#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৯ম_পর্ব
গতকাল যে বাড়িতে হৈ-হুল্লোড় ছিলো আজ সেই বাড়ি একদম নিশ্চুপ। সকালে খাবার টেবিলে দাদু বলছিলো- বিয়ে শেষ হয়ে গেছে এখন তুমি চলে যেতে পারো।
দাদুর কথায় উত্তর দিলো মেজো চাচী – সুমন তো এই বাড়ির ছেলে, এখানে থেকে গেলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে!
– তুমি কবে থেকে মুখে মুখে কথা বলতে শিখলে! নাকি এই ছেলে তোমাদের বেয়াদবি শেখাচ্ছে?
মেজো চাচীকে সাপোর্ট দিচ্ছে আব্বু – এখানে থাকার অধিকার আছে ওর। ও চাইলে এখানে থেকে যেতেই পারে।
– আমি আমার বাসায় কোনো বেয়াদবকে রাখবো না।
– আমায় নিয়ে আপনাকে এতো চিন্তা করতে হবে না। আমি আগেই বলেছি আমি এখানে থাকতে আসিনি। আজকের কোনো টিকেট পাইনি। আগামী কাল রাতেই আমি চলে যাবো। এই বিষয় নিয়ে নিজেদের মাঝে এতো আলোচনা করে দূরত্ব বাড়াতে হবে না। আমি যেমন এসেছি আবার তেমন চলেও যাবো।
খাবার টেবিলে নিরবতা ছেয়ে গেলো।
দাদু, ছোট মা আর অবন্তী ছাড়া বাসার সবাই একে একে শুধু মাত্র এটা বলার জন্য আমার রুমে আসছে ” তুমি থেকে যাও ”
এখন দুপুর
বড় বড় দুইটা লাল চোখ নিয়ে অবন্তী আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। সে যে কান্না করছে এতক্ষণ সেটা বোঝাই যাচ্ছে। অবন্তী কে কাছে বসালাম – পাগলী মেয়ে কান্না করছো কেন?
– তুমি কেন চলে যাবা? তুমি আমার কাছে থেকে যাও না প্লিজ!
– পাগলী মেয়ে আমার তো একটা বাসা আছে। সেখানে আমার জব আছে। আমি এখানে থাকলে হবে?
– আমি এতো কিছু জানিনা তুমি থেকে যাও।
– আমার নাম্বার তো এখন তোমার কাছে থাকলোই। তুমি ছুটি পেলেই আমার কাছে ঘুরতে যেতে পারবে।
– তোমার মনে হয় আম্মু আমায় যেতে দিবে?
– না দিলে আমি এসে দেখা করে যাবো কেমন! তবুও কান্না থামাও। পাগলী মেয়ে একটা, কেউ এতো কান্না করে?
অবন্তী অনেক টা সময় আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করলো। বাসার সবারই কেমন যেন মন খারাপ। হয়তো আমার জন্যই। মাত্র এই কয়েকদিনে সবার সাথে এভাবে মিশে যাবো ভাবতে পারিনি।
রাতে ছাঁদে দাঁড়িয়ে রাতের আকাশের নিরবতা অনুভব করছি। হঠাৎই কেউ পিছনে থেকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
প্রথমে অবন্তী ভেবে কিছু বলিনি। কিন্তু এটা অবন্তী নয়। কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম কে পিছনে! কিন্তু কোনো উত্তর আসলো না। অতঃপর নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পিছনে ফিরলাম। অধরা ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– তুমি এখানে! আর আমায় এভাবে ধরেছিল কেন?
– তুমি কেন চলে যাবে?
– আমি এখানে থাকতে আসিনি। তাই চলে যেতে হবে। আমি তো এসেছিলাম অতিথি হয়ে।
– তোমার সাথে আমাকেও নিয়ে যাও।
– কোথায় যাবে তুমি?
– তোমার সাথে তোমার বাসায় যাবো।
– বিয়ে হোক তারপর তোমার বর সহ তোমাকে নিয়ে যাবো আমার বাসায়।
– আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
– মানে?
– আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– পাগল হয়ে গেলে নাকি? আমি তোমার ভাইয়া। নিজের ঘুমন্ত বিবেক কে জাগাও।
– আমার তোমাকে খুব ভালো লাগে। আমি তোমাকেই বিয়ে করবো।
– তোমার এখনো বিয়ের বয়স হয়েছে? আগে নিজের পড়ালেখা শেষ করো। তাছাড়া আমাকে তো তুমি ভালো করে চেনেই না।
– আমি চিনতে চাই না।
– মিষ্টি বেন আমার পাগলামি করে না। তুমি বড় হও আমি তোমাকে আমার বাসায় ঘুরতে নিয়ে যাবো।
– আমি তোমার বোন না।
– আচ্ছা শোনো, তুমি যে আমায় এসব কথা বলেছো সেগুলো যেন কেউ না জানে কেমন! তুমি বড় হয়ে নাও, নিজের পড়ালেখা শেষ করো। তারপর ভেবে দেখবো তুমি আমার বোন নাকি অন্য কিছু। তবে পড়ালেখা শেষ হওয়া পর্যন্ত তুমি আমার বোন। কেমন!
– তুমি সত্যি বলছো তো?
– একদম।
– আচ্ছা, নিচে তোমায় খেতে ডাকছে। তাড়াতাড়ি আসো।
– তুমি যাও আমি আসছি।
অধরা চলে গেলো। মানুষ আবেগের বয়সে কত কিছুই না করে। অল্পতেই যে কাউকে ভালো লেগে যায় আবার অল্পতেই কারো প্রতি ঘৃণা জন্ম নেয়। অল্প আঘাতেই অনেক বেশি কষ্ট হয় আবার মাঝে মাঝে প্রবল আঘাত ও বিন্দু মাত্র ব্যাথা দিতে পারে না।
খাওয়া শেষ করে ছোট মা’র রুমে আবার গেলাম।
– কি সমস্যা! আমার রুমে কেন আসছো?
– গত পরশু একটা কথা জিজ্ঞেস করতে আসছিলাম।
– ওহ হ্যাঁ। বলো কি কথা!
– আপনি সেন্ট্রাল জেলে কেন গিয়েছিলেন?
– তুমি কি আমায় ফলো করো?
– আমি সেখানে একটা কাজে গিয়েছিলাম। আপনাকে দেখলাম তাই জিজ্ঞেস করলাম।
– তোমার কাজ থাকতে পারে আমার থাকতে পারে না?
– আমি সেখানে জেলার এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আপনি সেখানে কোনো কয়েদির সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন। যদি কোনো সাহায্য লাগে তবে অবশ্যই আমায় বলতে পারেন বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারবো।
– আমার কোনো সাহায্য লাগবে না। তুমি তাড়াতাড়ি এই বাসা থেকে চলে গেলেই বেশি খুশি হবো। দয়া করে এই সাহায্য টুকু করো।
মুচকি হেঁসে বললাম- আমি এখানে থাকতে আসিনি। তবুও আমাকে নিয়ে আপনাদের চিন্তার শেষ নেই। যদি থাকতে আসতাম তাহলে না জানি আপনাদের কি অবস্থা হয়ে যেতো। একটা কথা বলুন শুনি, আমায় নিয়ে এতো ভয় কেন! আমার আম্মু তো নেই যে আপনার থেকে আপনার স্বামী কে নিয়ে যাবে। তবে কেন এতো ভয়!
– কিসের ভয়! তোমাকে কেন ভয় পাবো? তোমাকে আমার সহ্য হয় না। তাই তুমি যত তাড়াতাড়ি এখানে থেকে চলে যাও আমার জন্য স্বস্তি আসে।
ছোট মা’র সাথে কথা বলতে সময় মোবাইলে একটা কল আসে। কথা বলতে বলতেই বেরিয়ে আসলাম। নিজের রুমে এসে কথা বলা শেষ করে ফোনটা পাশে রেখে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম৷
দরজার ফাক থেকে চন্দ্রিমা বেড়িয়ে আসলো- ভালোই তো প্রেমের কথোপকথন হচ্ছে চারদিকে।
চন্দ্রিমা কে দেখে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই। কারণ এতক্ষণ ফোনে যা কথা বলছিলাম সেগুলো শুনে ফেললো না তো আবার!
– তুমি এখানে কেন! কখন আসলে?
– আসছি তো অনেক আগেই। তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।
– আমার জন্য অপেক্ষা করছো কেন?
চন্দ্রিমা হাতে একটা ছুড়ি নিয়ে আমার গলায় ধরে।
– তোমায় বলিনি ঐ মেয়ে তোমার চারদিকে বেশি ঘুরঘুর করছে ওর থেকে দূরে থাকতে!
– গলা থেকে এটা সরাও। কেটে যাবে। তাছাড়া ও ছোট মেয়ে এটা ওর আবেগের বয়স। এখন ওর বিবেক এর থেকে আবেগ বেশি প্রধান্য পাবে।
চন্দ্রিমা হঠাৎ আমার কথা থেকে মনোযোগ সরিয়ে আমার গলাশ খুব মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখতে লাগলো।
– তোমার গলায় এই কাটা দাগটা কিসের?
– ওটা আম্মু বলছে ছোট বেলায় নখ বড় ছিলো আমার ঐ নখ দিয়ে কেটে গেছে।
– কিন্তু মনে হচ্ছে এটা কোনো ধারালো ছুড়ি দিয়ে কেটে গেছে।
– তোমার মনে হলেই তো আর হবে না।
– যাই হোক, ওর আশেপাশে যেন আর না দেখি।
চন্দ্রিমা চলে যাচ্ছে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। হয়তো আমার কথা শুনতে পায় নি। কিন্তু হঠাৎই থেমে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো- তুমি ফোনে কিসের কথা বলছিলে! কাকে মারার কথা না গুম করে দেওয়ার কথা! ঠিক বুঝতে পারি নি।
– তুমি শুনতে ভুল করছো আমি এমন কিছুই বলিনি। আমি তো আমার বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম।
চন্দ্রিমা আমার কথা বিশ্বাস করে চলে গেলো। আমিও প্রশান্তির একটা শ্বাস ছাড়লাম।
To be continue…