প্রিয় চন্দ্রিমা পর্ব-১০

0
591

#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#১০ম_পর্ব
ঐ বাসা ছেড়ে নিজের বাসায় আসার আজ প্রায় তিন মাস হলো। মাঝে মাঝে তাদের কথা অনেক মনে পড়ে। মাঝে মাঝে অবন্তীর সাথে কথা হয়। সেখানে আমার অনেক না জানা প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে। অনেকেই আমার থেকে কিছু না কিছু লুকিয়েছে সেটা তাদের আচরণেই বুঝতে পারছিলাম। তবে আসার আগে আমার সহস্র প্রশ্নের উত্তর হিসাবে আব্বু শুধু আমায় একটা কথাই বলেছিলো ” তোমার গলার এই কাটা দাগটা তোমার দাদুর দেওয়া ” তাহলে আম্মু এতোদিন আমায় মিথ্যা বলেছিলো যাতে আমার পরিবারের প্রতি আমার কোনো ঘৃণা না জন্মায়।

কাজ থেকে ফিরে রুমে শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছি। অবন্তীর কল আসলো।
– ভাইয়া জানো আজ আমি অনেক খুশি।
– হঠাৎ এতো খুশি হওয়ার কারণ কি শুনি?
– আমার তো এইচএসসি পরীক্ষা শেষ, এখন এডমিশন টেষ্ট এর জন্য আব্বু আমায় তোমার ওখানে পাঠাবে। আব্বু নিজেই বলেছে আমায়।
– তাই! এটা তো আসলেই অনেক খুশির কথা। ছোট মা কিছু বলেনি?
– আম্মুকে তুমি ভয় দেখিয়ে গেছো না! তাই আম্মু হয়তো কিছু বলেনি।
– তুমি কবে আসবে?
– আগামী পরশু হয়তো রওনা দিবো।
– আমি গিয়ে নিয়ে আসবো?
– না, আমি যেতে পারবো।
– এতটা পথ একা একা আসবে বোরিং লাগবে তো।
– একা যাবো না তো। চন্দ্রিমা আমার সাথে যাবে। ও তো এডমিশন টেষ্ট দিবে।
– আচ্ছা।
– তুমি শুধু সময় মতো আমাদের রিসিভ করবে তাতেই হবে।
– সেটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না পাগলী বোন আমার। তোমার ভাই যথা সময়ে পৌঁছে যাবে।

অবন্তী আসলে ওকে তো একটা সুন্দর রুম দিতে হবে থকতে। এই বাসায় আমার রুম আর আম্মুর রুমের স্পেসটা একটু বড় বাকী যে গুলো আছে সেগুলো তুলনামূলক ছোট। কাল সারা দিন সময় পাবো না জন্য আজ রাতেই রুম পরিস্কার করতে শুরু করে দিলাম।
সাধারনত আম্মুর রুমের কোনো জিনিসে আমি কখনো হাত দেই নি। আম্মুর মৃত্যুর পর এই রুমে আসাই কমিয়ে দিয়েছি। মায়া আসতো এই রুমে কিন্তু ওর বিয়ে হবার পর এই রুম অনেকটা মরুভূমি হয়ে আছে জনমানবহীন।

বিছানা গুছানো শেষ। আলমারি থেকে আম্মুর কাপড় গুলো বের করে অন্য রুমে রেখে দেই। তাহলে অবন্তী ওর কাপড় আলমারিতে রাখতে পারবে। আলমারির সব কাপড় সরানোর পরে সেখানে একটা ডায়েরি আমার নজরে আসলো। ডায়েরিটা হাতে নিতেই ভিতরে থেকে একটা ছবি মাটিতে পড়ে গেলো। সেখানে আব্বু আর আম্মু ছিলো। আম্মুর কাছে আব্বুর ছবি থাকা সত্বেও কোনো দিন আমায় দেখায়নি! এমনটা কেন?

ডায়েটি হাতে নিয়ে মায়া কে কল করে জিজ্ঞেস করলাম- মায়া, তুমি কি আম্মুর কোনো ডায়েরির ব্যাপারে কিছু জানো?
মায়া কিছুক্ষণ ভাবলো তারপর বললো- আম্মুর একটা ডায়েরি ছিলো। সেটার কথা তো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম। উনি মাঝে মাঝে ওটাতে লেখালেখি করতো। কিছু জিজ্ঞেস করলে বলতো আমি যখন থাকবো না তখন পড়বি তাহলে জানতে পারবি আমি কি লিখেছি।
– ওহ আচ্ছা।
– তুমি কি ডায়েরিটা পেয়েছো ভাইয়া?
– হ্যাঁ। ওহ তোমায় একটা কথা জানাতে ভুলেই গিয়েছি।
– কি কথা ভাইয়া?
– পরশু অবন্তী আসছে আমাদের বাসায় কয়েকদিন থাকতে।
– আব্বুর মেয়ে মানে আমাদের বোন?
– হ্যাঁ।
– তুমি কিন্তু ভাইয়া আমায় বাসায় নিয়ে যাবে ও আসলে।
– পাগলী মেয়ে এটা তো তোমারও বাসা নিয়ে আসতে হবে কেন ! চলে আসবে তুমি।
– তুমি এসে নিয়ে গেলে তখন বেশ কিছু দিন থাকতে পারবে।
– আচ্ছা। আমার চাপ কমলে গিয়ে নিয়ে আসবো। কেমন!
– আচ্ছা ভাইয়া।

ডায়েরি টা আমার রুমে নিয়ে আমার আলমারিতে রাখতে যাবো কিন্তু খুব আগ্রহ কাজ করছে ভিতরে কি লেখা আছে সেটা জানার জন্য। নিজের কৌতুহল কে সংযত করতে না পেরে ডায়েরির শেষ লেখা কি ছিলো সেটা দেখার জন্য শেষের দিকে পাতা খুললাম। এই পাতায় লেখার সময় আম্মু কান্না করেছিলো ডায়েরির পাতায় স্পষ্ট পানির দাগ লেগে আছে। লেখাটা প্রায় এক বছর আগের। সেখানে লেখা আছে ” আজ আবার তোমার সাথে আমার দেখা হলো। তোমার সাথে এই দীর্ঘ সময়ে হাতে গোনা কয়েকবার দেখা হয়েছে। তুমি যেটুকু সময় পাশে থাকো সেই সময়টুকু আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়ের তালিকায় যোগ হয়। তবে তুমি বললে আমাদের আর কখনো দেখে হবে না। কারণ রিয়া আমাদের দেখা করার ব্যাপারে কিছুটা আন্দাজ করছে। রিয়ার ভাই তোমাকে ফলো করে ইদানীং। তবে এতে আমার কোনো ভয় কাজ করে না। খুব বেশি কিছু হলে আমার এই পৃথিবীতে থাকা হবে না। ওরা যে তোমার কোনো ক্ষতি করবে না সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। তবে তোমায় দেখতে দেখতে তোমার কোলে মাথা রেখে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে পারলেও নিজেকে পরম ভাগ্যবতী মনে করবো আমি। তবে আজকে অবন্তীর ছবি দেখলাম মেয়েটা তোমার মতোই হয়েছে। ও যখন আমায় দেখতে চায় তবে ওকে সাথে করে নিয়ে আসলেই পারতে মেয়েটাকে কিছুদিন রেখে দিতাম আমার কাছে। ”

সেখানে একটা খাম টেপ দিয়ে আটকানো। খামের ভিতরে অবন্তীর ভিন্ন বয়সের প্রায় পাঁচ ছয়টি ছবি ছিলো।
আব্বুর সাথে আম্মুর রেগুলার না হলেও মাঝে মাঝে যোগাযোগ হতো। আমাদের আড়াল করে আম্মু আব্বুর সাথে দেখা করতো । কিন্ত অবন্তীর মামার জানার বিষয়ে আম্মু এমনটা কেন ভেবেছিলো যে এতে তার প্রাণ যাবে!
ডায়েরিটা রাখতে যাবো তখন আবার কৌতুহল বশত মাঝের একটা পেইজ খুললাম। সেখানে আমার দৃষ্টি শক্তি আটকে গেলো। আম্মু আর ছোট মা একজন অপর জন কে জড়িয়ে আছে। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব!

To be continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে