছে। বেছে বেছে এক বৃদ্ধ’র রিক্সায় উঠেছে ও। বৃদ্ধ মানুষ হেলিকপ্টার চালাবে না। সে চালাবে রিক্সা নাহলে যেই বেগে চালায় মনে হয় এখনই উড়িয়ে দিলো বুঝি।
ধীর গতিতে চলমান রিক্সাটাতে এক সুখী দম্পত্তি’র সুখের ছড়াছড়ি দেখে চোখ মুদে আসে। তাদের প্রেমময় ঘনঘটা সিন্ধতার চাদরে মুড়িয়ে রাখে এই জুগলকে।
আচমকা একটা উঁচু জায়গা পেরুতেই তুষার চকিত ভাবে তথ্য’কে আগলে নিলো। মৃদু গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
— চাচা ধীরে চালান।
মোটামুটি বৃদ্ধ লোকটা পান খাওয়া দাঁত বের করে হাসলেন। জানালেন,
— চিন্তা নাই বাপ। আমি দেইখাই চলামু৷ নতুন আব্বা হইবা? ভয় পাইয়ো না। যত্ন নিও। ছাওয়াল ভালো হইলেই হইলো।
তুষার কথা বাড়ালো না। তবে তথ্য অল্প হেসে বললো,
— দোয়া করবেন চাচা।
বৃদ্ধ মাথা নাড়িয়ে রিক্সায় টুংটাং শব্দ তুলে এগিয়ে গেলো। তুষার গম্ভীর মুখে তখনও বসা৷ কি হলো কে জানে?
তাদের রিক্সা থামলো প্রকৃতির আঁচলে ঢাকা এক জায়গায়৷ তথ্য’কে অতি সাবধানে ধরে নামালো তুষার। তুষার রিক্সা ওয়ালে পঞ্চাশ টাকার ভাড়া দিলো দুইশত টাকা’র এক নোট। বৃদ্ধ খুশি হয়ে কিছুক্ষণ দোয়া করে রাস্তা মাপলো। তুষারের হেলদুল নেই অথচ দোয়া পেয়ে তথ্য বহুত খুশি। তার চেহারা দেখেই সেটা স্পষ্ট।
তথ্য’র হাত ধরে দুইজন সামনে বাড়লো। গোল বাঁধাই করা জায়গাটায় বসলো দু’জন। তথ্য তুষারের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হলো?
— কই?
— কই মানে?
— কিছু না।
— এটা কেমন কথা? হুট করে কি হলো?
তথ্য’র কণ্ঠে বিরক্তি। তুষার ওর পানে তাকালো। তথ্য’র দিকে সোজা তাকিয়ে বললো,
— আমার একশটা বাচ্চা হলেও এতটাই কনসার্ন থাকব।
হা করে তাকিয়ে রইলো তথ্য। রিক্সা ওয়ালার সামান্য কথাতে এতটা রিএক্ট? মনে হচ্ছে কোন এক নিব্বা বসা তথ্য’র সামনে? এই লোক কি না এত বড় অফিসার ছিলো? তথ্য’র হা করা মুখ দেখে তুষার বললো,
— কি?
— একশত টা বাচ্চা?
— হ্যাঁ। তাতে কি?
— এত বাচ্চা কে পয়দা করবে?
তুষার এবার দুষ্ট হাসলো। ওর কানে মুখ নিয়ে বললো,
— তুুমি আর আমি।
________________
আরহাম একবার ভাবলো পুণরায় হসপিটালে জয়েন করবে কিন্তু বিবেকের তাড়নায় তা পারছে না৷ নিজের চিকিৎসা শিক্ষার ভুল ব্যাবহার করেছে সে নিজের সবচাইতে প্রিয় জনের উপর। এই ভুলটা তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। চাইলেও এই ভুল আজীবন সুধরাবে না। চোখের সামনে থাকা এহেন তোঁষাটা তার নিকট বড্ড কষ্টদায়ক। কিন্তু এভাবে বসে বসে থাকবেই বা কয়দিন? ডক্টর প্রফেশনটা তার এমনিতেও কখনো ততটা পছন্দের ছিলো না। ছাড়তেও মন সায় দেয় না।
দুধে বলক আসতেই তা নামিয়ে রাখলো আরহাম। আগে বাবু’র জন্য কিছুটা আলাদা করে রেখে দুই কাপ চা বানালো। তোঁষা’র আবার বিকেল হতেই চা লাগবে। চা হাতে রুমে ঢুকলো আরহাম। তোঁষা হাত পা মেলে বারান্দায়। রুমে’র ছোট্ট দোলনাটাতে হাত পা নাড়ছে বাবু’টা। আরহাম এসেই উঁকি দিয়ে হাসি মুখে ডাকলো,
— বাবা? এই যে আব্বু। আমার কলিজার টুকরো কি করছে?
মুখে হাত পুরে “আআআ আর পাপাপা” শব্দ করলো বাবুটা। সে তার বাবা’কে ভালো করেই চিনে। বাবা যে তাকে এতটা ভালোবাসে, আদর করে তা জানা ওর। তাই তো দুই হাত বাড়িয়ে দিলো বাবা’র দিকে। বলতে চাইলো কোলে নাও। আরহাম হেসে আগে বারান্দায় ট্রে টা রেখে এসে ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে করতে বারান্দায় গেলো। তোঁষা চুপচাপ বসে আকাশপানে তাকিয়ে। আরহাম এসে পাশের বাবু’কে রাখলো একদম নিজের কাছে। পুরোটা বারান্দার ফ্লোরে আর্টিফিশিয়াল ঘাস লাগানো। তারমধ্য এখন আরহাম বাচ্চার জন্য রেখেছে ছোট নরম একটা তোশক। বাচ্চাটা একবার তাকালো মায়ের দিকে। হাত পা ছুঁড়ে জানান দিলো সে খুশি। তোঁষা বেশ কিছু সময় তাকিয়ে থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতেই আরহাম তোঁষা’র পাশ ঘেঁষে বসলো। তোঁষা তবুও চুপ। আরহাম চা বাড়িয়ে দিতেই ও হাত বাড়িয়ে নিলো। এক চুমুক দিতেই আরহাম তা নিয়ে নিলো ওর হাত থেকে। তোঁষা’র কাপে চুমুক বসিয়ে নিজেরটা দিলো ওকে। তোঁষা তবুও কথা বললো না। এবার ফোঁস করে শ্বাস ছাড়লো আরহাম৷ তোঁষা’র পেছন থেকে কোমড়ের দিকে হাত রেখে বসা অবস্থায় ই আরেকটু কাছে টেনে নিলো। তোঁষা’র কাঁধের কাছে নাক নিয়ে লম্বা শ্বাস টেনে বললো,
— মুখ ফুলিয়ে আছিস কেন তুঁষ?
— কথা বলব না।
— এখন কে বললো কথা?
— আর বলব না।
— কেন?
— এটাও বলব না।
— দোষ টা শুনি।
— আমাকে আদর করো না।
— কিহ! তোকে আদর করি না তো কাকে করি?
— এটাকে।
আঙুল দিয়ে দেখালো তোঁষা। আরহামে’র খারাপ লাগলো। নিজের সন্তানকে এভাবে বলে কেউ? পরপর মনে পরলো বাস্তবতা। তোঁষা’র কাঁধে মাথা রেখে আরহাম বললো,
— তোকে যে কতটা ভালোবাসি তা কিভাবে বুঝাই বল তো।
— জানি না।
আরহাম ওকে নিজের দিকে ঘুরালো। তোঁষা’র দুই গালে হাত দিয়ে ধরে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,
— আমার প্রাণ, তোকে আমি আমার নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসি। ছোট্ট প্রাণ তো তোর আর আমার ই অংশ। আমাদের ভালোবাসা।
তোঁষা চুপ করে আরহামে’র বুকে মাথা রাখলো। আরহাম ওর চুল নেড়ে দিয়ে বললো,
— ওকে কোলে নিবি?
— না।
— কেন?
— যদি পরে যায়?
— পরবে না। আমি আছি না?
বলেই ছোট্ট প্রাণটাকে তুলে দিলো তোঁষা’র হাতে। তোঁষা’র কোলে উঠে বাবুটা টুকটুক করে মা’কে দেখতে লাগলো। তোঁষা একদম বুকে মিশিয়ে নিয়ে বসেছে যদি পরে যায়? বাবুটা ঠিক বাবা’র মতোই লোভী মনে হলো। তাই তো মায়ের কোলে এসেই বুকে মুখ ঘঁষে নিজের ক্ষুধা জানান দিলো।
#চলবে……
#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪৩
বাতাসে রুমের পর্দাগুলো দুলে দুলে যাচ্ছে। যেন জোয়ারে মাঝে উত্তাল নদীতে পাল তুলে আছড়ে পরা এক নৌকা। বাতাসের দাপট ঠিক আজ কতটা তা বাইশ তলার উপর থেকে ভালোই টের পাওয়া যাচ্ছে। তোঁষা’র অল্পসল্প শীত লাগাতে আলমারি খুলে একটা পাতলা চাদরে নিজেকে পেঁচিয়ে নিলো। আরহাম রুমে নেই। জরুরি কিছু কথা বলতে রুমের বাইরে গিয়েছে কারণ রুমে কথা বললে ওদের ছোট্ট সোনা উঠে যাবে। তোঁষা তাকালো বাবুটার দিকে। আফ্রাহাম শেখ প্রাণ গুটিয়ে ঘুমাচ্ছে। ভারী এই নামটা মোটেও মানায় না বাবুটাকে। তাই শেষমেষ কিভাবে জানি প্রাণ নামটা ও জুড়ে গেলো ওর নামের সাথে। গোলাপি ছোট্ট ঠোঁটদুটো যখন নড়াচড়া শুরু করলো তখন কিছুটা মায়া হলো তোঁষা’র। ঘুমের মাঝেই বাচ্চাটা মুখে শব্দ করছে। এগিয়ে গিয়ে তোঁষা দাঁড়ালো ওর কাছে। এক দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে আচমকা হাত বাড়ালো ওর দিকে।
আরহাম অনেকক্ষণ যাবৎ কথা বললো আদনানে’র সাথে। ওদের বিয়ের দিনগুলো শেখ বাড়ীতে থাকার অনুরোধ করলো। আরহাম নিজেও চাইছে কিন্তু তোঁষাটা মানবে কি না কে জানে? প্রাণ ও এখন অনেক ছোট। বাবা-মা ছাড়া এই পর্যন্ত তেমন কারো কাছে থাকে নি। তথ্য আর তুষারের কাছে যা একটু থেকেছে এই যা।
একটু ভেবে আরহাম জানালো,
— আচ্ছা তোকে পরে জানাচ্ছি। তুঁষ দেখি রাজি হয় কি না।
— তোমার সব কথাতেই ও রাজি থাকবে ভাই। বলেই দেখো।
ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে আরহাম বললো,
— ভয়টা অন্য কোথাও।
— কেউ কিছু বলবে না ভাই। এসো তুমি। আমরা সবাই অপেক্ষায় থাকব।
— রাখি।
— আচ্ছা।
কথা শেষ হওয়া নাগাদ আরহাম চোখ ডললো। এদিক ওদিক ঘাড় কাত করে আলস্য ভেঙে পা বাড়ালো রুমে। কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে তোঁষা। আরহাম একবার ডাকলো,
— তুঁষ ঘুমে?
তোঁষা উত্তর করলো না। আরহাম ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ ধুঁয়ে টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে বেরুলো। একপলক তাকালো ছেলের দোলনার দিকে। এগিয়ে গিয়ে দেখতেই চমকালো। ভরকালো। তড়িৎ হাতে বালিশ সরালো। না নেই। ওর ছোট্ট প্রাণ’টা এখানে নেই। ধ্বক করে উঠে আরহামে’র বুক। স্পষ্ট খেয়াল আছে এখানেই রেখে গিয়েছিলো ছেলেকে। ছয় মাসের ছেলে যাবে কোথায়? তোঁষা’কে ডাকতে লাগলো আরহাম,
— তুঁষ? এই তুঁষ। উঠ। প্রাণ কোথায়?
তোঁষা উঠলো না দেখে ভয়ে আরহাম তোঁষা’র মুখ করে কাঁথাটা সরিয়ে বললো,
— প্রাণ কোথায়?
— আমি কি জানি?
— তোঁষা!! কি করেছিস ওকে? বল! আমি রেখে যাই নি দোলনায়? কোথায় আমার ছেলে?
