প্রিয় প্রাণ পর্ব-৩৪+৩৫

0
361

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৪

চিঠি। এই জিনিসটা পুণরায় এলো তথ্য’র কাছে। তথ্য এখন কুমিল্লায় আছে। বেশি দিন নয়। এই তো সপ্তাহ তিন চার হবে। গুনে গুনে বললে তিন সপ্তাহ চার দিন। চিঠি এসেছে এখানকার ঠিকানায়। ক্লান্ত তথ্য রুমে ঢুকা মাত্র রিক্তা নামের মেয়েটা দিয়ে গেলো। চৌদ্দ বছর বয়সী এক মেয়ে। এখানকার ই কেয়ার টেকার এর মেয়ে। এই কয়েকদিনেই তথ্য’র ভালো লাগলো মেয়েটাকে। সারাক্ষণ “আপা ম্যাডাম” ডাকে। তথ্য কতবার বললো, এটা কেমন ডাক। না রিক্তা শুনবেই না। ও এই নামেই ডাকবে। ওর নাকি তথ্য’কে আপা আপা লাগে। কিন্তু শুধু আপা ডাকতে নাকি মন টানে না তাই এই অদ্ভুত ডাকের আবিষ্কার করলো ও।
তথ্য চিঠিটা খুলতেই সবার আগে অবাক হলো। অফিশিয়াল কিছু ডকুমেন্টস এর কপি পাঠানো এখানে। বি*স্ফোরিত নয়নে তথ্য তাকিয়েই রইলো। এগুলো তুষারের কাগজ। তুষার ই এই কপি পাঠিয়েছে। কাঁপা কাঁপা হাতে তথ্য চিঠিটা খুলতেই গোটা গোটা অক্ষরগুলো চোখে ভেসে উঠলো,

আমার প্রাণ,
কষ্ট পেলে? এই তুষার তোমাকে সারাটা জীবন কষ্ট ই দিয়ে গেলো। জানতাম তুমি বিশ্বাস করবে না তাই অফিশিয়াল কাগজের কপি পাঠিয়ে দিলাম। শিঘ্রই সামনাসামনি দেখা হবে। আমি আসব। অপেক্ষা করবে নাকি এই শূন্য তুষারকে আর কাছে টানবে না?

ব্যাস এতটুকু ই। এতটুকু লেখা পড়ে বসে রইলো তথ্য। ঠিক কতক্ষণ যে বসে রইলো খেয়াল নেই। রিক্তা’র ডাকে হুশে ফিরলো ও। রিক্ত জহুরি চোখে তাকিয়ে বললো,

— আপা ম্যাডাম কি হইলো? কথা কও না ক্যান?

— হ..হু। ওহ না। কিছু না। কিছু বলবি?

— কি বলুম? খাওন আইনা দাঁড়ায়া আছি। খায়া নাও। ঠান্ডা হইয়া গেলো তো।

রিক্তা চলে গেল। খাবারটা ঠিকই ঠান্ডা হয়ে গেলো কিন্তু তথ্য তা মুখে তুলতে পারলো না৷ এই অগোছালো সব কি আদৌ কোনদিন গোছালো হবে?

_________________

তোঁষা ইদানীং মানুষ সহ্য করতে পারে না। সেদিনের পর থেকে তুষার অনেকবার ই এলো এখানে। তোঁষা ভাইকে চিনতে পারে নি। আরহাম চেয়েও তখন নিজে অসুস্থ থাকার কারণে তোঁষার কোন ট্রিটমেন্ট শুরু করতে পারে নি৷ আজও তুষার ড্রয়িং রুমে বসা। আরহামে’র পা ঠিক হয়েছে অনেকটাই। ক্রেচ ছাড়াই খুড়িয়ে হাটতে পারছে। তোঁষা এখনও রুমের বাইরে আসে না। হাজার দরজা খোলা থাকলেও না। সে বেরুবে না। আরহাম ছাড়া কাউকে দেখলেই হাতের কাছে যা পাচ্ছে ছুঁড়ে মা’রছে। তুষার শুধু বোনকে দেখে যাচ্ছে। কিছু বলা বা করার মতো তার হাতে আছে বলে মনে হচ্ছে না। তবুও আজ একপ্রকার বুকে পাথর রেখে আরহামকে বললো,

— ওকে আস্যাইলেমে পাঠা আরু।

— কি বলো? মাথা ঠিক আছে!

অনেকটাই রেগে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আরহাম। তুষার ও দমলো না। ওর পুতুল ওকে চিনে না এই শোক কোথায় রাখবে তুষার? এতটা অসহায় শেষ কবে লেগেছিলো নিজেকে? জানা নেই। তোঁষার এই অবস্থা কোন ভাবেই মানতে পারছে না ও। তুষার দারাজ গলায় বললো,

— আমার মাথা বিগড়াস না আরহাম৷ মাইর একটা ও নিচে…..

— আমার প্রাণ থাকতে ওকে ছাড়ব না।

— ছাড়তে বলি নি তোকে। ওকে ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। আমার পুতুলকে মে-রে ফেলবি তুই।

হঠাৎ আরহামে’র কিছু হলো। উঠে টেবিল থেকে ফল কাটার ছুড়িটা নিয়ে তুষারের হাতে দিয়ে বললো,

— এটা দিয়ে আমাকে মা’রো এরপর তোঁষাকে নিয়ে চলে যাও।

তুষার আরহামে’র বুকে ধাক্কা মা’রতেই হঠাৎ একটা ফ্লাওয়ার বাস ওর বাহুতে লাগলো। ভালোই ব্যাথা লাগলো। দরজার ফাঁক দিয়ে ফোঁস ফোঁস করা তোঁষার লাল মুখটা দেখা যাচ্ছে। আরহাম তুষারের বাহু ধরে বিচলিত হলো। তোঁষা ভেতর থেকেই আরহামকে ডাকতে লাগালো। বারবার বলছে,

— প্রাণ চলে এসো। ওটা খারাপ লোক। তোমাকে মে’রেছে। ওকে আমি মে’রে দিব। চলে এসো।

তুষার হয়তো আজকের মতো অবাক কোনকালে হয় নি। আরহাম থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে শক্তপোক্ত মানুষটা চলে গেল। আরহাম হাজার পিছু ডাকলেও শুনলো না। দাঁড়ালো না একপল।
.
রাত গভীর নয়। এই তো বারোটা। তোঁষার গা কাঁপানো জ্বর। আরহামের বুকে মুখ দিয়ে গুনগুন শব্দে কাঁদছে সে। এদিকে অস্থির আরহাম। তোঁষাকে অনেক জোর করে উঠালো।

— প্রাণ উঠ একটাবার। একটু পানি ঢালব।

— শীত লাগে তো।

— কথা শুনবি না? একটু উঠ।

অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ওকে নিয়ে ওয়াশরুম ঢুকে আরহাম। বহু কষ্টে গোসল করাতেই তোঁষার কাপুনি বেড়ে গেলো। রুমে এনে জ্বরের মেডিসিন দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ঘুমালো তোঁষা।
আরহামে’র মাত্র ই বুঝি চোখটা লাগবে লাগবে ভাব। এমন সময় পেট মোচড়ে কান্না জুড়ে দিলো তোঁষা। শুধু ই বুঝি কান্না? ওর কান্নায় আরহামে’র ঘুম তো ছুটলোই সাথে লাইট জ্বালিয়ে তোঁষার দিকে তাকিয়ে নিজেই ঘেমে উঠলো। তোঁষা ফ্রক পরে থাকায় ওর ফর্সা পায়ে লাল তরল যেন রক্তজবার ন্যায় দেখালো। আরহামে’র গা গুলিয়ে উঠলো হঠাৎ করে। মনে হচ্ছে নিজেই বমি করে দিবে।

#চলবে…..

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩৫

“ভুল” দুই অক্ষর বিশিষ্ট এই কাজটা মানুষ ই করে। বলা হয়, “মানুষ মাত্র ই ভুল”। সুতরাং ভুল পশুপাখি দ্বারা নয় বরং মানুষের দ্বারা হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেই ভুলের ধরণ ও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। একজন সুস্থ মানুষের করা কাজটা চক্ষু দৃষ্টিতে ভুল হলেও একজন অসুস্থ মানুষের করা কাজটা কি আদোও ভুল বলা চলে? একটা অসুস্থ মস্তিষ্ক কি বুঝে তার কাজটা ভুল না সঠিক। আদোতেও ঠিক বা কতটা বেঠিক? কতটা জঘন্য অথবা ঠিক কতটা মারাত্মক? না সে বুঝে না। বুঝার কথা ও না। কিন্তু আরহামে’র অসুস্থ মস্তিষ্ক যেন থমকে গিয়েছে। যেন নিজের করা সবটা কাজ করায় গন্ডায় তার চোখের পাতায় ভেসে বেড়াচ্ছে। আরহাম খুব করে চাইছে অতীত টাকে হাতড়ে নিতে। মুঠোয় পুরে গোছগাছ করে দিতে অথচ তা সম্ভব না। কোনদিন ও না।

সামনেই তোঁষা বসা ওর। কাঁধ সমান চুলগুলোতে একটু আগেই দুটো বেনুনী করলো আরহাম। শেখ বাড়ীতে ওকে যে পুতুল ডাকে ডাকটা একদম স্বার্থক। তোঁষাটা একদম পুতুল পুতুল দেখতে। চিনির দলা আরহামে’র। নরম ভেজা তুলতুলে এক বস্তা তুলা। এই সুন্দর নরম তোঁষাটা আজ আগের মতো নেই। তার মানুষিক অবস্থা বিগড়ে গিয়েছে। এই তো তার আজকাল ক্ষুধা আর আরহাম বাদে কিছুই লাগে না। কিছুই চাই না। আরহাম কোন একদিন চেয়েছিলো তার তুঁষ শুধু তাকে মনে রাখবে। শুধু তার হয়ে থাকবে। আজ তোঁষা’র দশা তা ই আছে অথচ আরহাম মানতে পারছে না। কোন ভাবেই না। তার এখন আগের তোঁষাটাকে চাই। সেই ফুড়ফুড়ে ঝলমল করা তুঁষটা তার কোথায় হারালো? অন্ধকারে গহীনে ডুবে আজ একা আরহাম। কুল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

“অভিশাপ” জিনিসটা খুবই ভয়ংকর। হয়তো তোঁষার মা সেদিন মন থেকে অভিশাপ দেয় নি। হয়তো তোঁষার ভুল ছিলো না৷ হয়তো আরহামের দোষটা ও ছিলো না। কিন্তু অভিশাপ টা তো লেগে গেলো। এত বিশ্রী ভাবে লাগলো যে আরহাম নিঃস্ব হয়ে গেল। জীবনটা একদম উলোট পালোট করে রেখে গেলো। আরহাম তো চাইছিলো একটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। তোঁষা’র ট্রিটমেন্ট করে সবটা গুছাবে কিন্তু এই প্রকৃতি কিসের যে প্রতিশোধ নিলো আরহাম থেকে আরহামের বুঝে আসে না। অভিশাপ টা তোঁষার লাগলো নাকি আরহামের তা ও বুঝে আসে না।
তোঁষা কি আদৌ বুঝে ওর সাথে কি হলো? কে এলো আর কে গেলো?

এলোমেলো আরহাম গত এক মাস আগের সেই ভয়ানক রাতে ডুবলো। বিভৎস সেই রাতে সে তার জীবনের দিক হারালো।

সেদিন তোঁষার র*ক্ত দেখা মাত্র চমকায় আরহাম। তোঁষা যখন কান্নার প্রকোপে জ্ঞান হারালো তখন পা*গলের মতো ছুটলো আরহাম ওকে নিয়ে।
তীব্র জ্বর আর সেই জ্বরের মেডিসিনে আরহাম নিজের অস্তিত্ব হারা হলো। হায়! সেই কষ্ট আজও আরহাম কাউকে দেখাতে পারলো না। পা*গলের মতো লাজ লজ্জা ত্যাগ করে যখন রাতের আধারে হসপিটাল জুড়ে আরহাম চিৎকার জুড়ে দিয়ে কাঁদলো তখন আশেপাশের মানুষ তাকিয়ে রইলো। কেউ কি বুঝলো তার শোক? উহু কখনো বুঝলো না। বুঝবে না।
বাবা নামক এক সত্তা আরহামে’র বুকে তীব্র ভাবে হানা দিলো। আরহামে’র ছোট্ট এক অস্তিত্ব নিজের অস্তিত্বের জানান দিলো বিদায় নিয়ে। আরহাম না ম’রে গেলে ভালো হতো তা থেকে? এই খবর শুনে এখন কিভাবে বেঁচে আছে জানা নেই ওর। বুকে বারবার তার ঝড় উঠে। বাবা নামক ঝড়। মন চায় তখন নিজেকে খু’ন করতে। এই বুক ঝাঁঝড়া করে দিতে।
অথচ হসপিটালে তিনদিন থেকেও তোঁষার অনুভূতি কিছুই না। তার সামনে আরহাম পা’গলের মতো যখন কাঁদে তখন তোঁষা হুটহাট কাঁদে। তার মধ্যে অনুভূতি এখন আর অবশিষ্ট কিছুই বাকি নেই।

তুষার সহ পুরো পরিবার ছুটে এলেও তোঁষা কাউকে চিনতে পারলো না। ওর মা তোঁষার হাত দুটো ধরে চোখের পানি ছেড়ে মাফ চাইলো। বারবার বললেন,

— তোঁষা। মা আমি তোকে অভিশাপ দেই নি। বিশ্বাস কর দেই নি৷ মন থেকে একটা কথা ও বলি নি। মা’কে বিশ্বাস কর সোনা৷ আমাকে মাফ কর তোঁষা। আমার পাখি। তোঁষা কথা বল না৷ মায়ের দিকে তাকা।

তোঁষা চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেয়াতে ওর মা ছেড়ে দেয় ওকে। তুষার আরহামকে ধরে জোর করে তোঁষার কাছে নিয়ে আসে। আরহাম বলার বা করার মতো কিছু খুঁজে না পেলেও তোঁষা তার শেষ আশ্রয় খুঁজে তার প্রাণের মাঝে।

আরহাম এর বিশ দিন পরই তোঁষাকে নিয়ে শেখ বাড়ীতে যায়। তোঁষার ট্রিটমেন্টের জন্য এটা জরুরি। একা রেখে কিছুই করা যাবে না৷ কিন্তু পরিস্থিতি সেদিন একদম ই বদলে গেলো। দরজা মেলে তোঁষাকে দেখে ওর মা জড়িয়ে ধরতেই তোঁষা তাকে কামড়ে ধরে আরহামের পিছনে লুকালো। আরহাম হাজার বুঝালেও কাজ হয় নি। তোঁষা আরহামে’র কাছে লেপ্টে বারবার একই কথা বলছিলো,

— এখানে অনেক আলো প্রাণ৷ আমাদের বাসায় চলো।

দীর্ঘ দেড় বছর সেই রুমে থাকা তোঁষা কিছুতেই এই প্রকৃতির আলো সহ্য করতে পারলো না।
আরহাম ব্যার্থ হলো সেদিন আবারও। ফিরে এলো। এমন হাজার ও চেষ্টা চললো অথচ লাভ হচ্ছে না।

আজ তুষার আসবে। তোঁষাকে এসাইলেমে পাঠাবে। এছাড়া পথ তাদের সামনে নেই। আরহাম এতদিন জোর করে না বললেও এখন পথ খোলা নেই কোনো। কি করবে? কাকে বুঝাবে? কিন্তু শেষ একটা কাজ আজ আরহাম করবেই। যে করেই হোক সে তার তুঁষকে ভালো রাখবে। সুখে রাখবে। হোক না সেই সুখটা আরহাম ভাই নামক এক কলঙ্কিত পুরুষ ছাড়া।

দরজায় বেল বাজতেই আরহাম উঠে দাঁড়ালো। পিটপিট করে তাকালো তোঁষা। আরহামে’র সাথে পিছু পিছু সেও গেলো। মাঝে মধ্যে তুষার আসে। তোঁষার সহ্য হয় না। এটা ওটা ছুঁড়ে মা’রে তখন তুষার কথা না বলে চলে যায়। আজও তোঁষা হাতে একটা খাতা নিলো। এটাতেই এতক্ষণ আঁকিবুঁকি করছিলো ও। দরজা থেকে উঁকি দিলো দেখতে।
আরহাম দরজা খুলেই দেখলো আদনান দাঁড়িয়ে।
আরহাম তারাতাড়ি দরজা লাগিয়ে ওকে বসিয়েই রুমে চলে গেল। তোঁষা তখনও আগত মানুষটার মুখ দেখে নি। আরহাম তোঁষাকে নিয়ে কোনমতে বিছানায় বসালো। তোঁষার গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেয়ে বললো,

— প্রাণ কথা শুনবি?

