প্রিয় প্রাণ পর্ব-১০+১১

0
404

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১০

“বর্ডার লাইন পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার” অর্থাৎ কোন কিছু বা কাউকে নিয়ে অতিরিক্ত পসেসিভ হওয়া, ইমোশনাল হওয়া, সবসময় তাকে ঘিরে নিজেকে কল্পনা করা। এটা একটা মেন্টাল ডিজঅর্ডার যা বাড়তে থাকলে একসময় মারাত্মক আঁকার ধারণ করে। তখন ঐ নিদিষ্ট জিনিস’টাকে নিজের করে রাখতে সে মরিয়া হয়ে উঠে। হারায় হিতাহিত জ্ঞান। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে তার সেই কাঙ্খিত বস্তু চাই ই চাই। তারা ভয় পায় শেয়ার নামক শব্দটা’কে। বিশ্বাস জিনিসটাও কারো’কে করতে পারে না হোক সে যতই আপন। অথচ এরা স্বাভাবিক একজন মানুষের মতোই থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে এরা নিজের কাঙ্খিত বস্তু নিয়ে প্রচন্ড সেসসেটিভ হয়ে থাকে। যার ফলে সম্পর্ক গঠনে হয়ে থাকে এরা সবচেয়ে দূর্বল।

আরহাম আক্রান্ত এই রোগে। বাসায় কেউ ই এটা প্রথমে বুঝতো না। আদনান আর আরহাম জমজ ভাই। আরহাম বড় হওয়ার দরুন সবাই হয়তো আগে ওকে ভালোবাসত। সেইম ওর মায়ের ক্ষেত্রে ও। আরহাম ছোট থেকেই নিজের মা’কে নিয়ে প্রচন্ড সেনসিটিভ। কারো সাথে দিবে না মা’কে। স্কুল থেকে আসলেও তার মা’কে চাই সবার আগে।

সেই বহু বছর আগের এক ঘটনা, একদিন আদনান এসে লুকিয়ে আগে মা’কে জড়িয়ে ধরলো। আরহাম পেছনে থাকায় দেখি নি মা’কে। যেই না দেখলো আদনান আজ আগে মা’কে জড়িয়ে ধরেছে তখনই প্রচুর রেগে গেলো। দৌড়ে এসে আদনান’কে টানতে টানতে বলতে লাগলো,

–আম্মু’কে ছাড়। ছাড়।

আদনান মা’কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে থাকতেই ওর মা আরেকহাতে আরহাম’কে জড়িয়ে ধরতে চায়। আরহাম তখন রাগে মুখ চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। মা’কে তার একা চাই। শেয়ার করে না।
ওর মা সেদিন হয়তো বুঝেন নি ছেলের মন। আরহাম যখন সারাদিন না খেয়ে থাকলো তখন হাজার চেষ্টা করেও তাকে খাওয়ানো গেলো না। অথচ সবাই হাসলো ওর কান্ডে। বলাবলি করলো,”এই মা পাগল ছেলে বউ পেয়ে না বদলালেই হলো”।

আরহাম বদলালো। ভয়ংকর সেই চেঞ্জ। মা তার প্রিয় না এমন না তবে সে মা’কে শেয়ার করেছে। একজনের সাথে খুব করে শেয়ার করেছে। তার মায়ের বুকে ঘুমাতেও দিয়েছে। একসময় মায়ের থেকেও বেশি আঁকড়ে ধরেছে সেই ছোট্ট প্রাণ’কে। তোঁষা’কে। বরফের মতো তুঁষ’টাকে সে স্থান দিয়েছিলো নিজের বুকে। অনুভূতি তখন সে ততটা বুঝে না কিন্তু নামহীনা এক মায়াজালে আটকেছিলো আরহাম সেই ছোট্ট শিশুটার বদনে, মুখের আদলে, গোলাপি রঙা সেই মুখটায়। ছোট্ট ছোট্ট হাত পায়ে। ছোট্ট নরম তুলতুলে তোঁষাটা’কে কোলে তুললেই যেন রাজ্যের প্রশান্তি হানা দিতো তার বুকে। সেটা যেন ছিলো বেনামী এক অনুভুতি। যা ক্রমে ক্রমে গ্রাস করেছিলো আরহাম’কে। এখনও করছে। আরহামে’র বুকে আজন্ম থেকে যাবে তোঁষা।

__________________

— তুঁষ? উঠবি এখন? নাস্তা রেডি। আমি গোসল করতে যাচ্ছি।

তোঁষা বিড়ালের ন্যায় চোখ বের করে আরহাম’কে দেখলো যে আপাতত আলমারি থেকে কাপড় বের করছে। তখন আর লজ্জায় উঠা হয় নি ওর। এরপর কিভাবে জানি আরেকদফা ঘুমালো। আরহাম পুণরায় ডাকলো না তাকিয়েই,

— প্রাণ উঠবি এখন? আমি কি নাস্তা দিয়ে যাব।

তোঁষা’র কোন উত্তর মিললো না এবারও। আরহাম তপ্ত শ্বাস ফেলে ওয়াসরুমে ঢুকতে নিলেই কোথা থেকে দৌড়ে এসে তোঁষা ঢুকে বললো,

— আগে আমি।

আরহাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বললো,

— আগে আমি।

— না না আমি।

— এতক্ষণ যে ডাকলাম?

— কে ঘুমাতে বলেছিলো?

আরহাম দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এই বুঁচি’র সাথে তর্ক করে পারা যায়? তোঁষা’র ব্রাশ এগিয়ে ওর হাতে দিতে দিতে আরহাম বললো,

— নে। আমি তাহলে নাস্তা গুছিয়ে আসি।

আরহাম বের হতে নিলেই তোঁষা ওর হাত টেনে ধরে। আরহাম চোখের ইশারায় কি হয়েছে জানতে চাইলেই তোঁষা দাঁত বের করে হাসলো। আলতো করে টান দিলেও আরহাম এগিয়ে এলো। তোঁষা বা হাতে সাওয়ার অন করতেই ঝরঝর করে পানি পরা শুরু করলো ওদের উপর। মুহূর্তেই ভিজে গেলো দুটি দেহ। আরহাম কিন্তু চাইলেই আটকাতে পারত তোঁষা’কে অথচ আটকালো না। করুক না যা করতে চায়। কত বছরের অপেক্ষা। কোনদিন কি কাছাকাছি আসা হয়েছিলো? একটুও না। হয়নি কোনদিন অনুভূতি ব্যাক্ত করা। আরহাম নিজেই এগিয়ে এসে তোঁষা’র গাল স্পর্শ করলো। তোঁষা লজ্জায় রাঙা মুখটা নামিয়ে রেখেছে। পদক্ষেপ সে নিজেই গ্রহণ করে তখন হুস থাকে না কিন্তু কাজ সারার পরই তার মুখের দিক তাকানো যায় না। সামাল দিতে হয় আরহাম’কে অথচ আরহাম নিজেই বড্ড কষ্টে সব সামলে আছে।
.
তোঁষা নিজের মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে সব নাস্তা টেবিলে রাখলো। তখনই আরহাম কফি হাতে কিচেন থেকে আসে। স্লিভলেস একটা টিশার্ট আপাতত গায়ে। বা হাতের বাহুতে হঠাৎ ই নজর গেলো তোঁষা’র। মুহুর্তেই যেন আঁতকে উঠল ও।
আরহামে’র হাতটা টেনে ধরে উত্তেজিত গলায় জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে এখানে? গতরাতে ও না ঠিক ছিলো। বলুন।

আরহাম ঠোঁট কামড়ে ধরে। ওর একটুও মনে ছিলো না তোঁষা দেখে ফেললে কি উত্তর দিবে। কেন যে আজ স্লিভলেস টিশার্ট পরলো? কথাটা ভাবতেই বিরক্তিতে মুখ তেঁতো হলো ওর। তোঁষা অনবরত প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। আরহাম ঝট করে কথা সাজালো,

— তেমন কিছু না তুঁষ। বিষাক্ত কিছু ফুটেছে এদিকে তবে কিছুই হয় নি। হয়তো ইনফেকশন হয়েছে। বিশ্বাস কর এখন ব্যাথা নেই।

আরহাম যাই করুক না কেন তোঁষা’কে মিথ্যা বলে না। অন্তত এই পর্যন্ত মিথ্যার আশ্রয় নেয় নি ও। যেখানে ওর ভালোবাসা সত্য সেখানে মিথ্যা’র কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
তোঁষা’র চিন্তায় বিষন্ন মুখটা তখন ঠিক হয় নি। মুখ কুঁচকে আছে তোঁষা। আরহাম জানে প্রচুর কৌতুহলী মেয়ে তোঁষা। তাই আরহাম খেতে তাড়া দিলো,

— জলদি হা কর তুষ। খেয়ে নে। আজ একটু তারাতাড়ি যাব।

তোঁষা ফট করে উত্তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো,

— আমিও চলব না আজ?

আরহামে’র মুখটা শুকিয়ে এলেও তা প্রকাশ করে না। তোঁষা’র মুখে খাবার তুলে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিলো।
_______________

শেখ বাড়ীর শোক যেন আজ আরো বাড়লো। তুঁষা’র ক্যাম্পে চলে যাচ্ছে। কাঁধে ব্যাগ তুলে বের হতেই ওর মা দৌড়ে এসে ঝাপ্টে ধরে ছেলেকে। হু হু করে কেঁদে উঠেন সশব্দে। তার কান্নার ফলে বেরিয়ে আসেন তুঁষা’রের চাচি, চাচা। ভ্রু কুঁচকে তুরাগ জিজ্ঞেস করলো,

— কোথায় যাচ্ছো তুঁষা’র?

— ক্যাম্পে।

— না না তুই যাবি না। বাবা আমার যাবি না। মা..মা যেতে দিব না।

— যেতে হবে আম্মু। দেখি ছাড়ো। কেঁদো না।

ওর মা আরো শক্ত করে ধরেন ছেলেকে। ততক্ষণে ধীরে ধীরে তুহিন ও বেরিয়ে এলেন। মন মেজাজ তারও ভালো না। সাথে শরীরটা ও ভালো লাগে না। চিন্তায় চিন্তায় শরীর ভেঙে যাচ্ছে যেন। তবুও দারাজ কন্ঠে বললেন,

— তোমার মা অসুস্থ তুঁষা’র। এখন হুট করে যাওয়ার মানে কি?

তুঁষা’র মা’কে জড়িয়ে ধরে। ঠান্ডা কন্ঠেই উত্তর করে,

— হুট করে? ঐ দিন না জানালাম?

তুরাগ মাঝ দিয়ে বললো,

— আমি তো ভাবলাম ওটা এমনিই বলেছো।

— চাচ্চু এমনিই কিছু আমি বলি না। যদি বছর আগে আমার কথা সবাই শুনতে তাহলে এমন করুন দশায় থাকতে না আজ। অন্তত দুটো নক্ষত্র আজ শেখ বাড়ীতেই থাকতো।

তুরাগ মাথা নাড়ান। কিছু বলেন না। ভুল তাদের দ্বারা হয়েছে। শুধুই কি ভুল? পাপ বলা যায় না এটাকে?

তুঁষা’র মাকে নিয়ে রুমে এসে তার হাত ধরে। মায়ের উত্তপ্ত ললাটে চুমু খেয়ে হাত দুটোতেও চুমু খেয়ে বললো,

— এই হাতে কত আঘাত করছিলে আমার পুতুল’কে আম্মু। মনে পরে?

ফিকড়ে কাঁদে ওর মা। তুঁষা’র মায়ের চোখ মুছে পেছন ফিরে না। বেরিয়ে যায় রুম থেকে। অতঃপর বাসা থেকে। পেছন থেকে চাচি এত ডাকলো কিন্তু দাঁড়ায় না তুঁষা’র। একটা বার পেছন ফিরে না।
তুহিন রুমে ঢুকে তাকায় স্ত্রী’র দিকে। আজও এই নারী’র চোখের পানি দেখতে পারে না সে। এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে তাকে। মাথার এলোমেলো চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে আদর করেন। নিজের হাত দুটো স্বামী’র সামনে দেখিয়ে বলেন,

— এই হাত দিয়ে এত মা’রলাম তোঁষাটা’র তবুও মেয়েটা রইলো না।

তুহিন কিছু বললো না। আসলেই তো তখন যদি তুঁষা’রের কথা শুনতো তবে আজ অন্তত মেয়েটা বুকে থাকতো। চোখের সামনে থাকতো।

#চলবে…….

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১১

উদাস মুখে আকাশ পানে তাকিয়ে তোঁষা। আরহাম ভাই তাকে নেয় নি সাথে। তোঁষা জেদ করতেই অসহায় চাহনি দেয় আরহাম। সেই চাহনি উপেক্ষা করে কিছু বলার সাহস আর হলো না তোঁষা’র। খুশি মনে আরহাম’কে বিদায় দিয়েছে। অনেক জেদ করে অনুমতি নিয়েছে বারান্দায় আসার।
আজও আরহাম তাকে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে গেলো। তোঁষা অদূরেই আকাশছোঁয়া পাখিদের দেখা পায়। আরহাম গিয়েছে সেই সকালে। এখন বিকেল। তোঁষা’র তো আজ দুপুরে ও করার মতো কিছু ছিলো না। গোসল তো সকালেই করলো।
যদিও আজ তোঁষা প্লান করেছিলো ঘুমিয়ে দিনটা কাটিয়ে দিবে কিন্তু তাও হলো না। শত চেষ্টা’র পরও তা সম্ভব হয়ে উঠলো না। মানুষ তখনই ঘুমাতে পারবে যখন তার শরীর এবং মস্তিষ্ক ক্লান্ত থাকবে। তোঁষা সাকলেও ভালো ঘুমালো। সারাদিন শুয়ে বসেই কাটালো। ঘুম আসবে টা কোথা থেকে? তোঁষা’র মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে যায়। মনে পরে বাসার কথা। মা-বাবা আর তুষা’রের কথা। তুঁষা’র তাকে অনেক ভালোবাসে। মা ও তাকে ভালোবাসত কিন্তু কেন যে এমনটা করলো তা বুঝে আসে না তোঁষা’র। পিঠে এখন ও ব্যাথা অনুভব হয় তার। ঐ দিনের পিঠে দেয়া আঘাতটা খুব জোরে ছিলো। তোঁষা কখনো ভুলবে না সেটা। শরীরে মা’রের কম আঘাত নেই তার। মা তো তাকে নিজের জান বলে দাবি করতো কিন্তু কেউ কি নিজের জান’কে মা’রে? মা’রে না তো। তাহলে কেন মা মা’রলো তোঁষা’কে? তোঁষা’র ভুলটা কি ছিলো? ভালোবাসা কি ভুল ছিলো? ভুল থাকলে কেন তাকে শুরুতেই থামালো না? যখন তোঁষা সম্পূর্ণ ভাবে ভালোবাসার কাছে আয়ত্তহীন হয়ে পরলো তখনই তারা উঠে পরে লাগলো তোঁষা’কে আরহাম থেকে আলাদা করতে।

কথাগুলো ভাবতেই তোঁষা’র চোখ টলমল করে উঠে। এখন তার কোন চিন্তা নেই। আরহামে’র ঘ্রাণ সারাক্ষণ না পাওয়া গেলেও তোঁষা তার ব্যাবস্থা করে নেয় নিজেই। কখনো আরহামে’র গায়ের শার্ট পরে বা কখনো আরহামের দেয়া পারফিউম সারারুমময় ছড়িয়ে। তবুও কেন জানি দিন শেষে তোঁষা’র মন বিষাদে ভরে যাচ্ছে। বাবার কথা মনে পরছে। বাবা তো তোঁষা’র সাথে ঠিকমতো কথাই বলত না শেষদিকে কিন্তু মাঝেমধ্যে যে রাতে রুমে এসে তোঁষা’র মাথায় হাত বুলাতো তখন তোঁষা সব ভুলে যেতো। মন চাইতো ডুকরে কাঁদতে। কয়েকবার তো বাবা টের ও পেতেন যে তোঁষা জাগ্রত। তখন সন্তপর্ণে তোঁষা’র কপালে চুমু খেয়ে চলে যেতেন তিনি। তোঁষা’র মনে পরছে এখন বাবা’র কথা। কতদিন হলো দেখা হচ্ছে না তাকে। ভাই নিশ্চিত এখনও ক্যাম্পে ফিরে নি। তোঁষা’কে খুঁজে চলছে। কিন্তু তারা পাবে না তোঁষা’কে। কখনোই না। তোঁষা লুকিয়ে থাকবে এখানে। ওর আরহাম ভাই’য়ের কাছে।
.
আজ সন্ধ্যা একটু গড়াতেই আরহাম বাড়ী ফিরলো। তোঁষা তখন টিভি দেখতে দেখতে সোফায় ঢলেছে কিছুটা। আরহাম খুব ধীর শব্দে দরজা লক করে পাছে যদি তুঁষা’টা উঠে যায়? তোঁষা’র কাছে এসে গভীর চোখে দেখলো আরহাম। ঠোঁটে যেন হাসি ঝরা শুরু করে তার এই মায়াবী মুখ দেখলে। তোঁষা’র কপালে পড়ে থাকা কিছু এলোমেলো চুল দেখতেই আরহাম হাতে থাকা ব্যাগটা পাশে রেখে হাঁটু ভেঙে বসে তোঁষা’র বরাবর। পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখে তোঁষা’কে। হাত বাড়িয়ে তোঁষা’র মুখে পড়া চুলগুলো সরাতেই তোঁষা চোখ খুললো। আরহাম’কে দেখেই হাসলো অধর এলিয়ে। নিদ্রা মিশ্রিত কন্ঠে ডেকে উঠলো,

— কখন এলেন?

আরহামে’র হৃদপিণ্ডে যেন প্রচুর বেগে জোয়ার বয়ে গেলো। তার তুঁষে’র এই ঘুম জড়ানো কন্ঠ’টা শুনা হয় না আজ অনেকদিন। আরহাম তোঁষা’র চুলগুলো নাড়তে নাড়তে উত্তর করলো,

— মাত্র ই এলাম।

— আমার জন্য কি এনেছেন?

— কি আনব?

দুষ্ট কন্ঠ আরহামে’র। তোঁষা মুখ কুঁচকে উঠতেই আরহাম ওর নাক টেনে বললো,

— বুঁচি একটা, বোঁচা এক নাক নিয়ে সারাক্ষণ মুখ কুঁচকে রাখে।

কথাটা বলেই আরহাম রুমে যায়। তোঁষা অলস ভঙ্গিতে তাকালো পাশের সোফায়। এখন ওর একটুও উঠতে মন চাইছে না। সাপের মতো মোচরাতে মোচরাতে সোফা থেকে নেমে পাশের সোফায় পৌঁছালো। যেই না ব্যাগের চেইন খুলবে ওমনিই আরহামে’র গলা শুনা গেলো,

— তুঁষ! এটা কি ছিলো? এই তুই আজ থেকে এইসব ফালতু কার্টুন দেখবি না। দিন দিন সিনচেন হয়ে যাচ্ছিস।

তোঁষা মুখ ভেঙালো। আরহাম’কে ভেঙিয়ে নকল করে বললো,

— দিন দিন সিনচেন হয়ে যাচ্ছিস।

আরহাম কিছুপল তাকিয়ে রইলো। তোঁষা ব্যাগ হাতড়ে তখন দেখছে ওর জন্য কি কি আছে। কয়েক পদের চকলেট পেতেই তোঁষা মুখে পুরলো আগে টপাটপ। পরে যদি আরহাম ভাই সব খেতে না দেয়?
_____________

— তুঁষ এদিক আয়।

তোঁষা হাতে থাকা গ্লাস রেখে আরহামে’র দিকে যেতেই আরহাম ইনসুলিন পুশ করতে এগিয়ে এলো। তোঁষা ওর দিকে তাকিয়ে বললো,

— আমি নিয়েছি ইনসুলিন।

— কখন?

— যখন আপনি খাবার গরম করছিলেন।

আরহাম ঠোঁট কামড়ে ধরে। কিছু একটা ভেবে তোঁষা’র হাত টেনে নিজের কাছে আনে। তোঁষা মুখ ভর্তি লজ্জা ভাব নিয়ে মাথা নিচু রাখতেই আরহাম ওর মুখ তুলে। চোখে চোখ রেখে বললো,

— এরপর থেকে আমিই পুশ করে দিব। সকালেও আমি রাতেও আমি। মনে থাকবে?

— আমি একাই দিতে পারি।

— উহু। কোন কথা না।

— আচ্ছা আচ্ছা। ছাড়ুন। আমাকে সুচের খোঁচা দিতে মজা লাগে আপনার। বুঝি আমি।

কথাটা বলেই তোঁষা নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো আরহাম থেকে। ও এগিয়ে যায় টেবিলের দিকে। আরহাম আজ তোঁষা’র পছন্দের বিফ করেছে। নাদুস নুদুস তোঁষা’র ভীষণ পছন্দ খাওয়া দাওয়া করা। আজ মনটা ফুড়ফুড়া এত মজার খাবার দেখে। তোঁষা নিজেই দুই প্লেটে খাবার বাড়তে লাগলো অথচ পিছনে রয়ে গেল আরহামে’র রাগান্বিত মুখশ্রী।
তোঁষা’র কথা ওর ভালো লাগে নি। আরহামে’র কি না ভালো লাগে ওর তুঁষ’কে আঘাত করা? আর ইনসুলিন যে আজ একা নিলো এখন আরহাম কি করবে? ভাবতেই আরহামে’র রাগ হলো। দাঁত দিয়ে দাঁত পিষে আরহাম। লাল হওয়া চোখ দিয়ে আশপাশ দেখে হনহনিয়ে কিচেনে চলে যেতেই তোঁষা’র ডাক পরলো,

— আরহাম ভাই, আসুন না তারাতাড়ি। আমার তো লালা পরে গেলো।
________________

রাত্রি’র অন্ধকারে যখন ঢাকা গোটা শহর তখন কফি হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে তুঁষা’র। জীবন বড্ড অগোছালো হয়ে গেল তার। তোঁষাটা’র কি অবস্থা? পুতুল’টা যে ছটফট করে। আরহাম কি তবে বেঁধে রাখলো ওকে? এক জায়গায় তো পুতুলটা বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। ওর নাকি দম আটকে আসে। বাসা ছাড়া কোথায় থাকতে পারে না। সেবার যখন এসএসসি’র আগে বার্ষিক পিকনিক এ গেলো তখন রাত এগারোটা’র দিকে কল আসে তুঁষা’রের ফোনে। ওরা এসেছিলো চট্টগ্রাম। এদিকে তুঁষা’রের কোয়াটার তখন। ফোন ধরতেই কানে আসে তোঁষা’র কান্নারত গলা,

— ভাই…. ভাই আমাকে নিয়ে যাও। আমার সাফোকেশন হচ্ছে। ভালো লাগছে না।

তুঁষা’র ব্যাস্ত হয়। আর্মি ম্যান ঝটপট জানায় তার পুতুল’কে,

— পুতুল। ভাই’য়ের জান। ভাই আসছি বাচ্চা। একটু ধৈর্য ধর।

— এখনই আসো ভাই। ভালো লাগছে না।

বলেই ডুকরে উঠে তোঁষা। তুঁষা’র একাই বের হয় আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে। তোঁষা’কে নিয়ে আসে নিজের সাথে। সেদিন সারারাত দুই ভাই-বোন চট্টগ্রামের রাস্তা ভ্রমণ করেছিলো। নিকোষ কালো অন্ধকার ভেদ করে হাস্যজ্বল তোঁষা’র মুখটা যেন চিকচিক করছিলো।

পিছনে কারো অস্তিত্ব টের পেতেই তুঁষা’র বাস্তবে ফিরলো। পাশেই তথ্য দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা তুঁষা’রের জুনিয়র তবে এত বছর ধরে একসাথে থাকতে থাকতে তাদের মাঝে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে কিছুটা। তথ্য নিজের কাঁধ সমান চুলগুলোতে দুটো বেণী করাতে একদম বাচ্চা বাচ্চা এক ভাব ফুটে উঠলো তার চেহারায় অথচ নারীটি’র বয়স তুঁষা’র থেকে বছর দশ কি বারো কম হবে। পার্থক্য ততটাও না আবার কম ও না। তথ্য ধীরে জানতে চাইলো,

— কিছু কি হয়েছে?

— না।

— মনে হচ্ছে…

— লিফ তথ্য।

— তুঁষা…

— আ’ম ইউর স্যার। কল মি স্যার ওকেই নট তু্ঁষা’র।

কথাটা বলেই চলে যায় তুঁষা’র। তথ্য’র সাথে অতটাও ভালো সম্পর্ক তার নেই যে পুতুলের ব্যাপারটা শেয়ার করবে। এদিকে তথ্য মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। লোকটা তাকে অপমান করে গেলেও কেন জানি ওর খারাপ লাগলো না।
.
তোঁষা ঘুমালো ঘন্টা খানিক আগে। ঘুম কি সে সহজে এলো? আরহাম কত কত কথা বলে, মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ালো। যখন বুঝলো তোঁষা সম্পূর্ণ ঘুম তখনই আলমারি’র একটা ড্রয়ার খুলে একটা ইনজেকশন রেডি করলো ও। তোঁষা’র কাছে এসে বা হাতটাতে পুশ করতেই তোঁষা “উহ” শব্দ করে। আরহাম তৎক্ষণাত তোঁষা’র পাশে শুতেই তোঁষা ঘুমের মধ্যেই বললো,

— এত উপরে মশা কেন আরহাম ভাই?

আরহাম উত্তর করে না। তোঁষা যখন পুণরায় ঘুমালো তখন আরহাম ওকে বুকে চেপে নিলো। কানে কানে ফিসফিস করে জানালো,

— তোকে আগেই জানিয়ে রাখলাম তুঁষ। পরে বলবি আগে কেন জানাই নি। তুই শুধু আমাকে ভালোবাস। আমাকেই চিন। তোর প্রথম আর শেষ আমিই হই। তোর পাপ আর পূর্ণ্য ও আমিই হই। সব ভুলে যা তুই তুঁষ। শুধু আমার প্রাণ হয়ে থেকে যা।

#চলবে……?

#প্রিয়_প্রাণ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ১১(বর্ধিতাংশ)

অফিসে’র কাজেই ইদানীং বুদ হয়ে থাকছে আদনান। যথাসম্ভব চেষ্টা নিজেকে শান্ত রাখা। কাজে কাজে ব্যাস্ত রাখা। নিজের ভেতরের কষ্ট কাউকে দেখাতে ইচ্ছুক না ও। আদনানে’র নিজের উপর ও মাঝেমধ্যে ঘৃণা জন্মায়৷ মনে হয় যা হয়েছে ঠিক হয়েছে। আদনান এটার ই যোগ্য। এই কষ্ট, দুঃখ, বুকের চিনচিন ব্যাথা আর রাতে ঘুম না আসা সকল কিছুর জন্য দায়ী আদনান নিজেই। কতটাই না ঘৃণিত তার ভালোবাসা। নিজের আপন বড় ভাইয়ের ভালোবাসা’র মানুষ’কে ভালোবাসাটা অবশ্যই পাপ। জেনে শুনে আদনান সেই পাপে পা দিয়েছিলো। ফলাফল সরুপ নিজেই দগ্ধ হচ্ছে তার অনলে। ভালোবাসা’র প্রত্যেকটা স্ফুরণ তাকে জ্বালিয়ে মা’রছে রোজ রোজ। আদনান জানে না কিভাবে মুক্তি মিলবে। আদৌ কি কোনদিন ভুলতে পারবে তোঁষা’কে? ল্যাপটপে চলমান আঙুলগুলো নিমিষেই থেমে যায় আদনানে’র। এক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে ফকফকা স্ক্রিনটা। কল্পনায় হঠাৎ ই যেন ভেসে উঠে কিছুদিন আগেই ঘটনা যখন হুট করে বাবা-চাচা তার রুমে প্রবেশ করে।

~তুরাগ আর তুহিন আদনানে’র রুমে আসতেই আদনান ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করে,

— কিছু কি বলবে আব্বু?

তুরাগ একবার ছোট ভাই’কে দেখে। তুহিন কিছু না বলে কাউচে বসতেই তুরাগ ও বসেন। ইশারায় ছেলেকে বসতে বলেন। আদনান ভ্রু কুঁচকায়। এমন শান্ত আচরণ বাবা-চাচ্চুর তার হজম হয় না। জিজ্ঞেস করে,

— চাচ্চু কিছু কি হয়েছে? আমার রুমে আসতে হলো যে? আমাকে ডাকলেই পারতে।

গলা খেঁকান তুরাগ। তুহিন ঠান্ডা মাথায় বলেন,

— গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিলো আদনান।

— এভাবে কেন বলছো? বলো কি কথা।

এবার তুরাগ কথা বাড়ালেন না। ছেলের পানে তাকিয়ে কিছুটা আদেশের ভঙ্গিতে বললেন,

— পুতুল’কে বিয়ে দিতে চাইছি।

আদনানে’র বুকে যেন ধাক্কা লাগে একটা। ও জানে এমনটাই হওয়ার কথা। তোঁষা’র সাথে তো আরহামে’র বিয়ে সেই ছোট থেকেই ঠিক করা তাহলে কেন আজ আদনানে’র খারাপ লাগা কাজ করছে? মাথা নিচু করেই আদনান বললো,

— হু। আমার দায়িত্বগুলো বলে দিও। সামলে নিব আমি। ভাই কি আসছে এর মধ্যে?

তুরাগ যেন খলবলিয়ে উঠলেন,

— কোথায় আসবে ঐ পাগল? তুমি বিয়ে করবে পুতুল’কে। আর কোন কথা চাইছি না।

আদনান এক মুহুর্তের জন্য থমকে যায়। মাত্র কি বললো ওর বাবা? পুতুল’কে বিয়ে করবে আদনান? তাহলে আরহাম? সে এসে যদি এমন দেখে তখন কি করবে?
এমনটা না আদনান রাজি নয় বা কিছু। তবে মুহুর্তেই তার মনে হয় এটা মোটেও ঠিক হবে না। নিজের আপন বড় ভাইয়ের ভালোবাসা’কে বিয়ে করা?
তবে বাবা-চাচা’র কথা আর মনের গহীনে থাকা তোঁষা’র জন্য এক অপ্রকাশিত অনুভূতি তাকে জেড়া করলো। আদনান প্রকাশ করে না নিজের অনুভূতি তবে রাজি হয়ে যায়,

— পুতুলে’র জন্য যেটা ভালো হয় তাই করো।

তুরাগ ছেলের কাঁধ চাপড়ে দেন। তুহিন আদনানে’র হাত ধরে বললো,

— বাবা আমার মেয়েটা অবুঝ। তুই তো জানিস ই। ওকে একটু গুছিয়ে নিও। একটু জেদী, মানিয়ে নিও।

আদনান জড়িয়ে ধরে ওর চাচ্চু’কে। ওর মনে যে কতটা আবেগ জমানো ছিলো তা প্রকাশ করতে অক্ষম হয় আদনান। উপচে পড়া সকল অনুভূতি’র জোয়ারে ভুলে বসে কতটা গর্হিত কাজ করতে যাচ্ছে সে। আদৌ কি তোঁষা রাজি কি না তাও একটাবার তার চিন্তায় আসে না।

তোঁষা যেদিন যখন কলেজ থেকে ফিরলো তখন মা তাকে খুব আদর করে আগলে নেন। নিজ হাতে খায়িয়ে দিতে দিতে বলেন,

— তোঁষা, আমরা বড়’রা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি তুমি বড়দের সম্মান করো।

তোঁষা খেতে খেতেই উত্তর করে,

— আমিও আশা করব তোমরা নিজেদের সম্মান বজায় রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছো।

মেয়ের কথার ভঙ্গিতে শুনে ওর মা বুঝেন ততটা সহজে তোঁষা রাজি হবে না। না চাইতেও বারংবার তাকে নিজেকে শক্ত খোলসে আবৃত্ত করতে হয়। না চাইতেও তোঁষা’র প্রতি কঠোর থেকেও কঠোর হতে হচ্ছে ইদানীং। তোঁষা’কে খায়িয়ে মুখ মুছে দিয়ে ওর বরাবর বসেন তিনি। ভেজা চুলগুলো ঝেড়ে দিতে দিতে অবলীলায় জানায়,

— তোমার বিয়ে ঠিক করেছি আমরা। তুমি যেমন পছন্দ করো ঠিক তেমনই ছেলে। উচ্চতা,চেহারা সব এক। শুধু পেশা ভিন্ন।

— মানে?

— আদনান।

তোঁষা যেন অগ্নিশর্মা হয়ে যায় মুহুর্তে। চিরবিরিয়ে উঠে ওর মস্তিষ্ক। দাঁড়িয়ে গিয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,

— পাগল হয়েছো? পাগল তোমরা? অসুস্থ মানুষ।

বলেই দৌড়ে থেকে বের হয়ে আদনানে’র কাছে যেতে নিলো তোঁষা। সবাই নাহয় পাগল হয়েছে তাই বলে কি আদনান ভাই ও পাগল হলো? সে কি জানে না তোঁষা আরহাম’কে ভালোবাসে? জানে। সবাই জানে। তবুও এইরকম একটা কুরুচিপূর্ণ প্রস্তাবে সে কিভাবে রাজি হয়? আদনানে’র রুমে এই প্রথম কোন নক না করেই তোঁষা ঢুকে পড়াতে কিছুটা চমকায় আদনান। ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই তোঁষা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,

— নিজের বড় ভাইয়ের হবু বউ’কে বিয়ে করতে চাইতে লজ্জা করলো না আপনার আদনান ভাই? বিবেগে বাঁধলো না একটুও? কতটা জঘন্য আপনি! আমি জানাব আরহাম ভাই’কে।
চেহারা এক হলেই মানুষ এক হয় না৷ চরিত্রহীন লোক আপনি…..

চড় খেয়ে তব্দা খেয়ে রইলো তোঁষা। ওর মা ওর মুখ চেপে ধরে টানতে টানতে নিতে বললো,

— মুখ সামলা তোঁষা। তোর বিয়ে আমি আদনানে’র সাথেই দিব। দেখি কে থামায় আমাকে।

তোঁষা মায়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সোজা বাবা’র কাছে যায়। তুহিন বুঝে মেয়ে’কে। আদরে তোঁষা’কে বুকে টেনে নিতে চাইলেই তোঁষা চিল্লিয়ে উঠে। তুরাগ আর চাচি বের হতেই তোঁষা সবার সামনে হুমকি দিয়ে বলে,

— আমাকে জোর করছো তাই না? আমি ই যদি না থাকি তখন কাকে নিয়ে এসব নিয়ে? আমার লা’শকে দিও বিয়ে।

“লা’শ” শব্দটা কানে বাজে উপস্থিত পাঁচজনের কানে। ওর চাচি দৌড়ে এসে তোঁষা’কে ঝাপ্টে বুকে চেপে ধরেন। তোঁষা’র ভালো লাগে চাচি নামক মানুষ’টাকে। মনে হয় আরহাম ভাই কাছে তার। এই নারী’র নাড়ি নেড়া ধন তার আরহাম ভাই। চাচি ওকে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিজের সাথে নিতেই তুরাগ তিরিক্ষি ভাবে আদনান’কে উদ্দেশ্য করে বললেন,

— বিয়ে হওয়ার পরপর ই নাতি নাতনি চাই আমার আদনান। নিশ্চিত আরহাম এতটাও নীচে নামবে না যে নিজের ভাইয়ের সংসার ভেঙে তোঁষা’কে নিয়ে যাবে। বাচ্চা থাকলে সুবিধা হবে। আরহাম তখন কিছু করতে পারবে না।

আদনান শুনলো। বুঝলো। ও জানে কেন ওর সাথে তোঁষা’র বিয়ে দিতে চাইছে সবাই। সবাই ভাবছে আরহাম আর যা ই করুক না কেন নিজের ভাইয়ের বউ এর দিকে নজর দিবে না বা ভাইয়ের ক্ষতি করবে না। সেখানে বাইরের কারো সাথে তোঁষা’র বিয়ে দিলে আরহাম হয়তো খু’ন করতেও পিছু পা হবে না। তাই তো শেখ বাড়ীর সকলে মিলে পরিকল্পনাটা করলো। আদনান সুযোগ নিলো। চাইলো তোঁষা’কে। তবুও যখন ও প্রশ্ন করলো,

— তোঁষা কোনদিন মানিয়ে নিবে না আমাকে। তখন? একটা বাচ্চা, একটা সংসার, একটা বিয়ের কথা হচ্ছে এখানে?

তখনই উত্তর করে তোঁষা’র মা,

— মেয়ে মানুষ। যে পাত্রে ঢালবে তার আকার ই ধারণ করবে। আমার মেয়ে। চিনি আমি। একটু আদর পেলেই গলে যাবে।

আদনান কথা বললো না। তার খুব করে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো,”তাহলে কেন পুতুল’টাকে আদর দিয়ে বুঝিয়ে ও আরহাম ভাই থেকে আগলে রাখলেন না?”

#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে