#প্রিয়_নয়নতারা
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_অষ্টম
“তোর গালে আবার কে কামড় দিলো, তারা?”
প্রশ্নটা শুনেই তারা থমকে গেলো। পেছন ফিরে দেখল রিমা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। তারা ঢোক গিলল। মনে মনে বলে উঠল,
“যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।”
তারাকে চুপ থাকতে দেখে রিমা বেগম এগিয়ে আসলেন। সন্দিহান স্বরে বললেন,
“নিজের ঘর থেকে চোরের মতো উঁকিঝুঁকি মে’রে বের হচ্ছিস। আবার গালে কামড়ের দাগ৷ ব্যাপার কি, তারা?”
তারা মেকি হাসল৷ আমতা আমতা করে বলল,
“কই? চোরের মতো উঁকিঝুঁকি মা’রতে যাবো কেন, চাচি? আমি তো দেখছিলাম সবাই কোথায়?”
বলেই আবার হাসল। রিমা বেগম এখনো সন্দিহান দৃষ্টিতেই তারার দিকে তাকিয়ে আছেন। পুনরায় প্রশ্ন করলেন,
“গালে এটা কিসের দাগ? কামড়ের? কিন্তু কে কামড় দিলো তোকে?”
তারার মন চাইলো মুখের উপর কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিতে। আরে বাবা এমন নির্লজ্জের মতো কেউ কাউকে এভাবে প্রশ্ন করে? আজব ব্যাপার! কিন্তু এখন রাগলে চলবে না। ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলাতে হবে। তারা একটু লজ্জা লজ্জা হাসি দিয়ে বলে উঠল,
“চাচি, এভাবে প্রশ্ন করবেন না। আমার লজ্জা লাগছে।”
রিমা বেগম ভ্রু যুগল কুঁচকে তাকালেন। বললেন,
“এভাবে গালে সাইনবোর্ড লাগিয়ে ঘুরে বেড়ালে যে কেউ প্রশ্ন করবে। আর এখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? বাড়িতে ছোট বাচ্চা কাচ্চা আছে তারা কামড় দিতেই পারে। সেইজন্যই জিজ্ঞেস করেছি, কোন বাচ্চা কামড় দিয়েছে।”
তারা মুখ চেপে হাসল। রিমা বেগমকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। তারার এহেন কান্ডে সে বেশ খানিকটা অবাক হলো বটে৷ তারা তো তাকে দুচোখে সহ্য করতে পারেনা। তাহলে হঠাৎ এত ভাব কিসের জন্য? তারা এবার রিমা বেগমের কানে ফিসফিস করে বলে উঠল,
“ডিয়ার হবু শাশুড়ী মা, আপনার ঘরে বড় একটা বাচ্চা থাকতে, কোনো ছোট বাচ্চার সাহস হবে না আমাকে কামড় দেওয়ার। তাই বলছিলাম কি, এভাবে ছেলের বউকে যখন তখন প্রশ্ন করে লজ্জায় ফেলে দিবেন না।”
বলেই তারা সেখানে আর দাঁড়াল না। হনহন করে ছুটল অন্য দিকে। আর রিমা বেগম তব্ধা খেয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছেন। কি বলে গেলো মেয়েটা? তার মানে তারার গালে কামড় ফা…? ভেবেই নিজে নিজেই কপাল চাপড়ে বলে উঠলেন,
“ছিঃ! ছিঃ! আমার ছেলেটাও দেখছি আজকাল বড্ড নির্লজ্জ হয়ে গেছে। ছিহ! এই ছেলেকে আমি এই শিক্ষা দিয়ে বড় করেছি? হায়, আল্লাহ!”
ফাহিমের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে তিনি ছুটলেন রান্না ঘরের দিকে। রিমা বেগম চলে যেতেই তারা শব্দ করে হেসে উঠল। রিমার বেগমের মুখটা দেখার মতো ছিলো। তারার থেকে নিশ্চয়ই এমন উত্তর আশা করেন নি, ভেবেই তারার আরো জোরে হাসি পাচ্ছে। হাসতে হাসতে পেটের খিল ধরে যাচ্ছে তবুও হেসে যাচ্ছে।
“এভাবে একা একা গা’ধার মতো হাসছিস কেন?”
হুট করে চেনা কণ্ঠ স্বর শুনে চমকে গেলে তারা। দেখল নয়ন দাঁড়িয়ে আছে। নয়নকে দেখেই তারার হাসি থেমে গেলো। মুহূর্তেই হাস্যজ্বল মুখে রাগের আভাস ফুটে উঠল। নয়নের সামনে এসে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়াল। নয়নের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“তুমি কি আমাকে গা’ধা বললে?”
“গা’ধাকে তো গা’ধাই বলতে হয়।”
তারা নাক মুখ কুঁচকে বলল,
“ছিহ! তুমি আমার জেন্ডার চেঞ্জ করে ফেললে?”
নয়ন প্রশ্নোত্তর চোখে তাকাল। বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করল,
“মানে?”
তারা দাঁতে দাঁত চে’পে উত্তর দিলো,
“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন গা’ধার ফিমেল ভার্সল হচ্ছে, ‘গা’ধি’। সো, আমাকে গা’ধা নয় গা’ধি বলতে পারো।”
নয়ন বিস্মিত চোখে তাকাল। বলল,
“তার মানে স্বীকার করলি তুই গা’ধি?”
তারা খুবই অসহায় মুখ করে বলে উঠল,
“স্বীকার না করে আমার কি আর উপায় আছে বলো? আমার স্বামী এই প্রথম আমাকে ভালোবেসে এত সুন্দর একটা নাম দিয়েছে। স্ত্রী হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না? স্বামীর ভালোবাসাকে সম্মান জানানোর জন্য হলেও স্বীকার তো করতেই হবে, বলো?”
বলেই ফিক করে হেসে দিলো। নয়ন তারার কান ধরে বলে উঠল,
“তবে রে, পাকামো হচ্ছে খুব। একবার পাই তখন দেখিস কি করি?”
তারা একটু এগিয়ে গেলো। নয়নের দিকে সামান্য ঝুঁকে বলল,
“জানি তো আদর করবে। এইযে নাও, সামনেই আছি আদর করে দাও।”
হুট করে তারা এত কাছে আসায় নয়ন ভড়কে গিয়েছিল। তারার মুখে এমন কথা চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। তারা নয়নের এমন ফেস দেখে হিহি করে হেসে উঠল। নয়নের দুই কাঁধে হাত রাখল। চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করল,
“ভয় পাচ্ছো, জান?”
নয়ন চারদিকে নজর বুলালো। কি করছে মেয়েটা? এখানে কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে৷ নয়ন ভয়ার্ত স্বরে বলল,
“কি করছিস? সরে যা। কেউ দেখে ফেললে খারাপ হবে ব্যাপারটা।”
তারা সরল না। বরং আরো ঘনিষ্ট হলো নয়নের সাথে। বলে উঠল,
“দেখুক। তাতে আমার কি? আমি আমার জামাইয়ের সাথে রোমান্স করছি। অন্য কারোর সাথে না। বুঝলে?”
নয়ন মুচকি হাসল। তারার নাক টেনে বলল,
“বুঝেছি, ম্যাডাম। কিন্তু এখন সরুন। ওইদিকে অনেক কাজ আছে।”
“আগে আমাকে আদর করো। আমাকে আদর করার চাইতে বড় কাজ আর কিছু নেই, বুঝছো?”
নয়ন হেসে দিলো। তারার কোমর জড়িয়ে নিজের সাথে আরো মিশিয়ে নিলো। তারার নাকে নাক ঘষে বলে উঠল,
“আর মাত্র একদিন। তারপর তোমাকে এমন আদর করব যে, তুমি সামলাতে পারবে না।”
“নির্লজ্জ লোক কোথাকার!”
“আমার বউকে বলেছি, তোর জ্বলছে কেন?”
তারা প্রতিউত্তরে হাসল। হুট করে চোখ গেলো নয়নের গলায় থাকা কালো তিলটার দিকে। নয়নের ফর্সা গলায় তিলটা ফুটে উঠেছে। তারার খুব ইচ্ছে হলো সেখানটায় ঠোঁট ছোঁয়াতে। কিছুক্ষণ চেষ্টা করল নিজের ইচ্ছাটাকে দমিয়ে রাখতে। কিন্তু পারছে না। চোখ বার বার সেদিকে চলে যাচ্ছে। এর মাঝে নয়ন হুট করে তারার কপালে চুমু খেয়ে বসল। আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো তারা। কানে ভেসে আসল,
“তুমি আমার প্রিয় তারা।”
তারা চোখ খুলল। নয়নের দুই গালে হাত রেখে নয়নের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো। বলে উঠল,
“প্রিয় নয়নের প্রিয় তারা।”
নয়নও তাল মিলিয়ে বলল,
“প্রিয় নয়নতারা।”
এরপর দুজনেই একসাথে হেসে উঠল। তারা হাসতে হাসতেই বলল,
“ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি!”
বলেই নয়নকে জড়িয়ে ধরল। নয়নও আকঁড়ে ধরল প্রিয়তমাকে। পরক্ষণেই তারাকে সরিয়ে দিতে দতে বলল,
“এবার ছাড়েন, ম্যাডাম। অনেক প্রেম ভালোবাসা হয়েছে।”
তারা ছাড়ল না। আরো শক্ত করে ধরল। নয়ন এবার একটু কড়া স্বরেই বলল,
“ছাড়তে বললাম তো? ছেড়ে দে৷ কেউ দেখলে বাজে কথা রটাবে আবার৷ আমি চাইনা আর কেউ তোর নামে বাজে কথা বলুক।”
তারা ছাড়ল। কিন্তু দূরে গেলো না। নয়নের গা ঘেষে থেকে, নয়নের গালে হাত রেখে বলল,
“যে যা খুশি বলুক। আমার তাতে কিছু আসে যায় না। আমার পাশে আমার নয়ন আছে। আমার স্বামী আছে। তার বুকে আমার ঠাঁয় আছে। এতকিছু থাকতে লোকের কথার কান দিতে যাবো কেন?”
নয়ন হাসল। মেয়েটা বড্ড বকবক করে। বলল,
“এবার থামেন, ম্যাডান। তনয়া ডাকছে সেদিকে যান।”
“ভালোবাসি বলেন।”
নয়ন হেসে বলল,
“ভালোবাসি।”
তারাও প্রতিউত্তরে বলল,
“ভালোবাসি।”
“হয়েছে, এবার যান।”
“যাচ্ছি তবে আমার একটা কাজ আছে।”
“কি কাজ?”
নয়নের প্রশ্নের উত্তরে তারা, “দেখাচ্ছি।” বলে দেরি না করে সাথে সাথে নয়নের গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। গভীর ভাবে চুমু এঁকে দিলো সেখানেটায়। ছেড়ে দেওয়ার সময় জোরালো ভাবে কামড় দিয়ে বসল। ব্যাথায় একটু নড়েচড়ে উঠল নয়ন। কামড় দিয়েই তারা আর আর এক সেকেন্ডও দাঁড়াল না। দৌঁড়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো। আর নয়ন ঘটনার আকস্মিকতায় ভ্যাবলাকান্তের মতো দাঁড়িয়ে রইল। হুট করে কি হয়ে গেলে? সব বেচারার মাথার উপর দিয়ে গেলো। আনমনে নিজে নিজেই বলে উঠল,
“ডেঞ্জারাস গার্ল!”
#চলবে