— শুনব।

মিষ্টি করে হাসলো তোঁষা৷ বুক কাঁপলো আরহামের। এই হাসিটা তো তার জন্য। অন্য কারো জন্য না৷ এই হাসি কোথায় পাবে আরহাম?
বুকে পাথর রেখে তোঁষাকে নিয়ে শুয়ে পরলো ও। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কত গল্প করলো। তাদের নাম না জানা এক পৃথিবীর গল্প যেখানে বাস করে তোঁষা আর তার প্রাণ।
তোঁষা চোখ বুজতেই খুব ধীরে উঠে গেলো আরহাম। দরজা খুলে আদনানের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

— চল।

আদনান ভেতরে এলো আরহামে’র সাথে৷ ঘুমন্ত তোঁষা’র দিকে তাকিয়ে রইলো। আগের তোঁষা আর এই তোঁষার ফারাক দিন রাত। আরহাম আদনানের দুটো হাত ধরে কাকুতি করে বলে উঠলো,

— এভাবে তাকাস কেন? তুই কি ভাবছিস ও আগের মতো সুন্দর না? মোটা হয়ে গিয়েছে? তোর কাছে গেলেই ঠিক হয়ে যাবে। বিশ্বাস কর আমাকে। তোর কি ওকে এখন পছন্দ হচ্ছে না? এই তুই না ওকে ভালোবাসতি? শুধু কি ওর সৌন্দর্যকে ভালোবাসতি তাহলে!

আদনান কথা বলার খেই হারালো। আরহাম নিজেকে শান্ত করে আদনানের হাত ধরে কিছু কথা বলে রুমের বাইরে গেলো। এক মিনিট। দুই মিনিট যেতেই অস্থির আরহাম দৌড়ে এলো দরজার কাছে। ভেতরে কিছু ভাঙার শব্দ হলো। দরজা ধাক্কাতে থাকে আরহাম। দুই হাতে আঘাত করতে করতে ডাকে,

— এই আদনান? দরজা খোল। কি করছিস ওকে? ওকে ধরলে হাত কেটে নিব তোর আমি। দরজা খোল।

তোঁষার চেঁচামেচি শুনে আরহাম ঘামতে লাগলো। হঠাৎ দরজা খুলতেই হুরমুর করে ভেতরে ঢুকে চমকালো আরহাম৷ আদনানের মাথা ফেটে র*ক্ত পরছে। সামনেই কাঁচের ভাঙা গ্লাস। তোঁষা আরহামকে জড়িয়ে ধরলো। ফুঁপিয়ে কাঁদছে ও।

আরহাম কিছু বলার আগেই আদনান বললো,

— আমি ওকে ধরি নি ভাই। ও নিজেই উঠে আমাকে দেখে গ্লাস ছুঁড়ে মা’রলো। ও তোমাকে ততটা চিনে যতটা তুমি ও নিজেকে চিনো না। চেহারা এক কেন শুধু, হাজার আরহাম থেকে তুঁষ তার প্রাণ খুঁজে নিবে। যেই পা*গল ভালোবাসা চিনে তার সুস্থতা দিয়ে কি হবে?

আরহাম কথা বললো না৷ ও শুধু চেয়েছিলো ওর তুঁষ ভালো থাকুক। আরহামকে ছেড়ে আদনানের সাথে থাকলে হয়তো ভালো থাকত কিন্তু তা তো হলো না। তোঁষা ওকে গভীর থেকেও গভীর ভাবে চিনে। তাহলে কি তুষার এসাইলেমেই পাঠাবে ওর তুঁষ’কে?

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে