#প্রিয়_চন্দ্রিমা
Sumon Al-Farabi
#৭ম_পর্ব
-তুমি কাউকে ভালোবাসো! যার জন্য তুমি বিয়েতে রাজি না?
রাদিয়া চুপচাপ আমার কথা শুনছে।
– কিছু বলো। আমায় বললে তোমার জন্য ভালোই হবে। আমি নিজের সাধ্য মতো তোমায় সাহায্য করবো।
– আমার জীবনে তেমন কেউ নেই ভাইয়া। আমি আমার গ্রাজুয়েশন শেষ করতে চাই। বাবাকে কতবার বললাম আর মাত্র একটা বছর তারপর আমার গ্রাজুয়েশন শেষ হবে। তারপর বিয়ে নিয়ে ভাবতে। কিন্তু বাবা হঠাৎই সব কিছু ঠিক করে ফেললো। মনে হচ্ছে পৃথিবীতে উনি একমাত্র ভালো ছেলে।
– বিয়েতে রাজি না হওয়ার একমাত্র কারণ কি শুধুই এই গ্রাজুয়েশন!
– হ্যাঁ ভাইয়া। কিন্তু ছেলের বাবা প্রথম দিন দেখতে এসেই বলেছে ছেলের বউ সব সময় বাসায় থাকবে। পড়ালেখা করাবে না।
– তাই জন্য নিজেকে অসুস্থ বানাবে অন্যের কাছে!
– তুমি কি করে জানলে?
– আমি সবটাই জানি। তুমি জানো শুভ্র আমায় কি বলেছে?
– কি?
– তোমার ব্রেইন টিউমার তাতে কিছুই যায় আসে না ও তোমার শেষ পর্যন্ত তোমার সাথে থাকতে চায়। এই কথাটা বলতে কতটা গভীর ভালোবাসার দরকার পড়ে সেটা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না।
– আমি জানি উনি ভালো ছেলে কিন্তু ভাইয়া আমার নিজের তো কিছু স্বপ্ন আছে।
– আমি কথা দিচ্ছি তোমার সকল স্বপ্ন পুরনে শুভ্র তোমার সঙ্গ দিবে।
– তুমি কি করে জানলে?
– যে মানুষটা তোমায় ভালোবাসবে সে তোমার সব স্বপ্নকে নিজের করে নিবে। তাছাড়া শুভ্র যদি তোমার সঙ্গ না দেয় আমি তো আছি। তুমি তো জানোই এটা শহর এলাকা নয় এখানে ছোট ছোট বিষয়গুলো অনেক বড় করে দেখা হয়। এই বিয়েটা যদি শহরে হতো ভেঙে গেলেও তেমন কোনো বিষয় ছিলো না। কারণ শহরে বসবাসরত মানুষ গুলো বাঙ্গালী হলেও তাদের বেশির ভাগ ঐতিহ্য পশ্চিমাদের মতো। এলাকায় এই বাড়ির সম্মান মর্যাদা সম্পর্কে আমার থেকে তোমরা ভালো জানো। সবাইকে ইনভাইটেশন দেওয়া হয়ে গেছে। প্লিজ তুমি আর না করো না।
রাদিয়া কিছুসময় চুপচাপ থেকে বললো- আমার স্বপ্ন গুলো কি ডানা মেলবে ভাইয়া?
– অবশ্যই।
– তাহলে আমি রাজি।
– তোমায় আঘাত করার পর তোমার বাবা এসে তোমায় সরি বলছে না?
– হ্যাঁ।
– তুমি এখন গিয়ে তোমার বাবা কে সরি বলে জানিয়ে আসবা তুমি বিয়েতে রাজি আছো। কেমন!
– আচ্ছা ভাইয়া।
রাতে ছাঁদে একা একা দাঁড়িয়ে গুনগুন করছি।
” একটু জোরে গাইলে আমিও একটু শুনতে পারতাম ”
আমি পিছনে ফিরলাম। চন্দ্রিমা দাঁড়িয়ে আছে।
– তুমি কখন আসলো?
– এই তো কিছুক্ষণ হবে। এমন গুনগুন করে না গেয়ে জোরে জোরে গাইলেই তো পারেন।
– আমি অন্য কে শোনানোর জন্য গান গাই না। এই জন্য জোরে গাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
– ওহ আচ্ছা।
– এতো রাতে ছাঁদে কেন?
– বসার সবাই তো নিজের মতো ব্যাস্ত তাই নিজেকে একটু সময় দিতে আসলাম। তাছাড়া আপনি যখন ছাঁদে আসলেন তখন আপনাকে দেখেছিলাম।
– ওহ আচ্ছা।
– আকাশে চাঁদটা অনেক সুন্দর তাই না?
– চাঁদ সব সময় সুন্দরই হয়।
– চলুন কোথাও থেকে হেঁটে আসি। চাঁদের আলোয় হাঁটতে ভালোই লাগবে।
– আপনার সাথে কেন আমি হাঁটবো?
– বাসদয় সবাই কাজ করছে আপনি আর আমি ফ্রী আছি তাই।
– ছোট মা যদি জানতে পারে তার ভাইয়ার মেয়েকে নিয়ে আমি হাঁটতে বের হয়েছিলাম তাহলে আমার আর নিস্তার নেই। এমনপ হতে পারে বিয়ের আগেই আমায় বাসা থেকে বের করে দিবে।
– আচ্ছা বিয়ের পর কি আপনি চলে যাবেন?
– আমার কি থেকে যাওয়া উচিত?
– থেকে গেলেই পারেন।
চন্দ্রিমার সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বললাম- কেন থেকে যাবো? থেকে যেতে তো কোনো কারণ লাগবে তাই না?
– ইচ্ছে থাকলে কারণ ছাড়াও থেকে যাওয়া যায়। আপনি সেই কারণ ছাড়াই থেকে যান। নয়তো আমার জন্য থেকে যান।
এই কথাটা বলেই চন্দ্রিমা দু’হাতে নিজের মুখ ঢাকলো।
– দেখি যদি থেকে যেতে পারি তবে থেকেই যাবো না হয়।
দু’জনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ কারো পায়ের শব্দ পেয়ে চন্দ্রিমা আমার থেকে বেশ কিছুটা দূরে সরে গেলো। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে রইলাম কে আসছে সেটা জানার জন্য।
ছোট মা এসে দাঁড়ালো।
– তুমি এতো রাতে এখানে কি করো?
– তেমন কিছুই না। জোছনা স্নান করছি।
– চন্দ্রিমা আসছে এখানে?
– ফুপি আমি এদিকে।
– তুমি এখানে কি করো! নিচে চলো।
চন্দ্রিমাকে নিয়ে ছোট মা নিচে চলে গেলো। আমি আবার আকাশের দিকে তাকালাম।
” হালকা কুয়াশা পড়ছে এখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ো। কাল আবার রাদিয়ার গায়ে হলুদ। ”
কথাটা ছোট মা বলেছিলো। আমি স্পষ্ট ছোট মা’র কন্ঠ শুনতে পেয়েছি। কিন্তু পিছনে ফিরতে না ফিরতেই ছোট মা চলে গেছে।
মা হীন কেউ যদি হঠাৎই মা’য়ের মতো কারো ভালোবাসা মাখা শাসন পায় তবে সেটা তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পাওয়া গুলোর একটা হয়ে যায়।
পরদিন সকাল থেকে সবাই খুব ব্যাস্ত। সবাই সবার মতো আনন্দ করছে। বাসায় প্রথম কারো বিয়ে হচ্ছে। আমার আব্বু আর ছোট মা কারো সাথে আমার পরিচয় না করিয়ে দিলেও মেজো চাচ্চু আর চাচী সবার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। তাদের মুখে আজ বিন্দু মাত্র চিন্তার ছাপ নেই। পৃথিবীর সব খুশি আনন্দ সব কিছু যেন তাদের আঙ্গিনায় ঘর বেঁধেছে।
কনে বসে আছে তার চারপাশে বাসার সব মেয়ে তাদের ছবি তুলে দিচ্ছে চন্দ্রিমা। আমি দূর থেকে বসে বসে তাদের দেখছি। সেই সময় হঠাৎই মায়ার কথা মনে পড়ে গেলো। বেশ কিছু দিন মায়ার সাথে কথা বলা হয় না। কল করে কিছুক্ষণ কথা বললাম। কথা শেষ মোবাইল পকেটে রাখলাম।
” প্রেমিকা ছিলো বুঝি! ”
– তোমাদের মতোই ছোট বোন। আমার আম্মু একে এডপ্ট করেছিলো।
– ওহ আচ্ছা। রাদিয়া আপু আপনাকে ডাকছে।
– কেন?
– ছবি তুলবে জন্য।
– আমি ছবি তুলবো না।
অধরা তবুও আমায় জোর করে টেনে নিয়ে গেলো।
এখন বিকেল।
এখানের সেন্ট্রাল জেলে জেলারের সাথে দেখা করে মাত্র বের হয়েছি। তখন দূর থেকে ছোট মা’কে দেখতে পেলাম। কিন্তু উনি জেলে কেন আসবে! তাছাড়া আজ বাসায় অনুষ্ঠান সেগুলো ছেড়ে উনি জেলে আসবেন না। আমি বোধ হয় ভুল দেখলাম। কিন্তু আরো কিছুটা সামনে যাওয়ার পর নিশ্চিত হলাম এটা ছোট মা। উনি হয়তো আমায় দেখতে পায় নি। কিন্তু আমি ওনাকে ঠিকই দেখেছি।
পাশেই একজন পুলিশ সদস্য কে জিজ্ঞেস করলাম উনি এখানে কেন আসছে।
– ওখানে যারা আছে সবাই কারো না কারো সাথে দেখা করতে আসছে।
ছোট মা’র কে জেলে! উনি কার সাথে দেখা করতে আসতে পারেন? আমাদের বাসার কেউ! উনারা সবাই মিলে কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছে? এমন হাজারো প্রশ্ন মনে ঘর বাঁধছে।
To be continue…