আরহামে’র ধমক খেয়ে তোঁষা মুখ কালো করে ফেললো। আস্তে করে বুক থেকে কাঁথাটা সরিয়ে দেখালো প্রাণ’কে। মায়ের বুকে ঘাপটি মে’রে ঘুমাচ্ছে সে। আরহামে’র কলিজায় পানি এলো যেন। মাত্র ই ওর কলিজা ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।
আরহাম তোঁষা’র বুকে থাকা ছেলেকে চুমু খেলো। অপরাধীর মতো তাকালো তোঁষা’র দিকে। তোঁষা কালো মুখেই বললো,
— নাও তোমার ছেলেকে।
— থাকুক।
— না।
— ঘুমাচ্ছে। দেখ।
— নাও ওকে।
— ঘুমাক তোর কাছে।
— নাও নাহয় এখনই ছুঁড়ে ফেলে দিব।
কথাটা শক্ত গলায় বলতেই আরহাম দ্রুত ছেলেকে কোলে তুলে নিলো। অল্প কেঁদে উঠলো প্রাণ। আরহাম পিঠ চাপড়ে কান্না থামিয়ে তোঁষা’র পাশেই শুয়িয়ে দিলো। নিজে বসলো পাশে। তোঁষা পুণরায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে বিরবির করলো,
— এমনিতে বলে আমাদের বাবু এখন বলে নিজের বাবু। তুঁষ আর কখনো কোলে নিবে না৷ আমার কোলে দিলে একদম ফেলে দিব৷ শয়তান৷
আরহাম সবটা শুনলো। তোঁষা’র অভিযোগ আর অভিমান শুনে খারাপ লাগা থেকে বেশি ভালো লাগলো। এরমানে তোঁষা ভাবে আফ্রাহাম ওদের সন্তান। তোঁষা ও তাহলে আফ্রাহামে’র প্রতি ভালোবাসা অনুভব করে। আরহামে’র চোখ ভরে উঠলো। বুক জুড়ে খেলে গেলো উত্থান পাত্থাল ঢেউ। ঠোঁটে দেখা মিললো এক সুখের হাসির ঝলকানি।
অতি সন্তপর্ণে ছেলেকে বুকের একপাশে নিয়ে তোঁষা’কে টেনে নিলো নিজের কাছে। তোঁষা আসবে না। ছুঁড়াছুঁড়ি করতে লাগলো ও। আরহাম ধীরে ওর হাত চেপে ফিসফিস করে বললো,
— বাবু উঠে যাবে।
— তাতে আমার কি?
— তোর ছেলে।
— তোমার।
— কার পেটে ছিলো?
— আমার।
— বাবু কার পেটে থাকে?
— মায়ের।
— তাহলে ওর মা কে?
— আমি।
নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেলো তোঁষা। আরহাম হাসছে। তোঁষা চোখ রাঙিয়ে তাকালো ওর দিকে। একপাশে ঘুমন্ত প্রাণে’র মিষ্টি দানা। অপরপাশটা খালি। তোঁষা’র চোখ রাঙানো মিলিয়ে গেলো আরহামে’র হাসির সামনে। এত সুন্দর কেন হাসে আরহাম ভাই? তোঁষা’র নরম মনটা যে রাগ পুষে রাখা শিখে নি। টলমলে চোখে আরহামে’র বুকে মাথা রাখলো ও। একসাথে তিনজনকে ঢেকে নিলো আরহাম৷ তোঁষা এক হাত রাখলো ওদের ছোট্ট প্রাণে’র উপর। ছেলের পিঠ’টা একদম নরম। তুলতুলে। তোঁষা হাসলো। ওর হাসিতে হাসলো আরহাম।
তোঁষা’র মাথায় হাত দিয়ে আরহাম ডাকলো,
— প্রাণ?
— হু।
— একটা কথা রাখবি?
— কি?
— ভালোবাসি তোকে।
— জানি তো।
— বল তাহলে কথাটা রাখবি?
— আচ্ছা।
— শেখ বাড়ীতে যেতে হবে সোনা৷
— ঐ মহিলাকে দেখতে মন চায় না আমার।
— চাচি’কে এভাবে বলিস না তুঁষ। মা হয়….
বাকিটা বলার আগেই তোঁষা চেঁচালো,
— সে আমার মা না।
তোঁষা’র কণ্ঠে অল্প কাঁপলো ঘুমন্ত প্রাণ৷ ঠোঁট কাঁপিয়ে সে বাবা’র বুকে নড়েচড়ে উঠলো। তোঁষা কি মনে করে ছেলেকে টেনে নিলো নিজের কাছে। টলমল চোখে মা’কে দেখে তার কান্না বাড়লো বৈ কমলো না। তোঁষা ওর বুকে আদর করে বললো,
— থাম নাহলে মা’রব।
আরহাম তাকে তাকে রইলো যদি সত্যি ই মে’রে বসে? তবে না এমনটা হলো না। তোঁষা খাওয়ালো তার ছেলেকে। একটা সুন্দর সংসারের সূচনা দেখতে পেলো আরহাম। নিজ হাতে ধ্বংস করা ধ্বংসস্তূপ থেকে এখন বেঁচে যাওয়া রাখ টোকাচ্ছে আরহাম৷ বলা তো যায় না যদি সুখের দেখা মিলে?
#চলবে……