#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩০
তুহিন দুনিয়া ত্যাগ করেছেন আজ চারদিন। চারদিনের দিন নাকি সকলের মন পাথর হয়ে যায়। শোক ধীরে ধীরে কমতে থাকে। একসময় রয়ে যায় শুধু ই স্মৃতি। শেখ বাড়ীর কেউ ই হয়তো ভালো নেই। তুষার মা’কে সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছে। খাওয়া নাওয়া ত্যাগ করে বসে থাকেন তিনি। তুষার মুখে তুলে দিবে খাবে নয়তো না ই। এদিকে তোঁষা’র খবর নেয়া হচ্ছে না। ঐ দিকে তথ্য। কোনদিকে কি সামাল দিবে তুষার তাই ভেবে পাচ্ছে না। আদনান দরজায় নক করতেই তুষার তাকালো। ইশারায় আসতে বলতেই আদনান নিঃশব্দে প্রবেশ করে। বড় ভাইয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেই তুষার বললো,
— বস।
— চাচি খেয়েছে ভাই?
— হু। একটু ভাত খেলো। মসজিদে যাব একটুপর। নামাজের পর মাদ্রাসায়।
— গোছানো আছে সব ভাইয়া। কবরস্থানে যাবে?
— সকালে গিয়েছিলাম।
— ওহ।
একসময় চুপ করে গেলো আদনান। তুষার তা লক্ষ্য করে বললো,
— কিছু বলবি?
— তুঁষ কোথায় আছে ভাইয়া? জানো?
তুষার গহীন দৃষ্টিপাত করতেই আদনান নিজেকে সামলে বললো,
— ঐ দিন তো এলো তাই….
— তাই রোজ রোজা আনবে আরহাম?
— এমনটা না।
— তাহলে কেমনটা?
— রেগে যাচ্ছো?
— না।
— আমার দিকটা….
— তোর কোন দিকই আমি ভাবতে চাই না আদনান। আর না ই কোনদিন চাইব ভাবতে। হাজার বার সবাইকে বলেছি দু’জনকে একসাথে থাকতে দিতে। তাদের সুখ বৈ কিছুই হতো না। আরহাম পা*গল না এটা কে না জানে? সামান্য একটা সমস্যা’কে ঘিরে তাদের সাথে প্রতারণা করা হলো। এখন যখন নিজেরা সুখ খুঁজতে বাড়ী ছাড়লো তাতেই সব দোষ ওদের? এটা ও আমাকে মানতে হবে? আর হ্যাঁ, এতসবে নিজেকে নিঃদোষ ভাবার চেষ্টা করিস না। আপন ভাইয়ের ভালোবাসার দিকে নজর দিয়েছিলি তুই। এ থেকে গর্হিত কাজ আর কি ই বা হতে পারে?
মাথা নিচু করে সবটা শুনলো আদনান। সে মানে তার দোষ আছে। বরং একটু বেশিই আছে।
তুষার উঠে বের হতেই আদনান ও বেরুলো। তখনই চোখ খুললো ওর মা। তার চোখ গড়িয়ে পানি পরছে।
ভুল মানুষ একসময় বুঝে কিন্তু আফসোস তখন সঠিকটাকে গ্রহণ করার ক্ষমতা কারো হাতে থাকে না।
________________
— বারান্দার থাই খুলে দাও।
তোঁষা থাই ধরে দাঁড়িয়ে থেকে কথাটা বললো। আরহাম সাইড টেবিলে খাবার রাখতে রাখতে ডাকলো,
— খেতে আয় প্রাণ।
— এটা খুলো।
— কেউ নেই ওখানে।
— আছে আমি দেখেছি৷ বাবা এসেছিলো মাত্র।
— কেউ আসে নি প্রাণ। এদিক আয়। খাবি।
— খুলে দাও না।
এবার বড়ই কাতর শুনালো তোঁষা’র কণ্ঠ। না পেরে আরহাম এগিয়ে এলো ওর দিকে। তোঁষা’র হাতটা ধরে চোখে চোখ রেখে বললো,
— ওখানে চাচ্চু নেই।
— চাচ্চু নেই। বাবা আছে।
আরহাম তোঁষা’র কাঁধ সমান গোল করা চুলগুলো কানে গুজে দিতেই তোঁষা ঘাড় কাত করে মুখ কুঁচকালো। আরহাম তোঁষা’র গালে হাত রাখলো। অতঃপর কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— চাচ্চু নেই প্রাণ।
— জানি তো।
— তাহলে জেদ করছিস কেন? খেতে আয়।
— বাবা আছে।
আরহাম দীর্ঘ শ্বাস টানলো। বিগত দুই দিন তোঁষা ছিলো একদম নির্বাক। চুপচাপ। ঠিক অতি শোকে পাথর। কিন্তু গত দুই দিন ধরে সে এমন করছে। আরহাম তাকে এখন ইনসুলিন বাদে কিছুই দিচ্ছে না৷ অথচ তোঁষা’র আচরণ তার স্টাডি অনুযায়ী সম্পূর্ণ ভিন্ন। ও বারবার বলছে তুহিন’কে দেখছে। সে ডাকছে ওকে। হাত বাড়িয়ে ডাকে। দুই হাত মেলে দিয়ে ডাকে। তোঁষা’র তখন মন চায় দৌড়ে বাবা’র বুকে চলে যেতে কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না তা আরহামে’র জন্য। আরহাম তাকে যেতে দেয় না৷ গতকাল রাতে যখন তোঁষা তাদের সুখের মুহুর্তে হঠাৎ “বাবা” বলে চিৎকার করে উঠলো তখন ভয় পেয়েছিলো আরহাম। তোঁষা নিজ থেকেই তাকে ডাকলো। আরহাম যখন পাগল হয়ে উঠলো তখনই তোঁষা পাগলামি শুরু করলো। কতটা কষ্টে তোঁষা’কে আর নিজেকে সামাল দিলো আরহাম।
দীর্ঘ এক দম নিলো আরহাম৷ বারান্দার থাই খুলে তোঁষা’র হাত ধরে গেলো সেখানে। আশেপাশে কিছু খুঁজার ন্যায় তাকালো তোঁষা। আরহাম পরখ করলো ওকে। তোঁষা না পেয়ে এবার ডাকলো,
— বাবা? বাবা? বেরিয়ে এসো। এই যে আমি। এতক্ষণ না ডাকলে? এখন কোথায়? প্রাণ ও এসেছে। বাবা?
তুহিন আসে না। আসবে না। তোঁষা’র মুখটা ধীরে ধীরে লাল হতে শুরু করলো। আরহামে’র দিকে তাকাতেই আরহাম খেয়াল করলো তোঁষা’র রাগী মুখটা৷ ধরে রাখা হাতটা ঝাড়া দিয়ে তোঁষা রুমে এসে খাটে উবুড় হয়ে শুয়ে পরলো। আরহাম ও থাই লক করে এলো। তোঁষা’র পিঠে হাত রাখতেই তোঁষা আরহামে’র বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আরহাম ওর তুঁষকে আগলে ধরে মাথায় হাত দিয়ে বুঝাতে চাইলো,
— প্রাণ আমার, প্লিজ কাঁদিস না৷ চাচ্চু নেই এখানে।
— আছে।
— কথা শুন তুঁষ।
— তুঁষ শুনবে না তোমার কথা।
বলেই আরহামে’র বুকে কামড়ে ধরে তোঁষা। হঠাৎ আক্রমণে আরহাম ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠে। তবে তোঁষা ছাড়লো না। নিজের জেদে সে তার দাঁতের প্রয়োগ করছে আরহামে’র বুকে। আরহাম আর সহ্য করতে না পরে ছাড়াতে চাইলো এবার। পারলো না। একদম চুটার মতো লেগে আছে তোঁষা। মুখে নোনতা স্বাদ পেতেই তোঁষা এবার আরো জোরে যখন দাঁত বসালো তখনই আরহাম মৃদু স্বরে চেঁচালো,
— আহহ! ছাড় তুঁষ।
একপ্রকার জোর করে ওকে সরালো আরহাম। সরে উল্টো ঘুরে বসে রইলো তোঁষা। তার মুখে আরহামে’র র’ক্ত। বুকে হাত চেপে বড় বড় শ্বাস ফেলতে ফেলতে বিছানায় শুয়ে পরলো আরহাম। বুকে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে তার। গায়ের টিশার্ট’টা টেনে ছুঁড়ে মারে নিচে। অনকটা দাঁত বসেছে ওখানে। টিস্যু দিয়ে র*ক্ত মুছে যেই না উঠবে তখনই ওর উপর হামলে পড়ে তোঁষা। আরহাম দূর্বলভাবে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,
— এখন না। ছাড়।
— উউউউহু। এখনই।
কথাটা বলেই আরহামে’র বুকের ক্ষত’তে চুমু খায় তোঁষা। বুকে উঠে নিজেকে উৎসর্গ করতে চায় আরহামে’র মাঝে। হঠাৎ পরিবর্তনের কিছুই বুঝলো না আরহাম৷ তোঁষা’র এমন আচরণের কারণ তার অজানা৷ চারদিন যাবৎ ইনজেকশন অফ রেখেছে আরহাম৷ তোঁষা’র বাকি কাউকে মনেও পরে না। শুধু তার বাবা’কে দেখছে। প্রাণ’কে দেখছে। এটাই করে যাচ্ছে। আবার হুটহাট আরহামে’র মাঝে বিলীন হচ্ছে।
তোঁষা’র অনিয়ন্ত্রিত স্পর্শে এবার আরহাম ও নিয়ন্ত্রণ হারালো। তবুও শেষবার তোঁষা’কে সরাতে চাইলো কিন্তু সম্ভব হলো না৷ তোঁষা পুরোপুরি ভাবে আরহামকে নিজ আয়ত্ত্বে এনেছে। এই কাজটা অতি সুক্ষ্ম ভাবে করতে জানে সে।
#চলবে…..
#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৩১
বিরসতায় ঘিরা দিনটাতে সুইমিং পুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তথ্য। এটাকে অবশ্য পুল বলা যায় না। বিড়াট বড় এক অগভীর পানির পুকুর। মূলত এদিকটাতে আজ ট্রেনিং চলছে। তথ্য তাদের গাইড হিসেবে নিয়জিত এখানে। মনমরা হয়ে তথ্য আপাতত এদিকটাতে বসে আছে। সূর্য এখনও ডুবে নি। ডুববে ডুববে একটা ভাব। তথ্য’র মনে হয় ওর জীবনের সূর্যটা ডুবে গিয়েছে। ডুবলো তো ডুবলো এখনও উদয় হলো না। কোথায় যে হারালো? দীর্ঘ শ্বাস ফেলার কিছুই নেই ওর।
এদিক ওদিক হাঁটতে হাঁটতে আশেপাশে তাকালো তথ্য। ওর দিকেই একজন হেঁটে আসছে। তথ্য তাকে চিনে। ওর সিনিয়র অফিসার। এই ব্যাক্তি তথ্য’কে অনেক সাহায্য করেছে তুষার’কে পেতে। ওনাকে আসতে দেখেই তথ্য পদচারণ থামালো। সম্মুখের ব্যাক্তিটি ওর সামনে দাঁড়াতেই তথ্য স্যালুট করলো। বরাবর দাঁড়িয়ে অফিসার অল্প হেসে তথ্য’কে ভিন্ন ভাবে সম্মোধন করলো আজ,
— মিসেস.তুষার, কি খবর?
তথ্য লজ্জা পেলো কিছুটা। কি এক অবস্থা করেই না তুষার পাগলটা ওকে বিয়ে করলো। পুরোই হুলুস্থুল এক কান্ড। মান ইজ্জত বাকি রইলো না কিছু। তথ্য’কে লজ্জা পেতে দেখে অফিসার এবার অল্প শব্দ করে হাসলেন। তার হাতে থাকা কাগজটা তথ্য’কে দিয়ে শুধু বললেন,
— হি ইজ ফাইন। ডোন্ট ওয়ারী।
তথ্য প্রশ্নবোধক চাহনি দিলো। অফিসার ইশারায় কাগজটাকে দেখিয়ে চলে গেলেন। দ্রুত পায়ে রুমে ছুটলো তথ্য। দরজা লাগিয়ে বসলো একদম মেঝেতে। তুষারের চিঠি। এই ডিজিটাল জুগে এই চিঠি’র মানে তথ্য খুঁজে পেলো না। দুরুদুরু বুকে কাগটা খুলতেই মতির দানার মতো ঝরঝরা লিখাগুলো নজর কাটলো তার।
প্রিয় প্রাণ,
প্রাণ বলেই সম্মোধন করলাম তোমাকে তথ্য। তুমি আমার প্রাণের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমার প্রাণের টুকরো। আমার প্রিয় প্রাণ, তোমাকে একা ফেলে এসেছি বলে রেগে আছো? টেনশন হচ্ছে? ভাবছো না তো যে তুষার ছেড়ে চলে গেলো? ছয়মাস তো আর কম নয়। বুঝি আমি। জানি। কিন্তু কি করব বলো? তুমি তো সাধারণ কোন পুরুষ’কে ভালোবাসো নি তথ্য। বেসেছো ঝামেলায় পরিপূর্ণ এক দায়িত্ববান সন্তানকে। এমন এক কঠোর পুরুষ’কে যে নতুন বিবাহিত এক রাতের আদরের বউ’কে রেখে চলে আসে। আমি এতটাই কঠোর তথ্য। ঠিক এতটাই কঠোর যতটা কঠোর হলে সোহাগে পরিপূর্ণ আমার ঘ্রাণে মত্তে থাকা নতুন বউটাকে রেখে চলে এলাম। জানো আমি এতটাই কঠোর।
কিন্তু কি জানি হলো বুঝলে। আমি ভেঙে গেলাম। প্রথম ভাঙলাম যখন বাবা ছেড়ে চলে গেল। বাবা আর ফিরবে না তথ্য। সে ছাইচাপা কষ্ট নিয়ে চলে গেল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অথচ ত্যাগ করতে পারলো না তার পুতুলের মায়া।
দ্বিতীয় বার আমি আবার ভাঙলাম তথ্য। আমার পুতুল। আমার পুতুলটা যাকে আমি আমার সন্তানের মতো ভালোবাসি সে নিজের মধ্যে নেই। কেমন যে হয়ে গেলো আমি বুঝাতে পারলাম না। বিশ্বাস করো তথ্য, আমার বুকের পাজরের হাড়টা বুঝি মোচকে গেলো। কেমন জানি দম বন্ধ দম বন্ধ লাগে। তথ্য ওকে এমন ভাবে দেখতে যে আমার কি কষ্ট হলো আমি বুঝাতে পারলাম না।
জানো তথ্য আমাকে কাঁদানো এত সহজ না। অথচ আমি প্রচন্ড দূর্বল হয়ে যাচ্ছি। তুমি কাছে থাকলে তোমার বুকটাতে মুখ গুজে কেঁদে বুক হালকা করতাম।
প্রাণ আমার, আমি ফিরব। তুমি মন খারাপ করো না। করেও লাভ হবে না। তুমি তো নিষ্ঠুর এক পুরুষ’কে বিয়ে করেছো।
ভালো থেকো বলতে পারলাম না। জানি না, কতটা ভালো থাকতে পারবে।
ইতি,
তোমার অপ্রিয় প্রাণ।
চিঠিটা পড়া মাত্র ঝরঝরে কেঁদে উঠলো তথ্য। কাগজটা বুকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো শব্দ করে। কোথায় যাবে ও এখন? কোথায় পাবে ওর পুরুষটাকে? তুষারে’র এই কষ্ট কিভাবে লাঘব করবে ও?
___________________
বিছানায় কোণায় গুটিয়ে বসে আছে তোঁষা। দরজা বন্ধ ওদের রুমের। আরহাম বাসায় ফিরে নি এখনও। ভয়ে ভয়ে তোঁষা বারদুই ডাকলো আরহাম’কে। আরহামে’র সাড়াশব্দ না পেয়ে ভয়টা বেশি বাড়লো। ও দেখেছে ওর বাবা এসেছিলো। দরজা ঠকঠক করার শব্দ হলো প্রথমে। তোঁষা যখনই বললো, কে। তখনই তুহিন উত্তর করলো। এর মানে ওর বাবা এসেছে। তোঁষা’কে ডেকেছে। একটু পর ই বারান্দায় দাঁড়িয়ে ডেকেছে তোঁষা’কে। আরহাম’কে বললে আরহাম কিছুতেই বিশ্বাস করে না। তোঁষা’র কান্না পায় তখন।
হঠাৎ ই তোঁষা দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো তুহিন দাঁড়িয়ে। বালিশে মুখ লুকিয়ে ফেললো তোঁষা ততক্ষণে। একটু পর ধীরে ধীরে এক চোখ বের করে দেখলো না যায় নি ওর বাবা। এখনও দাঁড়িয়ে। তার মুখটাতে হাসি নেই। কেমন দুঃখ দুঃখ মুখটা। ধীরে ধীরে পুরো বালিশটা ই সরালো তোঁষা। তুহিন ডাকে ডাকলো,
— পুতুল?
— বাবা।
— হ্যাঁ বাবা। এদিকে আয় আম্মু।
— ভয় হয়।
— বাবা’কে ভয় হচ্ছে? কেন পুতুল? আমার পুতুল তার আব্বু’কে ভয় পায়?
— তুমি তো চলে যাও বাবা।
— যাব না?
— উহু।
— তাহলে কি করব মা?
— থেকে যাও।
— জায়গা নেই তো। কোথায় থাকব?
— আমার কাছে থেকে যাও। অন্তত আরহাম ভাই আসা পর্যন্ত। উনি বিশ্বাস করে না।
— তুই করিস?
— কি?
— বিশ্বাস।
— তোমাকে?
— হ্যাঁ।
— সত্যি?
— তিন সত্যি বাবা।
— তাহলে যাবি বাবা’র সাথে?
— কোথায়?
— মাত্রই না বললি বিশ্বাস করিস।
— আমি চলে গেলে আরহাম ভাই কাঁদবে বাবা।
— আমি ও কাঁদি পুতুল। কাঁদতে কাঁদতে আমার বুকে ব্যাথা উঠে যায়। বাবা’র সাথে চলবি না আম্মু?
— চলব তো।
— রাতে বারান্দায় আসবি। বাবা অপেক্ষা করব।
— আরহাম ভাই আসা পর্যন্ত থাকো না বাবা।
— রাতে আবার আসব মা।
তোঁষা ঘাড় নাড়লো। তুহিনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো তোঁষা। এদিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আরহাম। দশ মিনিট হবে সে বাসায় ফিরলো। রুমে ঢুকেই দেখলো তোঁষা কথা বলছে। প্রথমে আরহাম না বুঝলেও পরে বুঝলো তুহিনের সাথেই কথা বলছে। আরহাম যে ওর সামনে দাঁড়িয়ে দশটা মিনিট যাবৎ তা খেয়াল ই হয় নি ওর। তবে কি তোঁষা’র হ্যালুসিনেশন হচ্ছে? এর প্রখরতা কি কতই বেশি যে দিনদাহারে তোঁষা কল্পনা করছে? আরহাম এসব বিষয়ে যথেষ্ট পটু। তার জানা আছে এর ট্রিটমেন্ট তবে তোঁষা রেসপন্স করে না ওর কথা অনুযায়ী। এটাই হলো সমস্যা।
— বাবা এসেছিলো প্রাণ।
তোঁষা’র কথায় ধ্যান ভাঙলো আরহামে’র। তোতাপাখির ন্যায় তোঁষা বলে গেলো তার বাবা এসেছিলো। কি কি কথা হলো। আরহাম শুনলো সবটা। তবে এখন আর তোঁষা’র ভুল ভাঙাতে চাইলো না। প্রচন্ড মাথা ধরেছে আজ।
.
— তুই কি খাবি না?
— আগে বাবা’র কাছে যেতে দাও।
— রাগাস না আমায় তুঁষ।
— তুঁষ খাবে না। আগে বাবার কাছে যাবে।
এমনিতেই মাথা ধরে আছে আজ। তারমধ্য তোঁষা’র জেদ ধরে খাবার না খাওয়াতে রাগ হলো আজ আরহামের। এতদিক সামাল দিতে দিতে সে হয়রান। তবুও ধৈর্য ধরে তোঁষা’র হাত টেনে ধরে বসাতে নিলেই তা ঝারা দিয়ে ফেলে দিলো তোঁষা। আরহাম এবার রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললো,
— খেতে বস।
— খাব না।
— বস বলছি।
— না।
তোঁষা’র জেদ এবার কাজে লাগলো না। হাতের প্লেটটা সজোরে টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালো আরহাম। তোঁষা’র হাত টেনে ধরে দিলো এক ধমক। এই প্রথম। হ্যাঁ এই প্রথম আরহামে’র ধমকে কেঁপে উঠলো তোঁষা। আরহাম ওর বাহু চেপে ধরে জোরে ধমকে বললো,
— বল খাবি! খাবি বল!
তোঁষা বড় বড় চোখ করে দেখে যাচ্ছে আরহাম’কে। আরহাম তোঁষা’র জবাব না পেয়ে এবার দ্বিগুণ জোরে ধমকে উঠলো,
— বল খাবি!
— ব…বল খাবি। বল খাবি……
ভয়ে ভীতু তোঁষা বুঝ হারা হলো। বারবার এটাই বলে যাচ্ছে । আরহাম আস্তে করে ওর হাতটা ছেড়ে দিলো। তোঁষা’র মানুষিক অবস্থা ঠিক কতটা খারাপ হচ্ছে তার অনুমান করা যাচ্ছে। আরহাম ঝট করে ওকে বুকে চেপে ধরলো। তোঁষা তখনও বিরবির করছে,
— বল খাবি।
আরহাম বেশ সময় নিয়ে চেষ্টা করলো তোঁষাকে খাওয়াতে। তবে তোঁষা আজ খাবেই না। অগত্যা বারান্দার লক খুলে আরহাম। তোঁষা এদিক ওদিক ওর বাবা’কে খুঁজছে। আরহাম ওকে পাশে বসিয়ে বললো,
— এখন নিয়ে আসি। খাবি।
— বাবা আসবে বলেছিলো।
আরহাম কথা না বলে উঠে গেলো প্লেট আনতে। রুমে ঢুকা মাত্র আরহাম শুনতে পেলো তোঁষা’র গলা,
— প্রাণ!!
ঘুরে তাকানো মাত্র ই দেখলো তোঁষা রেলিং ধরে নীচে তাকিয়ে ডাকছে,
— বাবা বাবা উপরে এসো। বাবা??
— প্রাণ পরে যাবি। তুঁষ। তুঁষ!
আরহাম ডাকতে ডাকতে দ্রুত পায়ে আসতে নিলেই তোঁষা বলতে লাগলো,
— বাবা’র কাছে যাব। বাবা ডাকে আমাকে।
বলেই উঁচু জায়গাটাতে উঠে লাফিয়ে পড়ে বাবা’র কাছে যেতে চাইলো তোঁষা।
মুহুর্তেই ধপ করে একটা শব্দ হলো। এই বাইশ তলার উপরে মুহুর্তেই নিস্তব্ধতায় মুড়ে গেলো। ধপ করে বসে পরলো আরহাম। গলা দিয়ে শুধু বেরুলো একটাই শব্দ,
— তুঁষ।
#চলবে……