প্রিয় প্রাণ পর্ব-১৪+১৫

0
134

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৪

ঠান্ডা রুমে’র মাঝে এতক্ষণ যাবৎ উত্তাপ ছড়িয়ে এখন শীতলতায় ঘিরে আছে এক প্রেম যুগল। তোঁষা’র মাথায় হাত বুলাচ্ছে আরহাম। মাত্র ঘুমালো বলে তুঁষ’টা। এতক্ষণ ঘুমাতে পারে নি সে। ছটফট করেছে শুধু। আরহাম যে মেডিসিন দিবে তারও সুযোগ হয় নি। তোঁষা’র অবস্থান এখন আরহামে’র উপর। আরহামে’র গলায় মুখ গুজে গরম নিঃশ্বাস ফেলছে সে। আরহাম ভেবে কুল পায় না ঐ দিনের হওয়া সেই তুঁষ’টা কি পাগলামো’টাই না করলো। সেই পাগলামো’তে যখন আরহাম ও পাগল হলো তখন ই যেন কাহিল হলো তুঁষ’টা। আরহাম তখন থেকে বুকে তুলে রেখেছে তাকে। কতক্ষণ তো শুধু কাঁদলো। আরহাম উঠতে চাইলেই সেই কান্নার শব্দ যেন বেড়ে যায় অগত্যা এখনও উঠতে পারলো না ও।
তোঁষা’র চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বারকয়েক সময় পরপর চুমুও খাচ্ছে আরহাম তার মাথায়। বুকে এখনও কেমন ধ্রীম ধ্রীম শব্দ হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগের মুহুর্তগুলো ভাবতেই গলা শুকিয়ে যায় আরহামে’র। কেমন চোখ ভিজে উঠে। দেশের বাইরে কমতো ছটফট করে নি ও। দেহের ব্যাথা মানুষ দেখে কিন্তু মনের ব্যাথা? এটা কেউ দেখে না। দেখলেও বুঝতে চেষ্টা করে না। শেখ বাড়ীর প্রতিটা সদস্য জানতো আরহাম কতটা অসহায় হয়ে পরে ছিলো সেই ভিনদেশে অথচ কারো মনে মায়াটুকু হয় নি তাই এখন আরহাম ও মায়া দেখাবে না। এতকষ্টে’র পর পাওয়া তুঁষ’কে কোথাও হারাতে দিবে না ও।
কথাগুলো ভাবতেই নিজের সাথে তোঁষা’র নরম দেহটা আরো গভীর ভাবে জড়িয়ে নেয় আরহাম। মনে পরে যখন তোঁষা’কে ছেড়ে গিয়েছিলো সে হাসিমুখে অথচ সম্পূর্ণ’টা ছিলো শেখ বাড়ীর সদস্যসে’র পরিকল্পনা।

~তুরাগ বেশ ভালোই বুঝে যান ছেলে তার এত সহজে মানবে না। যথেষ্ট মেধাবী আরহাম৷ পাবলিকে চান্স তো আর এমনি এমনি পেলো না। তুরাগ ছোট ভাই তুহিন’কে ডেকে খুব মাথা খাটিয়ে এক পরিকল্পনা করলো। আরহাম’কে না জানিয়ে তার জন্য ভিসা এপ্লাই করে দেশের বাইরে। এতসবে তোঁষা শুধু জানলো আরহাম ভাই বাইরে পড়তে যাবে কিন্তু তুরাগ এখানে বড় একটা চাল করেছিলো।
আরহামে’কে নিজের রুমে ডেকে ঐ দিন বেশ নরম গলায় বললো,

— দেখো আরহাম আমার প্রথম সন্তান তুমি।

— কি বলতে চাও আব্বু?

আরহাম জানে বাবা এত সহজ মানুষ না৷ তুরাগ ও জানে ছেলে তার এত বোকা না। তাই তো নরম হয়ে বলেছিলেন,

— দেখ আরহাম তোমাকে যেমন ভালোবাসি তেমনই পুতুল’কেও সবাই ভালোবাসে। ওর কোন ক্ষতি হোক কেউ চাই না।

— কে করবে ক্ষতি? আমি?

আরহামে’র কন্ঠে রাগের আভাস। তুরাগ ছেলে’কে পাশে টেনে বসান। আরহামে’র হাত ধরে বলেন,

— বাবা আমার, তোমার সমস্যা’র কথা তুমি জানো। আমার ছোট ভাই’টার একটা মাত্র মেয়ে। আমারও কোন মেয়ে নেই। বংশের একমাত্র মেয়ে পুতুল। কোন বাবা কি চাইবে নিজের মেয়ে’কে অসুস্থ কোন ছেলের সাথে বিয়ে দিতে? হাজার থাকুক ভালোবাসা।

— ওকে কেন ক্ষতি করব আমি? ভালোবাসি তুঁষ’কে। ও ওতো ভালোবাসে আমাকে। ওকে কারো কাছে ঘেঁষতে দিব না আব্বু। শুধু একটা বার ওকে আমাকে দিয়েই দেখো। কাউকে অভিযোগ করার সুযোগ দিব না।

— সুযোগ টা যদি আগে দেই?

আরহাম তাকালো। তুরাগ ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— তোমার ট্রিটমেন্ট এর জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে চাইছি আরহাম। সম্পূর্ণ সুস্থ হও আগে। ততদিনে তোঁষা’কে আগলে রাখব। ওয়াদা করছি।

আরহাম তখন তোঁষা পেতে মরিয়া। তাই তো নিজের শখে’র সাবজেক্ট ইন্জিনিয়ারিং ছেড়ে দেশের বাইরে যেতে রাজি হয়ে গেলো ততক্ষণাৎ। সবাই জানল আসল ঘটনা অথচ তোঁষা’কে জানালো হলো আরহাম যাচ্ছে পড়াশোনা’র জন্য। অর্ধ সত্য জানা তোঁষা তাতেই কেঁদে অস্থির। তাকে কোন ভাবে জানানো হয় নি আরহাম’কে দূরে পাঠানোর আসল কারণ। এতসবে একমাত্র বিরোধীতা করলো তুষা’র। কারণ একটাই। ও জানে বাপ-চাচাদের আসল উদ্দেশ্য। তোঁষা’র সাথে কখনো তারা আরহাম’কে মিলতে দিবে না। জেনেটিক ভাবে আরহাম অসুস্থ। এখানে সুস্থ হওয়াটা একটু কঠিন। বাপ-চাচা অতকিছু বুঝতে চাইলো না। তাদের ধারণা আরহাম থেকে তোঁষা দূরে থাকলেই ভুলে যাবে। একসময় তোঁষা’কে বিয়ে দিয়ে দিবে। তাহলেই শেষ। তুষা’র সোজা বাবা’র রুমে ঢুকেই তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,

— কি করতে চাইছো তোমরা?

তুহিন কিছু বলার আগেই তুরাগ বললো,

— আমার ছেলে আমি চিনি তুষা’র। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইছি না।

তুষা’র কথা মানলো না। জোর করেই বাবা’কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— তোমাদের উদ্দেশ্য আমার জানা আছে আব্বু। আরহাম’কে দূর করতে চাইছো? ভাবছো আরহাম একাই পাগল পুতুলের জন্য? নিজেরা কি দেখছো না পুতুল নিজে কতটা পাগল? কারো কথা শুনে না আরহাম ছাড়া। ওর জেদ আরহাম ছাড়া কেউ ভাঙাতে পারে না। দু’জনকে বিয়ে করিয়ে রাখ। এ বাড়ীতেই থাকুক একসাথে। অন্তত চোখের সামনে থাকবে।

— হ্যাঁ এরপর ঐ পাগল আমার মেয়ে’কে মে’রে ফেলুক!

কিছুটা খলবলিয়ে কথাটা বললেন তুহিন। তুষা’র পরবর্তীতে অনেক চেষ্টা করেও বাসায় কাউকে মানাতে পারে নি। একবার চাইলো আরহাম’কেই জানিয়ে দিবে বাবা-চাচা’র আসল উদ্দেশ্য কিন্তু মায়ের দেয়া কসম তাকে বাঁধা দিলো সেটা করতে। সেদিন রাগে বাসা ছেড়ে চলে যায় তুষা’র। তার হাতে করার জন্য কিছুই ছিলো না। কাকে বুঝাবে তোঁষা’র সাথে আরহাম আর আরহামে’র সাথে তোঁষা ই ভালো থাকবে। এদের আলাদা করতে গেলেই হয় ভেঙে যাবে নয় একদম গুড়িয়ে দিবে।

এই তো অতঃপর একদিন আরহাম চলে গেলো। সেদিন দুটো নারী’র কান্নায় শুধু মুখরিত হলো শেখ বাড়ী। তোঁষা’কে সামলাতে অবশেষে আরহাম’কেই লাগলো। যদিও বাসার সবাই চেয়েছিলো তোঁষা স্কুলে থাকাকালীন আরহাম’কে পাঠিয়ে দিবে কিন্তু সেটা সম্ভব হয় নি। তোঁষা ঐ দিন স্কুল পালিয়ে বাসায় ফিরেছিলো। কেন জানি ওর মন বলছিলো ওর প্রাণ চলে যাচ্ছে। বহুদূরে। সেদিন সেই প্রাণে’র টানেই তো প্রাণের প্রাণেস্বরী ছুটে এলো।
আরহাম তোঁষা’কে ধরে রুমে নিয়ে দরজা লাগাতেই সবাই কিছুটা ভরকে যায়। কি করবে আরহাম?
আরহাম তেমন কিছু করলো না। শুধু তোঁষা’র হাত ধরে পাশে বসে শান্ত স্বরে বলেছিলো,

— আমার প্রাণ না তুই তুঁষ? তুই কাঁদলে এই প্রাণহীন দেহ নিয়ে কিভাবে যাব?

ব্যাস তোঁষা শান্ত হয়ে যায়। উল্টো সেদিন নিজে আরহাম’কে বলেছিলো,

— আমার প্রাণ যাতে তারাতাড়ি ফিরে আসে।

— প্রাণ কি প্রাণে’র জন্য নিজের খেয়াল রাখবে?

— রাখবে?

— ওয়াদা দে।

— দিলাম।

— যাব?

— আচ্ছা।

— সত্যি?

— তিনসত্যি।

— কাঁদবি?

— হু।

— তুঁষ?

— কাঁদব না।

অতঃপর আরহাম তোঁষা’র মাথায় হাত রেখে রুম থেকে বেরুলো। গাড়িতে উঠার আগে আদনানকে জড়িয়ে ধরে আরহামে’র দুটো আবদার,

— মা আর তুঁষ’টাকে দেখে রাখিস। শুন রাতে আম্মুর কাছে এসে ঘন্টা খানিক থাকবি। তোকে দেখলে আমার কথা কম মনে পরবে।

আদনানে’র চোখ ভিজে উঠে। ভাই’কে সে ভালোবাসে। দুই ভাইয়ের ভালোবাসার কমতি কখনো ছিলো না।
আরহামে’র গাড়িটা ছাড়তেই একই সাথে সস্তি আর হতাশার শ্বাস ফেললো সকলে। আচ্ছা তুরাগে’র ভেজা চোখটা কি কেউ দেখলো না? একজন বাবা’র কষ্ট’টা সবসময় ই অদৃশ্য থাকে। আড়ালে। আবডালে।
তোঁষা বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপলক দেখে সেই যাওয়া। ওর চোখদুটো কেন জানি আর কাঁদে না। মনে হয় আরহাম যায় নি। কখন জানি এসে বলে,
“তুঁষ ইনসুলিন নিয়েছিস? মিষ্টি খেতে মন চায়?”

কিন্তু বছরের পর বছর আরহামে’র দেখা পায় না তোঁষা। অপেক্ষা কাটে। যখনই তোঁষা জানতে পারে তাকে আর আরহাম’কে ধোঁয়াসায় রাখা হ’য়েছে তখনই সে প্রতিবাদ করে।মিনতি করে। লাভ হয় না।
তোঁষা’কে আরহামে’র সত্যিটাও জানানো হয় কিন্তু ততদিনে তার কি সেই বিশ্বাসটা বহাল ছিলো শেখ বাড়ীর সদস্যের উপর?

#চলবে….

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৪(বর্ধিতাংশ)
[পর্বটা একটু রোম্যান্টিক]

সবে মাত্র চোখ খুললো তোঁষা। আরহাম হয়তো মাত্রই ক্লান্ত দেহে চোখ বুজলো। মৃদুমন্দ ব্যাথা’য় চোখ বুজলো পুণরায়। কন্ঠ ভেদ করে বেরিয়ে এলো ব্যাথাকাতুর শব্দ। আরহামে’র চোখটা নড়লো বোধহয়। যথেষ্ট কানখাড়া পুরুষ সে। তবে আজ তার ক্লান্ত চোখদ্বয় খুললো না। তোঁষা উঠতে চাইলো। নিজের দেহটা’কে টেনে সরালো আরহামে’র উপর থেকে। আচ্ছা আরহাম ভাই কি এতক্ষণ ব্যাথা পায় নি? আস্ত একটা তোঁষা ছিলো তার উপর। তোঁষা আপাতত উঠতে চাইলো। আরহামে’র থেকে নিজেকে সরাতেই বেশ বেগ পেতে হলো তাকে। যেই না শরীর থেকে কাঁথা’টা সরালে ওমনিই লজ্জায় মাথা নত হয়ে এলো তোঁষা’র। অক্ষিপটে ভেসে উঠে রাতের তাদের একান্ত ব্যাক্তিগত মুহুর্তগুলো যা ছিলো তোঁষা’র কাছে আদরের। ভালোবাসা’র। এই নতুন ভাবে পাওয়া আদরে’র ছাপ ছড়িয়ে তোঁষা’র সর্বাঙ্গে। নিজের পরণে থাকা আরহামে’র শার্ট’টার দিকে তাকিয়ে রয় তোঁষা। মাথাটা কাত করে ঘ্রাণ নিতে চায়। পুরাতন অভ্যাস বলে কথা। অথচ বোকা তোঁষা ভুলেই গিয়েছে যেখানে আস্ত আরহাম ভাই তার এত নিকটে, যার ঘ্রাণে এখন মাতোয়ারা এখন খোদ তোঁষা সেখানে আরহাম ভাই এর এই শার্টের ঘ্রাণ নিছক তুচ্ছ বৈ কিছুই না। তোঁষা কথাগুলো মনে করে নিজের হাসলো। ফোলা ফোলা গাল দুটো রক্তিম হয়ে উঠলো মুহুর্তেই। শরীরে’র সকল পীরা ভুলে তোঁষা পা রাখলো নীচে। ওমনিই যেন ওর সারা শরীর চিরিক করে উঠলো। মুখে এবার একটু জোরেই শব্দ করে ব্যাথাটা প্রকাশ হলো যেন৷ আরহামে’র সজাগ কান তা শুনলো। নিজেকে একা আবিষ্কার করেই তার ঘুমন্ত মস্তিষ্ক জাগ্রত হলো নিমিষেই। তুঁষ’টা কাছে নেই। চোখ খুলে কিছু বুঝে উঠার আগেই ধপ করে শব্দ হলো। অর্ধ জাগ্রত মস্তিষ্ক’টা এবার পুরোটা জেগে উঠলো। তড়িৎ বেগে বিছানা ছাড়তেই এলোমেলো তোঁষা’কে ফ্লোরে আবিষ্কার করে আরহাম। আরহাম আতঙ্কগ্রস্থ ডেকে উঠলো,

— তুঁষ!

তোঁষা মুখ নাড়লো। বলতে চাইলো কিছু তবে সম্ভব হলো না। আরহাম তাড়াতাড়ি তোঁষা’র মাথাটা কোলে তুলে নিয়ে আতঙ্কিত ভাবেই ডাকতে লাগলো,

— তু..তুঁষ? এই তুঁষ? পরে গেলি কিভাবে প্রাণ? উঠ। উঠ না। তাকা আমার দিকে।

তোঁষা’র চোখ বেয়ে শুধু পানি পরলো। মুখ ফুটে কিছু বলার সুযোগ তার হলো না। চাইলেও বলতে পারলো না। আরহাম অস্থির হয়ে উঠলো যেন। বাড়লো তার উন্মাদনা। তোঁষা’র মুখ দিয়ে লালা জাতীয় কিছু গড়িয়ে পরতেই আরহাম হুস হারিয়ে ফেললো। সহজ বিষয়’টা তার কাছে জটিল হয়ে এলো। সাধারণ ভাবেই স্যালিভারী গ্লান্ড থেকে স্যালিভা ক্ষরণ হয়ে থাকে। যা বেশি হলে মুখ থেকে গড়িয়ে বের হয়। অর্ধ চেতন তোঁষা’র ও তাই হলো। আরহাম পাজা কোলে তুলে ওকে বিছানায় রাখতেই পুরোপুরি জ্ঞান হারালো তোঁষা।
একা এক বাড়ীতে তোঁষা’কে নিয়ে এহেন অবস্থায় বড্ড অসহায় হলো আরহাম। চোখে মুখে পানি’র ছিটে দিয়ে ডাকতে লাগলো ব্যাকুল কন্ঠে,

— তুঁষ… এই তুঁষ? একটা বার তাকা না প্রাণ। আমার ভয় লাগছে তুঁষ। প্লিজ তাকা না।

অনবরত তোঁষা’র গালে আলতো চাপড় মে’রে আরহাম ডাকতে লাগলো। তোঁষা’র ঠোঁটদ্বয় যখন ফ্যাকাসে হলো তখনই আরহামের টনক নড়লো। পাশ থেকে ছোট যন্ত্রটা নিয়ে তোঁষা’র ডায়াবেটিস চেক করতেই চোখ চড়কগাছ। ডায়াবেটিস নীল হয়ে আছে। আরহামে’র হঠাৎ ই মনে পরলো গতরাত আর সকাল তোঁষা’কে ইনসুলিন পুশ করা হয় নি। ভয়ংকর কিছুর টের পেতেই আরহাম এক দৌড়ে ফ্রিজ থেকে ইনসুলিন এনে পুশ করে দিলো। তোঁষা’র লেগে থাকা দুই দাঁতের মাঝে নিজের অনামিকা আঙুল ঢুকিয়ে দাঁতের পাটি আলাদা করতে চাইলো। প্রচুর বেগ পেতে হলো আরহাম’কে এই কাজ করতে। অতঃপর যখন তোঁষা’র চোখের পাতা কিছুটা নড়লো তখন আরহাম ধীর কন্ঠে তাকে ডাকতে লাগলো,

— তুঁষ উঠবি না। প্রাণ আমার তাকা এদিকে।

তোঁষা কি পারে তার প্রাণে’র ডাক উপেক্ষা করতে? উহু। মোটেও না। তাই তো ঠেলেঠুলে চোখ মেলার চেষ্টা করলো। বদ্ধ চোখদ্বয় খুলতেই গড়াতে লাগলো অশ্রু কণা। আরহাম বুঝি আটকে রাখা শ্বাসটুকু ছাড়লো? হ্যাঁ। ছাড়লোই তো। জোড়ালো গলায় ঢোক গিললো একটা। ভয় পেয়েছে সে। তোঁষা আরহাম’কে দেখেই ফিকড়ে কেঁদে ফেলে। তার চোখ মুখের মলিনতা আরহামে’র কায়া নাড়াতে সক্ষম। কেন কাঁদে তার তুঁষ? ব্যাথা পাচ্ছে বলে? ব্যাথার কারণটা তো আরহাম নিজেই। তোঁষা’র উপর অল্প ঝুঁকে আরহাম। গালে হাত রেখে পানিটুকু মুছে দিতে দিতে বলে,

— অনেক কষ্ট হচ্ছে?

— হু।

আরহাম ধীরে তোঁষা’র নরম দেহটা নিজের মাঝে তুলে নিলো। তোঁষা শরীর ছেড়ে দিলো আরহামে’র উপর। ওকে কোলে তুলেই আরহাম ওয়াসরুমে হাটা দিলো। ওকে ফ্রেশ করাতে গিয়ে শুনা গেলো আরেকজন কান্নার আওয়াজ। নরম কোমল তুষকন্যা’র কান্নায় ভারী হলো চারপাশ। বাতাসে যেন মিলিয়ে সুদূর প্রসারিত হচ্ছে। যার সাক্ষী হচ্ছে এই সকালের মলিন বাতাস।

আরহাম যথেষ্ট সাবধানে তোঁষা’কে কোলে নিয়ে বের হয়। তোঁষা এখন একদম চুপ। নাক, মুখ ফুলিয়ে কেঁদেকেটে অস্থির তোঁষা এখন লজ্জায় লাল হয়ে আছে। কে জানতো এত সুখ লিখা ছিলো এত বছরের কষ্টে’র পর?
আরহাম চটজলদি পা বাড়ালো রুমে’র বাইরে। তোঁষাটা’কে খাওয়াতে হবে। খুব জলদি করে যতটুকু পারলো বানালো আরহাম৷ এর মধ্যে দুই চারবার “তুঁষ তুঁষ” করে ডাকও দিলো তবে সাড়া এলো না। যেহেতু কান্নার শব্দ ও আসে নি তাই ঝটপট হাতের কাজ শেষ করে রুমে পা বাড়ায়।

রুমে ঢুকা মাত্র নজরে এলো উবুড় হয়ে শুয়ে থাকা তোঁষা’র দিকে। সুদর্শন মুখটাতে হাসির দেখা মিললো। বলিষ্ঠ দেহটা টেনেটুনে এগিয়ে এলো আরহাম। হাতের ট্রে’টা সাইডে রেখে তোঁষা’র পাশে বসে মাথায় হাত রাখতেই ইটের ন্যায় শক্ত হয়ে গেলো তোঁষা। আরহামে’র চাপা হাসিটা এবার ছিটকে বের হলো বুঝি। শব্দ হলো সেই হাসির। তোঁষা’র লজ্জা বাড়লো এবার হুরমুর করে। পাশ হাতড়ে বালিশ নিতে চাইলেও পারলো না। আরহাম ওর হাত আটকে দিয়েছে। তোঁষা ছাড়াতে চাইলেই আরহাম দুষ্ট কন্ঠে বললো,

— রাতভর এত কষ্ট করে কার লজ্জা ভাঙালাম?

এই কথার দরুন কি হলো? তোঁষা মূর্ছা গেলো লজ্জায়। আবারও কান্না পাচ্ছে ওর তবে লজ্জায়। আরহাম ওকে সোজা করে উঠালো। তোঁষা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। আরহাম হাসতে হাসতেই বললো,

— তুঁষরাণী’র কি হয়েছে হু? গতরাতে সে আমাকে পাগল বানালো, এখন নিজেই লজ্জায়…..

তোঁষা হুট করেই আরহামে’র বুকে আছড়ে পড়লো। আরহাম বুঝলো। লজ্জা না দিয়ে এবার ওকে জোর করেই খাওয়ালো। তবে বেশি খেতে পারলো না তোঁষা। বমি পাচ্ছে তার। আরহাম আজ জোর করে নি।
তোঁষা’কে খায়িয়ে হাতে ইনসুলিন নিয়ে আসতেই ভ্রু কুঁচকায় তোঁষা। দূর্বল কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

— খাওয়ার পর?

— হ্যাঁ। দিতে হবে প্রাণ।

তোঁষা বিশ্বাস করে তার আরহাম ভাই’কে। তাই তো দ্বিতীয় প্রশ্ন করলো না। আরহাম ওকে ইনজেকশন’টা পুশ করেই বুকে নিয়ে হেলান দিয়ে বসলো। তোঁষা তখনও চুপচাপ। একসময় মেয়েটা ঘুমালো বটে। আরহাম ঘাড়কাত করে দেখে তার প্রাণ’কে। মৃদু শব্দে জানায়,

“প্রাণ আমার, তোকে আজীবন আমার প্রাণকুঠুরিতে আটকে রাখব। তোর দিনও আমি, রাতও আমি। তোর ধ্যান ও আমি,জ্ঞান ও আমি। তোর শুরু ও আমি, তোর শেষটা ও আমিই হব।”

#চলবে…….

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১৫

মাত্র হট সাওয়ার শেষ করে অর্ধ অনাবৃত্ত দেহে বের হলো তুষা’র। কাঁধে টাওয়াল ঝুলিয়ে চুলগুলো যথাসম্ভব হাত দিয়ে ঝেড়ে অবশিষ্ট পানিটুকু ও ফেলে দেয়ার চেষ্টা। ফর্সা লোমশ সুন্দর এক চওড়া বুক। হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলে মন্দ হবে কি? না মোটেও মন্দ হবে না কিন্তু মন্দ কাজ করা থেকে আপাতত নিজেকে সংযত করে তথ্য। এসব বেহায়া আচরণ কি আদৌ তাকে মানায়? উহু। মানায় না৷ তবে এই সুপুরুষ’কে দেখা মাত্র সে নিজের মতো থাকলে তো। সে তো তুষা’রকে দেখলেই উলোটপালোট হয়ে যায়। এখনও যে বসে আছে মনে হচ্ছে এই বুঝি কিছু একটা বলে বা করে ফেললো। নিজের কাঁধ সমান চুলগুলো ঠেলে পিছনে দিয়ে যথাসম্ভব ভদ্র ও শান্ত হওয়ার চেষ্টা করলো তথ্য। আর্মি ম্যান নিশ্চিত অগোছালো কিছু পছন্দ করে না? ঠোঁট উল্টে কিছু একটা ভেবে পরক্ষণেই মেরুদণ্ড সোজা করে বসলো ও।

তুষা’র আচমকা বসার ঘরে তথ্য’কে দেখে চমকালো কিছুটা। নিজেকে খালিগায়ে আবিষ্কার করে যথাসম্ভব দ্রুত হাতে টিশার্ট তুলে গায়ে জড়িয়ে টেনেটুনে ঠিক করলো। তথ্য যেন লাল টমেটো ততক্ষণে। গলা ঝেড়ে তুষা’র কিছুটা অসন্তুষ্ট দৃষ্টি ফেলে বললো,

— মিস.তথ্য, কোন কাজে এসেছেন?

তথ্য’র গলা যেন শুকিয়ে এলো। পানি খাবার জন্য বড্ড তৃষ্ণার্ত সে। অথচ এই মেয়ে কি না জুনিয়রদের ধমকে ধামকে রাখে? শখের পুরুষের কাছে নিজেকে শক্ত রাখা দায়। তথ্য তা হাড়েহাড়ে টের পেলো। কোনমতে কন্ঠে শব্দ তুলে বললো,

— এমনিতেই কথা বলতে এলাম। অসুবিধায় ফেললাম?

— তা ফেলেছেন মিস.তথ্য।

তথ্য’র মুখটা ছোট হয়ে এলো তবে উঠে চলে যাওয়ার মতো কোন লক্ষণ দেখা গেলো না তারমধ্যে। ভালোবাসা মানুষ’কে বেহায়া করে তুলে তার জলজ্যান্ত প্রমাণ তথ্য। তুষার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

— কফি?

— খাওয়া যায়।

চটপট উত্তর এলো তথ্য থেকে। এই দফায় হেসে ফেললো তুষা’র। কিচেনে গিয়ে গরম পানি বসাতে বসাতে তথ্য’কে জিজ্ঞেস করলো,

— কোন স্পেশাল কাজ ছিলো?

— না। কেন? আসতে পারি না?

— পারো তবে হুটহাট? আই ফিল অকওয়ার্ড।

–অকওয়ার্ড?

— আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই তথ্য। আমাদের মাঝে তেমন কোন সম্পর্ক নেই যার জের ধরে তুমি এসেছো বা মাঝেমধ্যে আসছো।

তথ্য কথা বললো না। নিশ্চিত আবার কিছু হয়েছে তাই তুষা’রের কথাগুলো ততটা গায়ে মাখলো না৷ একসময় তুষা’র কফি হাতে হাজির হলো।
গরম ধোঁয়া উড়া কফি’তে কফিতে চুমুক বসিয়েই তথ্য’র মনে হলো এই কফির জন্য হলেও তার তুষা’রকে বিয়ে করা উচিত। পরক্ষণেই একগাল হেসে ফেললো নিজের ভাবনার উপর। তুষার দীর্ঘ পলক ফেলে দেখলো সেই হাসি। এমন তো না তার পৌরুষ মন তথ্য’কে অপছন্দ করে তবে নিজের জরাজীর্ণ জীবনে কোথায় ই বা ঠাই দিবে সে তথ্য’কে?

_____________________

আজ দুপুরের পর বের হয়েছিলো আরহাম। মাত্র চারজন রুগী কাউন্সিল করেই আজ বাসায় ফিরলো সে। তোঁষা’টা অসুস্থ। ওকে আজ একা রেখে বেরুতে মন মানেনি আরহামে’র কিন্তু আজকের চারটা কেস তার আন্ডারে ছিলো। যাওয়াটা ছিলো জরুরী নাহলে আরহাম বুঝি যেতো? রাস্তায় জ্যাম দেখে বিরক্ত হলো আরহাম। পেশাটা আজ ভিন্ন হলে এতটা ঝামেলা হতো না। অন্যান্য ডাক্তার’টা যেখানে ঘন্টায় দশ পনেরোটা রুগী দেখে সেখানে সাইকিয়াট্রিস্টদের একজন রুগীকেই ঘন্টার পর ঘন্টা সময় দিতে হয়। আজ তো তাও সময় কম লাগলো কারণ রিকভারি প্যাসেন্ট ছিলো দু’জন।
তাচ্ছিল্য হাসলো আরহাম। শেখ বাড়ীর সকলের নজরে পাগল আরহাম কি পাগলের ডাক্তার? বিষয়টা চিন্তার বটে।
আরহাম নজর ঘুরালো। কাঁচে টোকা পরেছে। তেরো চৌদ্দ বছরের এক কিশোরী দাঁড়িয়ে। পরণে ময়লা কিন্তু সাদা একটা ফ্রক। খসখসে চেহারাটা মলিনতায় ঘেরা অথচ দারুণ এক হাসি লেপ্টে তার ঠোঁটে। হাতে একগুচ্ছ গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে সে।

আরহাম চিন্তায় পড়লো। বছর কয়েক আগের কথা। তোঁষা’টা তখন কিশোরী। তুঁষ’টার জন্মগত ভাবেই বিভিন্ন রোগ বয়ে এনেছে। বাদবাকি জ্বর, ঠান্ডা তার জীবনে বোনাস। এই তো সেই কিশোরী তোঁষা এক গরমের দিনে পাতলা একটা ফ্রক পড়ে ছাদে বসে ছিলো। সবার নজরে তোঁষা ছোট হলেও বাইরের লোকজন তা মারাতো না। কিশোরী তোঁষা’র সেই সৌন্দর্য ফুটে উঠছিলো ঝলমল করে যা ছিলো চোখে পড়ার মত।
রাতে ছাদে উঠেছিলো তোঁষা বাতাস খেতে। ভয়ডরে ভরপুর তোঁষা জানতো তার আরহাম ভাই ছাদে পড়ছে তাই তো একা ছাদে উঠার সাহস করলো।
তবে বিপত্তি ঘটলো অন্যভাবে। তোঁষা জানতো না ঐ দিন ছাদে আরহাম আর আদনান বাদেও অন্য কেউ উপস্থিত ছিলো। তাই তো যখন টাঙ্কির উপর বসতে নিলো তখনই একজন ছেলে বলে উঠলো,

— কি পিচ্চি তুলে দিব?

তোঁষা হকচকিয়ে যাওয়ার দরুন পড়ে গেলো টাঙ্কি থেকে। ব্যাথা সে পায়নি ততটা তবে লজ্জা পেয়েছিলো। গলা ফাটিয়ে সে কি কান্না। আরহাম তোঁষা’র কন্ঠ শুনে আসতে আসতে তোঁষা কান্ড ঘটিয়ে ফেললো। আরহাম এসেই দেখলো তোঁষা কাঁদছে ছাদের মেঝেতে অন্যদিকে অরুন কপাল চেপে হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অরুনের কপাল বেয়ে চিকন ধারায় র*ক্ত গড়াচ্ছে। তবে আরহাম অরুনে’র দিকে বিশেষ খেয়াল করলো না। ও ব্যাস্তপায়ে তোঁষা’কে টেনে তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করলো,

— কি রে তুঁষ, ব্যাথা পেলি? পড়লি কিভাবে? উঠ।

তোঁষা আরহামে’র টিশার্ট খামচে ধরে উঠে দাঁড়ালো। ফুপাতে ফুপাতে নিজের বয়ে যাওয়া নাকটা মুছে নিলো আরহামে’র বাহুতে। আরহাম সেসবে পাত্তা দেয় না অথচ তার রয়েছে ওসিডি রোগ। সুচিবাই মানুষ’টা একদম ভিন্ন তার তুঁষে’র ক্ষেত্রে।
আদনান এসে অরুণ’কে ধরলো। তোঁষা’কে আরহাম নীচে নিয়ে যেতেই আদনান অরুন’কে ঘটনা জিজ্ঞেস করলো। অরুন কি বলবে ভেবে পেলো না। ঘটনাটা যতটা হুট করে হলো তাতে তার বলার কিছুই নেই। আদনান কিছু আবার জিজ্ঞেস করার পূর্বেই কোথা থেকে আরহাম এসে অরুণে’র উপর হামলে পড়ে।
তোঁষা থেকে ঘটনা যা শুনা গেলো তার সারমর্ম হলো, তোঁষা টাঙ্কিতে উঠতে নিলেই অরুণে’র কন্ঠ শুনে ভয়ে পরে যায়। অরুণ তাকে তুলতে গিয়ে পিঠে হাত রাখতেই তোঁষা পাশ থেকে ইটের টুকরো ছুঁড়ে মা’রে ওকে।
অরুণ মাথা নামিয়ে নিলো। ঘটনা মিথ্যা নয় আবার পুরোপুরি সত্যি ও নয়। হয়তো পিঠে অরুণ হাতটা রেখেছিলো তবে নিয়ত খারাপ ছিলো না।

— ভাই ফুল নিবেন না? একটা নেন না।

হঠাৎ আকুতি ভরা কন্ঠ শুনে আরহামে’র ধ্যান ভাঙে। অল্পবিস্তর হেসে মেয়েটার মাথায় হাত রেখে বললো,

— কত দিব?

— পঞ্চাশ টাকা পিস। ফেব্রুয়ারিতে দাম একটু বেশিই গোলাপের তবে আপনি ভালা মানুষ তাই দশটাকা কম দিয়েন।

এবার শব্দ করে হেসে ফেললো আরহাম। কচকচা একটা হাজার টাকার নোট মেয়েটাকে দিয়ে অবশিষ্ট সবগুলো গোলাপ নিয়ে বললো,

— গোলাপের কখনো মূল্য হয় না। এই যে ফুটন্ত এক গোলাপ তুমি। মূল্যহীন এক রত্ন।

মেয়েটা অর্ধবির্ধ বুঝে হাসলো। আরহাম গাড়ি ছাড়লো।

বাসায় পৌঁছেই সব অন্ধকার পেলো আরহাম। তোঁষা কি তাহলে উঠে নি? উত্তর জানা আরহামে’র। তবুও ডাকলো,

— তুঁষ?

উত্তর এলো না। পা চালিয়ে বেড রুমে যেতেই চোখ আটকালো ঘুমন্ত তোঁষা’র পানে। মাথা কাত করে ঘুমুচ্ছে সে। আরহাম এগিয়ে এসে ওর মুখে নিজের হাতটা রাখতেই চমকালো। কাঁথা সরিয়ে গলা, হাত-পা ধরতেই দেখলো অসম্ভব গরম শরীর। জ্বর এলো অথচ আরহাম কি না জানলো না? এতক্ষণ তো ভেবেছিলো ঘুমাচ্ছে কিন্তু…। চিন্তিত আরহাম তোঁষা’র মুখের উপর ঝুঁকলো। গালে আলতো হাত বুলিয়ে দিয়ে ডাকলো,

— তুঁষ?

— হু।

— খারাপ লাগছে?

— উহু।

— একটু উঠ।

— উহু।

— প্লিজ না প্রাণ।

তোঁষা উঠবে না। আরহাম নিজেই বালতি ভর্তি পানি এনে পানি ঢাললো ওর মাথায়। আধ ঘন্টা খানিক যেতেই তোঁষা কথা বললো,

— আর না।

— আরেকটু দেই?

— উহু।

আরহাম উঠলো। তোঁষা’র লম্বা, ঘন চুলগুলো সযত্নে টাওয়াল পেঁচিয়ে ভেজা টাওয়াল এনে যতটুকু পারলো মুছে দিলো। তোঁষা চোখ বন্ধ করেই ডাকলো,

— আরহাম ভাই?

আরহাম তখন অতি যত্নে তার তুঁষে’র পায়ের পাতা মুছে দিচ্ছে। ডাকের জবাবে বললো,

— বল প্রাণ।

— আব্বু-আম্মু’র কথা মনে পরছে আর ভাই’কে। চাচ্চু-চাচি’কেও।

আরহামে’র নরম মুখটা নিমিষেই শক্ত হলো। তোঁষা একাএকাই কিছু বিরবির করতে করতে চুপ করে গেলো। আরহাম উঠে সব গুছিয়ে নিজেও ফ্রেশ হয়ে এসে তোঁষা’র পানে তাকিয়ে গোলাপ গুলোর দিকে তাকালো। হাত বাড়িয়ে একটা ছুঁয়ে দিতেই অতি সুক্ষ্ম এক কাটা বিধলো ওর আঙুলে। সঙ্গে সঙ্গে র*ক্ত আসতেই আরহাম হাসলো। ঝুঁকে বৃদ্ধাঙ্গুলী’টা দিয়ে তোঁষা’র ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিতেই তা আরহামে’র র*ক্তে রঞ্জিত হলো। বিগলিত হাসে আরহাম। শুনা যায় তার চাপা কন্ঠস্বর,

— প্রাণ আমার, এই গোলাপে’র ভালোবাসা পেতে যেমন কাটার আঘাত পেতে হয় তবুও কেউ গোলাপ’কে ত্যাগ করে না তেমনই আরহামে’র ভালোবাসা পেতে তোকে আমার কাছেই থাকতে হবে। এরমাঝে আর কেউ থাকবে না। কেউ না। শুধু আমি আর আমার প্রাণ।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে