#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৮ম_পর্ব
” ভাইয়া কোথায় ছিলে! সারাটা বিকেল তোমার কোনো পাত্তা নেই। “- বাসায় ঢুকতেই অবন্তীর প্রশ্ন।
– একটু কাজ ছিলো তাই বাইরে ছিলাম। কেমন আনন্দ করলে আজ সারাদিন?
– আজকের দিনটা স্বপ্নের মতোই কেটেছে। রাদিয়া আপু তোমায় দেখা করতে বলছে।
– কোথায় ও?
– ওর রুমে।
রুমে গিয়ে মোবাইলটা চার্জে দিয়ে রাদিয়ার রুমে নক করলাম – আসবো!
– না, একদম আসবে না।
– আচ্ছা তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।
– যাবেই তো। আমি কে যে আমার রাগ ভাঙ্গাবে তুমি।
– তুমি তো ভিতরে আসতেই দিচ্ছো না।
ওপাশে থেকে কোনো শব্দ আসছে না।
– আমি কি আসবো?
– আসো।
– আমার উপর এতো রাগের কারণ কি শুনি?
– তুমি কোথায় ছিলে দুপুরের পর থেকে!
– আমায় খুঁজছো নাকি! নতুন বউ, যাকে কেন্দ্র করে বাসার সবাই আনন্দ করবে। সে কেন আমায় খুঁজছে শুনি।
– জানো ভাইয়া দাদু আমায় অনেক কথা শুনিয়েছেন।
– কেন?
– এই যে আমি বিয়ে করতে রাজি হইনি। তারপর আবার তোমার কথায় রাজি হয়েছি তাই।
– বিয়েটা হোক তারপর উনাকে ছোট একটা শিক্ষা দিবো আমরা সবাই মিলে। কেমন!
– সেটাই ভালো হবে। আমি শুনেছি তোমার আম্মু কে বড় বাবা এই বাসায় আনতে পারেনি শুধু মাত্র দাদুর জন্য। যে কারণে আমরা তোমার থেকে দূরে ছিলাম এতো দিন। উনাকে তো একটা শিক্ষা দিতেই হবে। সব সময় নিজের জিদ টা কে বড় মনে করে।
– তুমি কি করে জানলে! আম্মু কে দাদু এই বাসায় আনতে দেয় নি?
– আমি শুনেছিলাম। বড় বাবা একদিন বলেছিলো।
– আর কি কি জানো?
– আর তেমন কিছু জানি না। তবে জানো শুভ্রর সাথে আমার কথা হয়েছে। অনার্স শেষে মাস্টার্স করার জন্য পারমিশন ও পেয়ে গেছি।
– বলেছিলাম না তোমার স্বপ্ন পূর্ণ হবে। আমি তাহলে এখন আসি। বাইরে থেকে আসলাম তো ফ্রেশ হওয়া বাকী এখনো।
– ওহ, ভালো কথা। কোথায় ছিলে তুমি!
– এখানে এক পুরোনো বন্ধু আছে তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম।
– আমাদের এলাকায় তোমার বন্ধুও আছে! ভালো।
আমার রুমে বেডের উপর চন্দ্রিমা ল্যাপটপ নিয়ে কি যেন করছে।
– তুমি এখানে কি করছো?
– ছবি দেখছি।
– কিসের ছবি!
– আজ সকালে যেগুলো তুললাম সেগুলোই।
– সেগুলো দেখার জন্য কি আমার রুমটাই পরে ছিলো। নিজের রুমে যাও।
– ছবি গুলো তোমাকে দেখাবো তাই তোমার রুমে আসলাম।
– কি দেখাবা আমায়!
– এই যে, অধরা সব সময় আপনার সাথে এমন চিপকায় আছে কেন!
– আমি তো খেয়াল করিনি। তাছাড়া ও আমার বোন। আমার সাথে চিপকায় থাকতেই পারে।
চন্দ্রিমা একটা ছবি জুম করে দেখালো- ওর চাহনি দেখে কি তোমার তাই মনে হয়?
– আমি মাঝে মাঝে মানুষের মুখের ভাষাই বুঝতে পারি না। চাহনির ভাষা বুঝবো কিভাবে?
– বুঝতে হবে না। তবে ওর থেকে দূরে থাকবে।
চন্দ্রিমার কথায় আমার তেমন মনোযোগ নেই। খোলা দরজা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি ছোট মা হনহন করে নিজের রুমে যাচ্ছে।
– চন্দ্রিমা, তুমি এখন তোমার রুমে যাও। আমরা পরে একসময় এবিষয়ে কথা বলবো কেমন!
– এখানে তেমন কোনো কথা নেই শুধু ওর থেকে দূরে থাকলেই হবে।
– আচ্ছা।
চন্দ্রিমা চলে গেলো। ওয়াশরুমে গিয়ে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ছোট মা’র রুমে আসলাম।
– আসবো?
– কে!
– আমি, সুমন। আসবো ভিতরে?
– কোনো দরকার!
– একটু কথ বলতাম।
– এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। পরে ডাকবো।
– আচ্ছা।
বাসায় দাদুর সাথে সবারই একটা দূরত্ব বেঁধে গেছে। সেই দূরত্বের কারণ মনে হয় আমি নিজেই। দাদু নিজের মতো করে সবাইকে চালাতে পছন্দ করে। আগের মানুষ যেমন হয় আর কি। বাবা চাচ্চু সবাই ছিলো দাদুর বাধ্যগত। কিন্তু আমি আসার পর আমার পক্ষ নিয়ে সবাই কমবেশি দাদুর বিপক্ষে কথা বলেছে। এটা সম্পূর্ণ উনার নীতির বিরুদ্ধে।
রাতে খাওয়া শেষ হবার পর বাসার সবাই নিজেদের মতো বিয়ের প্রস্তুতি নিতে ব্যাস্ত। সবার মাঝে থেকে দাদু যখন উঠে নিজের রুমে চলে গেলো তখন ভাবলাম এটাই হয়তো সুযোগ। আমি ও দাদুর পিছনে পিছনে তার রুমে গেলাম।
– তুমি আমার রুমে আসছো কেন!
– আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
– তোমার সাথে কথা বলার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই। তুমি যাও আমি ঘুমাবো।
– দাদু, শুধু এতটুকু জানবো যে, আমার আম্মুকে আপনি এই বাড়িতে আসতে দেন নি কেন!
– যার বউ সে নিজে আনতে পারেনি এখানে আমি কি করবো! এর থেকে বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না আর বলতে চাই ও না।
জানতে চাওয়ার পিপাসা বুকে নিয়ে ফিরে আসলাম। সবার সাথে বসে আবার বিয়ের আয়োজনে অংশ নিলাম।
পরের দিন সারাটাদিন সকলের হাজারো ব্যাস্ততার মধ্যে দিয়ে কেটে গেলো। কারো সাথেই সেভাবে কথা হলো না। আব্বু অনেকের সাথে আমায় পরিচয় করিয়ে দিলো। বরযাত্রী বিদায় হবার পর মেজো চাচী কান্নায় লুটিয়ে পড়লো। তাদের অনেক আদরের মেয়ে। কিন্তু আশেপাশে মেজো চাচ্চু নেই। ওনাকে খুজতে খুঁজতে ছাঁদে এসে ওনার দেখা পেলাম।
– আপনি এখানে কি করছেন!
আমার কথার শব্দে চোখের পানি মুছে আমার দিকে তাকালো।
– মেয়েটা আমার অনেক আদরের ছিলো জানো। চলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে আমার হৃদয় কেউ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। বুকের মাঝে শূন্যতা অনুভব করছি।
– ও তো সারাজীবন আপনাদের কাছে থাকবে না তাই না। তবে ও এমন এক জায়গায় গেছে যেখানে ও আপনাদের মতোই ভালোবাসা পাবে।
– সব কিছু তো তোমার জন্য হলো। আমার মেয়ের জীবনে দেবদূত হয়ে আসলে তুমি।
– আমি বড় ছেলে হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র।
মেজো চাচ্চু খুবই কোমল হৃদয়ের মানুষ। আমায় জড়িয়ে ধরে বাচ্চার মতো কান্না জুড়ে দিলেন।
– চাচ্চু, কিছু মনে না করলে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
আমায় ছেড়ে দিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে বললো- কি জানতে চাও?
– আব্বু আর আম্মুর বিয়ের পর কি হয়েছিলো?
মেজো চাচ্চু আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো- সেটা তোমার না জানাই আমার মনে হয় সব থেকে ভালো হবে।
– আমি জানতে চাই। আমার মা’র সাথে কি ঘটেছে সেটা আমার জানতে হবে।
– তোমার মায়ের সাথে যা ঘটেছিলো সেটা ছিলো এই বাড়ির এক নিকৃষ্ট অতীত। যা শুনলে তোমার হয়তো এই বাড়ির মানুষের উপর থেকে ভালোবাসা সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে।
– আমি ( কারো আসার শব্দে চুপ হয়ে গেলাম)
আধরা এসে মেজো চাচ্চু কে ডেকে নিয়ে গেলো।
To be continue…